Image of মো: হোসেন

নাম: মো: হোসেন

জন্ম তারিখ: ১০ মে, ২০০০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ট্রাক ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান : মোহাম্মদপুরের উপজেলার স্বপ্নধারা হাউজিং এর বাছিলা রোডে

শহীদের জীবনী

মো: হোসেন, ১০ মে ২০০০ সালে ভোলা জেলার একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা, মো: জাফর, একজন দিনমজুর এবং মা, রিনা একজন দিনমজুর কিন্তু অসুস্থ থাকার কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি। পরিবারের তিনটি সন্তানের মধ্যে মোঃ হোসেন ছিলেন একমাত্র উপার্জনকারী, মাসে ২০ হাজার টাকা উপার্জন করে তাঁদের বোঝা কমানোর চেষ্টা করতেন। অভাবের কারণে গ্রামে থাকতে না পেরে ২৫ বছর আগে সপরিবারে ঢাকা জেলার মোহাম্মদপুরের উপজেলার স্বপ্নধারা হাউজিং এর বাছিলা রোডে বসবাস শুরু করে। অর্থের অভাবে ঢাকায় আসলেও অর্থাভাব পিছু ছাড়েনি তাদের পরিবারের। অভাবের তাড়ণায় হোসেনের মা বৃদ্ধ বয়সেও দিনমজুরের কাজ করতে বাধ্য হয়, কিন্তু হোসেনের মাও ছিল অসুস্থতায় জর্জরিত। হোসেনের ছোট ভাই প্রতিবন্ধী এবং মা অসুস্থ হওয়ায় পরিবারের আর্থিক চাপ বেড়ে যায়। তাঁরা ৪ লক্ষ টাকার ঋণে জর্জরিত ছিলেন, যা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনকে আরো কঠিন করে তুলেছিল। ৫ জুলাই থেকে গড়ে ওঠা কোটা বিরোধী আন্দোলন যখন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে রুপ নেয় তখন সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় এই খুনি আওয়ামী সরকার। এমনকি বিজিবিকে রাস্তায় নামানো হয়। কিন্তু সাহসী ছাত্রজনতা যখন হাসিনার পালিত পুলিশ এবং বিজিবিকে উপেক্ষা করে আন্দোলন করতে থাকে তখন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয় আওয়ামী সন্ত্রাসী সরকার। এতে আরও বিপাকে পরে হোসেন। স্ত্রী, পাঁচ বছর বয়সী দুই কন্যা সন্তান, অসুস্থ মা এবং প্রতিবন্ধী ভাই সহ পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তাকে আরও বিপাকে পড়তে হয়। যাদের ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা তাদের আর ঘরে বসে থাকার কথা ভাবলে চলেনা। এই ভেবে আবারও ১৮ জুলাই কারফিউর মধ্যেই ট্রাক নিয়ে বের হন শহীদ হোসেন। নিজের জীবনের জিম্মাদারি দেয় রবের কাছে কিন্তু কে জানত তার ভাগ্য তার সাথে এতো নির্মম পরিহাস করবে। কিন্তু এটি তো ভাগ্যের পরিহাস ছিলনা। এটা ছিল স্বৈরাচার হাসিনার পরিহাস। সে তার পেটোয়া, নির্যাতক পুলিশবাহিনীকে মানুষ মারার খোলা হুকুম দিয়েছিল। যার নির্মম ফল ভোগ করে হোসেন। শহীদ হোসেন দিনের বেলা গাড়ি বের করতে না পেরে ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে গাড়ি বের করে। রাত ৩টার সময় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে মো: হোসেনের মাথা এবং হাত গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় স্বৈরাচারের পুলিশ বাহিনি। রাস্তাতেই প্রাণ হারান হোসেন। প্রতিবেশীরা ঘটনাটি দেখলেও সাহায্য করার মত কেউ এগিয়ে আসার সাহসিকতা তারা দেখাতে পারেনি। হোসেনের বাড়ির গেটে যখন তার লাশ নিয়ে আসা হয় তখন বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়ে তার মা এবং স্ত্রী। ঘুম ঘুম চোখে ধীরে ধীরে উঠে আসে পাঁচ বছর বয়সী তাঁর দুই মেয়ে লিমা ও সিমা। চোখের কোণে জড়ো হতে থাকে অশ্রুকণা এবং একসময় তা বৃষ্টির মত ঝরঝর করে পড়তে শুরু করে। তাদের হৃদয় ভাঙা কান্নায় সেদিন যেন কাঁদতে শুরু করে রাতে চড়ে বেড়ানো পাখি, রাস্তার পাহারাদার কুকুর ও ঝিঝি পোকা সহ সকল নিশাচর। তার পরিবারের জন্য এই রাত একটি ভয়াবহ রাত ছিল। মোঃ হোসেনের স্ত্রী ও তিনটি সন্তান, বিশেষ করে পাঁচ বছরের দুই কন্যা, লিমা ও সিমা, বাবার মৃত্যুর শোক সহ্য করতে পারছিলনা। ১৯ জুলাই সকাল ১১টায় মোহাম্মদপুর স্থানীয় মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং একইদিন বাদ এশা তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ভোলায় পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। সকলেই শোকাবহ পরিবেশে তাঁর বিদায় জানান। মোঃ হোসেনের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারে এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করতে শুরু করে। তাদের এখন নির্ভর করতে হচ্ছে মাসিক এবং বাৎসরিক অনুদানের উপর। শিশুদের লেখাপড়ার খরচ মেটানোর জন্যও সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ব্যাক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: হোসেন পিতার নাম : (মৃত) মো: জাফর মাতার নাম : রিনা পরিবারের সদস্য : ৫ জন পেশা : ট্রাক ড্রাইভার মাসিক আয় ছিল : ২০,০০০ টাকা বর্তমান আয় : নেই স্থায়ী ও বতর্মনা ঠিকানা : স্বপ্নধারা হাউজিং ইউনিয়নের বাছিলা রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: হোসেন
Image of মো: হোসেন
Image of মো: হোসেন
Image of মো: হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: নুর হোসেন

মো: সাফাকাত সামির

নাসির হোসেন

হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমাদ

মো: আরিফ

মো: মনিরুল ইসলাম

মো: মোসলেহ উদ্দিন

মোঃ আব্দুল্লাহ কবির

রমিজ উদ্দিন আহমেদ

আবদুল্লাহ সিদ্দিক

 হান্নান

মো: আসাদুল্লাহ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo