জন্ম তারিখ: ৯ জুন, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : ফুলের দোকানের কর্মচারি, শাহাদাতের স্থান : মহাখালী
১৮ বছরের একটি দুরন্ত কিশোর। তার এই বয়সটাই হচ্ছে দুরন্তপনার। তাকে দেখতে পাওয়ার কথা ছিল খেলার মাঠে, বন্ধু মহলের আড্ডায় কিংবা মোবাইল স্ক্রীনে বুঁদ হয়ে ভিডিও গেমস খেলতে। তবে জীবন সবার জন্য আনন্দময় নয়। বৈষম্য আর দুর্নীতির করাল গ্রাসে বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। গুটিকয়েক মানুষের জীবনের মান উন্নত হলেও তার ছোঁয়া লাগেনি সবার দ্বারে। তাই ১৮ বছর বয়সেই জাহিদকে সংসারের হাল ধরতে হয়। শহীদ মো: জাহিদ হাসান ছিল ফুলের দোকানের একজন কর্মচারি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় তাকেই টানতে হতো সংসারের ঘানি। ফুলের সাথেই ছিল তার বসবাস। রঙ বেরঙের ফুলের সাথে তার ছিল গভীর মিতালী। গ্রাহকদের পরিচয় করিয়ে দিতেন ফুলের সাথে। হাতে তুলে দিতেন ফুলের মালা, ফুলের বুকেট। কিন্তু ঘাতক আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা লিপ্সার কাছে আকালেই ঝরে যেতে এই ফুলের মতো জাহিদ হাসানকে। শহীদ মো: জাহিদ হাসান (১৮) এর জন্ম ২০০৬ সালের জুন মাসের ৯ তারিখে রাজধানীর ঢাকা শহরে। পিতা জাহাঙ্গীর আলম (৪৬) ছিলেন বাসের টিকেট চেকার। কিন্তু কাজের অভাবে বেকারত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য হন তিনি। মা মোছা: রাহেলা বেগম (৪০) একজন গৃহিণী। বড়ভাই রাহাত (২৩) তিতুমীর কলেজে অনার্স অধ্যয়নরত। ছোটবোন মেশতা জাহান নুর ৩য় শ্রেণির ছাত্রী। অভাব অনটনের সংসারে মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত ছিল সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ঋণের ভার। যেভাবে শহীদ হয় : শুরুতে আন্দোলন সভা-সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের পরোক্ষভাবে “রাজাকারের নাতি-পুতি” হিসেবে অভিহিত করেন, প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যঙ্গ করে “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার” “চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার” স্লোগান দেয়। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মত পুরো দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ জুলাই পর্যন্ত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের অনান্য সংগঠন, বিজিবি, পুলিশ দিয়ে দমন পীড়ন চলিয়ে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করেও আন্দোলন থামাতে কার্যত ব্যর্থ হলে সরকার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে এবং মাঠে সেনাবাহিনী নামায়। ১৯ জুলাই শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে উত্তরা, মিরপুর, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, বাসাবো, ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, বাসাবোসহ বিভিন্ন এলাকায়। মহাখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে শহীদ হন জাহিদ হাসান, একজন মেধাবী ছাত্র এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মাত্র ১৮ বছর বয়সী এই তরুণের মৃত্যু তার পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয় এবং জাতির বিবেককে নাড়া দেয়। জাহিদ হাসান একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন, যারা ঢাকায় প্রায় ১৫ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। সেদিন বিকেল ৫টার দিকে মহাখালীতে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। জাহিদ আন্দোলনের প্রথম সারিতে থেকে ন্যায়ের দাবি তুলেছিলেন, কিন্তু আন্দোলনের উত্তেজনার মুহূর্তে পুলিশ তাকে মাথায় গুলি করে। তিনি রাস্তায় পড়ে যান এবং পুলিশ ও ছাত্রলীগের সদস্যরা তাকে পায়ে পায়ে লাথি মারতে থাকে। যখন তারা নিশ্চিত হয় যে, জাহিদ আর বেঁচে নেই, তখন তারা তাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়। আন্দোলনকারীরা তৎক্ষণাৎ তাকে নিয়ে কাছাকাছি আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানকার ডাক্তাররা জানিয়ে দেন যে, হাসপাতালে আনার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। পরে তেজগাঁও শিল্প এলাকা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কবরস্থানে তার জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হয়। ব্যক্তিগত প্রোফাইল শহীদের পূর্ণ নাম : মো: জাহিদ হোসান (১৮) পেশা : ফুলের দোকানের কর্মচারি মাসিক আয় : ২৫০০০ টাকা পিতার নাম : মো: জাহাঙ্গীর আলম (৪৬) পেশা : বেকার মাতার নাম : মোসা: রাহেলা বেগম (৪০) পেশা : গৃহিণী পারিবারিক ঋণ : ৩.৫ লক্ষ টাকা স্থায়ী ঠিকানা : পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজগাঁও টিএসও-১২১৫, তেজগাঁও, ঢাকা বর্তমান ঠিকানা : পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজগাঁও টিএসও-১২১৫, তেজগাঁও, ঢাকা বড় ভাই : রাহাত(২৩) পেশা : শিক্ষার্থী, সরকারী তিতুমীর কলেজ বোন : মেশতা জাহান নুর (৮) পেশা : শিক্ষার্থী, ৩য় শ্রেণি যেভাবে সহযোগিতা করা যায় : ১) ঋণ পরিশোধ ২) পড়ালেখার দায়িত্ব গ্রহণ ৩) বাবা/বড়ভাই এর চাকরির ব্যবস্থা