জন্ম তারিখ: ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : উত্তরা ৭ নং সেক্টর হাউজবিল্ডিং, উত্তরা, ঢাকা
“এই পানি লাগবে... পানি” উত্তরায় গত ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। বাংলা একাডেমি ‘আধুনিক বাংলা অভিধান বলছে মুগ্ধ একটি বিশেষণ যার মানে মোহগ্রস্ত, বশীভূত মন্ত্রমুগ্ধ, বিহ্বল, বিভোর গুণমুগ্ধ, মূঢ়। জানি না মুগ্ধর মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজন যারা এমন নামকরণ করেছিলেন, তারা কি আসলেই জানতেন একদিন এই ছেলে বড় হয়ে পুরো দেশের মানুষের পাশাপাশি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের একই সুতোয় বাঁধবে। সবাইকে তার গুণে মুগ্ধ করবে। আমরা সবাই তার আচরণ ও কাজকর্ম মোহাবিষ্ট হয়ে দেখব। মুগ্ধ আমাদের সামনে থেকে সরে গেলেও আমরা বিভোর হয়ে থাকব তার স্মৃতিচারণায়। আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে ছেলেসন্তানের নাম বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়। আমরা নিশ্চিত, এখনকার প্রজন্মের একটা বিশাল অংশের ছেলেসন্তানের নাম রাখা হবে মুগ্ধ। ভবিষ্যতে কেউ যদি আমাকে তার সন্তানের নামকরণ করতে বলে, ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে আমি তার নাম দেব মুগ্ধ। আমাদের দেশে একটা প্রবাদ বহুল প্রচলিত—বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়। আমাদের মুগ্ধ নামে এবং ফলে দুভাবেই নিজেকে পরিচিতি দিয়ে গেছে। এখন আমরা মুগ্ধ নাম শুনলেই বুঝতে পারি কার কথা বলা হচ্ছে। আশুরা ইসলামে একটি স্মরণীয় দিন। এদিন কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন ইবনে আলী (রা.) মৃত্যুবরণ করেন। ‘কারবালা’ ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রান্তর। কারবালার ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম বিয়োগান্ত ঘটনা। কুফার সুপ্রাচীন নদী ফোরাতের কূলে কারবালার প্রান্তরে যখন হোসাইন (রা.)-এর কাফেলা অবস্থান করছিল, তখন তাদের পানির একমাত্র উৎস ছিল নদীটি। এই নদী থেকে পানি সংগ্রহ করতে গেলে দুগ্ধপোষ্য শিশু আলী আসগর এক ফোঁটা পানির জন্য সিমারের বাহিনীর তীরের আঘাতে শহীদ হন। সেদিন ফোরাতকূলে যে ‘পানি পানি’ বলে মাতম উঠেছিল, তা অবর্ণনীয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটা পর্যায়ে ছাত্ররা ১৭ জুলাই রাতে ১৮ জুলাইয়ের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা করে। তখন ঢাকা শহরের পাশাপাশি পুরো দেশ যেন কারবালার প্রান্তরে রূপ নেয়। এদিন নিরস্ত্র ছাত্রদেরকে প্রতিহত করতে সরকারি পেটোয়া বাহিনী এবং পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নামানো হয় বিজিবি। তখন সারা দেশ রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিপরীতে ছাত্রদের একমাত্র সম্বল ছিল নিজেদের প্রাণ। তাই তারা বুকে বুক বেঁধে প্রতিরোধের প্রাচীর গড়ে তুলেছিল। তখন মুগ্ধ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আন্দোলনকারীদের জন্য নিয়ে আসে পানি। মুগ্ধ পানির কেস হাতে চিৎকার করছে আর বলছে, পানি লাগবে পানি। কাঁদানে গ্যাসের কারণে তাঁর চোখ খুলে রাখতে সমস্যা হচ্ছে। গেঞ্জির হাতা দিয়ে চোখ মুছে সেটাকে খোলা রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের একটা ভিডিও। এতে মুগ্ধকে দেখা যায়। আরও জানা যায়, এই ভিডিও ধারনের পনেরো মিনিট পর তিনি গুলিবিদ্ধ হন। কিছু সময় পর তিনি মারা যান। এই ভিডিও দেখে কাঁদেনি এমন মানুষ বিরল। মুগ্ধের ভিডিওটি দেখার মতো। কী উদ্যম নিয়ে ছেলেটা চিৎকার করে যাচ্ছে। মুখের অভিব্যক্তিতে কী দৃঢ়তা। পরনের টিুশার্টটা পানিতে ভিজে গেছে। পায়ে বাসায় ব্যবহৃত স্যান্ডেল প্রমাণ দিচ্ছে মুগ্ধ কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই রাস্তায় তার ভাইবোনদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল নিজের অন্তরের তাগিদে। মুগ্ধ শহীদ হওয়ার পর ১৩ আগস্ট সিএনএন একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম, ‘বিক্ষোভকারীদের হাতে পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন এই ছাত্র, কয়েক মিনিট পরই তিনি মারা যান’। সেখানে বলা হয়েছে, মুগ্ধর পুরো নাম মীর মাহফুজুর রহমান। তাঁর যমজ ভাই স্নিগ্ধ—মীর মাহবুবুর রহমান। রাজধানী ঢাকায় দুপুরের উত্তাপে বিশ্রাম নেওয়ার সময় একটি বুলেট তাঁর কপালে বিদ্ধ হয়েছিল। বন্ধু ও বিক্ষোভকারীরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। শহীদ মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ জানান, ‘আমি শুধু তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, আর আমি কেঁদেছিলাম।’ মুগ্ধ গণিতে স্নাতক ছিলেন। এরপর ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শ্রেণিতে পড়ছিলেন, আর তাঁর যমজ স্নিগ্ধ আইনে স্নাতক। এই দুই যমজ ইতালিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। মোটরবাইকে ইউরোপ ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা ছিল তাঁদের। ভ্রমণের জন্য টাকা জমাতেন তাঁরা। দুই ভাই অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হাব ফাইবারে সোশ্যাল মিডিয়া বিপণনের কাজ করতেন। স্নিগ্ধ বলেন, ‘সে শুধু আমার ভাই ছিল না, আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু ছিল। আমার শরীরের একটি অঙ্গ ছিল। আমরা একসঙ্গে সবকিছু করতাম।’ তাঁদের বড় ভাই দীপ্ত, যাঁর পুরো নাম মীর মাহমুদুর রহমান। দুই ভাই মুগ্ধের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রটি রেখে দিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় এটি তাঁর গলায় ছিল। মুগ্ধের বিচ্ছুরিত রক্ত সেই অন্ধকার সময়ে দিনের প্রতীক হিসেবে পরিচয়পত্রটিতে শুকিয়ে গিয়েছিল। পরিচয়পত্রের ফিতাটি তাঁর ভাইয়েরা রেখে দিয়েছেন। এখন, প্রতিবাদ আন্দোলনে মুগ্ধ যে প্রভাব ফেলেছেন, তার থেকে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করছেন দুই ভাই দীপ্ত ও স্নিগ্ধ। স্নিগ্ধ বলেন, ‘তার (মুগ্ধ) কারণে মানুষ প্রতিবাদ করার শক্তি পেয়েছে। সে সব সময় বলত, “আমি আমার মা-বাবাকে একদিন গর্বিত করব।” এরপর আমরা আমাদের কথায়, কাজে, পড়ায়, লেখায় যতবারই মুগ্ধ শব্দটা ব্যবহার করব, ততবারই আমাদের সামনে ভেসে উঠবে মুগ্ধর মুখটা। আমরা ততবারই মুগ্ধ হব মুগ্ধর আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে। আরও কত তাজা প্রাণ যে অকালে শহীদ হয়েছে, তাদের সবার পরিচয় জানা যায়নি। আসলে যারা শহীদ হন, তারা তো নিজেদের জীবন পরের তরে বিলিয়ে দেওয়ার জন্যই মৃত্যুর সামনে বুক পেতে দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হলো বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থী দের একটি সংগঠন। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় এবং এটি কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়। ২০২৪ সালের ১ জুলাই সংগঠনটি সৃষ্টি হয় এবং সৃষ্টির পরপরই আন্দোলন সফল করার জন্য ৮ জুলাই সংগঠনটি ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে যার মধ্যে ২৩ জন সমন্বয়ক ও ৪২ জন সহ- সমন্বয়ক ছিলেন। ক্রমান্বয়ে আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পর ৩ আগস্ট সংগঠনটি দেশে প্রচলিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠনের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক দল গঠন করে যার মধ্যে ১৪৯ জনে সমন্বয়ক ও ১০৯ জন সহ সমন্বয়ক ছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাধিক সমন্বয়ককে এই সংগঠনের নেতৃত্বে দেখা গেছে। যাদের হাত ধরে চলমান আন্দোলন ক্ষোভে ফেটে ওঠে। ২০২৪ এর জুন মাসে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বাতিলকৃত কোটা পুনরায় বহাল করে। যার ফলে পুনরায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে স্বাধীন ভূখন্ডের প্রতিটি গ্রাম,থানা, জেলা ও এমনকি বিভাগীয় পর্যায়েও। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঢাকার শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্লোগান ছিল ‘কোটা না মেধা? মেধা! মেধা! ‘ভেঙ্গে ফেল কোটার ঐ শিকল’ -এই ধরনের বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হতে থাকে পুরো ঢাকা শহর। শুরুতে আন্দোলন সভা সমাবেশের মধ্যে স্থির থাকলেও ১৪ জুলাই ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা তার এক বক্তব্যে কোটা আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে রাজাকারের নাতি-পুতি অভিহিত করেন। স্বৈরশাসক হাসিনার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রজনতা ব্যঙ্গ করে তুমি কে? রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার এবং চাইতে গেলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার- স্লোগান দেয়। এর পরেরদিন ১৫ জুলাই আওয়ামীলীগ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা, মন্ত্রী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' নষ্ট করার অভিযোগ আনেন। একই দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের উপর রড, লাঠি, হকি স্টিক, রামদা, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। একই সাথে পুলিশও লাঠি, রাবার বুলেট দিয়ে হামলা করে। প্রতিবাদে নিরীহ নিরস্ত্র আন্দোলনকারীরাও তাদের দিকে ইটের টুকরা ছুঁড়ে ও উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এসব হামলায় ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মত পুরো দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ জুলাই পর্যন্ত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ ও মানুষ খেকো আওয়ামীলীগের অনান্য তাবেদার সংগঠন, সশস্ত্র ঘাতক বিজিবি, র্যাব, পুলিশ দিয়ে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করেও আন্দোলন থামাতে কার্যত ব্যর্থ হলে স্বৈরাচারী সরকার দেশজুড়ে কারফিউ জারি করে এবং মাঠে নামায় সেনাবাহিনী। এইসব ঘটনায় প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারী আহত হওয়ার পাশাপাশি ৬৭৩ জনের অধিক নিহত হন এবং পুলিশ ৫০০ মামলা দায়ের করে ১১,০০০-এর অধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে ২১ জুলাই বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে ও সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। ২২ জুলাই এই বিষয়ে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে। শহীদ পরিচিত ও নিকট আত্নীয় এবং বন্ধুদের অনুভূতি মৃত্যুর ১৫ মিনিট আগেও ছাত্রদের ডেকে ডেকে পানি দিচ্ছিলেন মুগ্ধ। গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান মুগ্ধ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ভালো খেলোয়াড়, গায়ক, সংগঠক হিসেবে গত চার বছর ধরে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন ক্যাম্পাসে। গণিতে স্লাতক শেষ করে গত মার্চে ঢাকায় যান। এমবিএতে ভর্তি হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে। মৃত্যুর মাত্র ১৫ মিনিট আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন সড়কে ছোটাছুটি করছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে হাতে পানি ভর্তি বাক্স ও বিস্কুট নিয়ে ছুটছেন মুগ্ধ। ছাত্রদের ডেকে ডেকে বলছেন, ‘পানি লাগবে কারও, পানি?’ ভিডিওতে দেখা গেল, অনেকেই তার কাছ থেকে পানি পান করছেন। কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজাল ধোঁয়ায় বেশ কয়েকবার চোখ মুছতে দেখা গেল মুগ্ধকে। ঐদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মুগ্ধর সঙ্গে থাকা এক বন্ধু বলেন, “কারও বিপদ দেখলে সব সময় ছুটে যেতেন মুগ্ধ। উত্তরায় ছাত্রদের ওপর হামলা হচ্ছে শুনে অন্য বন্ধুদের নিয়ে ছুটে যান তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ঐদিন অনেককেই হাসপাতালে নিয়ে গেছি আমি ও মুগ্ধ। বিকাল ৬ টার দিকে ছাত্রদের মাঝে পানি ও বিস্কুট দিয়ে সড়ক ডিভাইডারে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। হঠাৎ রাজউক কমার্শিয়ালের সামনে থেকে পুলিশ গুলি করতে করতে এগিয়ে এলে সবার সঙ্গে আমরাও দৌড় দিই। হঠাৎ দেখি গুলি লাগায় সড়কে পড়ে গেছে মুগ্ধ। তার কপালে গুলি লেগে ডান কানের নিচ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।” মুগ্ধর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। জন্ম ১৯৯৮ সালে উত্তরায়। দাফন হয়েছে এখানেই। উত্তরার ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটি স্কুলে প্রাথমিক এবং উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। ২০১৯ সালে ভর্তি হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল খেলোয়াড়, গায়ক, গিটারিস্ট ও সংগঠক হিসেবে সুনাম ছিল তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান শিক্ষা সমাপনী-২০২৩-এর কনভেনর ছিলেন। ছিলেন স্কাউট গ্রুপের ইউনিট লিডার। ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব মুগ্ধ। তিনি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কাউট গ্রুপের একজন রোভার স্কাউট এবং ইউনিট লিডার ছিলেন। ২০১৯ সালে বনানী অগ্নিকাণ্ডের সময় উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ ও সাহসী ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ স্কাউটস থেকে 'ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড' অর্জন করেন ‘ন্যাশনাল সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও মুগ্ধ ছিলেন যমজ। বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত বলেন, পরিবারের সবার আদরের ছিল মুগ্ধ। ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করত সে। এমবিএর পাশাপাশি দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য ওঊখঞঝ করছিল। কিন্তু সব কিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে, কে জানতো! তিনি আরও বলেন, আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে মায়ের সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখতো মুগ্ধ। সবসময় মাকে দেখেশুনে রাখতো। ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের খরচ চালাত। মা এখনও কাঁদছেন। বাবা চুপচাপ হয়ে গেছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ আবদুস সামাদ বলেন, অসাধারণ ছেলে ছিল মুগ্ধ। কারও সঙ্গে কখনও গোলমাল, বেয়াদবি করতে শুনিনি। ক্লাসে ওকে বকা দিলে এমনভাবে হেসে দিত, পরে ওকে আর কিছু বলতে পারতাম না। ক্যাম্পাসে মুগ্ধর জুনিয়র মুহিব্বুল্লাহ বলেন, যে কোনো আয়োজনে সামনের সারিতে থাকতেন মুগ্ধ ভাই। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আগে আন্দোলনে আমরা সক্রিয় ছিলাম। ফেসবুকে প্রোফাইল ছবির ক্যাপশনে মুগ্ধ যা লিখেছিলেন, তার বাংলা অনেকটা এমন—জীবন অর্থবহ হোক, দীর্ঘ নয়। সত্যিই এক অর্থবহ জীবনযাপন করে গেলেন মুগ্ধ। স্নিগ্ধকে ফেলে গেলেন মুগ্ধ-চলমান আন্দোলনের শুরুর দিকে মুগ্ধর পরিবার ছুটি কাটাতে যায় কক্সবাজারে। কিন্তু, মুগ্ধ ও তার যমজ ভাই স্নিগ্ধ থেকে যান ঢাকাতেই। মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একসঙ্গেই স্কুলে গিয়েছেন। তাদের বন্ধুও ছিল অভিন্ন। মুগ্ধর মৃত্যুর পর থেকেই ট্রমায় আছেন স্নিগ্ধ। দ্য ডেইলি স্টার থেকে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, 'প্লিজ, আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন।' তাদের বড় ভাই দীপ্ত বলেন, 'স্নিগ্ধ একেবারেই নিস্তেজ হয়ে গেছে।' পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্নিগ্ধই প্রথম দেখেছিলেন মুগ্ধর মরদেহ। দীপ্ত বলেন, 'স্নিগ্ধর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি স্মৃতি মুগ্ধর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সে শুধু ভাই হারায়নি, হারিয়েছে নিজের জীবনের একটা অংশ।' দীপ্ত জানান, ১৮ জুলাই সকালে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে যান তারা। 'আমার মা কখনো সৈকত দেখেননি। গত বছর মুগ্ধ বাবা-মাকে প্রথমবারের মতো সুন্দরবনে নিয়ে গিয়েছিল। তাই, এবার আমি বাবা-মাকে কক্সবাজারে নিয়ে যাই,' বলেন তিনি। কিন্তু তাদের সঙ্গী হননি মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ। দীপ্ত জানান, তারা দুটি কারণে যেতে চাননি। একটি হচ্ছে, ২০ জুলাই বন্ধুদের সঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়ার পরিকল্পনা এবং অপরটি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া। ১৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মুগ্ধর মৃত্যুর খবর পান দীপ্ত। সেদিনই ঢাকায় ফেরার চেষ্টা করলেও ফ্লাইট না থাকায় পারেননি। চলমান অস্থিরতার মাঝে সড়কপথে সময় বেশি লাগায় ১৯ জুলাই সকালের ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরেন তারা। দীপ্ত আরও বলছিলেন, 'মুগ্ধর মৃত্যুর খবর কীভাবে যে মাকে বলব বুঝতে পারছিলাম না। মা হার্টের রোগী। এটা নিয়েও চিন্তা ছিল।' প্রথমে তিনি মা-বাবাকে জানান, মুগ্ধ সামান্য আহত হয়েছেন। পরে জানান তিনি হাসপাতালে আছেন কিন্তু অবস্থা সংকটাপন্ন। মুগ্ধর মৃত্যুর খবর জানার পর ভেঙে পড়েন তাদের মা। এখনও তিনি পুরোপুরি সুস্থ হননি। দীপ্ত বলেন, 'আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে মুগ্ধ মায়ের সবচেয়ে কাছের ছিল। তার মৃত্যুতে মায়ের পৃথিবীটাই যেন উজাড় হয়ে গেছে।' মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন যে বন্ধু, মুগ্ধ যখন গুলিবিদ্ধ হন, তখন পাশে ছিলেন তার বন্ধু জাকিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'বুলেট মুগ্ধর কপালে লেগে মাথার ডান দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। আমাদের চোখের সামনে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।' 'মুগ্ধ সবাইকে পানি খাওয়াচ্ছিল। আমাদের কারো কাছে কোনো ধরনের অস্ত্র বা লাঠিসোটাও ছিল না। তারপরও ওরা আমার বন্ধুকে এভাবে গুলি করে মারলো? এই দৃশ্য আমি কীভাবে ভুলব?', -বলেন জাকিরুল। ঘটনা সংক্রান্ত বর্ণনা একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী যে কারণে শহীদ হলেন- কথায় আছে এদেশের দিনমজুর, কৃষক,জেলে এমনকি সিএনজি চালক গণমানুষের সুখ-দুঃখের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী। রাজপথের বহু ঘটনা-দুর্ঘটনার সাক্ষীও তারা। আর তাদেরই অন্যতম একজন ছিলেন শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। দেশ যখন রসাতলের অতল গহ্বরের দিকে ধাবমান; রাষ্ট্র যখন অদক্ষ, অসৎ, দুর্নীতিবাজ, লুটেরা চালক দ্বারা নেক্কারজনকভাবে চালিত; বাজার যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির অত্যাচারে জর্জরিত; জাতি যখন অভিশপ্ত স্বৈরাচারের নির্মম নৈরাজ্যে আক্রান্ত; ক্ষতবিক্ষত, এদেশের আপামর জনতা তখন নিজ নিজ জায়গায় প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে মর্মান্তিকভাবে দুঃখিত, ব্যথিত এবং প্রচন্ডভাবে হতাশায় নিমজ্জিত। এই হতাশা থেকে আশার আলো নিয়ে; পরাধীনতা থেকে মুক্তির ডাক নিয়ে; বৈষম্যতা থেকে অধিকারের বার্তা নিয়ে জাতির সামনে এসে প্রথমেই শান্ত-শিষ্টভাবে সরকারের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সাধারণ শিক্ষার্থী। তাদের দাবি, মেধার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হোক। সরকার ও রাষ্ট্রীয় সকল কাজে মেধা ও যোগ্যতার মাপকাঠিতে বিবেচনা করা হোক। ছাত্রদের এই হক কথা; ন্যায্য দাবিকেও হেয় প্রতিপন্ন করলো নাটকবাজ খ্যাত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালেও এই দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তখনো চোর-ডাকাতের এই সরকার থামিয়ে দিয়েছিলো শিক্ষার্থীদের। এক সাগর কষ্ট বুকে নিয়ে তারা ফিরে গিয়েছিল রাজপথ থেকে। আসলেই কি তাই? না। সেটা ছিলো মূলত উদ্যোম গতিতে ফেরার জন্য কিছুটা পিছু হটা। তাইতো ২০১৮ সালের কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনই নাম পরিবর্তন করে ২০২৪ সালে ফিরে এসেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হয়ে। এবারো তারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের দাবি পেশ করেছে। অথচ স্বৈরাচার সরকারের নানাবিধ টিটকারি, হঠকারিতা আর নির্লজ্জ হাস্যরসিকতা এই স্বাভাবিক দাবীকে এক বিপ্লবী আন্দোলনের রূপ নিতে বাধ্য করছে যেন। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মিডিয়ায় বিবৃতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখনী এবং সরকারের সাথে আলোচনার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু না; খুনি সরকার শিক্ষার্থীদের এমন প্রচেষ্টাকেও কোনরকম গায়ে-ই মাখলো না। তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলো তাদের। তারা শিক্ষার্থীদের সুশৃংখল মানববন্ধনে করলো লাঠিচার্জ! শান্তিপূর্ণ সমাবেশে মারলো টিয়ারসেল, রাবার বুলেট! শোকের মিছিলে করলো গুলি! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে-হোস্টেলে, বাসা - বাড়িতে গিয়ে শুরু করলো তল্লাশির নামে নৈরাজ্য! মধ্যরাতে তুলে নিয়ে গিয়ে ঘুম, খুন, হত্যা! পথে-ঘাটে হামলা-মামলা গণগ্রেপ্তার! শিক্ষার্থীদের হাতে পরানো হলো হাতকড়া! কোমরে বাঁধলো রশি! পায়ে পরালো ডান্ডাবেড়ি! প্রকাশ্যে ঘোষণা করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনীর পাশাপাশি রাজপথে নামালো পেটোয়া গুন্ডা চরিত্রহীন সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ, ঘাতক যুবলীগ ও আওয়ামীলীগ। এই দেশ আমার বাবার দেশ। এটা আমাদের ফিরে পাওয়া জমিদারি। তোরা সব রাজাকারের নাতিপুতি। এমনই ছিল যেন খুনি সরকারের মনোভাব। যার কারণেই কোটা বিরোধী বা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন হয়ে যায় দেশের সর্বস্তরের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে । তাদের সোজা কথা, দাবি আদায় না করে তারা ঘরে ফিরবে না। শুরু হলো পরীক্ষা বয়কট, ক্লাস বয়কট আর অবৈধ সরকারের সাথে অসহযোগিতা। একনায়কতন্ত্রে বিশ্বাসী, গণতন্ত্রের হত্যাকারী সরকার দেশব্যাপী সাধারণ শিক্ষার্থীদের এরকম গণজাগরণ দেখেও কেবলমাত্র নিজেদের অহমিকা, একঘেয়েমিতা আর ক্ষমতার বাহাদুরী প্রদর্শনের জন্যই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালিয়ে দিল। যেভাবে পারছে সেভাবেই তারা ছাত্র হত্যা করতে লাগলো। পিটিয়ে, কুপিয়ে, জখম করে, গুলি করে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের নৃশংসভাবে হত্যা করতে লাগলো ছাত্রত্বের আজীবন কলঙ্ক গুন্ডা ছাত্রলীগ। শুধু তাই নয়, দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে রাজপথে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, ক্যাম্পাসে অমানবিক নির্যাতনে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে হত্যা করে আবার সেই লাশের উপরই নৃত্য করে পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠতেও কোনরকম দ্বিধা করে না তারা। শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ ছিলেন একজন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। তিনি একজন মুক্তপেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও কাজ করতেন। আন্দোলনের সময় খাবার পানি এবং বিস্কুট বিতরণ করতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। মুগ্ধর মৃত্যু গোটা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে।" ভাই পানি লাগবে কারও, পানি" মুগ্ধের এ কথাটি এখনো সারা বাংলাদেশকে কাঁদায়। তিনি ১৮ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। তার অবস্থান ছিল উত্তরা আজমপুর রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেটের পাশে। হাতে ছিল পানি ও বিস্কুট। বন্ধু জাকিরুল জানায়, মুগ্ধ সবাইকে পানি খাওয়াচ্ছিল। আমাদের কাছে কোন অস্ত্র ছিলোনা। ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। কিন্তু পুলিশের টিয়ারশেল ও গুলি অব্যাহত ছিল। সন্ধ্যার কিছু আগে মুগ্ধর কপালে গুলি লাগে। গুলিটি ডানপাশের কানদিয়ে বের হয়ে যায়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে যখন লুটিয়ে পড়ছিলেন তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল। মুগ্ধ'র রক্তে যখন রাস্তা ভেসে যাচ্ছিল, তখন আমরা বহু সংগ্রাম করেও সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে নিতে পারিনি। অসংখ্য পুলিশ অস্ত্র হাতে এগিয়ে আসছিলো। কিছুক্ষণ পর রিকশায় করে মুগ্ধকে নিকটস্থ ক্রিসেন্ট হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃত্যুর খবর যখন পাওয়া যায় ঐ মুহুর্তে তার পরিবার কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। পরদিন জানাজা শেষে তার লাশ ব্রাক্ষনবাড়িয়া নিজ জেলায় দাফন করা হয়। প্রস্তাবনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ডিসিপ্লিনের বিভাগ ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর স্মরণে উত্থাপিত প্রস্তাবনা সমূহ রাষ্টীয়ভাবে পূরণের জন্য জোর দাবি রইল। ১৮ জুলাই শহীদ মীর মুগ্ধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও যথাযথ মর্যাদায় পালন করা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে রাষ্ট্রের কাছে শহীদ মীর মুগ্ধ হত্যার বিচার চেয়ে আবেদন এবং ঐ আন্দোলনে সব শহীদের স্মরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরে জুলাই গণহত্যা নামে একটি স্মৃতি কর্নার * মুগ্ধর স্মৃতির উদ্দেশ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক আবাসিক হল, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে “মুগ্ধ পানি সরবরাহ কর্নার” করা। পাশাপাশি দেশের প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে “পানি লাগবে পানি”—এই স্লোগান লিখে মুগ্ধ কর্নার করার উদ্যোগ নিতে হবে। মুগ্ধর এই মুগ্ধতা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। ‘মুগ্ধ-আবু সাঈদরা নিজেদের জীবন দিয়ে দেশকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। মুগ্ধদের আত্মত্যাগ দেশকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছে। এখন তাদের স্বপ্ন আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা নতুন স্বাধীনতার পর যেভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, দেশ সংস্কার এবং বন্যার পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে।’ একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ পেশা : ছাত্র জম্ম : ০৯-০৯-১৯৯৮ জন্মস্থান : উত্তরা, ঢাকা পেশাগত পরিচয় কর্মরত প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) পিতা : মীর মোস্তাফিজুর রহমান মাতা : শাহানা চৌধুরী ঠিকানা : ৩৫/৯ ডি, ৫ নং সেক্টর, উত্তরা, ঢাকা ঘটনার স্থান : বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, হাউজ বিল্ডিং আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল : রাত ৮.৩০মিনিট, ১৯ জুলাই ২০২৪ মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ১৯ জুলাই ২০২৪, রাত ৮টা ৩০ মিনিট বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাউজবিল্ডিং, উত্তরা, ঢাকা শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : কামার পাড়া, ঢাকা