Image of মারুফ হোসেন

নাম: মারুফ হোসেন

জন্ম তারিখ: ৭ ডিসেম্বর, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে

শহীদের জীবনী

শহীদ মারুফ হাসান। বরিশাল জেলার ভাষানচর ইউনিয়নের কাজিরহাট থানার হেসাম উদ্দিন গ্রামে ২০০৫ সালের ৭ ডিসেম্বর পিতা মো: ইদ্রিস আলী এবং মাতা মরিয়াম বেগমের অভাবের সংসারে এক টুকরো সুখের প্রদীপ হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিন পুত্র সন্তানের মাঝে প্রথম সন্তান শহীদ মারুফ ছিলেন বাবা-মায়ের চোখের মণি। শহীদের শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে বরিশালের গ্রামের বাড়িতেই। পড়াশোনাও বরিশালেই। বরিশালের একতা ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চলে আসেন ঢাকায় উদ্দেশ্য ছিল ফুচকা বিক্রেতা বাবার ব্যবসার কাজে সহায়তা করা। ঘটনার প্রেক্ষাপট ২০১৮ সালের চৌঠা অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাতিলকৃত কোটা সংস্কার পদ্ধতি সংক্রান্ত ও পরিপত্রকে ২০২৪ সালের ৫ই জুন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এরই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সূচনা লাভ করে কোটা সংস্কার আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক দাবিকে বিবেচনায় না নিয়ে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের এমপি মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য এবং কটুক্তি করতে থাকে যা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আরো বিক্ষুব্ধ করে তোলে। সরকারি মন্ত্রী-এমপি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের এসব অমূলক দম্ভোক্তি এবং কটুক্তি হাসিনার পেট পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত হওয়া সরকারি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী- পুলিশ এবং র‌্যাপ কে নিরস্ত্র আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করতে প্ররোচিত করে। পুলিশ এবং র‌্যাবের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের লাঠিয়াল বাহিনী ও দেশে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিরস্ত্র নিরীহ ছাত্রদের উপর হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং শত শত ছাত্রকে মারাত্মকভাবে আহত ও জখম করে। এরই মাঝে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী, রক্ত পিপাসু খুনি হাসিনা আন্দোলনরত সাধারন শিক্ষার্থীদের "রাজাকারের নাতিপুতি" বলে মন্তব্য করলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি চত্বরে সমবেত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ তরঙ্গের ন্যায় চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অবৈধ এবং অন্যায় ঘোষণাকে অনুসরণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ ঘোষণা করে স্বৈরাচারের কপদলেহী প্রশাসন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ বন্ধ হয়ে গেলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে অগ্রগামী ছিল ঢাকার বাড্ডায় অবস্থিত র্ব্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় র্ব্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরেই শহীদ মারুফ হাসান তার ফুচকা বিক্রেতা পিতাকে সহায়তা করতেন ব্যবসার কাজে। শাহাদাতের অমিয় সুধা পান ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করলে দারুন শিক্ষার্থীদের সমর্থনে দেশের সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের পরিমাণ যেমন বাড়তে থাকে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আন্দোলন কমানোর নামে সরকারি পেটুয়া বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের তান্ডব। সাধারণ ছাত্র জনতার উপর সরকারের এই অন্যায় অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে পারেনি টগবগে তরুণ যুবক শহীদ মারুফ হাসান। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন আন্দোলনরত ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে। জুলাই মাসের অন্যান্য দিনের মতো ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার পবিত্র জুমার দিনও শহীদ মারুফ হাসান সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সারাদিন আন্দোলনের মাঠে ছিলেন। দিনভর চলতে থাকে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার সাথে সরকারি পেটোয়া বাহিনী এবং আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ। আনুমানিক সন্ধ্যা ছয়টা। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ন্যাক্কারজনকভাবে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় স্বৈরাচারীর সহযোগী পুলিশ বাহিনী। পিশাচের বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয় শহীদ মারুফ হাসানের বুক। নির্মম পরিহাসের বিষয় হল ১৯ জুলাই বুলেট বিদ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করলেও শহীদের লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি দুইদিন পর্যন্ত। ঘটনার দুই দিন পর অনেক খোঁজাখুঁজি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাওয়া যায় শহীদ মারুফ হাসানের লাশ। একুশে জুলাই বাড্ডায় জানাজা শেষে দাফন করা হয় স্থানীয় কবরস্থানে। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মারুফ হোসেন পিতা : মোহাম্মদ ইদ্রিস বয়স : ৪৪ পেশা : ব্যবসা মাতা : মরিয়ম বেগম বয়স : ৩৮ পেশা : গৃহিণী ভাই-বোন : তিন ভাই শহীদের অবস্থান : সবার বড় ঠিকানা : গ্রাম : হেসাম উদ্দিন, ইউনিয়ন : ভাষানচর, থানা : কাজিরহাট, জেলা : বরিশাল শহীদ হওয়ার স্থান : ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে, বাড্ডা, ঢাকা। শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯/০৭/২০২৪ আঘাতের ধরন : বুকে পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে পরামর্শ : ১. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পিতাকে ব্যবসার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেওয়া : ২. ছোট দুইজন ভাইয়ের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মারুফ হোসেন
Image of মারুফ হোসেন
Image of মারুফ হোসেন
Image of মারুফ হোসেন
Image of মারুফ হোসেন
Image of মারুফ হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ইব্রাহিম খলিল

মো: রমজান আলী

মো: মনির হোসাইন

মো: সাফাকাত সামির

শাহরিয়ার খান আনাস

সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন

মো: সোহাগ

মো: লেবু শেখ

 মো: ইসহাক জমদ্দার

মোঃ ইয়াকুব

মো: সাব্বির হাওলাদার

মমিন ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo