Image of মো: রিয়াজ

নাম: মো: রিয়াজ

জন্ম তারিখ: ১২ জানুয়ারি, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : জিগাতলা, সাইন্স ল্যাব, ঢাকা

শহীদের জীবনী

মোঃ রিয়াজ একজন ছাত্র ছিলেন। কাঁচামালের ছোট একজন ব্যবসায়ী মাহামুদুল হকের দুই সংসার। প্রথম স্ত্রী শাফিয়া বেগমের ৪ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন শহীদ রিয়াজ। ৪ ভাইদের মধ্যে রিয়াজ ছিল সবার আদরের । ২০০৩ সালের ১২ জানুয়ারি বরিশাল জেলার হিজলা থানার মোল্লার হাট ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন শহীদ রিয়াজ। মা-মোসা: শাফিয়া বেগম অনেক কষ্টে স্বামীর সহযোগিতা ছাড়াই শহীদ রিয়াজসহ আরো ৩ সন্তানকে বড় করে তুলেছেন। অত্যন্ত মেধাবী এবং কর্মঠ ছিলেন শহীদ রিয়াজ। বরিশাল জেলার ফুলাদি সরকারি কলেজের ডিগ্রী শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। শহীদ রিয়াজ লেখাপড়ার সাথে সাথে পরিবারের অর্থ যোগানের জন্য ঢাকায় ছোট ব্যবসা করতেন। যেভাবে শহীদ হন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিভিন্ন সময় অনেক মানুষ জীবন দিয়েছেন। তবে ৫ আগস্ট ২০২৪ এর স্বৈরাচার পতনের যে বিজয়; এই বিজয় অর্জনের জন্য যারা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিলেন তাদেরকে বাংলাদেশের আপামর জনতা চিরদিন স্মরণ করবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন বা কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন শহীদ মো: রিয়াজ তাদের মধ্যে অন্যতম। মুলাদী সরকারি কলেজের ডিগ্রী শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্র মোঃ রিয়াজের চাওয়া ছিল এদেশের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। মেধার ভিত্তিতে যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরীতে নিয়োগ পদ্ধতির সমর্থন করাই ছিল শহীদ রিয়াজের একমাত্র অপরাধ। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে রিয়াজ সবসময় সামনের সারিতে ছিলেন। আন্দোলনের ওই দিন অর্থাৎ ৪ আগস্ট ২০২৪ রিয়াজসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা সমাবেশে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে সিটি কলেজ থেকে সায়েন্সল্যাবে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলানকে নস্যাত করার জন্য এবং নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকার তাদের ছাত্র সংগঠন, সহযোগী সংগঠন, ঘাতক পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিকে বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র এবং বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করতে নির্দেশ দেয়। বিতর্কিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি মোঃ মিজানের নেতৃত্বে প্রায় ১০০ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ সমাবেশে এলোপাথাড়ি গুলি করে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটতে থাকে। অনেক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ গুলি খেয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হতে থাকে। আহতদের চিৎকার শোনার মত অবস্থা কারো থাকেনা। গুলিবিদ্ধদের ঝুঁকি নিয়ে রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এরমধ্যেও কেউ কেউ আওয়ামী গুন্ডাদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আহত ও নিহতদের রক্ষার চেষ্টা করতে থাকে। শহীদ রিয়াজ এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। এই গুলির মধ্যেও রিয়াজ সাহসিকতার সাথে সামনের দিকে পা বাড়ায় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থান বজায় রাখতে উৎসাহ দিতে থাকে। রিয়াজ তাঁর বন্ধুদের বলতে থাকে ‘’আমরা মারা যাবো তবুও আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের এই সংগ্রাম থেকে পিছু হটবোনা’’। ঘাতকেরা তাকে টার্গেট করে। বেলা ১ টার সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অগ্নেয়াস্ত্র থেকে ছোড়া বুলেট এসে বিদ্ধ হয় রিয়াজের মাথার বাম পাশে। তখন চারিদিকে মসজিদ থেকে যোহরের আযানের ধ্বনি ভেসে আসছিলো। রিয়াজের বন্ধুরা ঝুঁকির মধ্যে তাকে নিয়ে ঢাকা পপুলার মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করান। আঘাত গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আইসিইউতে রেখে নিবিড় পর্যবেক্ষনে চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসা খরচ যোগাতে তাঁর পরিবার বিভিন্ন জন থেকে ঋণ গ্রহণ করতে থাকেন। ৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করার এক পর্যায়ে রোগীর অবস্থা অবনতি হতে থাকে। অবশেষে তিনি দীর্ঘ ১৪ দিন পরে ১৭ আগস্ট ২০২৪ বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে শাহাদাতের অমিয় শুধা পান করে দুনিয়ার এই জীবন ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বাংলাদেশের ছাত্রদের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হারিয়ে যাওয়ায় সকল ছাত্র-জনতা শোকাহত হয়ে পড়েন। তার প্রিয় কলেজের শিক্ষার্থীরা সহ হাজারো মানুষ চোখের পানিতে কাঁদতে কাঁদতে বলে শহীদ রিয়াজের স্বপ্নকে আমরা বৃথা যেতে দেব না। শহীদ রিয়াজের জানাজা রিয়াজ ছিলেন সকল দলের, সকল মতের ঊর্ধ্বে । সবার কাছে সব দলের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল অনেক বেশি। তারপরেও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সহযোগিতায় বরিশাল পার্টি অফিসে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় রাত ৮:৩০ মিনিটে। হাজার হাজার মানুষের চোখ দিয়ে সেদিন অঝোরে অশ্রু ঝরছিল । সবাই সেদিন স্বমস্বরে বলেছিল ‘আমাদের প্রিয় রিয়াজ হত্যার বিচার চাই’। মায়ের অনুভূতি অশ্রু সিক্ত মা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বলেছিলেন "হে আল্লাহ, এমন ছেলের মা হতে পেরে আমি তোমার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার ছেলের শাহাদাত কবুল করে নাও। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে তুমি দুনিয়াতে বিচার করে দাও।" শহীদ রিয়াজ সম্পর্কে সেজো ভাইয়ের মন্তব্য শহীদ রিয়াজের সেজো ভাই মোঃ রাসেল বলেন, ‘রিয়াজ সবসময় আমার সাথে থাকতো। আমরা দুজন একসাথে খেলাধুলা করতাম একসাথে ঘুমাতাম। কিন্তু বড় হওয়ার পর রিয়াজ অভাবের জন্য উপার্জনের উদ্দেশ্যে ঢাকায় চলে যায়। ভাগ্যের কি পরিহাস! আমরা ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে মানুষ হয়েছি। অনেক অভাব অনটনের মধ্যে বড় হয়ে এখন আল্লাহ আমাদের অভাব দূর করে অনেক ভালো রেখেছেন। আর এই সুখ স্বাচ্ছন্দ আমার ভাই রিয়াজের বেশি দিন ভোগ করতে পারলো না। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার ভাইকে দুনিয়ায় থাকতে দিল না। সে তো কোন অন্যায় করেনি। সে তো সত্যের পথেই ছিল। ন্যায্য অধিকারের জন্যইতো পথে নেমেছিল। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। বর্তমান সরকারের কাছে আমার দাবী- আমার ভাইকে যারা বিনা অপরাধে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কামনা করছি’। এক নজরে শহীদ মো: রিয়াজ পুরো নাম : মো: রিয়াজ পিতা : মাহমুদুল হক রাড়ী মাতা : শাফিয়া বেগম জন্ম তারিখ : ১২-০১-২০০৩ খ্রিস্টাব্দ জন্মস্থান : লক্ষিপুর, হিজলা, বরিশাল বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত পিতার পেশা : ছোট কাঁচামালের ব্যবসা মাসিক আয় : ১০০০০/= বর্তমান দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে অবস্থান : অর্থাৎ প্রথম স্ত্রী মোসা: শাফিয়া বেগমের (শহীদ রিয়াজের মা) সাথে প্রায় ১৮ বছর থেকে সম্পর্কহীন অবস্থায় আলাদা জায়গায় বসবাস শহীদের মায়ের অবস্থা : মোছা: শাফিয়া বেগম (৫০), পেশা: গৃহিণী বর্তমান তিন সন্তান সহ একসঙ্গেই থাকেন ভাইবোন: রিয়াজসহ মোট ৪ ভাই (বোন নেই) মা-সহ তিন ভাই একই সঙ্গে একই পরিবারে অবস্থান ভাইদের নাম ও পেশাগত অবস্থান : ১. রেজাউল করিম (৩২), প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকতা, মাসিক আয়: ৮০০০/= ২. মো: রাকিবুল ইসলাম (৩০), অপসোনিন কোম্পানিতে চাকরি, মাসিক আয় ১৫০০০/= ৩. মো: রাসেল (২৭), মুদি দোকান, মাসিক আয় ৭০০০/= স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: লক্ষ্মীপুর, ইউনিয়ন: মোল্লার হাট, থানা: হিজলা, জেলা: বরিশাল। বর্তমান ঠিকানা : কামরাঙ্গীচর, সেকশন, ঢাকা দলীয় অবস্থান : কোন দলেই সক্রিয় ছিলেন না সর্বশেষ পড়ালেখা : ফুলাদি সরকারী কলেজ বরিশাল, শ্রেণী: ডিগ্রী শেষ বর্ষ আক্রান্তের তারিখ ও সময় : ০৪-০৮-২০২৪, বেলা ১:০০টা আক্রান্তের স্থান : জিগাতলা, সাইন্স ল্যাব, ঢাকা আক্রমনকারী : বাংলাদেশ আওয়ামী-ছাত্রলীগ এবং সাবেক ঢাকা মহানগর উত্তরের ছাত্রলীগ সভাপতি মোঃ মিজানসহ তার সন্ত্রাসী সহযোগীরা আক্রমনের ধরণ : মাথার বামপাশে গুলি লেগে পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায় শাহাদতের তারিখ ও সময় : ১৭-০৮-২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ, বেলা ১৫:৫০ টায় শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দাফন : নিজ বাড়িতে, লক্ষ্মীপুর, হিজলা, বরিশাল

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রিয়াজ
Image of মো: রিয়াজ
Image of মো: রিয়াজ
Image of মো: রিয়াজ
Image of মো: রিয়াজ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

অজ্ঞাত

মো: রেজাউল করিম

মো: লেবু শেখ

সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন

মো: ইয়ামিন চৌধুরী

মো: শাহাবুদ্দিন

মোঃ সোহেল

আব্দুল জব্বার

মাসুদুর রহমান জনি

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ

মাহামুদুর রহমান সৈকত

শাওন তালুকদার

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo