জন্ম তারিখ: ২১ মার্চ, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর ২ নং থানা
“আমি কিছু করবো যাতে দেশ ও পরিবার আমার ওপর গর্বিত হয়” রাজধানী ঢাকার প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'ঢাকা কমার্স কলেজ'-এর একাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ মমিন ইসলাম ভোলা জেলার চরকলমি (চরফ্যাশন) ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ভক্তির হাট মাদ্রাসা গ্রামে ২০০৭ সালের ২১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জীবিকার তাগিদে বাবা মো. বাবুল ঢাকায় এসে ভাড়া বাসায় ওঠেন এবং ট্রাক-ড্রাইভারের পেশা গ্রহণ করেন। “দিন আনি দিন খায়” পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও মেধাবী তরুণ মমিন ইসলাম এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রখ্যাত কলেজ 'ঢাকা কমার্স কলেজ'-এ। স্বপ্ন ছিল পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করার। সফল ব্যবসায়ী হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতেও ছিলেন দৃঢ় প্রত্যয়ী। কিন্তু মাত্র ১৭ বছর বয়স্ক শহীদ মমিন ইসলামের জীবন কেড়ে নেয় ঘাতকের বুলেট। সব স্বপ্ন, বৃদ্ধ দাদা-দাদি, বাবা-মা আর অতি আদরের দুই বোনকে রেখে পরপারে পাড়ি জমান ঘাতকের বুলেট ধারণ করে শহীদ মমিন ইসলাম। শহীদ হওয়ার প্রেক্ষাপট ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা সরকার এদেশের মানুষের ওপর জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসেছিল। এই দীর্ঘ সময়ে গুম -খুন- হত্যা- সন্ত্রাস-লুটপাট আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল তারা। ব্রাহ্মণ্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী ভারতের পদলেহনকারী খুনি হাসিনা সরকার বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে এবং গণ মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে পুরো দেশব্যাপী ভীতি ও ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ডোবা-খাল-বিল যখন লাশের গন্ধে মাতোয়ারা, গণমাধ্যমগুলোর টুটি চেপে ধরা হয়েছিল, পেটিকোট আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন দলের কর্তা ব্যক্তিদের ফাঁসি দিয়ে বিচারিক হত্যাকান্ড চালানো হচ্ছিল, তখন মনে হচ্ছিল এই জগদ্দল পাথরকে জাতির বুক থেকে নামানো যেন অসম্ভব। ঠিক সেই সময়ে পচা শামুকে পা কাটার মত মীমাংসিত কোটা ইস্যু সামনে আনে জালেমশাহীর কর্তাব্যক্তি খুনি হাসিনা। হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ প্রদান করলে কোটাবিরোধী ছাত্ররা মাঠে নেমে এর প্রতিবাদ করে। প্রথমে এ আন্দোলনকে খুনি হাসিনা অপরাপর আন্দোলনের মতো 'ডান্ডা মেরে ঠান্ডা' করার নীতি গ্রহণ করে। গণধিকৃত ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয় কোটা বিরোধী আন্দোলনে সংগ্রামরত ছাত্রদের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে হাসিনা তার স্বভাবসুলভ ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতে শুরু করে। বিশেষ করে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের রাজাকার আখ্যায়িত করলে তা আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে। আন্দোলন বেগবান আরো হয়। আন্দোলনের একপর্যায়ে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদকে সরকারের পেটুয়া বাহিনী গুলি করে হত্যা করলে সমগ্র দেশব্যাপী আন্দোলন আরো তীব্র আকার ধারণ করে। শুরু থেকে আন্দোলনে শহীদ মুমিন ইসলাম সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনের প্রথম ধাপে তিনি টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেটে আঘাতপ্রাপ্তও হন। আন্দোলনও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ৫ই আগস্ট, খুনি হাসেনা হতাহতের দায় স্বীকার করে সেনাপ্রধানের নিকট পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে দিল্লিতে পাড়ি জমায়। পুরো দেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করে স্বৈরশাসকের নাগপাশ হতে। হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তার পেটুয়া বাহিনী হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রাখে। মুক্তির আনন্দে উদ্বেলিত মানুষের মিছিলে গুলি চালিয়ে হত্যার মহোৎসবে মেতে উঠে। শহীদ মুমিনও সেই বিজয় মিছিলে শামিল হয়েছিলেন। মিছিল চলাকালেই শহীদ মুমিন ইসলাম গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পুলিশ একেবারে কাছ থেকে শহীদ মুমিনের বুকে গুলি করে। বিকেল পাঁচটায় গুলিবিদ্ধ হবার মাত্র ১৫ মিনিট পর মা বাবার একমাত্র পুত্র সন্তান এবং দুই বোনের অতি ভালবাসার ভাই শহীদ মমিন ইসলাম মহান প্রভুর সান্নিদ্ধে চলে যান। শহীদ হবার পর স্বজনদের প্রতিক্রিয়া তার অকাল মৃত্যুতে স্বজনরা শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন। তার মা বলেন, "ছেলেটা চলে গেছে কিন্তু রেখে গেছে অনেক। " বৃদ্ধ দাদা রতন বেপারী বলেন, "আমার মোট ৯ জন নাতি। নাতিরা দাদার কবর দেওয়ার কথা ছিল কিন্তু দাদারা নাতিদের কবর দিচ্ছে। আমার নাতিরে যারা মেরেছে আল্লাহ তাদের বিচার করো। " দাদি রাবিয়া বেগম বলেন, "আমার নাতি ছোটবেলায় মরতো কোন আফসোস থাকত না। এত বড় হয়ে মরল এই কষ্ট আমি কোথায় রাখি। আমি এর কঠিন বিচার চাই। " ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মমিন ইসলাম জন্ম : ২১ মার্চ ২০০৭ পেশা : ছাত্র জেলা : ভোলা পিতার নাম : মো: বাবুল পিতার পেশা : ট্রাক চালক মাতার নাম : মোমেনা বেগম, মাতার পেশা: গৃহিণী ভাই-বোন : এক ভাই, দুই বোন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম-ভক্তির হাট মাদ্রাসা, ইউনিয়ন: চরকলমি চার নং ওয়ার্ড, থানা: দক্ষিণ আইচা, জেলা: ভোলা বর্তমান ঠিকানা : বাড়ি-২৩৯, ইস্টার্ন হাউজিং মেইন রোড, থানা: রুপনগর মিরপুর, ঢাকা শহীদ হওয়ার স্থান : মিরপুর ২ নং থানা শহীদ হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ সময় : বিকাল পাঁচটা আঘাতের ধরন : পুলিশ কর্তৃক বুকে গুলি সর্বশেষ পড়াশোনা : একাদশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ঢাকা কমার্স কলেজ শহীদের পরিবারের প্রতি সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা : ১. পরিবারটির একটি স্থায়ী উপার্জনের উৎস তৈরি করে দেওয়া।