জন্ম তারিখ: ১ জুলাই, ২০০০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : লেগুনা চালক শাহাদাতের স্থান : আজমপুর, উত্তরা পূর্ব থানার পাশে, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে উঠা দরিদ্র পরিবারের পরিশ্রমী সন্তান শহীদ মো: আসাদুল্লাহ। তিনি ২০০০ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার রহমতপুর গ্রামে। পিতা মাতার বিচ্ছেদের কারণে জন্মের পর থেকে তিনি নানার বাড়িতে লালিত-পালিত হন। পরবর্তীতে নবম শ্রেণি পর্যন্ত স্থানীয় বালিয়াচন্ডি মাদরাসায় পড়ালেখা করেন। নানার মৃত্যুর পর ইতি টানতে হয় পড়ালেখায়। এরপর মামা তাকে ঢাকায় এনে রেস্টুরেন্টে কাজ খুঁজে দেন। তাছাড়া ঢাকায় আসার পর তিনি গাড়ি মেরামত, ড্রাইভিংসহ বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। তিনি ২০২৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর নুরানী খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর তারা শ্বশুর বাড়িতেই থাকতেন। তার শশুর ছিলেন একজন সবজি বিক্রেতা। কষ্টার্জিত টাকা হতে তিনি ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে আসাদুল্লাহকে একটি লেগুনা কিনে দেন। লেগুনা দ্বারা উপার্জিত অর্থ দিয়েই শহীদ আসাদুল্লাহ রুটি-রুজি আর পারিবারিক ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতেন। শাহাদাতের সময় তার স্ত্রী ৮ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। সামগ্রিক ঘটনার বর্ণনা ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর বিপথগামী প্রশাসন ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় ক্রমান্বয়ে আহত ও নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছিল। ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সমাজের কৃষক, শ্রমিক, বৃদ্ধ, জেলে, কুমারসহ সকল পেশার মানুষ তখন রাস্তায় নেমে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্র জনতার আন্দোলনে যোগ দেন আসাদুল্লাহ। প্রতিদিনের মতো ১৮ জুলাই বিকেল ৩টায় লেগুনা নিয়ে তিনি আসেন আজমপুর। সেখানে আগে থেকেই স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ এবং দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল। দেশকে জুলুমবাজ শাসকের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আসাদুল্লাহও নিজ লেগুনা থেকে নেমে এসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দেন। সেদিন দুপুর থেকেই পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্র-জনতার উপর টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়ছিল। আসাদুল্লাহ অবস্থান নিয়েছিল আজমপুরস্থ উত্তরা থানার ঠিক পাশেই। তিনি রাজপথ না ছাড়তে ছাত্র-জনতাকে উৎসাহ দিতে থাকেন। দুপক্ষের সংঘাত চলাকালে বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের ছোড়া ৩টি বুলেট তার পেট ভেদ করে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্ররা তৎক্ষনাৎ তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রাত ৮টার দিকে আসাদুল্লাহ শাহাদাত বরণ করেন। দুনিয়ার সফর শেষ করার সময় তার স্ত্রীর গর্ভে ছিল ৮ মাসের সন্তান। শহীদ আসাদুল্লাহ'র প্রতিবেশীর বক্তব্য আসাদুল্লাহ’র প্রতিবেশী ইবরাহীম বলেন, প্রতিবেশী আসাদুল্লাহ আমাদের প্রতিবেশি। তিনি ভদ্র ও মিশুক ছিলেন। দেখা হলে সালাম দিয়ে কথা বলতেন, খোঁজ খবর নিতেন। ১৮ জুলাই সে আমাকে জানালো যে, আজমপুরে গোলাগুলি চলছে; আমি যেন সেদিকে না যাই। অথচ সন্ধ্যা বেলায় জানতে পারি, আসাদুল্লাহ’ই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে। এক নজরে শহীদ মো: আসাদুল্লাহ নাম : মো: আসাদুল্লাহ ধর্ম : ইসলাম শিক্ষাগত যোগ্যতা : নবম শ্রেণি জন্ম তারিখ ও বয়স : ০১-০৭-২০০০; ২৪ বছর আহত হওয়ার তারিখ : ১৮ জুলাই, ২০২৪ শাহাদাতের তারিখ : ১৮ জুলাই, ২০২৪ স্থান : উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল শাহাদাতের সময় : রাত ৮ টা ঘটনার স্থান : আজমপুর, উত্তরা পূর্ব থানার পাশে, ঢাকা আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ শহীদের কবরের অবস্থান : শ্রীবরদী, শেরপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: রহমতপুর, ইউনিয়ন: বালিয়াচন্ডি থানা: শ্রীবরদী, জেলা: শেরপুর বর্তমান ঠিকনা : বাসা: মধ্যপাড়া, এলাকা: সরকারপাড়া, থানা: উত্তরখান, জেলা: ঢাকা পিতা : মো: জৈনুদ্দিন, বয়স: ৬৫ বছর মাতা : মোসা: রাশেদা বেগম, পেশা ও বয়স: গৃহিণী, ৫৫ বছর আয়ের উৎস : ভাঁড়ায় চালিত লেগুনা, রুট: হেলাল মার্কেট-আব্দুল্লাপুর মাসিক আয় : আনুমানিক ২৫ হাজার টাকা পারিবারিক সদস্য : ৩ স্ত্রী : নুরানী খাতুন বয়স : ২০, বিবাহের তারিখ: ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্তান : স্ত্রী সন্তানসম্ভবা (গর্ভে ৮ মাসের সন্তান রয়েছে) পারিবারিক তথ্য : ছোট অবস্থায় পিতা মাতার বিচ্ছেদ, পরবর্তীতে মায়ের অন্যত্র বিয়ে