Image of সাব্বির হোসেন রনি

নাম: সাব্বির হোসেন রনি

জন্ম তারিখ: ২৫ জুন, ২০০১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৫

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর- ২

শহীদের জীবনী

পুরো নাম সাব্বির হোসেন রনি। ২৫ জুলাই ২০০১ সালে ঢাকা জেলায় জন্ম গ্রহন করেন। মা রাশেদা বেগম এবং বাবা মহিউদ্দিনের ২ সন্তানের মধ্যে ছোট ছিলেন রনি। তিনি হারুন মোল্লা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১২ এলাকায় মা বাবার সাথেই বসবাস করতেন। বেড়ে উঠা সাব্বির হেসেনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। বাবা-মা এবং বড় বোন তাহমিনার স্নেহ-ভালোবাসায় শৈশব কৈশোর পার করেন রনি। ২০২৩ সালে এইচ এসসি পরীক্ষায় উত্তির্ণ হন। পরিকল্পনা করেছিলেন বিদেশে পাড়ি জমানোর। একই সাথে, দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তার জীবন-যাপন ছিলো সাধাসিধে। শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ আর তারুণ্যের তেজ ও দৃঢ়-প্রত্যয়ী মনোভাব নিয়ে পা রাখেন ২৩ বছরে। এই তেজই তাকে উদ্দীপ্ত করেছিল ন্যায়বিচারের দাবী নিয়ে রাজপথে নামার। ন্যায়ের জন্য রনি ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার সাধারণ ছাত্রদের অধিকারের সাথে ছেলেখেলা শুরু করে। ২০১৮ সালে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে কোটা পদ্ধতি বাতিল হওয়ার রায়টি ২০২৪ সালে এসে পুনর্বহাল রাখা হয়। অর্থাৎ সরকারীর চাকরির ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডে আবেদন করা সমগ্র চাকুরী প্রার্থীদের মধ্যে মাত্র ৪৪ শতাংশ নিয়োগ দেয়া হবে মেধার ভিত্তিতে ও বাকি ৫৬ শতাংশ নির্ধারণ করবে কোটার মাধ্যমে। প্রহসনের এই রায়কে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতা মাঠে নামে। মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচী, মিডিয়ায় বিবৃতি প্রদানসহ নানাবিধ কর্মসূচী বাস্তবায়ন হতে থাকে। একজন ছাত্র হিসেবে রনিও নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে রনিকে কোনো ভাবেই ঘর থেকে বের হতে দিতে চাননি পরিবারে সদস্যরা। কিন্তু একজন নির্ভীক তরুণকে কি পারিবারিক ভালোবাসার মোহে আটকে রাখা যায়? পরিবারের বাঁধার কথা চিন্তা করে মা-বাবা কিংবা বড় বোনকে না জানিয়েই আন্দোলনে যোগ দিতে থাকে রনি। রাজপথে স্লোগান তোলে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে মা-বাবা বিষয়টি জানতে পারলেও তাকে আর বাঁধা দেননি। আন্দোলন ক্রমশ তীব্রতর হতে থাকে। সাথে বাড়তে থাকে আওয়ামী বর্বরতা। এলো সেই দিন জুলাই মাস জুড়ে স্বৈরাচারী খুনি অবৈধ সরকার আন্দোলনকারীদের নির্মূল করতে ঘরে ঘরে অভিযান, গ্রেফতার, রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট বন্ধ, যাতায়াতে সীমাবদ্ধতা, কারফিউ জারি, অফিস আদালতসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করাসহ নানা রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। স্বৈরাচারী সরকারের প্রহসনমূলক এমন কর্মসূচীতে দিনে দিনে সাধারণ জনতার ক্ষোভ আরো বাড়তে থাকে। ছাত্র-জনতা ধীরে ধীরে আরো কঠোর কর্মসূচী দিতে থাকে। আন্দোলন চুড়ান্ত রূপ ধারণ করার পর এই বিশাল গণজোয়ারের মুখে টিকতে পারেনা রক্ত পিপাসু হাসিনা। ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ক্লান্তির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠে পুরো দেশ। রাজধানীতে বিকালের এ ঘটনার আগে সকালে বিরাজ করছিল এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। একারনে রনির সকালটা ঘরেই কাঁটে। যখন শুনতে পেল সরকারের পলায়ন ঘটেছে, নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না। মা বাঁধা দিলেও বাবা আশ্বাস দেয় ‘যেহেতু স্বৈরাচার আর নেই তাই ভয় কেঁটে গেছে’। এক কাজিনকে সাথে নিয়ে মিরপুর ১০-এ গেল বিজয় মিছিলে। আর কোনো বাঁধা নেই। সবাইকে বুক চিতিয়ে ঘোষনা দিচ্ছে ‘আমার দেশ স্বাধীন’। বড় বোন আর দুলাভাইকে ভিডিও কলে উচ্ছ্বসিত চোখ নিয়ে স্বৈরাচারের পতনের বার্তা বারবার দিচ্ছিলেন তিনি। বড় বোন জিজ্ঞেস করলো গণভবনের দিকে যাবে কিনা; কারন সবাই সেদিকটায় গিয়ে উদযাপন করছে। কিন্তু রনি অসম্মতি জানিয়ে বাসায় ফেরার কথা জানালেন। এরকমই তো একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের ভাবনা গুলো হয়ে থাকে। যেখানে বিজয়টাই সবচেয়ে আনন্দের উদযাপনটা নয়। তিনি বাসার পথে রওনা দিলেন। কিন্তু কোনো এক কারণে মিরপুর-২ এ এসে সম্মুখিন হলেন বিপদের। এদিকটাতে মানুষের ভীড় কম থাকায় ঘাতক পুলিশ আক্রমণ করার সুযোগ পেয়ে যায়। কাঁদানে গ্যাস আর লাঠি চার্জ চলতে থাকে অবিরাম। মাঝে মাঝে গুলিও ছুড়তে থাকে তারা। হট্টগোলের মধ্যে রনি ও তার কাজিন পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রনি ঢুকে পরে ২ নম্বর শপিং কমপ্লেক্সে আর তার কাজিন কাছের পাম্পের ভিতরে। এদিকে গোলাগুলি ভয়ংকর রুপ নিতে থাকে। মিনিট দশেক পর রনিকে ফোন দেয় রনির সাথে থাকা আত্মীয়। কিন্তু রনি ফোন রিসিভ করছে না। হঠাৎ ফোনটা রিসিভ হয়। একটি অচেনা, ভয়ার্ত ও পেরেশানী কন্ঠ ওপাশ থেকে ভেসে আসে। কথক জানায়, ‘রনির গুলি লেগেছে। পুলিশরুপী নরপিশাচেরা খুব কাছ থেকে গুলি করে রনির বুক ঝাঝড়া করে দিয়েছে’। তার সুঠাম দেহ তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এদিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে রনির আত্মীয়। তাকে জানানো হয় নিকটস্থ ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি পাগলের মতো ছুটে সেখানে পৌছান। গিয়ে জানতে পারেন এখান থেকে তাকে পাঠানো হয়েছে কুর্মিটোলা হাসপাতালে। সেখানে যাওয়ার পথে ফোন পায় হাসপাতাল থেকে। জানতে পারে রনি আর বেঁচে নেই। পুরো পৃথিবী তখন তার সামনে ঝাপসা হয়ে যায়। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। নিজ দায়িত্বেই রনির মৃতদেহ নিয়ে বাড়ি পৌঁছেন। দেশ স্বাধীন হলো। স্বাধীন দেশের আলো হাওয়ায় তৃপ্তির নিঃশ্বাসটা নিতে পারলোনা শহীদ রনি। হেসে-খেলে বেড়ানো সরল জীবনটাকে এভাবেই অসময়ে শেষ করে দিলো হায়েনার দল। শহীদ রনির পরিবারের অর্থিক অবস্থা খুব স্বচ্ছল নয়। হাড় ও কিডনির সমস্যায় জর্জরিত মা রাশেদা বেগম ছেলের মৃত্যুশোকে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদিকে অসুস্থতাজনিত কারণে বাবা তেমন কোনো কাজ করতে পারেননা। দোতলা বাড়িটার উপরতলার যতসামান্য ভাড়ায় তাদের সংসার পরিচালিত হয়। টিভি সাক্ষাৎকারে বাবা মহিউদ্দিন জানান, ‘তার চাওয়া শুধু একটাই। দেশের জন্য যেহেতু ছেলেটা জীবন দিয়েছে তাই দেশের মানুষ যেনো তার ছেলের জন্য দোয়া করেন’। আল্লাহ শহীদ সাব্বির হোসেন রনির পরবারকে আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও ছেলের শোকের অসীম বেদনা থেকে ধৈর্য্য ধরার তৌফিক দিন এবং শহীদ রনির এই আত্মত্যাগকে মহান রব কবুল করে নিন। আমিন। এক নজরে শহীদ রনি নাম : সাব্বির হোসেন রনি জন্ম : ২৫.০৬.২০০১ জন্মস্থান : মিরপুর, ঢাকা পেশা : ছাত্র (বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু) শহীদ হয় : ৫ আগস্ট, ২০২৪ বাসস্থান : স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা- ২/এ লেন ১১বি, ব্লক ডি, শাহাদাতের স্থান : , ঢাকা বাবা : মো: মহিউদ্দিন মা : রাশিদা বেগম বোন : (১ বোন) তাহমিনা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of সাব্বির হোসেন রনি
Image of সাব্বির হোসেন রনি
Image of সাব্বির হোসেন রনি
Image of সাব্বির হোসেন রনি
Image of সাব্বির হোসেন রনি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মোঃ ইয়াকুব

লিটন হাসান লালু

মো: সাকিব হাসান

সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন

অজ্ঞাত

মো: আসিফ ইকবাল

মো: হৃদয় হাওলাদার

জিল্লুর শেখ

মমিন ইসলাম

মো: ইব্রাহিম খলিল

আক্তার হোসেন

মো: মনসুর মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo