জন্ম তারিখ: ১৯ মে, ১৯৭৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : চাকরিজীবী, শাহাদাতের স্থান : বনশ্রী, ঢাকা
বুড়িগঙ্গার তীর ঘেষে পুরান ঢাকার জীর্ণশীর্ণ সুউচ দালানকোঠার মধ্যে এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম শহীদ হাসিব আহসানের। দুরন্ত শৈশবের পুরো সময়টা কাটে ঢাকার অলিতে গলিতে। টানাপোড়েন সংসারে নিজের লেখাপড়া করাই ছিলো দুরূহ কাজ। মাতার অক্লান্ত পরিশ্রমে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে সংসারের ভার কাঁধে নিতে যোগ দেন রাজধানী পল্টনের একটি গাড়ির শো রুমে। স্বল্প বেতনের চাকুরিতে শহীদ হাসিব আহসানের পরিবারের অভাব যেনো নিত্যসঙ্গী। একমাত্র উপার্জনক্ষম শহীদের ছিলো ফুটফুটে দুটি রাজকন্য। বড় মেয়ে মুসাইতা আহসান দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। বনশ্রী ন্যাশনাল আইডিয়ালের ৫ম শ্রেণীতে পড়তো ছোট মেয়ে সারিনা আহসান। শহীদ হাসিব আহসানের পরম চাওয়া ছিলো কলিজার টুকরো দুই মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশের সেবায় নিয়োজিত করা। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই ১৯ শে জুলাই স্বৈরাচারীর বুলেটের আঘাতে শেষ হয়ে যায় তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। শহীদ হওয়ার প্রেক্ষাপট ১৯ শে জুলাই ২০২৪, ছাত্রজনতার বিক্ষোভে টাল মাতাল পুরোদেশ। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী থেকে পেশাজীবী, আবাল বৃদ্ধ বণিতা যেনো আগুনের ফুলকি হয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছে দ্বিধাহীনচিত্তে। যার অন্যতম স্থান ছিল ঢাকার বনশ্রী। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে এ এলাকার আপমর জনসাধারণ। ঘটনার দিন সকালে ছাত্র জনতার বিক্ষোভে জনস্রোতে পরিণত হয় বনশ্রীর সড়ক। ছাত্র জনতা এবং পেটুয়া বাহিনীর মুখোমুখি অবস্থান এক ভীতিকর পরিবেশের আবির্ভাব হয়। নানা বাঁধা উপেক্ষা করে ছাত্রদের বিক্ষোভ সমুদ্রে পরিণত হয়। স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বিনা উসকানিতে নিরীহ আন্দোলনরত ছাত্র জনতার উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে। গুলির শব্দে আশেপাশের এলাকা পরিণত হয় এক যুদ্ধক্ষেত্রে। ঘটনাস্থলের পাশেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন হাসিব আহসান। গুলিতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের নানা সহযোগিতার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন বাসার বারান্দা থেকে। নিজের গন্ডির মধ্যে থেকে সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। ততক্ষণে মুহুর্মুহু গুলিতে আশেপাশের এরিয়া আহতদের স্তুপে পরিণত হয়। মুহুর্তেই দৌড়াদৌড়ি শুরু হয় আহতদের নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে। এদিকে আওয়ামী পুলিশলীগ আশেপাশের প্রতিটি বাড়ির ছাদ হতে নিরীহ নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর গুলি চালায়। উপর থেকে চালানো গুলি কারো মাথায়, কারো পায়ে, কারো হাতে ভেদ করে। মুহুর্তেই এক বিভীষিকার পরিবেশ তৈরি হয়। এমন সময় আচমকা একটি বুলেট হাবিব আহসানের সরাসরি চোখে লাগে। সাথে সাথেই দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বাসায় কান্নার রোল পড়ে যায়। য্দ্ধুাবস্থা থেকে হাসিব আহসানকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াটা ছিলো আরেকটা যুদ্ধের শামিল। অনেক চেষ্টার পর শ্যামলীর নিউরোসাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চারিদিক থেকে আহতদের ভীড়ে হাসপাতালে জায়গা পাওয়াটা অনেক বেশি কষ্টকর ছিলো। পরিবারের উৎকন্ঠায় কেটে যায় তিন দিন তিন রাত। আর্থিল ভাবে অস্বচ্ছল আহসানের পরিবারের জন্য সাময়িক চিকিৎসা ব্যয় অনেকটা মাথায় আকাশ ভাঙার মতো। অবশেষে দীর্ঘ তিন দিন ওঈট এর নির্মম যন্ত্রণা সহ্য করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শহীদ হাসিব আহসান। চলে যান আল্লাহর জিম্মায়। পুরো পরিবারকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে পরপারে পাড়ি জমান দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অগ্রপথিক শহীদ হাসিব আহসান। তার মৃত্যুতে পরিবার হয়ে পড়েন বাকরুদ্ধ ও বিপর্যস্ত। মৃত্যুর পর তার মা খালেদা বেগম গণণ বিদারী চিৎকার দিয়ে শুধু একটি কথাই বার বার বলছিলো-কেনো আমার ছেলেকে গুলি করা হলো? ও তো কোন দোষ করেনি। নির্বিকার মায়ের কন্ঠের প্রতিধ্বনিই শুধুই বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এর কোনো জবাব আসে না। শহীদ হাবিব আহসানের মৃত্যুর মাধ্যমে অচিরেই নিভে যায় জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠা আশার প্রদীপ। শহীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পুরো নাম : মো: হাসিব আহসান জন্মতারিখ : ১৯/০৫/১৯৭৪ পিতার নাম : মৃত আহসান হাবিব মায়ের নাম : খালেদা বেগম, বয়স : ৭০ পেশা: গৃহিণী স্ত্রীর নাম : জেসমিন আহসান, বয়স: ৪৮ পেশা : গৃহিণী পারিবারিক সদস্য : ৪ জন পরিবারের মাসিক আয় : ২৫ হাজার টাকা ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা : দুই মেয়ে ১) বড় মেয়ে : মোসা: সুমাইতা আহসান, বয়স: ২২, পেশা: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ২য় বর্ষ ২) ছোট মেয়ে : সারিনা আহসান, বয়স: ১৩, শিক্ষার্থী: বনশ্রী ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল স্থায়ী ঠিকানা : ১৯ নং সতীশ সরকার রোড, থানা: গেন্ডারিয়া, জেলা: ঢাকা বর্তমান ঠিকানা : ৩ রোড, সি ব্লক, ২৫ বাসা, বনশ্রী, ঢাকা ঘটনার স্থান : বনশ্রী, ঢাকা মেট্রোপলিটন, ঢাকা আঘাতকারী : সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে আহত হওয়ার সময় : বিকাল ৩ টা, নিজ বাসায় নিহত হওয়ার স্থান ও সময় : নিউরোসাইন্স হাসপাতালের আইসিইউতে রাত ২টায় শহীদের কবরে অবস্থান : গেন্ডারিয়া পারিবারিক কবরস্থান