জন্ম তারিখ: ১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : অটো চালক শাহাদাতের স্থান : মেরুল বাড্ডা, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি মো: সাজিদ হাওলাদার। তার সবচেয়ে গৌরবজনক পরিচয় তিনি ২৪ এর বিপ্লবের একজন গর্বিত শহীদ। দেশের জন্য তিনি অকাতরে দান করেছেন নিজের জীবন। তার বাবার নাম জনাব সুলতান হাওলাদার। মাতার নাম চায়না বেগম। সুন্দরকাবী গ্রামটি ঘোমদুধাল ইউনিয়নে অবস্থিত। বাকেরগঞ্জ থানা বরিশাল জেলার একটি কাব্যময় নাম সুন্দরকাবী গ্রাম। সে গ্রামেরই সন্তান শহীদ মো সাজিদ হাওলাদার। তার অবস্থান ছিল ঢাকায়। ঢাকার ঠিকানা ৭ নং বাবুর বিল্ডিং, শাহাবুদ্দিন রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা। পেশায় ছিলেন একজন অটো চালক। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ০১-০২-২০০৩ তারিখে। পারিবারিক জীবনে শহীদ সাজিদ ছিলেন সংগ্রামী মানুষ। শৈশবেই বাবা মায়ের বিচ্ছেদ। জীবন তার হয়ে উঠে দুঃখময়। তার ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। দারিদ্রতা আর অভিভাবক শূন্যতার কারণে তিনি লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য হন। জীবন টিকিয়ে রাখতে নেমে পড়েন সংগ্রামে। সংগ্রামী জীবনেই বিয়ে করেন। জীবন অতিবাহিত করতে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন অটো চালানো। এভাবেই জীবন চলছিল। নিজের কোনো বাসস্থান ছিল না। শ্বশুরবাড়ি ছিল আশ্রয়ের কেন্দ্র। ঢাকায় থাকতো ৫০০০ টাকা ভাড়া বাসায়। ৫ আগস্ট তার জীবনের সমাপ্তি ঘটায় পতিত সরকারের হিংস্র পুলিশ। ঘটনার বর্ণনা ৫ আগস্ট বলা হয় দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের দিন। এ দিন দুপুরে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। আত্মগোপনে চলে যায় আওয়ামী সরকারের সকল মন্ত্রী এমপিরা। জুলাইয়ে শুরুতেই কোটা বিরোধী আন্দোলনে তপ্ত হতে থাকে দেশ। ক্রমশঃ আন্দোলন ছাত্র থেকে ছাত্র-জনতায় বর্ধিত হয়। স্বৈরশাসকের পতনের আন্দোলনে রাজপথে নেমে আসে জনতা। সরকার শুরু করে দমন পীড়ন। জনতার বুকে ছুঁড়ে গুলি। শত শত মায়ের বুক খালি করে হাসিনা সরকার। পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সাথে হত্যা মিশনে যোগ দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। মিছিলে গুলি করে। আন্দোলন তবু থামে না। ৪ আগস্ট খুনি হাসিনার পেটুয়া বাহিনী একদিনে খুন করে শতাধিক মানুষ। গদি রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে হাসিনা। আন্দোলনকারীরা ডাক দেয় লং মার্চের। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী ছিল ৬ আগস্ট লং মার্চ টু ঢাকা ৬। প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে কর্মসূচি একদিন সামনে নিয়ে আসা হয়। সরকার ইতিপূর্বেই কার্ফিউ দিয়ে দেশকে থমথমে পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে। লং মার্চ টু ঢাকার উদ্দেশ্য গণভবন ঘেরাও। ৫ আগস্ট সারা ঢাকা অবরুদ্ধ। যেন যুদ্ধ নগরী। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে জনতা ঢাকায় প্রবেশ করে। জনজোয়ার ঢাকায়। হাজার হাজার,লক্ষ লক্ষ জনতা। কোটি জনতার স্লোগানে ঢাকার রাজপথ কাঁপছে। বেলা একটার দিকেই বাতাসে খবর আসে পদত্যাগ করছেন হাসিনা। সেনাবাহিনীর অবস্থান শিথিল হয়ে যায়। ঢাকার মিরপুর ১০ এ লক্ষ লক্ষ জনতা সেনাবাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে গণভবনের দিকে যাত্রা করে। দুইটায় বিজয় স্মরণীর কাছে পৌঁছাতেই আকাশে পরপর দুটো বিমান উড়তে দেখা যায়। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত পলাইছে রে পলাইছে, শেখ হাসিনা পলাইছে। জনতার জয় হয়। আন্দোলনকারীরা বিজয়ী হয়। বিজয়োল্লাসে নেমে পড়ে মানুষ। সব মানুষ যেন রাস্তায় নেমে আসে। অংশগ্রহণ করে বিজয় আনন্দে। সাজিদ হাওলাদারও সেই আনন্দে যোগ দেন। সাজিদ হাওলাদার ছিলেন গণতন্ত্র এবং মানুষের অধিকারের জন্য সোচ্চার একজন তরুণ। দেশের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা দেশ ছাড়ার খবরে তিনি আনন্দ মিছিলে অংশ নেন। হাসিনা পালিয়ে গেছে কোথাও কোথাও তখনও তার দোসররা রয়েছেন সক্রিয়। অনুগত পুলিশ বাহিনী আর যুবলীগের গুণ্ডাবাহিনী আগের মতোই করতে থাকে খুনি আচরণ। সাজিদরা বিজয় আনন্দ উপভোগ করে ফিরছেন। রাত তখন ১২ টা। ৫ আগস্টের দিবাগত রাত। সাজিদ ও তার বন্ধুরা পৌঁছায় মেরুল বাড্ডায়। ওখানকার পুলিশ বাহিনী তখনও গুলি ছুড়তে থাকে জনতার দিকে। পুলিশের ছোড়া একটি গুলিতে নির্মম নিহত হন সাজিদ। গুলিবিদ্ধ সাজিদকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। মৃত ঘোষণার পর লাশ রাখা হয় অজ্ঞাত হিসেবে মর্গে। ৬ আগস্ট তার স্ত্রী লাশ সনাক্ত করেন। তার মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ৫ টি গুলির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। সাজিদ হাওলাদারের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রামের মানুষ তাদের প্রিয় সন্তানকে চিরনিদ্রায় শায়িত করতে জড়ো হয়েছিলেন দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে। তাকে বরিশালে নিজ এলাকায় স্থানীয় কবরস্থানে কবর দেওয়া হয়। নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি। সাজিদ খুব ভদ্র বিনয়ী ছিল। তার প্রতিবেশীদের মতে সে কখনও কারও সাথে উচ্চ কণ্ঠে কথা বলতো না। সবার সাথে মিলেমিশে থাকতো। বন্ধুদের সাথে ছিল সুসম্পর্ক। সাজিদ ছিল মিশুক স্বভাবের মানুষ। তার শ্বশুর বলেন, “সাজিদ আমার ছেলের মতো। খুব ভালো ছেলে ছিল। আমি আমার মেয়ে জামাইর খুনিদের বিচার চাই।” পারিবারিক অবস্থা পিতামাতা আলাদা থাকায় একক জীবনই কেটেছে তার। বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে ছিল তার সুখের সংসার। শরনা আক্তার নামে ২ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান আছে তার। তার আশ্রয় ছিল শ্বশুরবাড়ি। সাজিদ ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। তিনি মারা যাওয়ায় তার স্ত্রী শিশু কন্যাকে নিয়ে চরম সংকটে দিনযাপন করছেন। মারা যাওয়ার আগে ব্রাক ব্যাংক থেকে নিয়েছিলেন এক লক্ষ টাকা ঋণ। এটি একটি বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারটির ঘাড়ে। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : শহীদ সাজিদ হাওলাদার জন্ম তারিখ : ০১-০২-২০০৩ পিতা : সুলতান হাওলাদার মাতা : চায়না বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: সুন্দরকাবী, ইউনিয়ন: ঘোমাদুধাল, থানা: বাকেরগঞ্জ, জেলা: বরিশাল বর্তমান ঠিকানা : ০৭ নং বাবুর বিল্ডিং, শাহাবুদ্দিন রোড, উত্তর বাড্ডা ঢাকা সংসারে সদস্য : স্ত্রী ও দুই বছরের এক কন্যা পেশা : অটো চালক শাহাদাত চিত্র : মেরুল বাড্ডায়, ৫ আগস্ট রাত ১২টায় পুলিশ গুলি করে। মাথায় ও অন্যান্য স্থানে বুলেটবিদ্ধ হন, ধারণা করা হয় তখনই মারা যান। ঢাকা মেডিকেল মর্গে লাশ সনাক্ত হয় ৬ আগস্ট। মৃত্যু : ৫-০৮-২০২৪, রাত বারোটায় প্রস্তাবনা স্ত্রীর জন্য জরুরি এককালীন নগদ অর্থ মাসিক অনুদান / ভাতা দেওয়া প্রয়োজন মেয়ে শিশুটির ভরণপোষণ ও শিক্ষিত করে গড়ে তোলার যাবতীয় সহযোগিতা দরকার
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনোই মৃত মনে করো না; বরং তারা জীবিত এবং তাদের রবের কাছ থেকে তারা জীবিকা-প্রাপ্ত হয়ে থাকে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৬৯)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৯)



