জন্ম তারিখ: ২০ এপ্রিল, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : বানিয়াচং থানার সামনে
হবিগঞ্জ জেলার লাইড়া হাট গ্রামের খুব দারিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ মো: মোজাক্কির মিয়া। পিতা সমসের উল্লাহ ও মাতা খুশ বানু বিবির ঘরে ২০-০৪-১৯৯০ তারিখে জন্মগ্রহণের পর থেকেই দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করতে হয় মোজাক্কির মিয়াকে। মোজাক্কির মিয়াকে ছোট রেখেই বাবা সমসের উল্লাহ মারা যান। তারপর থেকেই নিজের পায়ে দাড়ানোর অপ্রাণ চেষ্টা করেন শহীদ মোজাক্কির মিয়া। দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়ার তেমন সুযোগ হয়নি তাঁর। কিন্তু সত্যের পথে তিনি সারা জীবন অবিচল থাকার চেষ্টা করেছেন। শাহাদাতের ঘটনা কি প্রয়োজন ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যাবার? গরীব মানুষদের আবার কিসের আন্দোলন। পরিবারের সুখের জন্য দুবেলা দু'মুঠো খাবারে জন্যই যে ছুটাছুটি এটাইতো বড় আন্দোলন। এ ধরনের মন্তব্য অনেকেই করে থাকেন। কিন্তু সত্যের পথে চলা যার জীবনের বড় স্বপ্ন তাকে কি আর অভাব অসচ্ছলতা কিংবা দারিদ্রতা ধরে রাখতে পারে? সব কিছুকে উপেক্ষা করে সে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়। জালিম সরকারের দোসরা ভেবেছিল যে বাংলার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে আমরা চিরদিন এই বাংলাদেশের বুকে অন্যায় ভাবে টিকে থাকবো আমাদের উপরে কেউ কখনো মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভেবেছিল, আমি যদি দেশ ছেড়ে চলেও যাই যেন এদেশের মানুষ ভালোভাবে থাকতে না পারে। এদেশের প্রতিটি পরিবারে যেন কান্নার রোল পড়ে যায়। তাই শেখ হাসিনা তার পোষা বাহিনীদের সাধারণ ছাত্র-জনতা সহ আন্দোলনকারীদের নির্দ্বিধায় হত্যার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সাধারণ ছাত্র জনতা এবং এ দেশের আপামর সাধারণ মানুষ সেই হত্যার নির্দেশকে উপেক্ষা করে ,তাদের দেশকে বাঁচানোর জন্য রাজপথ ছেড়ে না যাওয়ার কঠিন শপথ নেন। দিন মজুর মোজাক্কির মিয়া সন্তানদের পেটের আহারের জন্য ভাংগাড়ি মাল কিনতে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াতেন। কখনো বানিয়াচং থানার সামনে, কখনো এই গ্রাম থেকে ঐ গ্রামে ভাংগাড়ি মাল খুঁজে বেড়াতেন। কিন্তু গরিব হলেও তিনি ছিলেন সৎ একজন মানুষ। ৫ আগস্ট ২০২৪ সকালে শহীদ মোজাক্কির তার পরিবারকে বিদায় জানালেন। তার আত্মা তাকে বলেছিল যে তার নাম শহীদদের মধ্যে থাকবে। তাই তিনি তার কাছে বললেন প্রিয় স্ত্রী আমি যদি শহীদ হয়ে যাই তুমি আমার সন্তানদের দেখে রেখো। আমরা পরিবারের সমস্ত দায়ভার আমি আল্লাহর উপর ছেড়ে গেলাম। তিনি ৫ আগষ্ট সকাল ১০:১৫ মিনিটের দিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বানিয়াচং থানার সামনে মিছিলে যোগ দেন। তিনি ছিলেন মিছিলের একেবারে সামনের দিকে। সাধারণ ছাত্র জনতা, পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে থানার সামনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এর মধ্যে তাদের এলাকার কুখ্যাত মেম্বর মধু মিয়া মোজাক্কির মিয়াকে দেখে ফেলে। সে নিজে পুলিশকে হুকুম দেয় মোজাক্কির মিয়াকে গুলি করতে। মিছিলে বানিয়াচং থানার পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ সদস্যরা এলোপাথারী গুলি করে। পুলিশ মোজাক্কির মিয়াকে উদ্দেশ্য করে এলোপাথারি গুলি করে। মোজাকের মিয়ার মোট ৪ টি গুলি লাগে। প্রথম গুলি এসে লাগে তার গলায়, ২য় গুলি লাগে তার মাথায়,৩য় গুলি লাগে তার বুকের ডান পাশে, ৪র্থ গুলি লাগে তার ডান পায়ে। ঘটনাস্থলেই তিনি শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর অনুভূতি চাচা, শাহাদ আলী বলেন: "মোজাাক্কির মিয়া অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিল। সে পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে ভাল ব্যবহার করতো। সে সহজ সরল একজন নির্ভেজাল মানুষ ছিল। সে গ্রামের মানুষের কাছে একজন সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিল। সে ছোট একটা ঘরে মা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতো। সে গ্রামে গ্রামে যেয়ে ভাংগড়ী মাল আনতো, আর গঞ্জে যেয়ে বিক্রি করতো। তার কোন শত্রু ছিলনা। কোন দলের বা মতের লোক ছিলনা। সন্ত্রাসী মেম্বর মধু অনেক খারাপ লোক। তার ইশারায় গরিব, সহজ-সরল মোজাকির মিয়ারে পুলিশ গুলি করে মাইরা ফালাইলো"। অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ মোজাক্কির মিয়ার পারিবারিক অবস্থা খুবই দুর্বল। তিনি ভাংগাড়ী মাল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন। তিনি মাঝে মাঝে অন্যের ট্রাক্টর চালাতেন। এছাড়া ও তিনি যখন যে কাজ পেতেন তাই করে সংসার চালাতেন। তিনি ২টি ছোট ছোট শিশু সন্তান রেখে গেছেন। তিনি কোন কিছুই সংসারের জন্য রেখে দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়ার তেমন সুযোগ হয়নি তার। কিন্তু স্বপ্ন একেছিলেন দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে অনেক বড় করবেন। কিন্তু ছেলেদের অবস্থা কতদূর গড়াবে সেটা বলা কঠিন। শহীদ মোজাক্কির মিয়ার পারিবারিক অবস্থা খুবই দুর্বল। তিনি ভাংগাড়ী মাল ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন। তিনি মাঝে মাঝে অন্যের ট্রাক্টর চালাতেন। এছাড়া ও তিনি যখন যে কাজ পেতেন তাই করে সংসার চালাতেন। তিনি ২টি ছোট ছোট শিশু সন্তান রেখে গেছেন। মোজাক্কির কোন কিছুই সংসারের জন্য রেখে যেতে পারেন নি। তার কোন চাষ যোগ্য ফসলি জমি-জমা হিলনা। ঘড়ের ভিটাটুকুই তার একমাত্র সম্বল, তাও অনেক ছোট এবং জরাজীর্ণ টিনের ঘর। তিনি ভাংগাড়ী মালের ব্যবসায় করার জন্য স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ৭০,০০০ (সত্তর হাজার) টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। তার মধ্যে মাত্র ৭,৫০০ টাকা পরিশোধ করেছিলেন মাত্র। বাকি টাকা পাওনাদার সমিতি বার বার তাঁর অসহায় স্ত্রীকে তাগাদা দিচ্ছে দিয়ে দেয়ার জন্য। একেবারে সহায় সম্বলহীন শহীদের স্ত্রী তার অনুজ দুটি শিশু নিয়ে নিদারুণভাবে দিনাতিপাত করছেন। এক নজরে শহীদ মো: মোজাক্কির মিয়া পূর্ণ নাম : মো: মোজাক্কির মিয়া পিতার নাম : মো: শমসের উল্লা মাতার নাম : খুশ বানু বিবি জন্ম তারিখ : ২০-০৪-১৯৯০ জন্মস্থান : লাইড়া হাট, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: লাইড়া হাট, ইউনিয়ন: ১নং লাইড়া হাট, থানা: বানিয়াচং, জেলা হবিগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : (ঐ) লাইড়া হাট, বানিয়াচং, হবিগঞ্জ, বৈবাহিক অবস্থা: বিবাহিত পরিবারের সদস্য : মা, স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে বর্তমান ৪ সদস্যের একটি পরিবার পরিবারের সদস্যদের পরিচয় : ১. মাতা: খুশ বানু বিবি ২. স্ত্রী: মোছা: সুচিনা খাতুন (২৭) ৩. বড় ছেলে: মো: মুজাহিদুল ইসলাম (৫) শিশু শ্রেণী ৪. ছোট ছেলে: মো: মুশারফ হোসেন (৪) শাহাদাতের তারিখ ও সময় : ০৫-০৮-২০২৪ দুপুর ১:৫০ মিনিট শাহাদাতের স্থান : বানিয়াচং থানার সামনে আক্রমণকারী : এলাকার মেম্বার মধু মিয়ার নির্দেশে বানিয়াচং থানার পুলিশ গুলি করে আক্রমণের ধরন : মোজাক্কির মিয়া মোট চারটি গুলি লাগে। প্রথম গুলি এসে লাগে তার গলায় দ্বিতীয় গুলি লাগে তার মাথায়, তৃতীয় গুলি লাগে তার বুকের ডান পার্শ্বে চতুর্থ গুলি লাগে তার ডান পায়ে। ঘটনাস্থলেই মারা যান জানাজা : ০৬-০৮-২০২৪ সকাল ১০ হবিগঞ্জ জেলা স্কুল মাঠে দাফন : নিজ বাড়ির পাশে পারিবারিক কবরস্থানে