Image of মো: তোফাজ্জল হোসেন

নাম: মো: তোফাজ্জল হোসেন

জন্ম তারিখ: ২৪ অক্টোবর, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: সিলেট

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শ্রমিক, শাহাদাতের স্থান : বানিয়াচং থানার সামনে

শহীদের জীবনী

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের এক বীর সৈনিক ছিলেন মধ্যম ও নিম্ন আয়ের পরিবারে জন্মগ্রহণ কারী শ্রমিক নির্মাতা শহীদ মো. তোফাজ্জল ইসলাম। তোফাজলের পারিবারিক অর্থনেতিক অবস্থা খুবই দুর্বল ছিল। গ্রামের অল্প শিক্ষিত শহীদ মো. তোফাজ্জল ছিলেন পেশায় একজন শ্রমিক তথা রং মিস্ত্রি। গতিময় দেশে সময়ের প্রেক্ষাপটে তিনিও নিজের পেশাগত জীবনে রং মিস্ত্রির কাজ ছাড়াও পরিবারের অভাব দূর করে স্বল্প চাহিদা মেটানোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন কর্ম করে যেতেন। কৃষি নির্ভর বাবার অল্প আয় দিয়ে চলতে থাকা পরিবারের অভাব-অনটন দেখে শহীদ মো: তোফাজ্জল ইসলাম শৈশবের স্মৃতিবিজডিত পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে রং মিস্ত্রির পেশা বেছে নিয়ে কর্মজীবনে পা বাড়ান। এখানে ব্যক্তি কেবলই খেলনা মাত্র যার নিজস্ব কোন অস্তিত্ব নেই বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী মধ্যবিত্তদের অভিশপ্ত দায়ভার নিজ কাঁধে নিয়ে একটি অদৃশ্য চক্রাকার কক্ষপথে হেঁটেই চলছে। আর যে সমাজে আমাদের বসবাস তাকে তো মাঝেমধ্যে মনে হয় বোমের কোলোসিয়াস। কানায় কানায় পরিপূর্ণ গ্যালারি, সবাই একটি অসম লড়াইকে বাহবা দিচ্ছে আর সজোরে হাত নেড়ে চেঁচিয়ে বলে যাচ্ছে চালিয়ে যাও" ছাত্র আন্দোলন, চালিয়ে যাও ছাত্র আন্দোলন। তারপর সেই অসম লড়াই ও সংগ্রামের সমাপ্তি শেষে স্বৈরশাসকের পতনকে সান্ত্বনা সূচক উফ' শব্দটি বলেই আন্দোলনরত সবাই পরবর্তী লড়াই দেখবার জন্য যেন উদগ্রীব হয়ে ওঠে। ২২ বছরের তরুণ ও খুঁদে নিমার্ণ শ্রমিক শহীদ মো. তোফাজ্জল হোসেন আমরা যেন কেবলই প্রথার মধ্যেই সর্বদা আবদ্ধ যেকোন গোষ্ঠী কিংবা জাতিভেদেই হোক না কেন। শহীদ মো: তোফাজ্জল ইসলামের জম্ম একটা সাধারণ পরিবারে, তাই নিম্ন মধ্যবিত্তের স্বরূপ চিনতে তাকে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। ছোটবেলা থেকেই শখানো হয়েছে নিম্ম- মধ্যবিত্তের একটি পৃথক মূল্যবোধের জায়গা আছে। নিম্ন-মধ্যবিত্তের বাচঁতে হলে শিক্ষিত হতে হয়,সহনশীল হতে হয়। মধ্যবিত্তরা চাইলেই এমনটি করে না, পড়ে না কিংবা খায়না। কেননা তাদের আর কিছু নাই থাকুক প্রবল আত্মসম্মান আছে। বিবেক আছে, সে শত ঝড়-ঝাপটায় খড়খটো ধরে বেঁচে থাকার অভিনয় করতে পারে। এভাবেই শর্ত সহস্র নিয়মের চর্চায় একসময় সেগুলো যেন প্রথা হয়ে দাঁড়ায়। ধীরে ধীরে সেই একদিন মোটা পুরু চাদরে আমাদের চেপে ধরতে চায়। সেখানে সূর্যের আলো আসার পূর্বে ইতঃস্তুত করে সেখানে খোলা জানালার কাজগুলো মরিচা ধরে ধরে শক্ত হয়ে আটকে যায়, প্রথা ভাঙ্গার নিয়মটি সেখানে অবৈধ। এটি যেমন চিরন্তন সত্য যে, পৃথিবীর সকল জাতিগোষ্ঠীর নিজ নিজ প্রথা থাকে তেমনি শহীদ মো: তোফাজ্জল ইসলামের মতে এটিও প্রথার সঙ্গে লুকিয়ে থাকা এক ধরনের জীবনদর্শন। কিন্তু যে প্রথা ঘুনপোকার মতো সমাজকে নিঃশেষ করে দিয়েছে, মানুষে মানুষে, বিভাজন তৈরি করেছে সেখানে আর যাই হউক দর্শনের কোন জায়গা নেই। পৃথিবীর ইতিহাসের সেই শুরু থেকেই মানুষ কেবল পৃথকীকরণে বিশ্বাসী। শক্তি, বর্ণ এবং সম্পদের উপর ভিত্তি করে বিভাজন, এমনি হয়তো আরো কত নাম না জানা অগনিত বিভাজন, কিন্তু এখানেই শেষ নয় বিভাজন সৃষ্টি করে বিভেদ এবং বিভেদ থেকে কতৃত্ব। পৃথিবীর ইতিহাসের যেখান থেকেই শুরু ইউক না কেন শহীদ মো: তোফাজ্জল ইসলামের মতে সবই এক, সে কেবল বিভাজনের নামে শুধু কর্তৃত্বই দেখে এখানেই তার বিরোধীতা। এখানেই পথের পাঁচালির কারিশমা। সে কোনমতে সম্পদের বিন্যাস যা তার হাতে নাই তার উপর ভিত্তি করে কোন সমাজপুষ্ট খোলবিন্যাসে আবদ্ধ হতে চায় না। "আগামী শতাব্দী হবে নিম্ন - মধ্যবিত্তের ২২ বছর আগের সেই লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পূর্বেই অকাতরে স্বদেশের মায়া ছেড়ে চলে গেলে ও একবিংশ শতাব্দীর মধ্যবিত্তের রূপরেখার সাথে তার পথ দেখানো রূপরেখার অমিল ছিল। রং মিস্ত্রি শহীদ মো: তোফাজ্জল ইসলাম সেদিন মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছিল আর অবাক হচ্ছিল। চুতদর্শী বয়সের সহজ মনের একটি ছেলে যার বেড়ে উঠা একটি মধ্যবিত্ত পরিবেশে তিনি সমাজের অনেক রূপ না দেখলেও উদ্ভট, শত বছরের দাসত্ব আর হীনম্মন্যতা দেখে শৈশব থেকে কৈশোরে পদার্পন করেন। তার নিকট এই কথাগুলো স্বপ্নের মতো হতেই পারে। তাই তিনি বৃত্তের উপর ভিত্তি করে বর্তমান সমাজের যে শ্রেণিবিণ্যাস তা প্রত্যাখান করে। কেননা এই কথা সাত্যি যে তার দেখানো স্বপ্নে ৫ আগস্ট ২০২৪ এ গণবিপ্লবে সম্পৃক্ত সকল ছাত্র-জনতা বিমোহিত হবে। শহীদ পরিচিতি একবিংশ শতাব্দীতে ১ লক্ষ ৫৭০ বর্গ কি.মি. এলাকা জুড়ে কিশোর- কৈশোরের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শহীদ মো: তোফাজ্জল ইসলাম। তার এই ধরনের সাহস ও বীরত্ব শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মের নিকট অনুপ্রেরণা জোগাবে। যা সত্যিই বিরল! মাত্র ২২ বছরের যুবক এমনকি কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা ঐতিহাসিক গণআন্দোলন ১৪৫- আগস্ট ২০২৪ স্বৈরশাসক পতনে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃত শহীদ মো: তোফাজ্জল ইসলাম হবিগঞ্জ জেলার যাত্রাপাশা ইউনিয়নে জাতুকর্ণ পাড়া গ্রামে জম্মগ্রহন করেন। যার জন্মসাল ছিল ২৪-১০-২০০২ তারিখে । তিনি পেশায় ছিলেন একজন দিনমজুর। তিনি বানিয়াচং থানায় সকলের কাছে একজন রং মিস্ত্রি হিসেবে পরিচয় পেলেও তার আচার-আচরণ, চলা ফেরায় সবাই মুগ্ধ ছিলেন। জন্মদাতা বাবা ও মা ছাড়াও বড় ভাইয়ের তেমন কোন আয় পরিলক্ষিত হয়নি। অন্যদিকে পিতার পেশা ছিল কৃষক। অল্প পুঁজি নিয়ে সমাজে বৃত্তবানদের নিকট থেকে পাঁচশতক জমি বর্গা স্বরুপ চাষাবাদ শুরু করলেও খুব বেশি আর্থিকভাবে লাভবান হননি। যার দরুণ পরিবারে এখনো অভাব অনটন লেগেই আছে। তার পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বল। সংসারে উপার্জনের অবস্থা খুবই খারাপ দেখে পড়ালেখা ত্যাগ করে হাল ধরার জন্য রং মিস্ত্রির কাজ করতেন শহীদ মো: তোফাজ্জল ইসলাম। জম্মদাতা বাবা ও তার আয়ের উপর নির্ভর করে পরিবারের আর্থিক অবস্থা মোটামোটি ভালোই চলছিল। হঠাৎ গণআন্দোলনে উপার্জনক্ষম ছেলের মৃত্যুতে তার পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। নির্ভিক, নির্লোভ, সাহসী ও নিরহংকারী শহীদ মো: তোফাজ্জল ইসলাম মানুষ হিসেবে খুবই অমায়িক ছিলেন। সাহসী শহীদ তোফাজ্জল একইসাথে সদা হাস্যোজ্জ্বল, স্মার্ট, ভালো ফুটবলার ও ক্রিকেটার ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দিতেন। তার দারাজ কণ্ঠের স্লোগান খুবই উচ্চস্বরে ধনিত হতো বলেই তার প্রতি পুলিশ ও ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা গুন্ডা ছাত্রলীগের আক্রোশ ছিল প্রবল। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ অকুতোভয় সাহসী শহীদ তোফাজ্জল ইসলাম কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রারম্ভিক থেকেই নিজ পেশা রং মিস্ত্রির পাশাপাশি মিছিল মিটিং-এ সম্পৃক্ত থেকে জাতুকর্ণ পাড়া এলাকায় নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নিজ এলাকা থেকে আমজনতা কে সাথে নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে বানিয়াচং থানার সামনে পৌছালে স্বৈরশাসক, ভোটারবিহীন তথা জনসমর্থনহীন প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্র বিনষ্টকারী শাসক, এমনকি হৃদয়ে লালিত একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় স্বপ্নে দেখা খুনি হাসিনার পেটোয়া বাহিনী যথাক্রমে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামিলীগের সন্ত্রাসীরা ধাওয়া করে। হঠাৎ উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে এক পর্যায়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসর পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ কর্তৃক গুলি ছুঁড়লে তৎক্ষনাত শহীদ তোফাজ্জল ইসলাম গুলি বিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তারপর দেশে দেড়যুগ ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ত্রাসসৃষ্টিকারী, টেন্ডারবাজী ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে জনগনের সম্পদ লুন্ঠনকারী, ধর্ষকসহ বিভিন্ন তকমায় স্বীকৃতি পাওয়া ছাত্রলীগের সদস্যরা এসে আহত তোফাজ্জল ইসলামকে টেনে-হিঁচড়ে থানার মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর পর্যায়ক্রমে ঘাতক পুলিশ ও খুনি ছাত্রলীগ উভয়ই বন্দুকের নল ও লাঠি দিয়ে পেটাতে পেটাতে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এভাবে শহীদ তোফাজ্জল ইসলামের ২২ বছর সংগ্রামী জীবন শেষ হয়ে যায়। যা কখনো কল্পনাতীত ছিল না। শহীদ সর্ম্পকে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর অনুভূতি শহীদ তোফাজ্জলের চাচাত ভাই মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, “তোফাজ্জল ইসলাম ছিলেন অত্যন্ত একজন ভাল প্রকৃতির লোক। ধর্মভীরু শহীদ তোফাজ্জল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে নিয়মিত জামায়াতের সহিত আদায় করতেন। দিনমজুর শহীদ তোফাজ্জলের মুখের ভাষা ছিল খুবই মিষ্টি। তাই সাদামাটা জীবন গড়ার সাথে সাথে সমাজে কিংবা রাষ্ট্রে অন্যায়, বৈষম্যহীনতার মত কোন কাজ দেখলে প্রতিবাদী হয়ে স্বভাব চরিত্রে সমুচিত জবাব দেওয়ার চিত্রও ফুটে উঠত সদা টলমলে ২২ বছরের যুবকের শহীদী চেহারায়। গণআন্দোলনের সময় যখন ছাত্ররা বানিয়াচং থানার সামনে জড়ো হতে লাগল তখন শহীদ তোফাজ্জল ইসলাম তৎক্ষণাত বাসা থেকে বের হয়ে ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে আন্দোলন চলছে, চলবে বলে স্লোগান দিতে থাকে, যা অবিশ্বাস্য ছিল। যার কারণে পেটুয়া বাহিনী পুলিশ ও ছাত্রলীগের আক্রোশ তার প্রতি বেশি ছিল। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : শহীদ মো: তোফাজ্জল হোসেন জম্ম তারিখ : ২৪-১০-২০০২ পেশা : শ্রমিক (দিনমজুর) জম্মস্থান : জাতুকর্ন পাড়া, হবিগঞ্জ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: জাতুকর্ণ পাড়া, ইউনিয়ন: যাত্রাপাশা, থানা: বানিয়াচং, জেলা: হবিগঞ্জ পিতা : আ: রউফ মিয়া, পেশা: কৃষক, বয়স: ৫৫ বছর মাতা : হেনা বেগম, পেশা: গৃহিনী, বয়স: ৪৫ বছর পরিবারের সদস্য : তিন ভাই ও এক বোন ঘটনার স্থান : বানিয়াচং থানার সামনে আক্রমণকারী : ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর পুলিশ ও পেটুয়া ছাত্রলীগ বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪ মৃত্যুর সময় : দুপুর ১১.৩০ মিনিট শহীদের কবরের অবস্থান : নিজ গ্রাম

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: তোফাজ্জল হোসেন
Image of মো: তোফাজ্জল হোসেন
Image of মো: তোফাজ্জল হোসেন
Image of মো: তোফাজ্জল হোসেন
Image of মো: তোফাজ্জল হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সোহেল আহমদ

মো: মোনায়েল আহমেদ

ওয়াসিম

মো: সাদিকুর রহমান

গৌছ উদ্দিন

মিনহাজ আহমদ

ময়নুল ইসলাম

নাহিদুল ইসলাম

মো: মোজাক্কির মিয়া

মো: আশরাফুল আলম

তাজউদ্দিন

কারিমুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo