জন্ম তারিখ: ৩ জুলাই, ১৯৮৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান: গোপালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে
শহীদ তাজউদ্দিন (৩৯) জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৩ জুলাই ১৯৮৫ সালে সিলেট জেলার বারকোড গ্রামে। পেশায় ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ৯ বছর পূর্বে ২০১৫ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী রূমি বেগম একজন গৃহিনী। তাদের সংসারে রয়েছে ফুটফুটে ছোট ২ টা মেয়ে। বড় মেয়ে ঈশা জান্নাত তালহার বয়স ৮ বছর। সে ব্রিটিশ আইডিয়াল স্কুলে ৩য় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। ছোট মেয়ে খাদিজা জান্নাতের বয়স মাত্র ২ বছর। শহীদ তাজউদ্দিন গোলাপগঞ্জ উপজেলার বারকোট বাজারে তার একটি মনোহরি দোকান থেকে প্রাপ্ত আয় ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি কর্মকর্তাদের খাবার সাপ্লাই দিয়ে প্রাপ্ত আয় থেকে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাজউদ্দীন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিন্তু সাহস তার ক্ষুদ্র নয়। ব্যক্তিগত জীবনে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ছাত্রদের দাবিকে যৌক্তিক মনে করেছিলেন তাজউদ্দিন। তাই আন্দোলনের শুরু থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। স্বৈরাচার হাসিনার অন্যায় আর ছাত্রদের উপর অত্যাচার মেনে নিতে পারেননি এই সাহসী ব্যক্তি। বারবার নেট বন্ধ করে হত্যা গুমের ঘৃণ্য ইতিহাস রচনায় যখন মেতে ওঠে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ সরকারি পেটোয়া বাহিনী পুলিশ। জনসম্পৃক্ততা সকল পথ যখন বন্ধ করে দেয় তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার। তখন বাধ্য হয়ে ৪ আগস্ট, আনুমানিক সকাল ১১ টার দিকে মসজিদের মাইক দিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্ররা তাদের পাশে দাঁড়ানো জন্য এলাকাবাসীর কাছে আহ্বান করলে, তিনি ছাত্র-জনতার সাথে মিছিলে যোগদান করেন। কোন প্রকার উস্কানি ছাড়াই হঠাৎ করেই পুলিশ ও বিজিবি নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে তিনি ব্রিটিশ আইডিয়াল স্কুলের পাশে গোপালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন । তার বুকে ও পেটে তিন তিনটি গুলি বিদ্ধ হয়। মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ হয়নি তাকে। শাহাদাতের অমিও সুধা পান করে মহান মনিবের দরবারে হাজির হয়ে যান। তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের দোষ ঢাকতে কোন প্রকার সহযোগিতা করে প্রশাসন। শহীদ তাজউদ্দিনের লাশের ময়না তদন্ত বা সুরতহাল হয়নি। কোন ধরনের মাইকিং না করে তড়িঘড়ি করে তাকে কবরস্থ করা হয়েছে। শহীদ তাজউদ্দিন সম্পর্কে তার প্রতিবেশী চাচী বলেন- তাজউদ্দিন ভাই-বোনের সকলের মাঝে বড়, সংসারের দেখাশুনা তিনিই করতেন। পরিবারের প্রতি তিনি সবসময় নিয়োজিত ছিলেন। ভাই-বোন সকলকে নিয়ে তিনি একসাথে বসবাস করতেন এবং গোটা পরিবার পরিচালনার দায়িত্ব তিনি নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। শহীদ তাজউদ্দিন তার ব্যবসার আয় থেকেই সংসারের সকল ব্যয়ভার নির্বাহ করতেন। তাদের কোন কৃষি জমি নেই, তাই সকল কিছুই কিনে খেতে হয়। শহীদ তাজউদ্দিনের ছোট ভাই বিদেশে থাকে কিন্তু এখনো কোন টাকা পাঠানো শুরু করেনি। তার রেখে যাওয়া দোকানটি চালানোর মতোও কেউ নেই। অসুস্থ মা, বোন, স্ত্রী, ছোট দুই কন্যা সন্তান সহ ছয় সদস্যের তাজউদ্দিনের পরিবারের এখন অসহায় অবস্থা। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : তাজউদ্দিন জন্ম তারিখ : ০৩/০৭/১৯৮৫ পিতার নাম : মৃত মকবুল আলী মায়ের নাম : সুফিয়া বেগম, বয়স: ৭০, পেশা: গৃহিণী স্ত্রীর নাম : রূমি বেগম, পেশা: গৃহিণী পারিবারিক সদস্য : ৬ জন ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা : দুই মেয়ে ১. বড় মেয়ে : ঈশা জান্নাত তালহা, বয়স: ৮ পেশা: শিক্ষার্থী, ব্রিটিশ আইডিয়াল স্কুলে ৩য় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ২. ছোট মেয়ে : খাদিজা জান্নাতের, বয়স: ২ বছর পরিবারের মাসিক আয় : নাই স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বারকোট, ইউনিয়ন: ঢাকা দক্ষিণ, থানা: গোপালগঞ্জ, জেলা: সিলেট বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: বারকোট, ইউনিয়ন: ঢাকা দক্ষিণ, থানা: গোপালগঞ্জ, জেলা: সিলেট ঘটনার স্থান : উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে যা ব্রিটিশ আইডিয়াল স্কুলের পাশে আঘাতকারী : ঘাতক পুলিশের গুলিতে শহীদ আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট ২০২৪, সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১:৩০ টা প্রস্তাবনা ১. তার মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা, সন্তানদের শিক্ষার ব্যয়, সংসার চালানোর ব্যবস্থা করা অতীব জরুরী