জন্ম তারিখ: ৭ মার্চ, ১৯৯২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: সিলেট
পেশা : সিএনজি চালক, শাহাদাতের স্থান: সিলেট কদনতলী সানরাইজ রেস্টুরেন্টের সামনে
গৌছ উদ্দিন সিলেট জেলার গোপালগঞ্জ উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নের ঘোষগাঁও উত্তরে ৭ মার্চ ১৯৯২ সালে এক সাধারণ দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা (মৃত) মবারক আলী এবং মা লেবু বেগম (৫৫) একজন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই সে ছিল অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং মেধাবী। গ্রামের অন্যান্য সাধারণ ছেলেদের মত সেও হেসে খেলে, পড়াশোনা করে জীবন কাটাচ্ছিল। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরে তার জীবন পরিবর্তন হয়ে যায়। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল প্রথম। যেহেতু তার বাবার মৃত্যুর পরে পরিবারে বড় সন্তান হিসেবে ছোট ছোট সকল ভাই বোনের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পরে। পরিবারের ভরণপোষণের জন্য আয় রোজগারের রাস্তায় নেমে পরে গৌছ। এতে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ভাড়ায় সিএনজি চালাত সে। কোনো জমি-জমাও না থাকায় প্রতিদিন সিএনজি চালানো আবশ্যক ছিল গৌছের জন্য। এমনকি অবিবাহিত গৌছ তার বোনের ছেলের পড়াশোনার খরচও বহন করতেন। সংসার চালানোর জন্য তার আয়ই ছিল একমাত্র ভরসা। ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরুর পর থেকে কমতে থাকে যাত্রী পরিবহন এবং গৌছের আয়ও কমতে থাকে। কিন্তু কি আর করার? জুলাই মাসে যত দিন যেতে থাকে তত আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। তখন ছাত্র-জনতা স্বৈরাচার হাসিনার কঠোরতা কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আন্দোলন চালাতে থাকে এবং আগস্ট মাস থেকে শুরু হয় হাসিনা স্বৈরাচারের পদত্যাগের দাবীতে এক দফা আন্দোলন। পুলিশ লীগও বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়তে থাকে এবং তাদের সাথে যোগ দেয় বিজিবি বাহিনী। রাজপথ পরিণত হয় রক্তের সাগরে। গৌস উদ্দিন একদিন আয় না করলে তার মা - ভাইবোন ভাগিনাকে না খেয়ে থাকতে হবে। তাদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটবে। তাই উপায় না দেখে স্বৈরাচার বিরোধী চরম আন্দোলনের মধ্যেও বের হয় অর্থ উপার্জনের জন্য। এরকম ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেও গৌছ পেটের দায়ে আগস্ট মাসের ৪ তারিখে সিএনজি নিয়ে বের হয়। এমতাবস্থায় পুলিশ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। গৌছ ঘটনাস্থলেই ছিলেন, সে পুলিশের গুলির ভিডিও ধারণ করছিল। সেই মুহূর্তে এক রাউন্ড গুলি এসে তার পেটে লাগে এবং পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। মুখ থুবড়ে পড়ে যায় সে, তার গায়ের জামা রক্তে জবজবে হয়ে যায় আর সে মৃত্যু যন্ত্রণায় হাত-পা ছুঁড়তে থাকে। দুঃখের বিষয় গৌছের ধারণকৃত ভিডিওতে তার নিজের মৃত্যুরই ফুটেজ রেকর্ড হয়। আশেপাশে থাকা জনগণ দ্রুত ছুটে আসে গৌছের দিকে এবং তাকে সিলেট উসমানি মেডিকেলে নিয়ে যায়, কিন্তু চিকিৎসার কিছু সময় পরই গৌছ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার লাশ দুই দিন পরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পতন হয় কিন্তু আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করার মত সৌভাগ্য তার আর হয়না। গৌছের মৃত্যুর পর তার পরিবারে নেমে আসে হতাশা। মা লেবু বেগম তার একমাত্র ভরসা সন্তানকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তির মৃত্যুতে অভাবের পরিবারে আরও অভাব বাড়তে থাকে। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা, ভাই-বোনদের পড়াশোনা, আর ভাগিনার পড়াশোনার খরচ যোগাতে অন্যের সহযোগিতার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গৌছের মা কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলেন, 'গৌছ ছিল আমার সব। সে সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করত।' সে বলেছিল 'মা আমি আব্বাকে হারাইছি তোমারে হারাতে পারবনা।' গৌছ উদ্দিনের জীবন ও মৃত্যু শুধুমাত্র একটি ট্রাজেডি নয়; এটি একটি সংগ্রামের কাহিনী। আজও তার স্মৃতি পরিবারের মনে জীবন্ত হয়ে থাকবে। আজীবন দেশের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে গৌছ। এক নজরে শহীদের ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি নাম : গৌছ উদ্দিন জন্ম তারিখ : ৭ মার্চ ১৯৯২ বাবার নাম : (মৃত) মবারক আলী মায়ের নাম : লেবু বেগম (৫৫) পেশা : সিএনজি চালক নিকটাত্মীয় : ৪ ভাই, ১ বোন স্থায়ী ঠিকানা:গ্রাম : ঘোষগাও উত্তর, ইউনিয়ন : ঘোষগাও, উপজেলা : গোপালগঞ্জ, জেলা: সিলেট বর্তমান ঠিকানা : ঐ ঘটনার স্থান : কদনতলী সানরাইজ রেস্টুরেন্টের সামনে আঘাতকারী : পেটোয়া পুলিশলীগ আহত হওয়ার সময় : ৪ আগষ্ট ২০২৪, বিকাল ৪:৩০ মিনিট নিহত হওয়ার সময় : বিকাল ৪:৩০ মিনিটে উসমানী মেডিকেলে নিয়ে গেলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া ২. এককালীন আর্থিক অনুদান ও নিয়মিত মাসিক ভাতা প্রদান ৩. শহীদ পরিবারের সকল খরচ নিশ্চিত করা
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, মারে ও মরে। (সুরা তাওবা ৯:১১১)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৯)
