Image of মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন

নাম: মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন

জন্ম তারিখ: ৩ অক্টোবর, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষার্থী , শাহাদাতের স্থান : গাজীপুর সদর হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন (২০) ১০ মার্চ ২০০৪ সালে গাজীপুরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম এবং মায়ের নাম পারভীন বেগম। আবদুল্লাহ আল মামুন কওমী মাদরাসার পাশাপাশি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। মাদরাসার ছাত্রদের সাথে নিয়ে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। দেশবাসী ভেবেছিল কোটা বিরোধী আন্দোলন শুধু মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের। শুধু কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা স্বৈরশাসকের অপশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। ন্যায়ের পক্ষে থেকে মামুন ও তার সাথীরা এমন ধারণার অবসান ঘটান। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রাণ দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দেন এদেশকে রক্ষার জন্য মাদরাসার ছাত্রদের অবদান কোন অংশে কম নয়। ৪ আগস্ট তিনি আন্দোলন থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। অনেক অনুসন্ধানের পরে ৫ আগস্ট তাকে একটি হাসপাতালে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। কুরআনপ্রেমী তালেবে এলেম শহীদ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ছিলেন একজন কুরআনপ্রেমী তালেবে এলেম। ২৫ পারা কুরআন মুখস্থ ছিল তার। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে মাদরাসার ছাত্রছাত্রীদের অবদান অনস্বীকার্য। যদিও মিডিয়ায় তাদের অবদান তেমনভাবে দেখানো হয়নি। তারা শাহাদাতে তামান্না আর বুকে তাকবিরের স্লোগান ধারণ করেই এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মূলত এই আন্দোলন মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, পাবলিক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট, ইংলিশ মিডিয়ামসহ সকল শ্রেণি পেশার মুক্তিকামী জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। জুলাই বিপ্লব ছিল সর্বস্তরের সকল নিপীড়িতের চূড়ান্ত সম্মিলিত বিক্ষুব্ধ বিস্ফোরণ। এই গণবিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছেন আপামর জনতা এবং অগ্রভাগে ছিল শহীদ, আহত ও পঙ্গুত্ব বরণকারী ভাইয়েরা। খোদা প্রদত্ত জানকে কোরবানি করে তারা সাম্য ও ইনসানিয়াতভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার জিম্মাদারি আমাদের হাতে অর্পণ করে গেছেন ৩৬ জুলাইয়ের সকল শহীদ। ৩৬ দিনের এই আন্দোলন তাই পৃথিবীর অনন্য একটি ইতিহাস হয়েই থাকবে। ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবু সাঈদ। এরপর থেকেই দেশজুড়ে আন্দোলন সর্বব্যাপী রূপে পরিগ্রহ করে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে বাংলাদেশের আকাশ বাতাস। হন্তারক শাসক গোষ্ঠীর নির্মম গণহত্যা আর বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে স্লোগান উঠে--- বুকের ভিতর অনেক ঝর বুক পেতেছি গুলি কর। আমার খায়, আমার পরে আমার বুকেই গুলি করে। তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়-- বন্দুকের নলের সাথে ঝাঁজালো বুকের সংলাপ হয় না’ এবং ‘লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছাইড়া দে। ৩ আগস্ট ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ থেকে শোনা যায়, ‘আমার ভাই কবরে, খুনিরা কেন বাইরে’; ‘আমার ভাই জেলে কেন’ এবং ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’—এসব স্লোগান। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল থেকে শোনা যায়, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ এবং ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’—এর মতো স্লোগানগুলো তাছাড়া নারায়ে তাকবির আল্লাহু হু-আকবার শ্লোগান ছিল জালেমদের বুকে ভয় জাগানিয়া বজ্র ধ্বনি। বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় তাওহীদি জনতা এই আন্দোলনে শরীক হয়। নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর। মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী আমরা সবাই মরতে রাজি। আমরা সবাই রাসূল সেনা ভয় করি না বুলেট বোমা। এই সমস্ত স্লোগানে উজ্জীবিত ছিল বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় মানুষ শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এমনই একজন শহীদ। যারা শিরায় শিরায় রক্ত কণায় একত্ববাদের বীজ। একত্ববাদী ইসলাম প্রিয় অনেক শহীদদের মধ্যে অন্যতম একজন শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। শহীদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০০৪ সালের ১০ মার্চ গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক আন্দারমানিক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম পেশায় একজন প্রবাসী এবং বয়স ৫০ বছর এবং মাতা মোসাম্মৎ পারভীন বেগম ৪০ বছর বয়সী গৃহিণী। সে এলাকায় নম্র ও ভদ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। হাতের লেখা সুন্দরের জন্য সে পুরস্কার পায় এবং ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে লেখাপড়া করে। পরবর্তীতে সে মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতো। কওমি মাদ্রাসার পড়াশোনার পাশাপাশি ২০২১/২২ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এ দশম শ্রেণীতে ভর্তি হন। সৎ, আদর্শবান হিসেবে পরিচিত এবং এলাকাবাসীর কাছে প্রিয় মুখ ছিল। উল্লেখযোগ্য সে ২৫ পারা হাফেজে কুরআন ছিল। নিম্নবিত্ত পরিবারের হওয়ার কারণে সে লেখাপড়ার পাশাপাশি গার্মেন্টসে চাকরি করতো। পিতা ঋণগ্রস্ত থাকায় ছেলের লাশ দেখতে দেশে আসতে পারেনি। আর দুই বোন। তারা প্রায়ই দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার ঋণে জর্জরিত। যেভাবে শহীদ হয় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নীরিহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা। ৪ আগস্ট ২০২০ রবিবার সাড়ে বারোটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে আব্দুল্লাহ আল মামুন যান। মিছিলটি সফিপুর আনসার একাডেমীর সামনে গেলে তার সাথে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ৫ আগস্ট গাজীপুর সদর হাসপাতালে মর্গে তার ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। শহীদের বুকে হাঁটুতে এবং কোমড়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, মিছিলে স্বৈরাচারী সরকারের সশস্ত্র আনসার বাহিনী গুলিবর্ষণ শুরু করে এবং গোলাগুলির একপর্যায়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন গুলিবিদ্ধ হয়। নির্মম ঘাতক বাহিনী এলোপাথাড়ি গুলি করার কারণে শহীদের শরীরে একাধিক গুলি পাওয়া যায়। এর আগে ছাত্র জনতা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে রেখে আসে। জানাযার নামাজ শেষে নিজ এলাকা আন্ধারমানিকে লস্করচালা যৌথ কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য গত ৪ আগস্ট দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটে শহীদের বড় বোন তাকে ফোন দিলে এক অজ্ঞাত মহিলা ফোন রিসিভ করে, আব্দুল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা জানায়। শহীদ আব্দুল্লাহ্ শিক্ষক রাসেল আহমেদ প্রিয় ছাত্রের অকাল মৃত্যুতে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ শিক্ষক হিসেবে গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়। যখন ভাবি আমাদের স্কুলের একজন সাবেক ছাত্র দেশের সস্ত জুলুম, নিপীড়ন, দুর্নীতি অন্যান্য সকল অন্যায় দ্বারা আক্রান্ত বাংলাদেশকে আলকিত করার জন্য শহীদ হয়। ছেলে হিসেবে, সে আমার দেখা অন্যান্য ছেলেমেয়েদের চাইতে সৎ আদর্শবান এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর অটল। আমি এবং এলাকাবাসী শহীদের সঠিক মর্যাদা এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননা চায়। উল্লেখযোগ্য তিনি পিতা-মাতার একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন। আশরাফিয়া মাদ্রাসায় কিতাবখানায় পড়াশোনা করতেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শহীদ মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন (২০) পেশা : শিক্ষার্থী ঠিকানা : আন্দারমানিক, মৌচাক, কালিয়াকৈর, গাজীপুর জন্ম তারিখ : ১০/০৩/২০০৪ পিতা : মো: জাহাঙ্গীর আলম (৫০) পিতার পেশা : প্রবাসী মাতার নাম : মোছা: পারভীন বেগম (৫০) মাতার পেশা : গৃহিণী শহীদের ভাই বোন : তানিয়া আক্তার (২৪), তামান্না আক্তার (১৬) পারিবারের সদস্য সংখ্যা : ৪ জন পারিবারিক আয় : ২৫০০০ টাকা আক্রমণকারী : আনসার বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল : সফিপুর আনসার একাডেমি, গাজীপুর মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ৪-০৮-২০২৪, সময় জানা নেই, সফিপুর আনসার একাডেমি শহীদের কবরের অবস্থান : আন্ধারমানিক লস্করচালা যৌথ কবরস্থান যেভাবে সহযোগিতা করা যায় ১. ঋণ পরিশোধ ২. প্রবাসী বাবাকে দেশে আনা ৩. বাবার কর্মসংস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন
Image of মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন
Image of মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন
Image of মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন
Image of মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মোঃ সিফাত হোসেন

তাওহিদ  সন্যামাত

আক্কাস আলী

 তাহমিদ ভূঁইয়া

ডা: সজিব সরকার

মো: শাকিল হোসেন

কোরমান শেখ

মানিক মিয়া

আরমান মোল্লা

নাদিমুল হাসান এলেম

ইসমাইল হোসেন রাব্বি

আশিকুল ইসলাম রাব্বি

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo