জন্ম তারিখ: ১৫ অক্টোবর, ১৯৮৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : গাজীপুর চৌরাস্তার মুন্নি সরকারের বাড়ির সামনের কবরস্থান
মো: নজরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালের ১৫ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জের বারই ভাগে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান নজরুল ইসলাম ছোট থেকেই জীবনের কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হন। তার পিতা মো: জামাল শেখ ছিলেন একজন কৃষক এবং তার মা, জয়গন বেগম, একজন গৃহিণী। পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে নজরুলের শৈশবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তাতে তার জীবনের প্রতিকূলতাকে হার মানাতে কখনো পিছপা হননি। একটি সংগ্রামী জীবন মো: নজরুল ইসলাম ১৯৮৮ সালের ১৫ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জের বারই ভাগে জন্মগ্রহণ করেন। দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান নজরুল ইসলাম ছোট থেকেই জীবনের কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হন। তার পিতা মোঃ জামাল শেখ ছিলেন একজন কৃষক এবং তার মা, জয়গন বেগম, একজন গৃহিণী। পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে নজরুলের শৈশবে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তাতে তার জীবনের প্রতিকূলতাকে হার মানাতে কখনো পিছপা হননি। সংসারের হাল ধরতে তিনি গাজীপুরে চলে আসেন, যেখানে তিনি টিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামক একটি গার্মেন্টস কারখানায় সহকারী কাটার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর তিনি এই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন। সেখানে কাজ করতে গিয়েই তিনি তার পরিবারের জন্য একটি স্থিতিশীল জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। গাজীপুরের আউট পাড়া এলাকার একটি ছোট বাসায় বসবাস করছিলেন তিনি। তার পরিবারে ছিলেন তার মা-বাবা, স্ত্রী, এবং ভাইবোন, যাদের মধ্যে মো: আমিরুল নামে এক ভাই রয়েছেন, যিনি পেশায় একজন তাতি। কঠিন সংগ্রামী জীবনেও তিনি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। ২০২৪ সালের ২০ জুলাই, তিনি গাজীপুরে ছাত্র ও জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। সে দিন ছিল এক শনিবার, যখন শহীদ নজরুল ইসলাম সকাল ১১:৩০ মিনিটে আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেন। গাজীপুরের মুন্নি সরকারের বাড়ির সামনে পৌঁছালে পুলিশ শান্তিপ্রিয় ছাত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। মিছিলটি পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পাশের একটি কবরস্থানে আশ্রয় নেয়। কিন্তু পুলিশ সেখানে গিয়েও গুলি চালায়। খুব কাছ থেকে গুলি করা হলে শহীদ নজরুল ইসলাম গুরুতর আহত হন এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, দেশের জন্যও এক শোকের দিন। বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ নজরুল ইসলাম তার জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার আত্মত্যাগ বাংলাদেশের আন্দোলন ও সংগ্রামের ইতিহাসে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ ১৯ জুলাই, ২০২৪ শুক্রবার ডিউটি করেছিল নজরুল। ঘটনার দিন শনিবার সারদেশে প্রথম কারফিউ- অফিস বন্ধ তা জানতো না। ফোনে মেসেজ এসেছিলো অফিস বন্ধ। বাজার করে এনেছিল। যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল, আমি যুদ্ধে যাইতেছি। এটাই ছিল শেষ কথা। ২০ জুলাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং দেশব্যাপী কারফিউ জারি হয়। সাধারণ মানুষের চলাচলও স্থগিত হয়ে যায়, যেন দেশটি একটি রক্তাক্ত কারাগারে পরিণত হয়। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর এই নির্মমতা দেশের সাধারণ মানুষকে স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে, শহীদ নজরুল ইসলাম হাজারো ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রতিবাদের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। তারা সকলেই সরকারের অন্যায় এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য পথে নেমেছিলেন। সকাল ১১:৩০ টায়, তিনি গাজীপুর চৌরাস্তার মুন্নি সরকারের বাড়ির সামনে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলেন। কিন্তু সেখানেই শুরু হয় এক নির্মম ঘটনা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে, যখন মিছিল মুন্নি সরকারের বাড়ির সামনে পৌঁছায়, তখন স্বৈরাচার হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ আকস্মিকভাবে আক্রমণ শুরু করে। প্রথমে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে এবং মিছিলের নেতা-কর্মীরা পাশের একটি কবরস্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এই আশ্রয়ের স্থানটিও নিরাপত্তা দিতে পারেনি আন্দোলনকারীদের। নজরুল ইসলামসহ যারা কবরস্থানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা ভেবেছিলেন, সেখানে গিয়ে হয়তো পুলিশের গুলির হাত থেকে রক্ষা পাবেন। কিন্তু পুলিশের নির্মম আক্রমণ সেখানে গিয়েও তাদের পিছু ছাড়েনি। খুনী হাসিনার পুলিশ বাহিনী কবরস্থানে প্রবেশ করে, খুব কাছ থেকে সরাসরি গুলি চালায়। নজরুল ইসলামের শরীরে গুলি লেগে তিনি সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। মৃত্যু হয় তার সেখানেই, তার স্বপ্ন, আশা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে। শহীদ নজরুল ইসলামের এই মৃত্যু একটি হৃদয়বিদারক অধ্যায়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গিয়ে তার প্রাণ চলে যায় নিষ্ঠুর পুলিশের গুলিতে, যা পুরো জাতিকে শোকাচ্ছন্ন করে তোলে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড দেশের মানুষকে আরও দৃঢ় প্রতিরোধের গড়তে অনুপ্রাণিত করে। নজরুল ইসলামের আত্মত্যাগ ন্যায়বিচারের দাবির পক্ষে উদাহরণ হয়ে থাকবে। শহীদ নজরুল ইসলামের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং একটি জাতির হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। তার এই আত্মত্যাগ স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত সকল মানুষের জন্য একটি নিদর্শন হয়ে থাকবে, যা কখনোই ভুলে যাওয়ার মতো নয়। শহিদ সম্পর্কে আত্মীয়-স্বজনের অনুভূতি শহিদের শ্বশুর বললেন, তার কথা আর কী বলব; বলে শেষ করা যাবে না। খুবই ভালো লোক ছিলো। অমন মাটির মানুষ আর হয় না। আমার মেয়েরে খুব ভালো জেনেছে, ভালো রেখেছে। কোন কষ্ট দিয়েছে বলে জানা নেই। 'তুমি' ছাড়া 'তুই' শব্দটিও উচ্চারণ করেনি। আমার মেয়ে খুবই কমবয়সী আইডি কার্ডও হয়নি। সারাক্ষণ কান্না করে। তার চোখের পানি সওয়া যায় না। নজরুলের আচার ব্যবহার নম্রতা দায়িত্বশীলতা অতুলনীয় ছিল❞ পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য শহীদের বাবা-মা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। শহীদ নজরুল ৯ বছরের সংসার জীবনে নিঃসন্তান ছিলেন। তার স্ত্রীও গার্মেন্টস-এ কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে কাজ ছেড়ে নানা বাড়িতে উঠেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর মামলার করার কারণে নানা ভয়ে গাজীপুরের গার্মেন্টসের কর্মস্থল ছেড়েছেন। পিতার বাড়িতে কোন ঘর নেই। ভাড়া বাড়ি ছেড়ে পিতা-মাতাসহ নানাবাড়িতে অবস্থান করছেন। শহিদের স্ত্রীর পরিবার একেবারেই নিঃস্ব অবস্থায় রয়েছেন। শহিদের শ্বশুর বলেন, "এক শতাংশ জায়গা বেচে মেয়ে বিয়ে দিয়েছিলাম। এখন মেয়ের পুনঃবিবাহ দিতে হবে কিন্তু আমিতো নিঃস্ব।" পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ নজরুল ইসলাম একজন গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়িতে কিছু জমি আছে। ফসল থেকে কিছু টাকা পেলেও তারা স্বামী-স্ত্রী গার্মেন্টস-এ চাকরি করতেন। স্বামীর হত্যা নিয়ে মামলা করায় হুমকি-ধামকিতে ভীত হয়ে চাকরি ছেড়ে নানা বাড়িতে উঠেছেন শহীদের স্ত্রী। প্রস্তাবনা মানবিক ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক কর্তব্য। এই পরিবারটি বর্তমানে কঠিন আর্থিক সংকটের মুখোমুখি। শহীদের ত্যাগ আমাদের জন্য যে আদর্শ স্থাপন করেছে, তা অনস্বীকার্য। তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমাদের উচিত তাঁর পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা। প্রথমত, শহীদের স্ত্রীর জীবনধারণের জন্য নিয়মিত ব্যয়ভার বহন করা প্রয়োজন। তিনি বর্তমানে অসহায় অবস্থায় আছেন। তাঁর এই বিপদের সময় আমাদের সহানুভূতির হাত প্রসারিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শহীদের পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত। তাদের মাসিক ও এককালীন আর্থিক সহযোগিতা করা; যাতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যে বাকি জীবন কাটাতে পারেন। এভাবেই আমরা শহীদের পরিবারের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করে তাঁদের ত্যাগের প্রতি সত্যিকার সম্মান জানাতে পারি। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: নজরুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ১৫-১০-১৯৮৮ জন্মস্থান : রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ পেশা/পদবী : গার্মেন্টস কর্মী নিজ জেলা : সিরাজগঞ্জ কর্মরত প্রতিষ্ঠান : জাবেদা টাওয়ার, টিএম ফ্যাসন লি: পদবী : সহকারী কাটার যোগদান : ০৯-১১-২০২১ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বারই ভাগ, ইউনিয়ন: বহুলি, থানা: রায়গঞ্জ, জেলা: সিরাজগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : বাসা নং: ৯৯, এলাকা : আউট পাড়া, চান্দনা, ব্লক-সি, ওয়ার্ড-১৭, অঞ্চল-০৬ থানা: বাসন, জেলা: গাজীপুর পিতার নাম : মো: জামাল শেখ পিতার পেশা : কৃষক মায়ের নাম : জয়গন বেগম মায়ের পেশা : গৃহিণী মাসিক আয় : ১২,৫০০/- আয়ের উৎস : চাকরি ঘটনার স্থান : মুন্নি সরকারের বাড়ি (গাজীপুর) আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : ২০-০৭-২০২৪, দুপুর ১২.০০ মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ২০-০৭-২০২৪, দুপুর ১২.০০ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : নিজ গ্রাম (সিরাজগঞ্জ থানার পাশে)