Image of মো: এলিম হোসেন

নাম: মো: এলিম হোসেন

জন্ম তারিখ: ৬ জুন, ১৯৮২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসায়ী , শাহাদাতের স্থান : সফিপুর আনসার একাডেমি, গাজীপুর

শহীদের জীবনী

মো: এলিম হোসেন ১৯৮২ সালের ৬ জুন গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের রাখালিয়াচালা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো: বেলায়েত হোসেন একজন বৃদ্ধ এবং মাতা আনোয়ারা বেগম একজন গৃহিণী। পিতা-মাতার একমাত্র পুত্র সন্তান হওয়ায় ছোট বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে পড়ে। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে না পারার কারণে তিনি অল্প বয়সেই কর্মজীবনে প্রবেশ করেন এবং প্লাইবোর্ডের ব্যবসা শুরু করেন। এলিম হোসেন তার পরিবারকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রাখতে কঠোর পরিশ্রম করতেন। তাঁর দুই মেয়ে রয়েছে। এরিন সিকদার (বয়স ১৫, শিক্ষার্থী) ও ইর্জা সিকদার (বয়স ১)। মৃত্যুর পূর্বে, এলিম ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তার মৃত্যুর পর পরিবারটি গভীর শোক এবং সংকটের মধ্যে পতিত হয়েছে। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ মো: এলিম হোসেন ছিলেন এক নির্ভীক যোদ্ধা, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বৈষম্যমুক্ত সমাজ এবং ন্যায়ের জন্য। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের সেই কালো দিনে, তিনি ঢাকা লং মার্চে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে লক্ষ জনতা ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের একদফা দাবীতে সারাদেশের মত রাজপথে নেমে পরেছিলো গাজীপুরবাসী। ছাত্র-জনতার এই অহিংস মিছিল সেদিন সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে এসে পৌঁছালে, হঠাৎই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের নিষ্ঠুর চিত্র ফুটে ওঠে। শেখ হাসিনার শাসনকালে লেলিয়ে দেওয়া আনসার বাহিনী, যারা ক্ষমতায় অবৈধভাবে টিকে থাকা নিশ্চিত করতে নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর বর্বরভাবে আঘাত হানে, তারা এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। ঘাতকের বুলেট এসে তার বুকের ডান পাশে বিদ্ধ হয়ে ভেতরে আটকে যায়। সেখানেই রক্তে ভিজে যান তিনি। আশেপাশের মানুষ তাকে উদ্ধার করে দ্রুত সফিপুর মর্ডান হাসপাতালে নিয়ে যায়, কিন্তু জীবনের অবসান ঘটেছিল ঘটনাস্থলেই। হাসপাতালের নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার বিকাল ৩:৩০ টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর পর তাঁর নিজ গ্রামের মানুষ তাঁকে শেষ বিদায় জানায়। রাখালিয়াচালা, সফিপুরে তাঁর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং সম্মানের সাথে তাঁকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। রেখে গেলেন দুই কন্যা, যাদের একজন মাত্র ৮ বছর বয়সী, অন্যজন মাত্র এক বছর। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি এক অনিশ্চয়তার অন্ধকারে পতিত হয়। মো: এলিম হোসেনের এই আত্মত্যাগ যেন দেশের মুক্তিকামী মানুষকে নতুন প্রেরণা ও শক্তি জোগাবে চিরকাল। তাঁর বুকের রক্ত যেন এ দেশের প্রতিটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ ও ন্যায়বিচারের সংগ্রামে চিরকাল অনুপ্রাণিত করে রাখে। শহিদ এলিমের মৃত্যু জাতির হৃদয়ে নতুন করে সংগ্রামের বীজ বপন করে গেল। তিনি চলে গেলেও তাঁর চেতনা ও আত্মমর্যাদা চিরঅমলিন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর বক্তব্য/অনুভূতি শহীদের চাচা বলেন, বাড়ি থেকে ১ কিলো দূরে বাজার। বাজারের একদিকে ব্রিজের কাছেই গুলিবিদ্ধ হয় এলিম। নির্বিচারে গুলি করেছে, যে যেভাবে পেরেছে গুলি করেছে। আমার ভাতিজার বুকের বাম পাশে ১টি বুলেট ভেতরে আটকে গেলেও সারা গায়ে ও চেহারায় বিদ্ধ ছিলো অসংখ্য ছররা গুলি। ভাতিজা খুব ভালো ছিলো। স্বভাব চরিত্র ভালো ছিল ঝগড়া ফ্যাসাদে ছিলো না। মানুষের জন্য ভালো ছাড়া মন্দ করেনি। মানুষের পাশে ছিলো। আর মানুষও কেঁদেছে মৃত্যুর পর। ১০-১২ হাজার মানুষ এসেছিলো জানাজার নামাজে। বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলো। ওর পরিবারটা অসহায় হয়ে গেছে। অর্থসম্পদ যাই থাক পরিবারের মূল অভিভাবক চলে গেলে যা হয়। শোকতো সইতেই হবে লোকতো আর পাওয়া যাবে না। দোয়া করি আল্লাহ তাকে ভালো রাখুক। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদ মো: এলিম হোসেন একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তার দক্ষতা ও পরিশ্রমের ফলে পরিবারের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট ভালো। অর্থনৈতিক কষ্ট তাদের নেই। প্রস্তাবনা শহীদ মো: এলিম হোসেনের পরিবারটি আর্থিকভাবে সচ্ছল। তারা আর্থিক সহযোগিতা চাচ্ছেন না, বরং তাদের প্রধান দাবি হচ্ছে, শহীদ মো: এলিম হোসেনকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করা হোক। পরিবার তাঁর স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে এবং দেশের সেবায় তাঁর আত্মত্যাগের যথাযথ স্বীকৃতি পেতে আগ্রহী। দেশ ও জাতির জন্য তার যে অবদান, তা যেন চিরকাল শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। দ্বিতীয়ত, শহীদের চাচা জানান, অর্থ সম্পদ যা-ই থাকুক পরিবারে মূল অভিভাবক চলে গেলে আরও বহু রকমের অসহায়ত্ব থাকে। বিশেষ করে তার ছোট বাচ্চা দুটি অভিভাবকহীন হয়ে গেলো। তাদের পড়ালেখার পর সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিতে সরকারের সহযোগিতা চাই। তাদের পিতার অভাবতো পূরণ হবে না; তবে সরকারই যেন তাদের অভিভাবক হন এটাই আশা আমার। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: এলিম হোসেন জন্ম তারিখ : ০৬ জুন ১৯৮২ জন্মস্থান : রাখালিয়াচালা পেশা/পদবী : ব্যবসায়ী মাসিক আয় : নির্দিষ্ট নয় নিজ জেলা : গাজীপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: রাখালিয়াচালা, ইউনিয়ন: ৬ নং মৌচাক, থানা: কালিয়াকৈর, জেলা: গাজীপুর বর্তমান ঠিকানা : রাখালিয়াচালা, এলাকা: নেত্রীবাড়ি, থানা: কালিয়াকৈর, জেলা: গাজীপুর পিতার নাম : বেলায়েত হোসেন (বৃদ্ধ) মায়ের নাম : আনোয়ারা বেগম (গৃহিণী) শহীদের সন্তান : ২ মেয়ে ১. এরিন সিকদার, বয়স: ১৫ বছর, ১০ম শ্রেণি ২. ইর্জা সিকদার, বয়স: বয়স: ১ বছর ঘটনার স্থান/পয়েন্ট : সফিপুর আনসার একাডেমি আক্রমণকারী : আনসার সদস্য আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৩.৩০টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ৫ আগস্ট ২০২৪, বিকাল ৩.৩০টা মৃত্যুর স্থান : সফিপুর আনসার একাডেমি, গাজীপুর শহীদের কবরের অবস্থান : রাখালিয়াচালা, সফিপুর, কালিয়াকৈর, গাজীপুর

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: এলিম হোসেন
Image of মো: এলিম হোসেন
Image of মো: এলিম হোসেন
Image of মো: এলিম হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মামুন মিয়া

মো: মনিরুজ্জামান মোল্লা

মো: গণি মিয়া

সানজিদ হোসেন মৃধা

মো: রুস্তম

ফারহানুল ইসলাম ভুইঁয়া

মোঃ বাবুল মিয়া

মোহাম্মদ ফিরোজ তালুকদার

মো: দুলাল

মোঃ জালাল উদ্দিন

 আফিকুল ইসলাম সাদ

মো: সাগর আহম্মেদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo