Image of মোহাম্মদ সাইফুল হাসান

নাম: মোহাম্মদ সাইফুল হাসান

জন্ম তারিখ: ১ মার্চ, ১৯৭৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শাহাদাতের স্থান : যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকা, প্রগতি স্বরণী, ঢাকা।

শহীদের জীবনী

শহীদ মোহাম্মদ সাইফুল হাসান গাজীপুর জেলার টঙ্গী অঞ্চলের দারুল ইসলাম ট্রাস্ট আবাসনের বাসিন্দা । ১৯৭৩ সালে গাজীপুর জেলাতেই তার জন্ম। তার পিতা আবেদ আলী মোল্লা এবং মাতা মোসা: হাওয়াতুন খাতুন। তার দুজন সন্তান একজন অষ্টম শ্রেণীতে এবং আরেকজন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ালেখা করেন । ব্যক্তিগত জীবন শহীদ সাইফুল হাসান ইধফযধহ ঐরলৎধ ঝধহমযধ নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তিনি সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া হিজরা সম্প্রদায়ের সামাজিক উন্নয়নের জন্য কাজ করতেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে এবং মেধা দিয়ে দ্রুতই সফলতার দিকে এগোচ্ছিলেন। তার বেতন ছিল ৫০ হাজার টাকা। পরিশ্রমী শহীদ সাইফুল পরিবারের খরচ চালাতে চাকুরীর পাশাপাশি জমির ব্যবসায় নিয়োজিত ছিলেন। অল্প অল্প জমানো টাকা দিয়ে নিজে একটি ফ্ল্যাট কেনেন দারুল ইসলাম ট্রাস্ট আবাসনে। পরিবারসহ সেই ফ্ল্যাটেই থাকতেন। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংগঠিত কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নীরিহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের নির্বিচার গুলিতে শহীদ হয় মুক্তিকামী জনতা। আন্দোলনে যোগদান ও শাহাদাতের ঘটনা মোহাম্মদ সাইফুল হাসান স্বৈরাচার সরকার পতনের লক্ষে ছাত্র জনতা যেদিন লং মার্চের ডাক দেয় সেই ৫ আগস্ট সন্তান সহ শাহবাগের দিকে রওনা হন। যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকা অতিক্রম করাকালীন হঠাৎই সেনাবাহিনী আক্রমন করে। সন্তানদের বাঁচাতে গিয়ে নিজে এগিয়ে আসেন এবং হঠাৎ একটি গুলি তার মাথার ডান পাশে এসে লাগে। প্রচন্ড রক্তক্ষরণ এবং মাথার ঘিলু বের হয়ে আসছিল। ছোট্ট সন্তান কান্নায় ভেঙে পড়ে। ঘাতক সরকারের বলি হয়ে প্রিয় সন্তানের সামনে পড়ে থাকে তার নিথর দেহটি। আবছা হয়ে আসে দৃষ্টি শক্তি। শেষ বারের মত স্নেহের সন্তানদের মমতাভরে দেখতে দেখতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেন। চোখের সামনে বাবার এমন আত্মত্যাগে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় সন্তান। এহেন পরিস্থিতিতে জনতা তার দেহটি উদ্ধার করে সাথে সাথে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। শহীদ সাইফুল হাসানকে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পর্যবেক্ষণের পর মৃত ঘোষণা করেন। জানাজা ও দাফন পরবর্তীতে হাসপাতাল থেকে শহীদের মরদেহ নিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। নিজ মহল্লায় বাদ এশা জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে ট্রাস্টের কবরস্থানেই চিরনিদ্রায় দাফন করা হয় শহীদ মোহাম্মদ সাইফুল হাসানকে। পারিবারিক অনুভূতি দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে চলতে থাকা স্বৈরাচার সরকারের শোষণে ক্ষুব্ধ মুক্তিকামী জনতা ততক্ষণে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে। সরকার পতনের এই আনন্দের দিনে ছোট্ট সন্তান পিতার লাশ বয়ে নিয়ে যায় নিজ বাসায়। বিজয়ের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে নিয়তির এমন নির্মম পরিহাস যেন পরিবারের কেউই মেনে নিতে পারছিলোনা। একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে ছোট্ট দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত শহীদ সাইফুল হাসানের স্ত্রী। সৎ, মেধাবী এবং যোগ্য করে তোলার বড় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন গুজরান করছেন তিনি। পাশাপাশি দ্রুত এ নির্মম হত্যার বিচার চেয়েছে শহীদের পরিবার পরিজন। বড় ছেলে মোহাম্মাদ রাওশান রাফ ও তার বাবার সাথেই ছিল।পিতাপুত্র মিলেই গিয়েছিল শেখ হাসিনার পতন মিছিলে। ছেলের মতে তার বাবা একজন সৎ আদর্শবান পিতা।তিনি সামাজিক,রাজনৈতি সচেতন মানুষ ছিলেন। পরোপকারী, মিশুক মানুষ ছিলেন। পিতা হিসেবেও তার বাবা মহান বাবা। সত্য,ন্যায়ের পক্ষে ছিলেন আপোষহীন। তার বাবার মৃত্যুশোকে তারা মুহ্যমান। তার বাবা দেশের জন্য সরাসরি দাঁড়িয়ে গেলেন বুলেটের সামনে।এটি তার বুককে গর্বে স্ফীত করে। বাবার জন্য তার গর্ব হয়।পাশাপাশি বাবার শূন্যতায় হৃদয় হাহাকার করে। প্রস্তাবনা ১ শহীদের পরিবারকে এককালীন অনুদান দেওয়া হোক। মাসিক ভাতার ব্যবস্থাও করা হোক। প্রস্তাবনা ২ লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ করতে সন্তানদের সমুদয় খরচ বহন করতে তাদের শিক্ষা ভাতা দেওয়া হোক। স্ত্রীকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : মোহাম্মদ সাইফুল হাসান জন্ম : ০১-০৩-১৯৭৩ পিতা : মৃত মোহাম্মদ জাবেদ আলী মোল্লা মাতা : মোসা: হাওয়াতুন নেসা। স্থায়ী ঠিকানা : মহল্লা: আউচপাড়া, এলাকা: গাজীপুর মহানগর, থানা: টঙ্গী পশ্চিম গাজীপুর বর্তমান ঠিকানা : বাসা: ৫৫/৩ দারুল ইসলাম ট্রাস্ট এলাকা : গাজীপুর মহানগর, থানা: টঙ্গি, জেলা: গাজীপুর পরিবারের সদস্য : মা সহ ৪ জন বড় ছেলে : এইস এস সি অধ্যায়নরত ছোট ছেলে : ৮ম শ্রেণী কবর : গাজীপুর নিজ এলাকায়

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মোহাম্মদ সাইফুল হাসান
Image of মোহাম্মদ সাইফুল হাসান
Image of মোহাম্মদ সাইফুল হাসান
Image of মোহাম্মদ সাইফুল হাসান
Image of মোহাম্মদ সাইফুল হাসান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শুভ

মো: আব্দুল আহাদ

রুমান বেপারী

মো: হৃদয়

মো: শাওন

মো: জিয়াউর রহমান

মো: মাবরুর হুসাইন

মো: সামিউ আমান নুর

মো: সিয়াম

মো: মায়া ইসলাম

সুমন মিয়া

 আফিকুল ইসলাম সাদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo