জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৮১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : ব্যবসা ( পুরাতন গাড়ি ক্রয় বিক্রয়) শাহাদাতের স্থান : কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি শহীদ জোবায়ের বেপারী ০১ জানুয়ারি ১৯৮১ সালে ঢাকার উত্তরখান এলাকার দোবাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জনাব আ: ছুবুর বেপারী (৭৬) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং মাতা জনাবা আমেলা বেগম (৫৫) গৃহিণী। নিজ গ্রাম থেকে এইচ এস সি পাশ করার পর তিনি গাড়ি ক্রয় করে ব্যবসা শুরু করেন। বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ নিজস্ব পৈতৃক বাড়িতে তিনি বসবাস করতেন। তার দুই সন্তান রাফিউল বেপারী জায়ান এবং রাইয়ান বেপারী মেহরাব স্থানীয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে যথাক্রমে নার্সারি ও প্লে শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে তার বৃদ্ধ মা-বাবা এবং সন্তানদের সার্বিক খরচ বহন করতেন। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শহীদ জোবায়ের বেপারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে ১৯ জুলাই শুক্রবার সকাল ১১ টার দিকে তার নিজ বাড়ি থেকে আজমপুর এর উদ্দেশ্যে বের হন। আজমপুর জামে মসজিদে জুমা’র নামাজ আদায় করেন। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, তিনি নামাজ শেষ করে আজমপুর বি এন এস সেন্টারের পাশে অবস্থান করেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। চতুর্দিক থেকে ছাত্র-জনতা আজমপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অন্যদিকে, স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনী এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে সজ্জিত যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো। ছাত্র-জনতার উপর উপর্যুপরি টিয়ারশেল নিক্ষেপ, ছররা গুলি, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে ছাত্র-জনতা একের পর এক গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়তে থাকে। শহীদ জোবায়ের এই দৃশ্য দেখে গুলির উৎস খুঁজতে লাগলেন। তার মনে হলো গুলি উপর থেকে আসছে। তৎক্ষণাৎ জোবায়ের তার পাশে থাকা ছাত্র-জনতাকে সতর্ক করেন। রাস্তার উভয় পাশে উঁচু উঁচু ভবনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ঘাতকেরা অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে ছাত্রজনতাকে টার্গেট করে গুলি করতে থাকে। তখনও শহীদ জোবায়ের জানতেন না যে, এরই মধ্যে তাকেও টার্গেট করে ফেলেছে ঘাতকেরা। আনুমানিক বিকাল ৫ টার দিকে তাকে লক্ষ্য করে কাপুরুষের মতো পিছন থেকে পিঠে গুলি করা হয়। গুলিটি সরাসরি তার পিঠ ফেড়ে বুক দিয়ে বের হয়ে যায়। সাথে সাথেই রাস্তায় ঢলে পড়েন শহীদ জোবায়ের। রক্তে সিক্ত হয় পিচঢালা রাস্তা। তখনো তাকে জীবিতই মনে হচ্ছিল। ছাত্রজনতা জোবায়ের বেপারীকে উদ্ধার করে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এভাবেই একটি যৌক্তিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে শহীদ জোবায়ের নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিলেন। ২০ জুলাই সকাল ৯ টায় দোবাদিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে শহীদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বাড়ির পিছনের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শহীদের প্রতিবেশীর অনুভূতি শহীদের প্রতিবেশী বিল্লাল হোসেন বলেন শহীদ জোবায়ের অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ও নম্রভদ্র ছিলেন। তিনি কাউকে কখনও অহেতুক কষ্ট দেননি। নিজের কাজ করার সময় অন্যের কোনো কষ্ট হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি খুব খেয়াল রাখতেন। এলাকায় গরিব-অসহায়দের খোঁজ-খবর নিতেন। তাদের সমস্যার কথা শুনতেন। বিপদে এগিয়ে আসতেন। ঋণগ্রস্থদের কর্জে হাসানা দিতেন। এক কথায় তিনি ছিলেন মানুষের পরোপকারী বন্ধু। একনজরে শহীদের তথ্যসমূহ নাম : মো: জোবায়ের বেপারী পিতা : আ: ছুবুর বেপারী মাতা : আমেলা বেগম পেশা : ব্যবসায়ী জন্ম তারিখ ও বয়স : ১ জানুয়ারি ১৯৮১, বয়স ৪৩ বছর আহত হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৫ টা, বিএনএস সেন্টার আজমপুর, ঢাকা শাহাদাতের তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল দাফনের স্থান : দোবাদিয়া, উত্তরখান, ঢাকা বাড়িঘর ও সম্পদের অবস্থা : দুই তলা বিশিষ্ট ডুপ্লেক্স বাড়ি, প্রাইভেট কার ও মাইক্রো গাড়ি স্ত্রী : রিফা আক্তার তামান্না চাঁদমনি পেশা : গৃহিণী ১ম ছেলে : রাফিউল বেপারী জায়ান, বয়স: ৭ বছর, শ্রেণি: নার্সারি, প্রতিষ্ঠান: স্কলাস্টিকা স্কুল ২য় ছেলে : রাইয়ান বেপারী মেহরাব, বয়স: ৪ বছর, শ্রেণি: প্লে, প্রতিষ্ঠান: স্কলাস্টিকা স্কুল