Image of মো: সাগর আহম্মেদ

নাম: মো: সাগর আহম্মেদ

জন্ম তারিখ: ১২ ডিসেম্বর, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর ১০, আজমল হাসপাতালের গেটে

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: সাগর আহমেদ ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বরে রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি থানার অন্তর্গত বিলটাক পুড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো: তোফাজ্জেল হোসেন এবং মাতার নাম মোছাম্মদ গোলাপী বেগম। গ্রামের সবার কাছে সাগর আহমেদ ছিল একজন আদর্শবান ছেলে। ছোটবেলা থেকেই সৎ চরিত্রবান এবং মেধাবী ছেলে হিসেবে পরিচিত ছিলেন সবার কাছে। লিয়াকত আলী স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন তিনি। এরই মাঝে সকল শিক্ষকের মন জয় করে নিয়েছেন সাগর আহমেদ। এসএসসি পরীক্ষার বিদায় নেয়ার সময় সকল শিক্ষক তার জন্য দোয়া করেছিল। রাজবাড়ি সরকারি কলেজের শিক্ষকরা তাকে অত্যন্ত ভালো ছাত্র হিসেবে চিনতো। ঢাকা মিরপুর বাংলা কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি একটি হোটেলে কাজ করতেন। যেন কৃষক বাবার কাছ থেকে লেখাপড়ার খরচ না নেওয়া লাগে। সাগর আহমেদ ছোটবেলা থেকেই ন্যায়ের পথে চলায় দৃঢ়সংকল্প। অবশেষে ন্যায়ের পথে থেকেই তিনি শাহাদাত বরণ করলেন। ঐ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ১৯ জুলাই ২০২৪ সালের সন্ধ্যায় তিনি ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ সরকারের গুণ্ডা পুলিশ বাহিনীর গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন। শহীদ সাগর আহম্মেদের বন্ধুর মাধ্যমে তার শাহাদাতের বৃত্তান্ত বর্ণনা সাগর আহমেদ ঢাকা বাংলা কলেজে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি খাবার হোটেলে কাজ করতেন। পরিবারকে না জানিয়েই তিনি হোটেলে কাজ করতেন। শহীদ সাগর আহম্মেদ মনে করেছিলেন পরিবার জানলে দুঃখ পাবে তাই তিনি পরিবারকে না জানিয়েই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রতিমাসে দরিদ্র কৃষক বাবার কাছ থেকে লেখাপড়ার খরচ বাবদ কয়েক হাজার টাকা নিতে হতো। এতে করে বাবা অনেক কষ্ট পেত এবং পরিবার অনেক সময় অর্থনৈতিক ঋণের ভিতর জড়িয়ে যেত। তাই তিনি হোটেলে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন, যেন নিজের খরচ নিজেই জোগাড় করতে পারেন। অনেকদিন পর সাগর আহম্মেদ বাড়িতে গেলেন। তার পিতা তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন সাগর একটা সত্য কথা বলবে বাবা? সাগর আহমেদ বললেন অবশ্যই বলব সত্য কথা কেন বলবো না। আমি কি কোনদিন মিথ্যা কথা বলেছি বাবা? সাগরের বাবা বলল তুমি অনেক শুকিয়ে গেছ তোমার শরীর অনেক চিকন হয়ে গেছে তুমি ঢাকাতে কি কর শুধু লেখাপড়া করলে তো শরীর-স্বাস্থ্য এরকম হওয়ার কথা না। সাগর অনেকটা লজ্জায় পড়ে গেল এবং চোখ দিয়ে পানি বের করে বলল বাবা আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি হোটেলে কাজ করি এবং বাসায় যেতে অনেক রাত হয় তাই শরীর এরকম হয়ে গেছে। তার পরিবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো এবং বলল কাজ না করলে হয় না তুমি কাজ করে তোমার শরীর নষ্ট করে ফেলেছ এটা আমাদের জন্য কষ্টকর। জবাবে সে বলল আমি কাজ করি শুধু আমার জন্য নয় অনেক মানুষের জন্য। যেমন হোটেলে কাজ করে ফেরার পথে হোটেলের বেঁচে যাওয়া খাবার আমি প্যাকেটে করে নিয়ে যাই এবং সেই খাবার ঢাকা শহরের ফুটপাতে থাকা বিভিন্ন গরিব দুঃখী মানুষদের খাওয়াই। এতে আমার অনেক আনন্দ হয়। বাবা বললেন তোমার যা ভালো লাগে তুমি তাই কর তবে নিজের দিকে খেয়াল রেখো। ১৯ জুলাই ২০২৪ আসরের নামাজের পর সাগর আহম্মেদের বাবা সাগরকে ফোন দেয় খোঁজখবর নেয়। তাঁর বাবা ফোন দিয়ে বলে কেমন আছ সাগর। আন্দোলনের কি অবস্থা ঢাকাতে। সাগর বলে বাবা আন্দোলনের অবস্থা ভালো আজকে আমরা যে জায়গায় আছি এখানে চারজন মারা গেছে এখন পর্যন্ত। সাগরের বাবা তাকে সাবধানে থাকতে বলেন। সাগর আহমেদ বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ফেসবুক ইউটিউব এবং টুইটারে তার ছবি এবং ভিডিও পাওয়া যায় ছাত্রদের সাথে। তিনি প্রতিটা সময় আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকতেন। সাগর আহমেদ ১৯ জুলাই ২০২৪ জুম্মার পর দুপুর ৩ টায় মিরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে তার এক বন্ধুর সাথে অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলনে কর্মসূচির এক পর্যায়ে সাগর আহম্মেদ সামনের সারিতে চলে যায়। সাগর আহম্মেদ সাধারণ ছাত্র-জনতার অনেক সামনে এগিয়েছিল। অনেকটা শহীদ আবু সাঈদের মতই ঘটনা ঘটেছিল সাগর আহম্মেদের। তিনি সাহসিকতার সাথে আন্দোলনকারীদের সামনে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সন্ধ্যা ৫:৫০ টার দিকে মিরপুর ১০ আজমল হসপিটাল এর সামনে আন্দোলন চলতে থাকে। সশস্ত্র পুলিশ আওয়ামীলীগের বিপরীতে নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্র-জনতা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। পুলিশ বৃষ্টির মত গুলি করতে থাকে এদিক ওদিকে। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন দিকে ছুটোছুটি করতে থাকে। রাস্তায় কয়েক জন ছাত্র আহত হয়ে পড়ে থাকে। আহতদের সহযোগিতা করার জন্য কারো এগিয়ে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। সাগর আহম্মেদ এবং আরো কয়েকজন আন্দোলনকারী আহতদের সহযোগিতায় এগিয়ে গেল। সকল ভয়ভীতি দূর করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে সকলেই। একপর্যায়ে বিবেকহীন পশু সমতুল্য পুলিশ অতর্কিত গুলি চালায় নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপর। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে সাগর আহম্মেদ আন্দোলনরত অবস্থায় বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ তাকে পার্শ্ববর্তী মিরপুর আজমল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্মরত ডাক্তার তাকে ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে যাওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তারপরেও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিকটস্থ কেউ না থাকায় অনেক লাশের ভিতর সে হারিয়ে যায়। অবশেষে লাশের স্তুপ এর মধ্য থেকে তার পিতা তার পাঞ্জাবি দেখে তাকে সনাক্ত করতে পারেন। যে ছেলে ঢাকায় এসেছিল অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে সেই ছেলে এখন বাড়িতে ফিরে গেলেন আরও বড় স্বপ্ন পূরণ করে শাহাদাতের মর্যাদা নিয়ে। তারপরেও পিতা-মাতার কষ্ট থেকেই যায়। শহীদ সাগর আহম্মেদের পিতার বক্তব্য সাগর ছিল আমার একমাত্র ছেলে। সে ছাড়া আমি কিভাবে বাঁচবো। আমার একটা মেয়ে আছে মেয়েকে বিয়ে দিলে আমার পরিবার ফাঁকা হয়ে যাবে। আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট এজন্যই যে আমার ছেলে ছিল সমাজের সবচাইতে ভালো ছেলে। গ্রামের সবাই তাকে ভালো ছেলে বলে চিনতো। নামাজ রোজা সহ সকল ভাল কাজ সে সবসময় করত। এলাকার কারো রক্ত লাগলে সেই আগে এগিয়ে যেত। এজন্য আমরা ওকে বকাঝকাও করতাম তবুও সে ভালো কাজেই লেগে থাকতো। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই এবং আমার ছেলের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন তাকে ভালো রাখেন। জানাজার নামাজে পুলিশের বাধা শহীদ সাগর আহম্মেদের জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করবে কিন্তু বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ সাগর আহম্মেদের গ্রাম ঘিরে রেখেছিল যেন খুব বেশি লোক জানাজায় অংশগ্রহণ করতে না পারে। স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের পুলিশের ভয় ছিল সাগর আহম্মেদের জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে পারে। তাই তারা শহীদ সাগর আহম্মেদের পরিবারে চাপ সৃষ্টি করে ভয় ভীতি দেখায় যেন দ্রুত জানাযা শেষ করা হয়। পরিবারের ইচ্ছা ছিল জানাজা হবে আসরের পরে কিন্তু পুলিশের চাপের কারণে বিকেল ৩ টায় জানাজার নামাজ শেষ করা হয়। শহীদ সাগর আহম্মেদের শিক্ষা জীবন গ্রামেই প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করার পর লিয়াকত আলী স্মৃতি স্কুল এন্ড কলেজর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাশ করেন। এরপর রাজবাড়ি সরকারি কলেজে মানবিক বিভাগ থেকে এ গ্রেড নিয়ে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকায় ইউসিসি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়ে গিয়েছিল কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা না থাকায় ভর্তি সুযোগ হলো না। তার চেয়ে কম নাম্বার পেয়ে অন্য একজন মুক্তিযোদ্ধার নাতি ছেলে ভর্তির সুযোগ পায়। অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়া শুরু করেন। মৃত্যুকালীন সময় সাগর আহমেদ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করতেন। তার স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়া। প্রশাসনের দুর্নীতি দেখেই তার ভালো লাগতো না। তাই শহীদ সাগর আহম্মেদ মনে করেছিলেন বিসিএস পরীক্ষায় ভালো ভাবে উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসনের ভিতরে ঢুকবে। কিন্তু তার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিল সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী। পারিবারিক অবস্থা সামান্য কৃষি জমি ও অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমের মাধ্যমে ৪ সদস্যের পরিবারের খরচ চালান শহীদ সাগর আহম্মেদের বাবা তোফাজ্জেল হোসেন। শহীদ সাগর নিজের পড়ার খরচ নিজেই চালাতেন। দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়া মেয়ের খরচ চালিয়ে সংসার চালাতে টানাটানি হলেও উচ্চ আত্ম-সম্মানবোধ সম্পন্ন তোফাজ্জাল হোসেন কারো সাহায্য নিতে চান না। তিনি বলেন আল্লাহর রহমতে আমরা অনেক সুখে আছি। এক নজরে শহীদ মো: সাগর আহম্মেদ নাম : মো: সাগর আহম্মেদ জন্ম তারিখ : ১২-১২-২০০৩ জন্মস্থান : বিল টাক পুড়া, বালিয়াকান্দি, ফরিদপুর পেশা : ছাত্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত মিরপুর বাংলা কলেজ অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: বিল টাক পুড়া, ইউনিয়ন: নারুয়া, থানা: বালিয়াকান্দি, জেলা: রাজবাড়ি স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বিল টাক পুড়া, ইউনিয়ন: নারুয়া, থানা: বালিয়াকান্দি, জেলা: রাজবাড়ি পরিবার পিতার নাম : মো: তোফাজ্জেল হোসেন মাতার নাম : গোলাপী বেগম বোন : মোসা: মুশমী বেগম (১৮) লিয়াকত আলী স্কুল এন্ড কলেজ বালিয়াকান্দি, দ্বাদশ শ্রেণী, মানবিক আহত হওয়ায় ও সময়, স্থান : ১৯-০৭-২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০০ মিনিট মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ১৯-০৭-২০২৪, সন্ধ্যা ৬:০৮ মিনিট, মিরপুর ১০, আজমল হাসপাতালের গেটে আঘাতকারীর : আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী পুলিশ জানাজা : ২০-০৭-২০২৪ বিকেল ৩:০০ টায় কবরস্থান : বিল টাক পুড়া কবরস্থান প্রস্তাবনা : শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান দেয়া। : শহীদের পিতাকে সমবায় কৃষি খামার করে দেয়া। : শহীদের বোনের উচ্চশিক্ষার খরচের যোগান দেয়া।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাগর আহম্মেদ
Image of মো: সাগর আহম্মেদ
Image of মো: সাগর আহম্মেদ
Image of মো: সাগর আহম্মেদ
Image of মো: সাগর আহম্মেদ
Image of মো: সাগর আহম্মেদ
Image of মো: সাগর আহম্মেদ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আব্দুল গণি

রাহাত হোসেন শরিফ

মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল

হযরত বিল্লাল

 হাসিবুর রহমান

শাখাওয়াত হোসেন শাহাদাত

মো: কবির

তাহমিদ আব্দুল্লাহ অয়ন

মো: তুহিন

মো: সামিউ আমান নুর

মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান

রমজান মিয়া জীবন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo