জন্ম তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : বনশ্রী মসজিদের সামনে।
মুহাম্মদ জান শরীফের পরিচয় মহান মুক্তিযুদ্ধে ফরিদপুরের মানুষের যেমন অবদান ছিল ঠিক তেমনি ২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী মহান আন্দোলনে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। শহীদ মুহাম্মদ জান শরীফ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের পানি ও খাবার সরবরাহ করে সকলের কাছে মানবীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। মুহাম্মদ জান ১৯৭৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলা সদরের গোয়ালচামঠ গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই খুব মিশুক ছিলেন। সবার সাথে বন্ধুর মতো চলাফেরা করতেন। বাবার মৃত্যুতে পরিবারটা দিশেহারা হয়ে পড়ে। এ সময় তিনি লেখাপড়া বাদ দিয়ে পরিবারের হাল ধরেন। অভাবের সংসারে বড় হওয়া মোহাম্মদ জান শরীফ ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে সবসময় সক্রিয় ছিলেন। পরিবারের সচ্ছলতা আনতে ব্যাবসা শুরু করেন। ভালোই চলছিল সংসার। এ সময় রোহেদুন সেজবা বানুর সাথে তিনি বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। ২০২১ সালে অসুস্থতার কারণে তিনি চাকুরি ছেড়ে দেন। একমাত্র মেয়ে মাহাবি শরীফ জারা মতিঝিল স্কুল এন্ড কলেজে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। দুই ভাই বোনের মধ্যে বোনের আগেই বিবাহ হয়ে যায়। মুহাম্মদ জান শরীফের স্ত্রী অসুস্থ শাশুড়ী ও শিশুকন্যাকে নিয়ে বর্তমানে গভীর সংকটে রয়েছে। শহীদ হওয়ার প্রেক্ষাপট বৈষম্যময় সমাজের কুৎসিত চেহারা দেখতে দেখতে সমাজের প্রতিটি মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। মুক্তির আশায় তারা পথ পানে চেয়ে থাকত। বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে ছাত্র সমাজ এগিয়ে আসলে সর্বস্তরের জনতা সেখানে যোগদান করেন। শহীদ মোহাম্মদ জান শরীফ এ আন্দোলনের শুরু থেকে ছাত্রদের পাশে থেকে পানি ও খাবার পরিবেশন করছিলেন। ১৯ জুলাই জুমার নামাজের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে এ উত্তাল আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। জিহাদের ময়দান বনশ্রী মসজিদের সামনে অবস্থানকালে স্ত্রী ও শিশু কন্যা বারবার ফোন করলে তিনি তাদের সান্ত্বনা দেন এবং বলেন আমি রাস্তায় ছাত্রদের পানি ও খাবার খাওয়াচ্ছি। তোমরা বাসায় থাকো আমার আসতে একটু দেরি হবে। সেদিন নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা নিয়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন দরদি জান শরীফ। ইতিমধ্যে পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি চলছিলো। তাছাড়া আওয়ামী সন্ত্রাসীরা চারিদিক দিয়ে আক্রমণ করল। পানি ও খাবার খাওয়ানোর অপরাধে পুলিশের টার্গেটকৃত গুলি শহীদ মোহাম্মদ জান শরিফের বুকের ভিতর প্রবেশ করে। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। শহীদের সাথীরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোঘণা করেন। পুরো এলাকা তখন শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। এ সমাজ তার মতো সাহসী ও প্রতিবাদী চেতনার একজন সোনার মানুষকে হারালো। পরিবার তাকে বিদায় দিল গভীর অশ্রু জলে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়র অনুভূতি শহীদ মুহাম্মদ জান শরিফ ছিলেন একজন মানবিক ও জনদরদি মানুষ। মানুষের বিপদ আপদে সবার আগে ছুটে আসতেন। সে ছিল একজন সৎ, নির্ভীক, কর্মঠ, সাহসী বীরপুরুষ। তার স্ত্রী রোহেদুন সেজবা বানু বলেন, জান শরীফ খুব মিশুক প্রকৃতির মানুষ ছিল। আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতেন। বিয়ের পর আমি তাকে ছাড়া কখনো থাকিনি। এখন তার অভাব কোনভাবে ভুলতে পারছি না। শিশু কন্যার আহাজারি আমার হৃদয় খান খান করে দিচ্ছে। এলাকার সচেতন মহল আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন আল্লাহ তায়ালা জান শরীফের এই মানবীয় কাজকে যেন কবুল করেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা মুহাম্মদ জান শরীফ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। পরিবারটি এখন অসহায়। স্ত্রী রোহেদুন সেজবা বানু একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরি করতেন। সেটিও ২০২১ সালে অসুস্থতার কারণে ছেড়ে দেন। স্বামী চলে যাওয়ায় তিনি এখন অথৈ সাগরের মাঝি বিহীন নৌকার মতো হয়ে গেছেন। ফুটফুটে শিশু কন্যাটাকে মানুষ করার কোন উপায় দেখছেন না। সহায় সম্বলহীন এই অসহায় পরিবারটির প্রতি আল্লাহ যেন সহায় হন। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মুহাম্মদ জান শরীফ জন্ম : ২৮/০৯/ ১৯৭৮ পেশা : ব্যবসায়ী। ঘটনার স্থান: বনশ্রী মসজিদের সামনে বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত। পিতা : শরীফ শামসুল আলম মাতা : হানুফা আলম স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম : মোল্লাবাড়ী সড়ক ইউনিয়ন : ফরিদপুর পৌরসভা থানা : ফরিদপুর সদর জেলা : ফরিদপুর আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯-৭-২০২৪ ৩:১৫ মিনিট শাহাদাতের সময়কাল : ১৯/০৭ / ২০২৪ ৩:১৫ মিনিট। আঘাতের ধরণ: বুকে গুলি লাগে আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী হাসিনার ঘাতক পুলিশের গুলিতে শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : গোয়ালচামঠ, ফরিদপুর সদর (নিজ বাসভবন) সন্তান : ১টি কন্যা সন্তান প্রস্তাবনা ১. প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান। ২. শিশু কন্যা মাহাবি শরীফ জারার লেখাপড়া এবং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দায়িত্ব নেওয়া