জন্ম তারিখ: ১৩ নভেম্বর, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : গাড়ির ইঞ্জিন মিস্ত্রি, শাহাদাতের স্থান : শাহবাগ মেট্টোরেল স্টেশনের নিচে
মাদারীপুরের মানুষ বরাবরই স্বাধীনচেতা। যে কোনো আন্দোলন সংগ্রামে তাদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বি মাদারীপুরের সন্তান হিসেবে সেই গৌরবের অংশীদার। তিনি ২০০৭ সালের ১৩ নভেম্বন মাদারীপুর জেলা সদরের পাঁচখোলা গ্রামে এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মোহাম্মদ মিরাজ তালুকদার ও মাতা আসমা বেগম দম্পতির কোল আলোকিত করে জন্ম নেওয়া ইসমাইল হোসেন রাব্বি আত্মীয় স্বজন সকলের মধ্যমণি ছিলেন। কিন্তু পিতা-মাতা, স্ত্রী, ভাই-বোনসহ ৬ সদস্যের পরিবারে অভাব অনটন লেগেই থাকতো। ফলে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও আর সম্ভব হয়নি। সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা আনতে ঢাকার শাহবাগ এলাকায় এসে ইঞ্জিন মিস্ত্রির কাজ নেন। কৃষক পরিবারের বাবার মুখে কেবল হাসি ফুটতে শুরু করে। এ সময় ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণ আন্দোলন শুরু হয়। তিনি এ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। এক বছর আগে তিনি বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরিবারের সবাইকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। দারিদ্রের কষ্ট, কঠোর পরিশ্রম, আর পরিবারের প্রতি গভীর ভালোবাসা ইসমাইল হোসেন রাব্বিকে সকলের মাঝে স্মরণীয় করে রেখেছে। শহীদ সংক্রান্ত সামগ্রিক বর্ণনা শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বির জীবন কাহিনী যেন এক অশ্রুসিক্ত বেদনা বিধুর অধ্যায়। জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলোতে যখন কোন যুবক স্বপ্নের জাল বুনে ঠিক তখনই পরিবারের দায়িত্ব তার ঘাড়ে চেপে বসে। পরিবারের সুখের জন্য নিজের সবটুকুন স্বপ্ন তিনি ত্যাগ করলেন। ঢাকায় এসে জীবন যুদ্ধে নেমে গেলেন। শাহবাগ এলাকায় ইঞ্জিন মিস্ত্রির কাজ করতেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের এক দফায় পরিণত হয়। সারা জীবন অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি একাই লড়াই করেছেন। দেশব্যাপী এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছাত্র-জনতার সাথে একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজধানীর রাস্তায় নেমে পড়েন। তখন স্লোগানের শ্লোগানে প্রকম্পিত রাজপথ। সে সময় ঢাকার শাহবাগ এলাকা উত্তাল স্ফুলিঙ্গ। ৪ আগস্ট ২০২৪, রবিবার। ৫টা ২০ মিনিটে গণ আন্দোলনে থাকা অবস্থায় আওয়ামী পুলিশ বাহিনী ও ছাত্রলীগের গুন্ডা পান্ডারা একত্রে হামলা করে এবং গুলি চালায় আন্দোলনরত মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার উপর। শাহবাগের মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বি তখন ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়। শহীদের সাথীরা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান। ৬:২০ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যবৃন্দ হাসপাতালের মর্গ থেকে শহীদ ইসমাইলের লাশ উদ্ধার করে। প্রতিবাদী যুবকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে চারিদিকে শোকের ছায়া নেমে আসে। অশ্রুশিক্ত নয়নে শহীদের স্বজনরা তাকে শেষ বিদায় দেন। ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরশাসন, ভোটের অধিকার হরণ, দ্রব্যমূল্যের আকাশ ছোয়া দাম, খুন, গুম এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন এক অকুতোভয় সৈনিক। শহীদ সম্পর্কে নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীর অনুভূতি শহীদ ইসমাইল হোসেন রাব্বি ছিলেন নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অন্যতম কারিগর। সেটি তিনি জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। প্রতিবেশিরা জানান, রাব্বি অনেক ভালো ছেলে ছিল। কোনদিন কারো সাথে বেয়াদবি করেননি। বড়দের সব সময় সম্মান করতেন। লেখাপড়ায়ও খুবই মনোযোগী ছিলেন। শহীদের বাবা জানান, এলাকার সবাই আমার রাব্বিকে ভালো জানে। আমার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো ছিল না বলে কোনদিন জোর করে আমার কাছে কিছুই চায়নি। অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে তিনি শহীদ হয়েছেন। রাব্বীর মৃত্যুতে শুধু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, দেশ একজন সাহসী যোদ্ধাকে হারালো। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ইসমাইল হোসেন রাব্বির পরিবার অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছ ছিল। কৃষক বাবার ভিটে বাড়ি ১০ শতাংশ জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। বাবা-মা, স্ত্রী, ভাই-বোন সহ ৬ সদস্যের পরিবার রাব্বির আয়ে খুব কষ্টে অতিবাহিত হতো। পরিবারের সদস্যদের একটু সুখের মুখ দেখানোর আশা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। আওয়ামী বুলেট তার সব স্বপ্নকে কেড়ে নিল। তার মৃত্যুতে পরিবারের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়। রাব্বির অভাব তাদের জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। এই দুরাবস্থার মধ্যে তাদের আশা সমাজ সহায়তা করবে। যাতে তাদের জীবনে কিছুটা আলো ফিরে আসে। প্রস্তাবনা ১. এককালীন বড় ধরণের আর্থিক সহযোগিতা করা। ২. বাবার নিয়মিত ভালো কোন আয়ের ব্যবস্থা করা। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : ইসমাইল হোসেন রাব্বি জন্ম : ১৩/১১/২০০৭ পিতা : মো: মিরাজ তালুকদার মাতা : আসমা বেগম পেশা : গাড়ির ইঞ্জিন মিস্ত্রি স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পাচখোলা, ইউনিয়ন: পাঁচখোলা, থানা: মাদারীপুর সদর, জেলা: মাদারীপুর বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত স্ত্রী : স্ত্রীর নাম জানা যায়নি ঘটনার স্থান : শাহবাগ মেট্টোরেল স্টেশনের নিচে আহত হওয়ার সময়কাল : ০৪/০৮/২০২৪, ৫.২০ মিনিটে শাহাদাতের সময়কাল : ০৪/০৮/২০২৪,৬.২০ মিনিটে আঘাতের ধরণ : ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হওয়া আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : পাঁচখোলা, মাদারীপুর সদর