জন্ম তারিখ: ১২ অক্টোবর, ১৯৯৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা
পেশা : ডাক্তার , শাহাদাতের স্থান : উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল
শহীদ ডা: সজিব সরকার ১৯৯৩ সালে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো: হালিম সরকার এবং মাতার নাম ঝর্না বেগম। প্রচন্ড মেধাবী সজিব সরকার এমবিবিএস পাশ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। তিনি মেডিসিন বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। ঢাকায় মা-বাবা ও ভাইবোনকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। মেধাবী এই যুবকের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে । আন্দোলনের প্রেক্ষাপট সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই ২০২৪ থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয়। আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত মুক্তিকামী জনতা। শাহাদাতের ঘটনা ১৮ জুলাই ২০২৪ বৃহঃস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ডাকে সারা দেশের ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচী চলছিলো। এদিন মোঃ সজিব সরকার তার ছোট ভাইকে আনতে উত্তরার আজমপুরে যান। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার উত্তরা এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ন্যায্যতা, শিক্ষার মান এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিল। উত্তরা এলাকার শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করে, যা দ্রুত সমগ্র ঢাকায় ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের সময় উত্তরা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করে এবং হয়ে উঠে সবচেয়ে অনিরাপদ ভয়ের কারণ। কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করা হয়। এই সংঘর্ষে অনেক ছাত্র-জনতা শহীদ হয়, গুরুতর আহত হয় এবং গণগ্র্রেফতার করা হয়। গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা সাধারণ জনমনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধ করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। সরকারের দমন-পীড়নের ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, উত্তরা এলাকায় পুলিশের অভিযান চলাকালীন বেশ কিছু গুরুতর আহত হয় এবং চিকিৎসার অভাবে অনেকের অবস্থা খারাপ হয়। এই আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে প্রভাবিত করে এবং বৈষম্য ও মানবাধিকারের প্রশ্নে নতুন আলোচনার সূচনা করে। উত্তরা এলাকার ঘটনার কারণে সামাজিক সচেতনতা বাড়ে এবং আন্দোলনের শক্তি ও একতা প্রকাশ পায়। সজিব সরকার ছোট ভাই মোঃ আব্দুল্লাহ উত্তরার আশরাফুল উলুম মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতে সজিব সরকার উত্তরার আজমপুরে বাস থেকে নেমে পায়ে হেঁটে মাদ্রাসার দিকে যাচ্ছিলেন। কিছুদুর যাওয়ার পর স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের ঘাতক পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য তাকে অহেতুক আটকায় এবং নির্দয়ভাবে লাথি মারে। সেই সাথে আশেপাশের সাধারণ পথচারীদের হঠাৎ লাঠিপেটা শুরু করে। পিশাচ পুলিশের আঘাতে সজিব সরকার মাটিতে পড়ে যায়। এমতাবস্থায় এক উন্মাদ পুলিশ সদস্য খুব কাছে থেকে নির্মমভাবে তাকে গুলি করে। তাৎক্ষণিক শুরু হয় রক্তক্ষরন। অসহায়ভাবে রাস্তায় পড়ে থাকে তিনি। পুলিশের এলোপাথ-াড়ি গুলিতে কেউ পাশে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলো না এবং আহতদের উদ্ধার করা যাচ্ছিলো না। প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যমতে, সজিব দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকায় প্রচুর রক্তপাত হয়েছিলো এবং তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ গুলি করতে করতে অন্যদিকে এগিয়ে গেলে সুযোগ বুঝে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে উত্তরার আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে পর্যবেক্ষণ করে মৃত ঘোষণা করেন এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। জানাজা ও দাফন হাসপাতাল থেকে শহীদ সজিব সরকারের মরদেহ নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে চরসুবুদ্ধি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শহীদের পারিবারিক অবস্থা মো: সজিব সরকারের বাবা মো: হালিম সরকার ৫৮ বছরের বৃদ্ধ। তার বাবার সামান্য আয় দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করছেন। ডা: সজিব সরকার মেডিকেল কলেজের লেকচারার হওয়ায় পরিবারের অভাব অনেকটায় কমে এসেছিলো। তার পিতা মো: আব্দুল হালিম সরকার, ডাঃ সজিব সরকারের বেতনের ভরসায় মেয়েকে উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন, যা অনেক ব্যয়বহুল। দায়িত্বশীল প্রিয় পুত্রের শাহাদাতের পর তার বোনের পড়ালেখা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শহীদের ছোট ভাই একজন মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। সজীব সরকারের মাতা ঝর্না বেগম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তিনি হার্ট, কিডনী ও ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন। তার চিকিৎসা বাবদ প্রতি মাসে অনেক টাকা ব্যয় হয়। ঢাকায় ডা: সজিবের পুরো পরিবার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। গ্রামে তাদের ৪ শতাংশ জমি আছে তবে সেখানে কোনো ঘর নেই। প্রস্তাবনা ১. বাসস্থান প্রয়োজন। ২. মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। ৩. ছোটভাই-বোনদের লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সহযোগিতা করা যেতে পারে। একনজরে শহীদ ডা: সজিব সরকার পূর্ণ নাম : ডা: সজিব সরকার জন্ম : ১২-১০-১৯৯৩ জন্মস্থান : নরসিংদী পেশা : ডাক্তার পেশাগত প্রতিষ্ঠান : ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মাঝিরকান্দি, ইউনিয়ন: মির্জানগর, থানা: রায়পুরা, জেলা: নরসিংদী পিতার নাম : মো: হালিম সরকার মায়ের নাম : ঝর্না বেগম পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৬ জন ঘটনার তারিখ ও স্থান : ১৮-০৭-২০২৪ , বিকাল ৫.০০ মিনিট; উত্তরা আজমপুর আক্রমণকারী/আঘাতকারী : স্বৈরাচারি সরকারের ঘাতক পুলিশ শহীদ হওয়ার তারিখ, সময়, স্থান : ১৮-০৭-২০২৪, বিকাল ৫.৩০ মিনিট; উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : চরসুবুদ্ধি কবরস্থান, রায়পুরা, নরসিংদী