Image of মো: রাসেল মিয়া

নাম: মো: রাসেল মিয়া

জন্ম তারিখ: ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : চাকুরীজীবী , শাহাদাতের স্থান : রামপুরা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

চারদিকে দিগন্ত বিস্তৃত বিস্তীর্ণ মাঠ, মাঝখানে সবুজ দ্বীপের মতো চোখ জুড়ানো গ্রাম। প্রভাত-কাকলির মধ্যে প্রতিদিন উঠে আসে রক্তিম সূর্য। গরু-চরা মাঠ এবং প্রশস্ত আকাশ পূর্ণ করে বাজতে থাকে রাখালিয়া বাঁশি। প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে ভরা এমনই এক গ্রাম দুলালকান্দি। এই গ্রামেই ১৯৯২ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মো: হাসান আলী ও মাতা মোছা: আছিয়া বেগমের কোল আলো করে করে পৃথিবীতে আসেন শহীদ মো: রাসেল মিয়া। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদ গিয়ে মিশেছে আশুগঞ্জের কাছে মেঘনা নদীর মোহনায়। এখানেই দুরন্ত শৈশব কেটেছে তাঁর। গ্রামের পাশে একটি বিদ্যালয়ের হাতেখড়ির পর দুলালকান্দি দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে দাখিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে, পরবর্তীতে স্থানীয় একটি কলেজে ভর্তি হন তিনি। এরপর কর্মের তাগিদে চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। অকুতোভয় রাসেলের আসীম আত্মত্যাগ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু প্রথম দফার আন্দোলনের পর আন্দোলনে দ্বিতীয় দফার ঢেউ লাগে ২০২৪ সালের ৫ই জুন থেকে। এদিন ২০১৮ সালের ৪ই অক্টোবর কোটা বাতিল করে জারি করা সরকারি পরিপত্র অবৈধ বলে ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এরপর থেকে পুরো জুন জুড়েই হাইকোর্টের বাতিলকৃত পরিপত্র বাতিল ও সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ বহাল রাখার দাবি ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দেন তারা। ১৬ জুলাই থেকে বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দিনভর দেশজুড়ে চলে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। সেদিন চট্টগ্রামে ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাথী ফয়সাল মাহমুদ শান্ত ও রংপুরের আবু সাঈদের মৃত্যু আন্দোলনে নতুন গতি সঞ্চার করে। ১৯ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১৯ জুলাই ২০২৪ রোজ শুক্রবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ অবস্থানের উপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশ বাহিনী গুলিবর্ষণ করে। রাসেল মিয়া ১৯ জুলাই সকালের খাবার খাওয়ার পর আন্দোলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। তিনি ছাত্র-জনতার সাথে ঢাকার রামপুরায় অবস্থান নেন। ছাত্রদের অবস্থানের অদূরে রামপুরা ব্রিজের কাছেই পূর্বদিকে স্বৈরাচারের পুলিশ ও বিজিবি অবস্থান নেয়। আনুমানিক দুপুর ২ টায় অবস্থানরত নিরস্ত্র মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে ঘাতক বাহিনী। ছাত্রজনতা জীবন বাঁচাতে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে থাকে। রাসেল মিয়াও তাদের মধ্যে ছিলো। হঠাৎ একটি গুলি এসে সাহসী রাসেলের পায়ে লাগে এবং তিনি মাটিতে বসে পড়ে। অহত অবস্থায় নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করলেও, মুহূর্তেই আরেকটি গুলি এসে লাগে তাঁর বুকের বাম পাশে। এবার মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন তিনি। পুলিশ আর বিজিবির নির্বিচার গুলির মধ্যে কেউ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছিল না। বেশ কিছুক্ষণ পর যৌথবাহিনী সরে গেলে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে মুগদা মেডিকেলে নিয়ে যায়। ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গেছে, শহীদের খাতায় এভাবেই নাম লেখালেন মো: রাসেল মিয়া। হয়তো পৃথিবীর সাময়িক যাত্রা শেষ হলো তাঁর, তবে তিনি রয়ে গেলেন অনন্তকালের ইতিহাসে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের স্মৃতিচারণ শহীদ মোহাম্মদ রাসেল মিয়া সম্পর্কে তাঁর মামা সাইদুল হক বলেন, "আমার ভাগ্নে ছোট থেকেই সরল প্রকৃতির। কখনো কারো সাথে কোন ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হতো না সে। কর্মসূত্রে দীর্ঘ ৭-৮ বছর ধরে ঢাকাতে বসবাস করছে সে, সেখানে এবার মাল্টিমিডিয়া রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কর্মরত সে। একমাত্র স্ত্রী মুক্তাকে নিয়ে সেখানেই থাকতো তাঁরা। ঈদের ছুটি ছাড়া তেমন গ্রামে আসার সুযোগ হয়তো না তাঁদের।" পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বর্ণনা শহীদ মোঃ রাসেল মিয়া মূলত তাঁর পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী আছিয়া বেগমের সন্তান। আছিয়ার সংসারে সে ছাড়াও তাঁর আরো দুই সহোদর বোন রয়েছে। এর মধ্যে বড় বোন শেফালী কামরুন্নাহার আর ছোট বোন হাসনাত রেহেনা। হাসনাত রেহেনার বিবাহ বিচ্ছেদের পর, একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় একটি ছোট্ট ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা তিনি। সে পরিবারেও নিয়মিত আর্থিক সহায়তা করতো মো: রাসেল মিয়া। আবার আছিয়া বেগমের ভরণপোষণের দায়িত্ব ছিল, তার পৌঢ় বয়সের সম্বল একমাত্র পুত্র সন্তানের ওপর। তাই শহীদ মো: রাসেল মিয়াকে হারিয়ে দিশেহারা অসহায় শহীদ জননী। শহীদ মোঃ রাসেল মিয়ার ব্যক্তিগত তথ্যসমূহ নাম : মো: রাসেল মিয়া জন্ম তারিখ : ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯২ পেশা বা পদবী : চাকুরীজীবী ঠিকানা সংক্রান্ত তথ্য স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: দুলালকান্দি, ইউনিয়ন: নারায়ণপুর, উপজেলা: বেলাবো, জেলা: নরসিংদী পিতার নাম : মুক্তিযোদ্ধা মো: হাসেন আলী পেশা ও বয়স : কৃষি, ৮৪ বছর মাতার নাম : মোছা: আছিয়া বেগম মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৬৫ বছর স্ত্রীর নাম : মোছা: মুক্তা স্ত্রীর পেশা ও বয়স : গৃহিনী, ২৮ বছর পরিবারের মাসিক আয় : শহীদের অবর্তমানে পরিবারের কোন আয় নেই। তাই চরম অসহায়ত্বে পড়েছে তাঁর মা ও স্ত্রী। কারণ তাঁর পিতা প্রথম স্ত্রী মোছা: ফাতেমার সংসারের ভরনপোষণ করেন। পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৪ জন পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও শহীদের সাথে তাঁদের সম্পর্ক নাম : মোছা: হাসনাত রেহেনা, শহীদের বোন পেশা ও বয়স : ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ৩০ বছর নাম : মোছা: মরিয়ম, শহীদের ভাগ্নী পেশা ও বয়স : শিক্ষার্থী, ১৪ বছর আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, সময় আনুমানিক ২টা বেজে ১৫ মিনিট আহত হওয়ার স্থান : রামপুরা ফ্লাইওভারের নিচে আক্রমণকারীর পরিচয় : স্বৈরাচারী হাসিনার পুলিশ ও বিজিবি নিহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই, ২০২৪, সময় আনুমানিক ২টা বেজে ৪৫ মিনিট নিহত হওয়ার স্থান : রামপুরা, ঢাকা শহীদের কবরের অবস্থান : দুলালকান্দি পারিবারিক কবরস্থান, বেলাবো, নরসিংদী জিপিএস লোকেশন : 24°04'04.7"N 90°52'59.9"E পরিবারটির সহযোগিতা প্রসঙ্গে শহীদ আয়ের ওপর নির্ভরশীল তাঁর মা ও স্ত্রীকে এককালীন অর্থ ও স্থায়ী কোন সহযোগিতা করা অত্যন্ত জরুরী

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রাসেল মিয়া
Image of মো: রাসেল মিয়া
Image of মো: রাসেল মিয়া
Image of মো: রাসেল মিয়া
Image of মো: রাসেল মিয়া

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আরমান মোল্লা

মো: আব্দুল্লাহ আল মামুন

বাবু মোল্লা

মুহাম্মদ জান শরীফ

মো: আল আমিন

হাফেজ মো: শরিফুল ইসলাম

মো: মোবারক

মো: হৃদয়

মো: রফিকুল ইসলাম চঞ্চল

মোহাম্মদ ফিরোজ তালুকদার

রুমান বেপারী

মো: কামরুল ইসলাম সেতু

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo