Image of মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব

নাম: মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব

জন্ম তারিখ: ২৭ অক্টোবর, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র , শাহাদাতের স্থান : ইটাখোলা পুলিশ ফাড়ি শিবপুর, নরসিংদী

শহীদের জীবনী

“একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগল প্রায় বাবা” বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম শহীদ মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব। মিরাজুল ইসলাম ২০০২ সালের ২৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান শরীয়তপুর। শহীদ মিরাজুলের পিতা জনাব মো: আবু তালেব এবং মাতা মোছা: সাহিদা বেগম। শহীদ মো: মিরাজুল ছিলেন তাঁর পিতার একমাত্র ছেলে সন্তান। দনিয়া কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন তিনি। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারনে তিনি আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। রাজধানীর ফকিরাপুলের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করে নিজের খরচ চালাতেন। ২০২৪ জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করে স্বৈরাচারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় শহীদ করা হয় তাকে। পারিবারিক অবস্থা শহীদ মো: মিরাজুলের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই দুর্বল। পারিবারিক কলহের কারণে শহীদ মিরাজকে সবসময় মানসিক অশান্তির মধ্যে থাকতে হতো। তাঁর একটা বোন আছে। তাঁর ১ম মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর চাচা ছোট বোনকে লালন-পালন করে উপযুক্ত বয়সে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। শহীদের বাবা ইউরোপ থেকে ফিরে এলাকায় ছোট একটা ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু বিজনেস ভালো চলছিল না। তাই মিরাজ ছোট্ট একটা বাসা ভাড়া নিয়ে তাঁর বাবা-মা দুজনকেই ঢাকায় নিয়ে আসেন। শহীদ হওয়ার এক সপ্তাহ আগে তাঁর বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া লাগে। এক পর্যায়ে মিরাজের মামা এসে বাবাকে মারধর করে। বাধ্য হয়ে মিরাজ বাবাকে গ্রামে নিয়ে চাচার কাছে রেখে আসেন। মিরাজের মৃত্যুর পর পরিবারের সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। তাঁর মা আলাদা হয়ে গেছেন। তাঁর বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। কোন কাজ করতে পারেননা। ছেলের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাঁকে দেখার মত কেউ নেই। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে ৩৬ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট অপশাসনের অবসান ঘটে। নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি। দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন স্বৈরাচার খুনি শেখ হাসিনা। আমাদের এই প্রিয় ভূখণ্ড বিদেশীদের দ্বারা শাসিত-শোষিত হয়েছে বহুবার, বহুকাল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর নানান প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বাংলা ভূখণ্ড বারবার বিদেশীদের মনোযোগ কেড়েছে বারবার। তুর্কি, মোঘল, ইংরেজদের দ্বারা শোষিত হয়েছে আমাদের পূর্ব পুরুষরা। এরপর পাকিস্তানিরা আমাদের শোষণ শুরু করে। ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের ২৪ বছরের শোষণ বঞ্চনার অবসান ঘটে। বাঙালির স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বারবার বিদেশীদের দ্বারা শোষিত হওয়ার ইতিহাস থাকলেও দেশীয় শক্তির দ্বারা কখনো আমরা শোষিত হইনি। কিন্তু আওয়ামী শাসনামলে এই ঘটে। নতুন ইতিহাসের জন্ম দেয় বাংলার ফেরাউন খ্যাত শেখ হাসিনার সরকার। ২০০৮ সালে এক পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ সরকার। ক্ষমতায় এসেই জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসে বাংলাদেশের মানুষের উপর। নির্বাচনী ইশতেহারে জনকল্যাণের কথা থাকলেও ক্ষমতায় এসেই জনগণের বিপক্ষে কাজ করা শুরু করে। গুম, খুন, হত্যা, কালোবাজারি, দুর্নীতি, ঘুষ, বিদেশে অর্থ পাচার, সিন্ডিকেট, ব্যাংক লুট, উন্নয়নের নামে সরকারি কর্মকর্তাদের পকেট ভারি, বিচার বহির্ভুত হত্যা ইত্যাদির মাধ্যমে দেশে পুরো সিস্টেমকেই ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায়। এদিকে দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতি জনগণের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। দলীয় লোকজনদের দাপটে সাধারণ মানুষদের টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। যার ফলে জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সমাজের সর্বত্র বৈষম্য চরম আকার ধারণ করে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য তৈরি করা হয়। কোটা প্রথার মাধ্যমে মেধাবীদের অবমূল্যায়ন করা হয়। লেখাপড়া শেষ করেও কোথাও উপযুক্ত চাকুরী না পেয়ে অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ ইত্যাদির মাধ্যমে অযোগ্য লোকদের প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই অন্যায় ছাত্র জনতা বরদাশত করতে পারে না। ছাত্রজনতা সরকারের দীর্ঘ দিনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। তারা আন্দোলনে নামে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার বাঁধা প্রদান করে, যৌক্তিক আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার ব্যর্থ পরিকল্পনা করে। স্বৈরাচারী বাহিনীর নানামুখী নির্যাতনের ফলে ১৯ জুলাই সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেন ছাত্র নেতৃবৃন্দ। এই আহ্বানে সকল বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের ছাত্র-জনতা সকল বাঁধা উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। এদিন সারা দেশে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে পুরো ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন জেলা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শহীদ মো: মিরাজুল বাড়ি থেকে বের হয়ে মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় আন্দোলনকারীদের সাথে যুক্ত হন। এ সময় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। র‌্যাবের অফিসের সামনে হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনকারীদের টার্গেট করে নির্বিচারে গুলি করতে থাকে। গুলির মুখে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি শুরু করে। এ সময় হেলিকপ্টার থেকে দুইটা গুলি এসে মিরাজের গায়ে বিদ্ধ হয়। একটা গুলি তাঁর পায়ে লাগে, আর একটি গুলি তাঁর বুকের বাম পাশ দিয়ে ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। গুলি বিদ্ধ হয়ে অসহায় মিরাজ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। রক্তে রঞ্জিত হয় পিচ ঢালা কংক্রিটের রাস্তা। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে চিৎকার দিতে থাকেন তিনি। আশেপাশের মানুষজন এসে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুলেন। এসময় তিনি বার বার তাঁর প্রিয় বাবা আর চাচাকে দেখতে চান। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন আনুমানিক সন্ধ্যা ৬ টা। মৃত্যুর খবর পেয়ে গ্রাম থেকে তাঁর বাপ-চাচারা ছুটে আসেন। এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ঢেউ বইতে থাকে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পিতা আবু তালেব মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। মৃত্যুর পর তাঁর চাচারা তাঁর লাশ গ্রামে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু তাঁর মামাদের পরামর্শে রাজধানীর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শহীদের চাচা জনাব আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার ভাতিজা শহীদ মিরাজুলের জন্য আমার খুব মায়া হয়। ছেলেটা কখনো সুখ করতে পারল না। অল্প বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়। পারিবারিক অশান্তি থাকা সত্বেও সে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে শাহাদাত বরন করেন। আমি আমার ভাতিজার জন্য দোআ করি, আল্লাহ যেন তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আমিন’। এক নজরে শহীদ মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব নাম : শহীদ মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব পিতা : জনাব মো: আবু তালেব মাতা : মো: সাহিদা বেগম জন্ম : ২৭/১০/২০০২ জন্মস্থান : শরীয়তপুর পেশা : ছাত্র, পাশাপাশি চাকরি আহত হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, মোহম্মদপুর বশির রোড শহীদ হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হসপিটাল স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নন্দনসার, ডাকঘর: ঘড়িসার-৮০২২, নড়িয়া, শরীয়তপুর বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: নন্দনসার, ডাকঘর: ঘড়িসার-৮০২২, নড়িয়া, শরীয়তপুর

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব
Image of মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব
Image of মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব
Image of মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব
Image of মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব
Image of মো: মিরাজুল ইসলাম অর্নব

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: শাওন

মো: রুস্তম

তাহমিদ আব্দুল্লাহ অয়ন

মো: রশীদ

মো: সুজন মিয়া

মো: এলিম হোসেন

রুমান বেপারী

জসিম ফকির

মো: রাসেল মাহমুদ

মো: তুহিন

তামিম শিকদার

জাহাঙ্গীর আলম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo