Image of মো. শাখিল আনোয়ার

নাম: মো. শাখিল আনোয়ার

জন্ম তারিখ: ৫ আগস্ট, ১৯৮৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : বেকার, শাহাদাতের স্থান : ইপিজেড, সাভার

শহীদের জীবনী

জুলাই-আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার পতনের গণঅভ্যুত্থানে নিহত হওয়া শহীদদের অন্যতম মোঃ শাখিল আনোয়ার। তিনি শহীদ হন ৫ই আগস্ট বিজয়ের দিনে। মো: শাখিল আনোয়ারের জন্ম ৫ই আগস্ট ১৯৮৬ সালে নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার অন্তর্গত বিষা ইউনিয়নের শ্রীধরগুর নই গ্রামে। আল্লাহ তাআলার পরিকল্পনায় তার জন্মদিন ৫ই আগস্টে তিনি শহীদ হন। শহীদ হওয়ার ১ বছর আগ থেকে শাখিল আনোয়ার বেকার ছিলেন। শাখিল আনোয়ারের পিতার নাম মো: আবেদ আলী (৬১)। পেশায় তিনি কৃষক। মাতা মোছা: শাহারা বেগম (৫৩)। তিনি গৃহিণী। শাখিল আনোয়ার বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রী মোছা: সালমা আক্তার (৩৬) একজন গার্মেন্টস কর্মী। শাখিল আনোয়ার পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয়। তার বড় ভাই আব্দুল মতিন একজন কৃষক। তার পরের দুজন আবু তালহা রাজমিস্ত্রী এবং আশিকুর রহমান ভ্যানচালক। তার সর্বকনিষ্ঠ ভাই মো: সাখাওয়াত হোসেন মাত্র ১৫ বছর বয়সে ইহজগৎ ত্যাগ করেন। এসএসসি সম্পন্ন করে অভাবের সংসারে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য সাখাওয়াত হোসেন ঢাকায় কাজ করতেন। প্রতিবারের মতো ২০০৯ সালে গ্রামের বাড়িতে ঈদ পালন শেষে ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেনের ছাদে মাথায় আঘাত পেয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শহীদ হওয়ার ঘটনা ৫ই আগস্ট ২০২৪। স্বৈরাচার সরকারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়। সাভারের ইপিজেডে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন শাকিল আনোয়ার। ক্লান্ত শ্রান্ত দেহে ঘামে ভেজা কাপড় পরিবর্তন করতে বাসায় আসেন দুপুর বেলা। এর মধ্যেই স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। তার পালানোর খবরে আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করার জন্য আবারো বেরিয়ে পড়েন শাখিল আনোয়ার। সময় ৩:৩০। আনন্দ মিছিলটি ইপিজেডের সামনে আসলে ছাত্র-জনতার সেই মিছিলের ওপর পুলিশ বর্বরোচিত গণহত্যা চালায়। এলোপাাথাড়ি গুলি বর্ষণ করে। মাথায় গুলিবিদ্ধ হন শাখিল। এরপর তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কজনক হওয়ায় কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে দ্রুত অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য উপদেশ দেন। সেখান থেকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিটে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন শাখিল আনোয়ার। শহীদ সম্পর্কে সামগ্রিক বর্ণনা নওগাঁ জেলার আত্রাই নদীর কোলঘেঁষা আত্রাই উপজেলার শ্রীধরগুর নই গ্রামে পিতা-মাতার ঘর আলোকিত করে জন্ম হয় শাখিল আনোয়ারের। দারুণ আদর আর সীমাহীন মমতায় বেড়ে ওঠেন তিনি। বাড়ির পাশের শ্রীধরগুর নই দাখিল মাদ্রাসায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। কিন্তু কৃষক পিতার আর্থিক অসংগতির কারণে পরবর্তী সময়ে পড়াশোনা আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে পড়াশুনায় ক্ষান্ত দিয়ে অর্থ উপার্জনের পথকে বেছে নিতে হয় তার। বাবা আর বড় ভাইয়ের সাথে শুরু করেন কৃষিকাজ। সময় গড়িয়ে ২০১৭ সালে অনেক স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। কিন্তু সে স্বপ্ন স্থায়ী হতে না হতেই এক বছরের মাথায় দেশে ফিরে আসতে হয় তাকে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে মোছা: সালমা আক্তারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাখিল আনোয়ার। বিয়ের সপ্তাহখানেক পরে চাকরির উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক ঢাকার সাভারে চলে আসেন তিনি। তার স্ত্রী একটি গার্মেন্টসে এবং তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো নামক কোম্পানিতে চাকরি নেন। ২০২৩ সালে এসে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে যান শাখিল আনোয়ার। ফলে স্ত্রীর স্বল্প আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তাই সংসারের প্রাথমিক খরচ মেটাতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টায় আবার বিদেশ চলে যাওয়ার মনস্থির করেন। ভিসা ও পাসপোর্ট করার জন্য আবারো ঋণ গ্রহণ করেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত শাখিল আনোয়ার আর্থিক দৈন্যতা কাটাতে বারবার ঋণের দ্বারস্থ হতে থাকেন। তারপরেও দরিদ্র্যতা ও ঋণের ভার যেন পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। জুলাই ২০২৪, দেশব্যাপী শুরু হয় স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত করতে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা নেমে আসে রাজপথে। বসে থাকেনি শাখিল আনোয়ারও। সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন গণমানুষের আন্দোলনে। ৫ই আগস্ট, ২০২৪; সেদিনও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বেলা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ক্রমশ আন্দোলনের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। ক্লান্ত শরীরে দুপুরবেলা বাসায় এসে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের সংবাদ শুনতে পান। বিজয়ের আনন্দে রাজপথে নামার তর সইছিল না তার। জামা কাপড় বদলে আবারও চলে যান আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করার জন্য। যাবার সময় স্ত্রীকে একসাথে দুপুরের ভাত খাবেন বলে বেরিয়ে পড়েন শাখিল আনোয়ার। কিন্তু কেইবা জানত, এই যাত্রা আর ফিরে না আসার যাত্রা! ছাত্র জনতার বিজয় মিছিলে শতাব্দীর নিকৃষ্ট স্বৈরশাসক গণখুনি হাসিনার সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী গুলি বর্ষণ করে। শহীদ হয় শাখিল আনোয়ার। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। স্বামীর অপেক্ষায় থাকা সালমা আক্তার স্বামীকে ফোন দিলে ফোনের ওপাশ থেকে অপরিচিত এক ব্যক্তি জানান— গণসাস্থ্য কেন্দ্রের বাইরে মোবাইলটি কুড়িয়ে পাওয়া গিয়েছে, মোবাইলটি যেন তিনি নিয়ে যান। পাশের বাসার এক লোককে সাথে নিয়ে তখনই বেরিয়ে পড়েন সালমা আক্তার। রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় তারা আর সামনে এগোতে না পেরে বাসায় চলে যান। পরের দিন ৬ই আগস্ট আবারও স্বামীর খোঁজে বেরিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল, এমার্জেন্সি রুম থেকে মর্গ; সর্বত্রই হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকেন স্বামী শাখিল আনোয়ারকে। অবশেষে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালের মর্গে খুঁজে পান প্রাণপ্রিয় স্বামীর মরদেহ। শোকে পাগলপ্রায় হয়ে যান সালমা আক্তার। মৃত স্বামীকে নিয়ে ছোটেন নওগাঁয় তাদের নিজ বাড়িতে। সেদিন সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে জানাজা শেষে নিজ গ্রামের বাড়িতে কবরস্থ করা হয় শহীদ শাখিল আনোয়ারকে। তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নেওয়ার পর তৈরি হয় এক হৃদয়বিদারক অবস্থা। শহীদ পরিবারে নেমে আসে দুঃখের কালোছায়া। থামে না শোকের মাতম। সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় বৃদ্ধ বাবা-মার দুচোখে অশ্রুর ফোয়ারা নামে। বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী সালমা আক্তারের অবস্থা হয় করুণ। স্বামীর এ বিদায় তিনি এক মুহূর্তের জন্যও মেনে নিতে পারছেন না। শহীদ মো: শাখিল আনোয়ার পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও থেকে যাবেন আমাদের সবার হৃদয়ে। শহীদের পরিবারের দৈন্যদশা শহীদ শাখিল আনোয়ারের পরিবারের আর্থিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। স্ত্রী মোছা: সালমা আক্তার একটি গার্মেন্টসে খুবই স্বল্প বেতনে চাকরি করতেন। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। মারা যাওয়ার ১ বছর আগ থেকে শখিল আনোয়ার বেকার ছিলেন। তার পূর্বে তিনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো নামক একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। চাকরি হারানোর পর থেকে তিনি বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পাসপোর্ট ও ভিসা করার জন্য ঋণও নিয়েছিলেন। এছাড়াও শহীদ পরিবারের আরো একাধিক ঋণের বোঝা রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রাত্যহিক সংসারের খরচ বাবদ গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ, এখন পর্যন্ত পরিশোধ হয়েছে মাত্র ৬ হাজার টাকা। এরপর অটোরিক্সা ক্রয়ের জন্য শাখিল আনোয়ার তার শাশুড়ি থেকে নেন আরো ৫০ হাজার টাকা ঋণ। যার মধ্যে ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে ভিসা সংক্রান্ত আরো টাকার প্রয়োজন হলে সে অটোরিকশা বিক্রি করে দেন। এছাড়াও মুদির দোকানে ২৫ হাজার টাকা, হাসপাতাল থেকে শহীদের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা বাবদ ২৩ হাজার টাকা এবং ৩ মাসের বাসা ভাড়া বাবদ ও বকেয়া বিদ্যুৎ বিলসহ সব মিলিয়ে প্রায় ২ লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়া সালমা আক্তার গারমেন্টসে চাকরি হারিয়ে বর্তমানে নওগাঁয় তার শ্বশুরবাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে অবস্থান করছেন। শাখিল আনোয়ারের পিতা বর্গাচাষী আবেদ আলীর যৎসামান্য উপার্জন এই পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস। মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একখণ্ড জমির উপর আধাপাকা বাড়িটি বর্তমানে শহীদের স্ত্রীর একমাত্র অবলম্বন। এক নজরে শহীদ শাখিল আনোয়ার পূর্ণনাম : মো. শাখিল আনোয়ার জন্ম তারিখ : ০৫.০৮.১৯৮৬ জন্মস্থান : নওগাঁ জেলার শ্রীধরগুর নই গ্রাম পেশা : বেকার পিতা : মোঃ আবেদ আলী মাতা : মোছা. শাহারা বেগম স্ত্রী : মোসা. সালমা আক্তার বর্তমান ঠিকানা : সাভার, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- শ্রীধরগুর নই, ইউনিয়ন- বিষা, থানা-আত্রাই, জেলা-নওগাঁ শহীদ হওয়ার স্থান : ইপিজেড, সাভার ঘাতক : পুলিশ আঘাতের ধরন : গুলি গুলিবিদ্ধের তাং ও সময় : ৫ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০ শহীদ হওয়ার তাং ও সময় : ৫ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০ সমাধিস্থল : গ্রামের বাড়ি শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. শহীদের স্ত্রী সালমা আক্তারের জন্য একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা প্রয়োজন ২. ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা প্রয়োজন ৩. নিয়মিত মাসিক সহযোগিতা প্রয়োজন

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো. শাখিল আনোয়ার
Image of মো. শাখিল আনোয়ার
Image of মো. শাখিল আনোয়ার
Image of মো. শাখিল আনোয়ার

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো. মেহেদী হাসান রবিন

মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)

 মো: সেলিম হোসেন

মো: রিপন ফকির

 মো: সোহানুর রহমান রঞ্জু খান

মো: রমজান আলী

মো: মিনহাজ হোসেন

মো: শিমুল

 মো: সাব্বির হাসান

মো: আব্দুল আলীম

মো: জিল্লুর সরদার

মো: আব্দুল মান্নান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo