Image of মাহফুজ আলম শ্রাবণ

নাম: মাহফুজ আলম শ্রাবণ

জন্ম তারিখ: ৩ মে, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ছাত্র ও চাকরিজীবী, শাহাদাতের স্থান :মিরপুর-৬, ডাক্তার আজমল হসপিটালে নেওয়ার পথে

শহীদের জীবনী

“মা আমার যেসব ভাইবোন আন্দোলন করছে, তারাও তো কোনো-না-কোনো মায়ের সন্তান। তাদেরও তো মা আছে, তাদেরও তো পরিবার আছে। তারা যদি আন্দোলনে থাকতে পারে, আমি কেন পারব না? দোয়া করো মা, যেন আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করতে পারি” নওগাঁর এক ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম দোগাছি। নওগাঁ জেলার নওগাঁ সদরের বোয়ালিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত এই গ্রাম। ছায়া সুনিবিড় এই গ্রামে জন্ম শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবণের। তিনি ৩রা মে ২০০৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো: মোশাররফ হোসেন পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ব্যবসা আছে ওয়ার্কশপের। তার মা মোছা: বেবী নাজনীন একজন গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় তিনি। বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাপ্পি বাবার ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করেন। ছোট ভাই ইফতিয়ার রহমান মাহিদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। পেশায় মাহফুজ আলম ছিলেন ছাত্র ও চাকরিজীবী। তিনি রাইগা ডিগ্রি কলেজ, নওগাঁ থেকে মানবিক শাখা থেকে এইচএসসি শেষ করে অনার্সে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। পিতার পক্ষে দুই ছেলের পড়াশুনার খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা কষ্টসাধ্য বিধায় পড়াশুনার পাশাপাশি মাহফুজ আলম ঢাকার মিরপুর-৭ এ অবস্থিত রেনেটা লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন এ বছরের ২৮ জানুয়ারি। মাহফুজ আলম শ্রাবণ ভালো ক্রিকেটারও ছিলেন। তিনি থানা ও জেলা পর্যায়েও খেলেছেন। তার ইচ্ছা ছিল জাতীয় দলে খেলার। কিন্তু আর্থিক সমস্যা ও বিভিন্ন বাস্তবতার কারণে তা অপূর্ণই থেকে যায়। শহীদ হওয়ার ঘটনা জুলাই ২০২৪; কোটা সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শ্রাবণও ছাত্র হওয়ায় নিয়মিত এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন। পরিবারের লোকজন তাকে ফোন দিয়ে নিষেধ করলেও কারো বাধা তাকে ঘরে রাখতে পারেনি। শ্রাবণ তার মাকে বলতেন, "মা আমার যেসব ভাইবোন আন্দোলন করছে, তারাও তো কোনো-না-কোনো মায়ের সন্তান। তাদেরও তো মা আছে, তাদেরও তো পরিবার আছে। তারা যদি আন্দোলনে থাকতে পারে, আমি কেন পারব না? দোয়া করো মা, যেন আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে এবং দেশের মানুষকে রক্ষা করতে পারি।" ৫ই আগস্ট ২০২৪; স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হলে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেন শ্রাবণ। সময় বিকাল ৩:৩০ মিনিট। মিরপুর মডেল থানার সামনে ছাত্র জনতার এ বিজয় মিছিলের উপরগুলি বর্ষণ করে পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হন মাহফুজ আলম শ্রাবণ। পুলিশের ছোঁড়া গুলি তার বাম পাশের বুকের উপরের অংশ দিয়ে ভেদ করে ডান পাশের পেটের অংশ দিয়ে বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে তার বড় ভাই মুস্তাফিজুর রহমানকে এ তথ্য জানান। তারপর শ্রাবণের সহকর্মী ও রুমমেট মাসুদ খবর পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছান। অনেক খোঁজাখুঁজির পর কোথাও না পেয়ে অবশেষে মাটিতে পড়ে থাকা তিনটি মরদেহের মধ্য থেকে শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবণের লাশ সনাক্ত করা হয়। এরপর তাকে মিরপুর ৬ নাম্বারে অবস্থিত ডাক্তার আজমল হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এরই মধ্যে পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে কিছু অর্থ সংগ্রহ করে রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যেই শুনতে পান শ্রাবণ আর বেঁচে নেই। ঢাকায় পৌঁছে শ্রাবণের মৃতদেহ নিয়ে রাত তিনটায় তার পরিবার নওগার নিজ বাড়িতে গিয়ে পৌঁছান। পরের দিন ৬ই আগস্ট জানাজার নামাজ সম্পন্ন করে বেলা ১১টায় কবরস্থ করা হয় শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবণকে। শহীদ শ্রাবণ সম্পর্কিত আরো কিছু তথ্য শ্রাবণ ছোটবেলা থেকেই ধার্মিক ছিলেন নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতেন সাহসী ও প্রতিবাদী অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করতেন। শ্রাবণের পরিবারের আয়ের উৎস ছিল তার বাবার ওয়ার্কশপের ক্ষুদ্র ব্যবসা। তার বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমান তার বাবার সাথে ওই ব্যবসা পরিচালনা করতেন। তাদের আধাপাকা তিন রুম বিশিষ্ট টিনশেডের ছোট একটি বাড়ি আছে। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচ বহন করে সংসারের সকল খরচ মেটাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে থাকেন তার বাবা মোশাররফ হোসেন। তাই শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবণ তার বাবার আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে লেখাপড়ার পাশাপাশি মিরপুর ৭-এ অবস্থিত জেনেটা লিমিটেড কোম্পানিতে যোগদান করেন। সেখানে তিনি ঔষধ প্যাকেজিং, মিক্সিং ইত্যাদি কাজ করতেন। তিনি ২৮শে জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে এই চাকরিতে যোগ দেন। তার স্বপ্ন ছিল, তার উপার্জনের টাকা দিয়ে তার বাবা-মাকে হজ্ব করাবেন। তার বাবার ব্যবসা মহাদেবপুর সদরে হওয়ায় একসময় তারা পরিবারের সবাই মহাদেবপুরেই থাকতেন। শ্রাবণ মহাদেবপুর সর্বমঙ্গলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে রাইগা মহাদেবপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তার ছোট ভাই মাহিদ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। শ্রাবণের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল তার বাবার ওই ছোট্ট ব্যবসা। মহাদেবপুর সদরে তাদের অল্প আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই তারা পরিবারসহ আবার তাদের গ্রামের বাড়ি দোগাছীতে চলে যান। এসএসসি পাশ করে শহীদ শ্রাবণ ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার পরিকল্পনা ছিল, চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়াটা চালিয়ে যাবেন। তাই তিনি অনার্সে ভর্তির জন্য আবেদনও করেন। তার স্বপ্ন ছিল, তার উপার্জনের টাকা দিয়ে তার বাবা-মাকে হজ্ব করাবেন। শহীদ শ্রাবণের মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। শ্রাবণ তার মাকে প্রায় বলতেন, "মা আমাকে নিয়ে তুমি একদিন গর্ব করবে। তোমাকে সবাই 'মাহফুজের মা' নামে জানবে। তুমি আমার জন্য দোয়া করো মা।" শ্রাবণের মা ছেলে হারানোর ব্যথা সহ্য করতে পারছে না। তিনি সারাক্ষণ শহীদ শ্রাবণের বলে যাওয়া কথাগুলো বলছেন আর কাঁদছেন। মা-ভক্ত শ্রাবণ ঢাকায় থাকাকালীন ফোন দিয়ে জানাতেন মায়ের হাতের রান্না খেতে না পারার আক্ষেপ। মা বেবী নাজনীন ছেলেকে বিয়ে দিবেন বলে মেয়েও ঠিক করে রেখেছিলেন। কিন্তু এসবকিছু এখন দুঃসহ স্মৃতি হয়ে রইল। কিন্তু মায়ের অবুঝ মন তো আর মেনে চলে না কোনো নিয়ম কিংবা ধারা। তাইতো ছেলের কবরে বারবার ছুটে যান ছেলে যদি একটিবার 'মা' বলে ডাকেন, এই মিছে আশায়। শহীদের বড় ভাই মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শহীদ শ্রাবণ একজন সাহসী সৎ ছেলে ছিল। শহীদের এক প্রতিবেশী আইনজীবী বলেন, শহীদ মাহফুজ আলম শ্রাবণ মিশুক, ধার্মিক ও নম্র স্বভাবের ছেলে ছিল। সে অন্যায় সহ্য করতে পারতো না। তাই তো বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগদান করে। সবাইকে কাঁদিয়ে সে আজ চির নিদ্রায় শায়িত।” এক নজরে শহীদ শ্রাবণের প্রোফাইল নাম : মাহফুজ আলম শ্রাবণ জন্ম তারিখ : ০৩.০৫.২০০৩ জন্মস্থান : দোগাছি, নওগাঁ পেশা : ছাত্র ও চাকরিজীবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : রাইগা ডিগ্রী কলেজ, নওগাঁ কর্মস্থল : রেনেটা লিমিটেড, মিরপুর, ঢাকা পিতা : মো: মোশাররফ হোসেন মাতা : মোছা: বেবী নাজনীন বর্তমান ঠিকানা : মিরপুর, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম-দোগাছি, ইউনিয়ন-বোয়ালিয়া, থানা-নওগাঁ সদর, জেলা-নওগাঁ গুলিবিদ্ধের স্থান : মিরপুর-২, মডেল থানার সামনে ঘাতক : পুলিশ আঘাতের ধরন : বুকে গুলিবিদ্ধ গুলিবিদ্ধ হওয়ার তাং ও সময় : ৫ই আগস্ট, ২০২৪; বিকাল ০৩:৩০ শহীদ হওয়ার তাং ও সময় : ৫ই আগস্ট ২০২৪, বিকাল ০৪:০০টা শহীদ হওয়ার স্থান : মিরপুর-৬, ডাক্তার আজমল হসপিটালে নেওয়ার পথে সমাধিস্থল : গ্রামের কবরস্থান শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান ২. বড় ভাই মোস্তাফিজুর রহমানের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মাহফুজ আলম শ্রাবণ
Image of মাহফুজ আলম শ্রাবণ
Image of মাহফুজ আলম শ্রাবণ
Image of মাহফুজ আলম শ্রাবণ
Image of মাহফুজ আলম শ্রাবণ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: মুনিরুল ইসলাম

মো. শরিফুল ইসলাম মোহন

মো: খোকন সরদার

মো: সোহেল রানা

মো: অন্তর ইসলাম

মো: হৃদয় আহমেদ

মো: মিনহাজ হোসেন

 সিয়াম শুভ

মো: নজিবুল সরকার

মোসা: রিতা আক্তার

মতিউর রহমান

মো: সুমন সেখ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo