Image of আস সাবুর

নাম: আস সাবুর

জন্ম তারিখ: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ছাত্র শাহাদাতের স্থান :আশুলিয়া থানার সামনে।

শহীদের জীবনী

খুনি হাসিনা পালানোর কিছুদিন পর ভ্যানের উপর লাশের স্তুপের যে ভিডিওটি দেশব্যাপী ভাইরাল হয়েছিল, যে লাশগুলো লেগুনাতে তুলে পরবর্তীতে পেট্রোল ঢেলে পুলিশ পুড়িয়ে দিয়েছিল, সেই লাশগুলোর মধ্যে ছিলেন শহীদ আস সাবুর শহীদ আস সাবুরের জন্ম ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১০ সাল। নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার উকিলপাড়া গ্রামে পিতা মো. এনাব নাজেজ (জাকী) ও মাতা মোছা: রাহেন জান্নাত ফেরদৌসীর ঘর আলোকিত করে আগমন ঘটে তার। পিতামাতার দুই সন্তানের মধ্যে তিনিই ছোট। সাবুর বাবামায়ের সাথে আশুলিয়ার শিমুলবাগান এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত গার্মেন্টস কর্মী। বিগত সাত মাস আগে তিনি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। তার মা একজন গৃহিণী। আস সাবুর ছিলেন মেধাবী ছাত্র। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঐতিহ্যবাহী শাহীন কলেজ, ঢাকা (আশুলিয়া শাখা)। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি বিজ্ঞান বিভাগে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। অত্যন্ত মেধাবী সাবুর ছাত্রজীবনে কোনো ক্লাসে দ্বিতীয় হননি। সব সময় প্রথম স্থান অধিকার করে কৃতিত্বের সাথে পাস করতেন। সাবুরের বাবার অবসরের পর তার বড় ভাই মো. রেজওয়ানুল ইসলাম প্রতিমাসে তার বাবাকে ১৫০০০ করে টাকা দিতেন। তা দিয়েই আশুলিয়ার ভাড়া বাসায় তাদের খরচ নির্বাহ হতো। তার বড় ভাই বগুড়ায় প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। ২০২৫ সালে সাবুরের এসএসসি পরীক্ষার পর তার বাবা সপরিবারে তার বড় ভাইয়ের কাছে বগুড়ায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! সেই দিনটা সাবুরের জীবনে আর এলো না। আস সাবুর যেভাবে শহীদ হলেন ৫ই আগস্ট ২০২৪; আস সাবুর সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ তার বড় ভাইকে ফোন দিয়ে জানান যে, তিনি আন্দোলনে গিয়েছেন এবং বাইপাইল মোড়ে অবস্থান করছেন। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ আবারও তার বড় ভাইকে ফোন করে জানান যে, সেখানে প্রচন্ড গোলাগুলি চলছে। তার সামনে একজনের মাথায় গুলি লেগেছে, একজনের কোমরে গুলি লেগেছে, কিন্তু তিনি নিরাপদ জায়গায় আছেন। পরবর্তীতে বেলা সাড়ে ৩টা নাগাদ তিনি তার বাসার এক ভাইকে জানান যে, তিনি নিরাপদ জায়গায় আছেন। তিনি তার নিরাপদ থাকার কথা তার মাকেও জানাতে বলেন। কিন্তু বিকেল ৫টা থেকে তার আর কোনো খোঁজ মিলছিল না। তখন থেকেই শুরু হয় তাকে খোঁজ করা। এলাকার সকল হাসপাতাল ক্লিনিক এবং আশেপাশের সকল বাসাবাড়িতে তাকে খোঁজা হয়। কিন্তু কোথাও পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে ৬ই আগস্ট সকাল থেকে তাকে খোঁজা হয়। বিকালে তার আগুনে পোড়া মরদেহ পাওয়া যায় আশুলিয়া থানার সামনে। যা ৫ই আগস্ট বিকালে কিছু পুলিশ আস সাবুরসহ আরো কিছু মানুষকে পায়ে গুলি করে লাঠি দিয়ে মেরে জীবন্ত অবস্থায় একটি ভ্যানে স্তুপ করে পরে লেগুনাতে তুলে পেট্রোল দিয়ে জ্বলিয়ে দেয়। শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভিডিওটি চরম ভাইরাল হয় এবং সারাদেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, কয়েকজন পুলিশ সদস্য একটা ভ্যানের ওপর অনেকগুলো লাশ তুলে স্তুপ করেছে। তারপর বড় কাপড় দিয়ে লাশগুলোকে ঢেকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। আসলে পুলিশ ওই লাশগুলো নিয়ে একটি লেগুনাতে তোলে। তারপর পেট্রোল ঢেলে সেগুলো পুড়িয়ে দেয়। অথচ তখনও বেঁচে ছিল কেউ কেউ। সেই পোড়া লাশের ভিডিও চিত্র ৬ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। কিন্তু তখন মনে করা হয়েছিল, সেগুলো বোধহয় পুলিশের লাশ। শহীদ আস সাবুরের আরো কিছু তথ্য সাপুরের পিতা মোঃ এনাব নাজেজ সাভারের আশুলিয়ায় একটা গার্মেন্টসে কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে ১৪ বছর চাকরি করার পর ৭ মাস আগে অবসরে গিয়েছেন। এনাব নাজেজের দুই ছেলে। বড় ছেলে মোহাম্মদ রিজওয়ানুল ইসলাম পড়াশোনা শেষ করে বগুড়ায় প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানিতে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। সেখানে তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকেন। এনাব নাজেজ ভেবেছিলেন, আর তো মাত্র কয়েকটি মাস! সাবুরের এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলে তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে বড় ছেলের কাছে বগুড়া চলে যাবেন কিন্তু কে জানত এনাব নাজেজ যে ছেলের পরীক্ষার অপেক্ষা করছিলেন, সেই চলে যাবে এত তাড়াতাড়ি। আস সাবুর সাদাসিধে ধার্মিক ছিলেন। নিয়মিত নামাজ কালাম করতেন। বাবা এনাব নাজেজ মুখের দাড়ি কাটতেন। দাড়ি না কাটতে আস সাবুর বাবাকে অনেকবার নিষেধ করেছেন। আস সাবুর এতটাই মেধাবী ছিলেন যে, প্রত্যেক ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। আস সাবুরের মেধার স্বীকৃতি স্বরূপ এখনো বাসায় সাজানো রয়েছে তার অনেক পুরস্কার; সনদ ক্রেস্ট এবং মেডেল। শুধু নেই আস সাবুর। আস সাবুরকে যেভাবে আগুনে পোড়ানো হয়েছিল, তাতে তাকে চেনার উপায় ছিল না। কিন্তু তার গলায় থাকা আইডি কার্ডের ফিতা, টি-শার্টের সামান্য কিছু অংশ এবং তার মোবাইলে থাকা সিম কার্ডটি ভালো থাকায় সেটার মাধ্যমেই তাকে সনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ৭ আগস্ট তার গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার মহাদেবপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে চিরনিদ্রায় তাকে শায়িত করা হয়। আস সাবুরের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি। তার পিতা দীর্ঘ ১৪ বছর গার্মেন্টসের ভালো পদে চাকরি করে বর্তমানে অবসরে আছেন। তার গ্রামের বাড়িতে রয়েছে এক বিঘা ফসলী জমি। যেটা লিজ দিয়ে তিনি বছরে ১২ হাজার টাকা পান। এক নজরে শহীদ আস-সাবুর নাম : আস সাবুর জন্ম তারিখ : ১৬.০২.২০১০ জন্মস্থান : উকিলপাড়া, নওগাঁ পেশা : ছাত্র

শহীদ সম্পকির্ত কুরআনের আয়াত

যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদের জন্য রয়েছে মহান পুরস্কার। (সুরা মুহাম্মদ ৪৭:৪)

শহীদ সম্পকির্ত হাদিস

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের আত্মা সবুজ পাখির পেটে থাকে।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৭)

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image
Image
Image
Image
Image
Image
শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo