Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত

নাম: মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত

জন্ম তারিখ: ১০ মে, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, সরকারি তোলারাম কলেজ, ঢাকা, গ্রুপ[: বিজনেস স্টাডিজ শাহাদাতের স্থান: রায়েরবাগ স্ট্যান্ড সংলগ্ন, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা

শহীদের জীবনী

''মেধাকে দমন করতে মাথায় গুলি করেছে হত্যাকারিরা'' শহীদের পরিচয় যার আগমনে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল স্বজনরা, তিনি হলেন প্রান্ত। তার পুরো নাম শহীদ মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম তারিখ ১০ মে ২০০৬ সাল। শহীদ মাহাদী ঢাকা জেলার কেরাণীগঞ্জ থানার কদমতলী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ মাহাদী পরিবারের ছোট ছেলে। তার পিতার নাম জনাব জাহাঙ্গীর হোসেন। মাহাদীর বাবা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবা কাপড়ের ব্যবসা করেন। শহীদ মাহাদী ছিলেন সরকারী তোলারাম কলেজের মেধাবী ছাত্র। তিনি বিজনেস স্টাডিজ বিভাগের এইচ এস সি ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের মেধাবী ও কর্মঠ শিক্ষার্থী। তিনি দাবা খেলায় ছিলেন প্রচণ্ড পারদর্শী ও অত্যন্ত মেধাবী এই মাহাদী শুধু পড়াশোনাই করতেন এমন নয়, তিনি এই ছোট্ট বয়সেই সংসারের হাল ধরতে চাইতেন। পিতা মাতার ছায়া হয়ে ছিলেন শহীদ মাহাদী। শহীদ মাহাদী ছোটবেলা থেকেই ছিলেন খুবই মানবিক। তিনি পিতার থেকে হাত খরচ নিয়ে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতেন, কাউকে খাবার কিনে দিতেন। ছাত্র হলেও পকেটে ৫ টাকা থাকলেও তিনি তা দান করতেন আনন্দচিত্তে। তার ছিল অনেক বড় স্বপ্ন; ছিল সমাজকে নিয়ে ভাবনা। তিনি সবসময় পিতার কাজে সহায়তা করতেন। শহীদ মাহাদীর শাহাদাতের ঘটনা ২০২৪ সালে কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে দেশব্যাপি চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছাত্র-জনতার শাহাদাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশ উত্তপ্ত হয়ে যায়। ১৬ জুলাই হতে ৫ আগস্ট ঝরেছে অসংখ্য প্রাণ। দেশে ১৪৪ ধারা জারি করে ইন্টারনেট বিচ্ছিন করে দেয় সরকার। এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায় দেশ। মাহাদী এই আন্দোলনে মাজলুমের পক্ষে অবস্থান নেন ও আন্দোলন করেন। তিনি ১৯ তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশে প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন। প্রত্যক্ষদর্শীর মতে শহীদ মাহাদী সেখানে সকলের সাথে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এমন সময় একটু দূরে অবস্থানরত পুলিশ সমাবেশের দিকে গুলিবর্ষন শুরু করে। সবাই এদিক সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। শিক্ষার্থীরা প্রতিরোধের চেষ্টা করে। হঠাৎ ঘাতকের একটি গুলি প্রান্তর মাথা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সাথে সাথে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। প্রান্ত’র বড় ভাইয়ের বন্ধু তপু প্রান্তকে উদ্ধার করতে যেয়ে দেখতে পান এটি তার বন্ধুর ভাই। প্রচন্ড গোলাগুলির ভেতরও তপু কিছু সহযোদ্ধার সাহায্যে প্রান্তকে উদ্ধার করেন এবং সাথে সাথে বড় ভাই মিরাজ হোসেনকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানান এবং পাশ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান। পরিবারের সবাই হাসপাতালে গিয়ে প্রান্তকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। শহীদ সম্পর্কে অনুভূতি মিরাজ হোসেন (শহীদের বড় ভাই): “আমার ভাই মানুষ হিসেবে খুব সাহায্যকারী ছিল। ৫ টাকা থাকলেও কাউকে না কাউকে দান করত। দাবা খেলতে খুব পছন্দ করত আমার ভাই। আব্বুর কাছে ১০০ টাকা, ২০০ টাকা নিয়ে মানুষকে খাবার কিনে দিত । বয়স অনুযায়ী অনেক বড় চিন্তা ভাবনা করত শহীদ প্রান্ত। বাবাকে সবসময় সাহায্য করতে পছন্দ করত। আমরা একসাথে খেলাধুলা করতাম, নামাজে যেতাম। সবই আজ স্মৃতি। আমার ভাইকে আমি কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না।” শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা মাহাদী হাসান প্রান্তর বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। শহীদের বড় ভাই আছে, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তিনি ঐঝঈ এর পর আর পড়ালেখা করতে পারেননি। তিনি এখন ২৫ বছরের যুবক। তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে পরিবারের অভাব কিছুটা ঘুচবে। শহীদ পরিবার ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। বাসার মাসিক ভাড়া ১০ হাজার টাকা। তাদের নিজ জেলা মুন্সিগঞ্জ জেলায় শহীদের সামান্য পরিমাণ জমি আছে, তবে তা চাচাদের দখলে। মাতা গৃহিণী। পিতার মাসিক আয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। তার পিতা জনাব জাহাঙ্গীর হোসেন (৫৬) নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত। অল্প মুনাফা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয় না। তিনি অনেকদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। শহীদ পরিবারের তথ্য শহীদের মাতা: শহীদ মাহাদীর ভাগ্যবতী মাতা জনাব শাহীনুর বেগম, বয়স ৩৫, পেশায় গৃহিণী। শহীদের বড় ভাই: শহীদ মাহাদীর বড় ভাই জনাব মো: মেরাজ হোসেন। তিনি ঐঝঈ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে এরপর আর পড়াশোনা সম্ভব হয়নি। শহীদের পিতা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। যা পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে কর্মসংস্থানে সহায়তা করা হয়েছে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য শহীদের পূর্ণ নাম : মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত জন্ম তারিখ : ১০-০৫-২০০৬ জন্মস্থান : কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা পেশা : ছাত্র কলেজের নাম : সরকারি তোলারাম কলেজ নিজ জেলা : মুন্সিগঞ্জ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বেপারিপাড়া, কুমারভোগ, ইউনিয়ন: লোহাগঞ্জ, থানা: লৌহগঞ্জ, জেলা: মুন্সিগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা: : ১৭/১, ব্যাংক কলোনী, এলাকা: দক্ষিন দনিয়া; থানা: কেরাণীগঞ্জ; জেলা: ঢাকা পিতার নাম : জাহাঙ্গীর হোসেন পিতার পেশা ও বয়স : ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বয়স: ৫৬ বছর মায়ের নাম : শাহিনুর বেগম মায়ের পেশা : গৃহিনী, বয়স: ৩৫ বছর মাসিক আয় : ২০০০০/- পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৮ বর্তমান ঘর বাড়ির অবস্থা : ভাড়া ঘর ঘটনার স্থান : রায়েরবাগ স্ট্যান্ড সংলগ্ন আক্রমণকারী : স্বৈরাচারী সরকারের পুলিশ বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯-০৭-২৪, বিকাল ৫টা মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ১৯-০৭-২৪, বিকাল ৫টা, রায়েরবাগ স্ট্যান্ড সংলগ্ন শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : নিজ এলাকার মসজিদে তার জানাজার নামাজ হয় এবং এলাকার কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হয়

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত
Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত
Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত
Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত
Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত
Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত
Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত
Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত
Image of মো: মাহাদী হাসান প্রান্ত

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আবু ইসাহাক

 মো: ইসহাক জমদ্দার

অজ্ঞাত

 জোবাইদ হোসেন ইমন

হাসনাইন আহমেদ

মো. রফিকুল ইসলাম

মো: আসিফ ইকবাল

মো: মোসলেহ উদ্দিন

মো: জাহিদ-এ-রহিম

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ

মো: মেহেদী হাসান

সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo