জন্ম তারিখ: ১৫ অক্টোবর, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : ছাত্র, ৬ষ্ঠ সেমিস্টার, ইলেক্ট্রনিক্স ডিপার্টমেন্ট, শাহাদাতের স্থান : পাবনা ট্রাফিক মোড়, ভাড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদ খান ও তার সহযোগী নাসির।
“আব্বু, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করলে সবসময় সামনেই থাকতে হয়, পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই ” শহীদ জাহিদুল ইসলাম পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রনিকস বিভাগের এক মেধাবী শিক্ষার্থী। স্কুল শিক্ষক মো. দুলাল উদ্দিনের তিন ছেলের মধ্যে দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই জাহিদ ছিলেন নম্র, ভদ্র এবং সততার প্রতীক। ছিলেন নিরহংকার, শান্ত ও মার্জিত যুবক। তবে তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন সম্পূর্ণ আপোসহীন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নিয়মিত আন্দোলনে যেতেন এবং নেতৃত্ব দিতেন। তার সঙ্গে থাকতেন তার বড়ো ভাই তাওহীদ। একদিন টিভিতে মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া অবস্থায় জাহিদ ও তাওহীদকে দেখে পিতা দুলাল উদ্দিন উদ্বিগ্ন হয়ে ছেলেকে বললেন, "বাবা, মিছিলে গেলে একটু মাঝখানে থেকো, তাহলে বিপদের আশঙ্কা কম থাকবে।" জাহিদ তখন উত্তর দিয়েছিলেন, "আব্বু, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করলে সবসময় সামনেই থাকতে হয়, পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই।" ছেলের এমন কথায় সেদিন পিতার বুক গর্বে ভরে উঠছিল। শহীদের বাবা স্ত্রী সন্তানসহ মীরপুরে থাকেন। শহীদ জাহিদুলসহ তার ৩টা ছেলে ও ১টা মেয়ে। শহীদের বাবা প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক। ঘটনার বিবরণ শহীদ জাহিদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলেন। ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে অন্যান্য দিনের মতোই মিছিলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পিতা যখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলেন, জাহিদ তাকে বলল, "বাবা, টাকা দিয়ে গেলে না?" পিতা বললেন, "ড্রয়ারে আছে, নিয়ে যাও।" এটিই ছিল বাবা-ছেলের মধ্যে শেষ কথোপকথন। জাহিদ পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন, যেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে পাবনা ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান নেয়। ছাত্ররা সেখানে বসে বা দাঁড়িয়ে দেশাত্মবোধক গান গাচ্ছিল। ৪০ মিনিট পর পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ভাঁড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান একটি জিপগাড়ি নিয়ে মিছিলের পাশে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে সে ও তার সহযোগী নাসির অস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। শিক্ষার্থীরা প্রাণ বাঁচাতে এদিক-ওদিক ছুটতে থাকে। অনেকের বুকে, পিঠে, মাথায় ও চোখে গুলি লাগে। মুহূর্তের মধ্যে পাবনা ট্রাফিক মোড় করুণ আর্তনাদে ভরে ওঠে। আবু সাঈদ খানের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগে জাহিদুল ইসলামের মাথার নিচে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এভাবেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত এক প্রাণের অবসান ঘটে। জাহিদুলের শাহাদাতের পর তার পরিবার ও সহপাঠীরা তার লাশ নিয়ে পাবনার আব্দুল হামিদ রোডে মিছিল করে। কিন্তু সেই মিছিলে আবারও গুলি চালায় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সসহ আরও কিছু আওয়ামী লীগ নেতা, যার ফলে আরও অনেকেই হতাহত হন। জাহিদুল ইসলামের মতো সাহসী যুবকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তব করতেই তারা শহীদ হয়েছেন। শহীদ জাহিদুল ইসলামের বড়ো ভাই তাওহীদ বলেন, "জাহিদ খুবই ভালো, নম্র-ভদ্র একজন ছেলে ছিল। কী অপরাধে আমার ভাইকে গুলি করা হলো, তা আমি বুঝতে পারি না। আমি এই নির্মম হত্যার সুষ্ঠ বিচার চাই।" শহীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নাম : মো: জাহিদুল ইসলাম জন্ম তারিখ : ১৫/১০/২০০৫ জন্মস্থান : চক বলরামপুর পেশা : ছাত্র শ্রেণি : ৬ষ্ঠ সেমিস্টার, ইলেক্ট্রনিক্স ডিপার্টমেন্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : পাবনা পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট আহত হবার স্থান : পাবনা ট্রাফিক মোড় শহীদ হবার স্থান : পাবনা ট্রাফিক মোড় আঘাতের ধরন : মাথার নিচে গুলি বিদ্ধ আক্রমণকারী : ভাড়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদ খান ও তার সহযোগী নাসির আহত হবার সময় ও তারিখ : দুপুর ১২:৩০ মিনিট, ৪ আগস্ট, ২০২৪ শহীদ হবার সময় ও তারিখ : দুপুর ১২:৩০ মিনিট; ৪ আগস্ট, ২০২৪ শহীদের কবরস্থান : এদ্রাকপুর গোরস্থান, পাবনা ২৩.৯৬৫০১১⁰ঘ, ৮৯.৫৯৫৯৫৯ (জিপিএস লোকেশনসহ) বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম : চক বলরামপুর ইউনিয়ন : ভাড়ারা থানা : পাবনা সদর জেলা : পাবনা পরিবার সংক্রান্ত তথ্য পিতা : মো: দুলাল উদ্দীন পিতার পেশা ও বয়স : শিক্ষক, ৫২ বছর মাতা : আপিয়া খাতুন মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৪৮ বছর মাসিক আয় : ২৫,০০০ আয়ের উৎস : বাবার শিক্ষকতা শহীদের সাথে সম্পর্ক : পিতা পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা : ৫ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ভাই : তাওহিদুল ইসলাম বয়স ও পেশা : ২৫, শিক্ষার্থী (এডওয়ার্ড কলেজ) ভাই : নাহিদুল ইসলাম, বয়স ও পেশা : ১৭, শিক্ষার্থী বোন : দিলারা পারভীন, বয়স ও পেশা : ২৯, শিক্ষার্থী, পাবিপ্রবি (মাস্টার্স) পরামর্শ ১. বাবার মাসিক আয় খুবই কম। তাই সন্তানদের পড়ালেখার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন
আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না। (সুরা আল-বাকারা ২:১৫৪)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৯)






