Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম

নাম: মো: জাহাঙ্গীর আলম

জন্ম তারিখ: ১০ অক্টোবর, ১৯৯৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ট্যাপকল তৈরির কোম্পানিতে চাকরি করতেন, শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ীর থানার সামনে, ঢাকা

শহীদের জীবনী

“ছোটবেলা থেকেই জাহাঙ্গীর আলম ছিল খুব নম্র, ভদ্র, শান্ত স্বভাবের। সে ইসলামকে খুব ভালোবাসত ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করত ” - শহীদের বন্ধু আরিফুল ইসলাম শহীদ মো: জাহাঙ্গীর আলম সিরাজগঞ্জ জেলার মেসরা ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে ১০ অক্টোবর ১৯৯৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: বাহার উদ্দিন (৭৬), মাতা: মোছা: ফাতেমা খাতুন (৬৫) গৃহিণী। শহীদ জাহাঙ্গীর আলম রাজাসাহেব নামক ট্যাপকল তৈরির কোম্পানিতে চাকরি করতেন বিগত পাঁচ বছর যাবত । স্ত্রী গার্মেন্টস কর্মী রিপা খাতুন ও ছোট ছেলে রাফিন (৩) কে সাথে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। বড় মেয়ে লামিয়া (৭) দাদা দাদির সাথে গ্রামের বাড়িতে থাকে। ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনে শহীদ জাহাঙ্গীর আলম আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সে আন্দোলনের সামনে অবস্থান করছিল। মিছিলটি যখন যাত্রাবাড়ী থানার সামনে অবস্থান করছিল পুলিশ তখন মিছিলের উপর এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষন শুরু করে, তখনই একটি বুলেট এসে জাহাঙ্গীর আলমের মাথায় আঘাত করে। সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা তার পরিবারকে জানিয়েছেন। পরে তাকে সেখান হতে মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। মৃত্যুর প্রথম দিন পরিবার তার কোনো সন্ধান পায়নি। পরদিন ৬ আগস্ট তাকে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় পায়। শাহাদতের প্রেক্ষাপট শহীদ জাহাঙ্গীর আলম সিরাজগঞ্জের মেসরা ইউনিয়নের একটি অজপাড়াগাঁ খিদিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শহর থেকে বিচ্ছিন্ন যমুনা নদীর প্রত্যন্ত চরে তাদের বসবাস। যোগাযোগের জন্য নেই কোনো সড়ক পথ, নৌকাই একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। গ্রামে কৃষিকাজ ছাড়া আর কোনো কিছু করার উপায় নেই। আশেপাশে নেই কোনো স্কুল বা কলেজ। নৌপথে শহরে গিয়ে করতে হয় পড়াশুনা। এরকম একটি জায়গায় হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ছেলেমেয়েদের গড়ে তুলেছেন বাবা বাহার উদ্দিন। খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করিয়েছিলেন ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে। ছোট থেকেই জাহাঙ্গীর আলমের ব্যবহার ছিল খুব ভালো। কিন্তু দশম শ্রেণিতে ওঠার পর আর লেখাপড়া করতে পারেনি। উপার্জনের জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। জুলাই ২০২৪ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় স্বাধীনতার চূড়ান্ত আন্দোলন । এই জুলাই মাসেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জনতার আন্দোলনে পরিণত হয়। অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এ দেশের মানুষ এক কাতারে সমবেত হয়। সর্বত্র দাবী ওঠে হটাও স্বৈরাচার বাঁচাও দেশ। ৫ আগস্ট সকাল থেকে সারাদেশে আন্দোলন-সংগ্রাম বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যাও। "আমার কত ছোট ছোট ভাই বোনকে মেরে ফেলা হচ্ছে এগুলো দেখে আমি চুপ করে থাকতে পারছি না।" স্ত্রীকে এ কথা বলে ৫ আগস্ট মিছিলে যায় শহীদ জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশ আন্দোলনরত ছাত্র জনতার উপর এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়া শুরু করলে সবাই দিক-বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন মিছিলের সামনের দিকে। এর মধ্যে খুনি হাসিনার পোষা বাহিনীর একটি বুলেট এসে লাগে তার মাথায়। তিনি মাটিতে পড়েন এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। পরিবার তার মৃত্যুর খবর জানলেও তার লাশটি কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না। বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজাখুঁজির পর তার মৃত্যুর দ্বিতীয় দিন লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া যায়। শাহাদাতের পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া ছেলের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ” স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা জুলুমের হাত থেকে রক্ষা পাইনি। ছেলে হারানোর বেদনা ভুলবার নয়।” শহীদের বন্ধু আরিফুল ইসলাম বলেন, "জাহাঙ্গীর আমার ছোটবেলার বন্ধু। ছোটবেলা থেকেই জাহাঙ্গীর আলম ছিল খুব নম্র ভদ্র শান্ত স্বভাবের। সে ইসলামকে খুব ভালোবাসত এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ৬ তারিখে গ্রামের বাড়িতে এনে জানাজা করে দাফন দেওয়া হয়। তার মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।" শহীদের পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য শহীদের পিতা বাহার উদ্দিন ৭৬ বছর বয়স্ক একজন ব্যক্তি। বৃদ্ধ মা মানসিক ভারসাম্যহীন। স্ত্রী রিপা খাতুন গার্মেন্টস কর্মী। সাত বছর বয়স্ক বড় মেয়ে লামিয়া দাদা দাদির সাথে গ্রামে বাস করে। তিন বছর বয়স্ক ছেলে রাফিন মায়ের সাথে ঢাকায় থাকে । পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: জাহাঙ্গীর আলম পিতার নাম : বাহার উদ্দিন (৭৬) মাতার নাম : মোছা: ফাতেমা খাতুন (৬৫) জন্ম তারিখ : ১০ অক্টোবর, ১৯৯৩ স্ত্রী : রিপা খাতুন (গার্মেন্টস কর্মী) সন্তান : মেয়ে: লামিয়া (৭), ছেলে: রাফিন (৩) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: খিদিরপুর, ইউনিয়ন মেসরা থানা: সিরাজগঞ্জ, জেলা: সিরাজগঞ্জ বর্তমান ঠিকানা : মৃধাবাড়ি, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা আহত হওয়ার স্থান : যাত্রাবাড়ীর থানার সামনে, ঢাকা আহত হওয়ার সময় কাল : ৫ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট। যাত্রাবাড়ীর থানার সামনে, ঢাকা যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলিতে কবরস্থান : আকনাদিঘী কবরস্থান শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. ছেলে-মেয়ের জন্য স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা করা ২. পরিবারের ভরণপোষণের জন্য নির্দিষ্ট আয়ের ব্যবস্থা করা শহীদ জাহাঙ্গীর আলমের ত্যাগ, তার জীবন ও মৃত্যু একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। তার সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ একদিন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে। মুক্তির জন্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার লড়াই অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করবে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম
Image of মো: জাহাঙ্গীর আলম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

জুনাইদ ইসলাম রাতুল

মো: তারিক হোসেন

মো: ইয়াহিয়া আলী

মো. মেহেদী হাসান রবিন

মেহেদী হাসান

মো: জিল্লুর সরদার

মো: সোহেল রানা

মো. শাখিল আনোয়ার

মো: আব্দুল আলীম

মো: রেজাউল হক সরকার

আব্দুল আহাদ সৈকত

 সিয়াম শুভ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo