Image of  মো: সাব্বির হাসান

নাম: মো: সাব্বির হাসান

জন্ম তারিখ: ৩০ ডিসেম্বর, ২০০৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান : শিহিপুর পশ্চিমপাড়া নান্নু আকন্দের বাড়ির সামনে

শহীদের জীবনী

সে খুবই ভালো ছেলে ছিল। আমাদের সাথে খুব ভালোভাবে থাকত। সে খুব আদরের ছিল। এরকম ভাবে তাকে কেন মারলো? আমরা এর বিচার চাই ” - শহীদের দাদি শহীদ মো: সাব্বির হাসান বগুড়া জেলার সুখানপুকুর ইউনিয়নের তেলিহাটা (মধ্য পাড়া) গ্রামে ৩০ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন । পিতা: মোঃ শাহিন আলম (৩৭) গার্মেন্টস কর্মী, মাতা: মোছা: ফাতেমা বেগম (৩২) গার্মেন্টস কর্মী। সুখানপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল বিভাগের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শহীদ সাব্বির হাসান দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শহীদের বাবা-মা ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করেন। সাব্বির তার দাদা-দাদির নিকট তিন বছর বয়স থেকে লালিত পালিত হন। তার বাবা-মা কোনো টাকা পয়সাও দিতেন না, এমনকি কোনো খোঁজ খবরও রাখতেন না। দাদা দিনমজুর হিসেবে অন্যের জমিতে কাজ করেন এবং প্রতি মাসে আনুমানিক আট হাজার টাকা ইনকাম করেন। ছোট্ট একটি ভাঙ্গচেরা টিনের ঘরে তারা নাতিকে নিয়ে বাস করতেন। শহীদের দাদা দুটি গরু পালন করেন। তাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। ৫ আগস্ট স্বাধীনতার দ্বিতীয় বিজয়। এদিন সাব্বির হাসান বিজয় মিছিল থেকে ফেরার পথে বিকাল চারটার দিকে শিহিপুর পশ্চিমপাড়া নান্নু আকন্দের বাড়ির সামনে পৌছালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পলাশ গ্রুপ তাদের ধাওয়া করে। শহীদ সাব্বিরসহ চারজন একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সেখানে তাকে খুঁজে পায় এবং লাঠি ও রড দিয়ে তার ঘাড়ে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। তারা পেছনে ছুরি দিয়ে আঘাতও করে। সন্ত্রাসীদের আঘাতে শহীদ সাব্বির মৃত্যুবরণ করেন। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার লাশ রাস্তার উপর ফেলে রাখে। পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে সাব্বিরকে সেখান থেকে আনতে গেলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে পরিবারের লোকজনকেও ধাওয়া করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা সাব্বির হাসানকে হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে একটি ভ্যানে করে তার লাশ দাদার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট 'মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ হলো বলিদান' গানের কথাগুলো সত্য হয়ে দেখা দেয় এবারের জুলাই বিপ্লবে। এত অল্প সময়ে এত মানুষের আত্মত্যাগ বাংলার ইতিহাস আর কখনো পর্যবেক্ষণ করেনি। মাদার অফ মাফিয়া হিসেবে পরিচিত চরম মিথ্যুক ও ধোকাবাজ আওয়ামী হায়েনা গোষ্ঠীর মধ্যমনি অভিনেত্রী স্বৈরাচার হাসিনা ও তার দোসররা দেশটিকে গিলে ফেলেছিল। তাই বাংলার মানুষ ঘরে ঘরে স্লোগান তুলেছিল 'বুকের ভিতর বহুত ঝড় বুক পেতেছি গুলি কর।' দেশের মানুষ মুক্তির আশায় রাজপথে নেমে এসেছিল। দেশের অন্যান্য মানুষের মত আন্দোলন কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করতো নাইন পড়ুয়া শহীদ সাব্বির হাসান। অবশেষে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত বিজয়। ভাই হারানোর বেদনাকে ভুলে মানুষ বিজয় উৎসবে মেতে উঠে। কিন্তু হায়নাদের খুনের নেশা তখনও দমিত হয়নি । বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণকারী জনসাধারনকেও তারা হত্যা করছিল। বিজয় মিছিল থেকে ফেরার পথে শহীদ সাব্বির হাসানকে তারা আক্রমণ করে হত্যা করে ফেলে। শাহাদাতের পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদ সাব্বিরের ফুফা রিফাত আলী বলেন, "সাব্বির আমার সম্বন্ধীর ছেলে। সে ক্লাস নাইনে পড়তো সে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। স্কুলে পড়া অবস্থায় তার কোনো খারাপ রিপোর্ট আমরা পাইনি। সে বিজয় মিছিল থেকে ফেরার পথে পলাশ গ্রুপ তাকে আক্রমণ করে হত্যা করে। আমাদের প্রশ্ন তাকে কেন হত্যা করা হলো? আমরা এর বিচার চাই।" শহীদ সাব্বিরের চাচতো দাদী বলেন, ”সে ছাত্র হিসেবে খুব ভালো ছিল। ৫ তারিখে বিজয় মিছিল শেষ করে সে যখন বাড়িতে ফিরছিল তখন পলাশ গ্রুপের লোকজন তাকে ছুরি মেরে হত্যা করে। সে খুবই ভালো ছেলে ছিল।" শহীদ পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য শহীদ সাব্বির মাত্র তিন বছর বয়স থেকে দাদাদের সাথে বসবাস করতেন। তার বাবা মা ছিলেন গার্মেন্টস শ্রমিক এবং তারা ঢাকাতে বসবাস করতেন। মেধাবী এই শিক্ষার্থীকে দাদা-দাদী কখনোই বাবা-মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। তাই দাদা-দাদি ছিলেন শহীদের সবকিছু। আদরের নাতিকে তারা খুব কষ্ট করে বড় করেছিলেন। তাদের থাকার জন্য ছিল মাত্র একটি টিনের ঘর। সেই ঘরের মধ্যে নাতি থাকত চৌকিতে আর দাদা দাদি থাকতো মেঝেতে। কৃষিকাজ ও গবাদি পশু পালন করে তারা নাতির সব আবদার পূরণ করতো। সেই আদরের নাতিকে হারিয়ে দাদা-দাদী পাগল প্রায়। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: সাব্বির হাসান পিতার নাম : মো: শাহিন আলম (৩৭) মাতার নাম : ফাতেমা বেগম (৩২) জন্ম তারিখ : ৩০ ডিসেম্বর ২০০৯ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: তেলিহাটা (মধ্যপাড়া), ইউনিয়ন: সুখানপুকুর থানা: গাবতলী, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : তেলিহাটা (মধ্যপাড়া), সুখানপুকুর , গাবতলী, বগুড়া আহত হওয়ার স্থান : শিহিপুর পশ্চিমপাড়া নান্নু আকন্দের বাড়ির সামনে আহত হওয়ার সময়কাল : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল ৪টা, শিহিপুর পশ্চিমপাড়া নান্নু আকন্দের বাড়ির সামনে যাদের আঘাতে শহীদ : আওয়ামী লীগের আরিফুর রহমান পলাশের গ্রুপ কবরস্থান : নিজ বাড়ির পাশে শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের দাদা দাদির জন্য বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া ২. শহীদের দাদা-দাদির পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাদের জন্য আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা দরকার বাবা মা ছাড়া দাদা দাদীর কাছে বড় হওয়া শহীদ সাব্বির হাসান এখন মাটির ভেতরে আশ্রয় নিয়েছেন। কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে অনেক কিছুই, কিন্তু হারিয়ে যাবেন না দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ, শহীদ সাব্বির হাসান।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান
Image of  মো: সাব্বির হাসান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সোহেল রানা

মো: ইয়াহিয়া আলী

মো: রিপন ফকির

মো: সোহেল রানা

মো: রেজাউল হক সরকার

মো: অন্তর ইসলাম

মো: সাকিব আনজুম

মো: মুনিরুল ইসলাম

 মো: সোহানুর রহমান রঞ্জু খান

আস সাবুর

মতিউর রহমান

মো: শাওন খান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo