Image of আব্দুল আহাদ সৈকত

নাম: আব্দুল আহাদ সৈকত

জন্ম তারিখ: ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান : সাভার মডেল থানার সামনে

শহীদের জীবনী

” আমি আমার ভাইকে হারিয়ে শূন্য হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই ” - শহীদের বড় বোন শহীদ আব্দুল আহাদ সৈকত ২০০৭ সালের শেষ দিন অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর বগুড়ার সোনাতলা থানার হালুয়াঘাট ইউনিয়নের উত্তর দিঘলকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পড়তেন ঢাকা কমার্স কলেজে প্রথম বর্ষে। বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী প্রতি ক্লাসে প্রথম স্থান অধিকার করতেন এবং শিক্ষা জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। অসম্ভব মেধাবী এই তরুণের স্বপ্ন ছিল একজন চিকিৎসক হয়ে দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগ করার। মা-বাবা ও এক বড় বোন নিয়ে তাদের পরিবার। পিতা: মো: নজরুল ইসলাম (৫২) বর্তমানে কর্মহীন, মাতা: মোসা: আম্বিয়ারা বেগম (৪০), গৃহিণী। তাদের সুখের সংসার ভেঙে তছনছ হয়ে যায় ৫ আগস্ট। সাভার মডেল থানার সামনে বিজয় মিছিলে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে যান শহীদ সৈকত। মাথায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হন। মাথায় গুলি লাগার কারণে নাক দিয়ে বেরিয়ে এসেছিল মগজের কিছু অংশ। কপালসহ সারা শরীরে ছিল ক্ষতের চিহ্ন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট স্বাধীনতার দাম যদি হয় রক্ত, তাহলে এদেশের মানুষ চড়া মূল্যে সেই দাম পরিশোধ করেছে। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ স্বাধীনতার নিঃশ্বাস নিতে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, তার কলিজার টুকরোদের, টগবগে তরুণ যুবকদের বিলিয়ে দিয়েছে মা। তরুণ টগবগে মেধাবী ছাত্র শহীদ আব্দুল আহাদ সৈকত। কতটুকুই বা বয়স। তবুও মাতৃভূমিকে মুক্ত করতে এগিয়েছিলেন সবার আগে। তার অতটুকু মগজের সবটুকুই জুড়ে ছিল সাম্যের, মানবিকতার, বৈষম্যহীনতার বাংলাদেশ। ৫ আগস্ট, ২০২৪। শিকলাবদ্ধ বাংলাদেশীদের জীবনে এক মহামুক্তির দিন। ভয়ংকর স্বৈরাচার মুক্ত হবার দিন। শহীদ সৈকত এবং তার বাবা একসাথে আসরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তার বাবাকে বলে আমি দশ মিনিট পরে আসছি। তার বাবা তাকে মিছিলে যেতে নিষেধ করেন। বাবাকে না বলে তিনি মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। বিজয় মিছিল সাভার মডেল থানার সামনে আসলে পুলিশ বেপরোয়া গুলিবর্ষন শুরু করে। সৈকত মাথা এবং বুকে গুলি বিদ্ধ হয়ে রাস্তার ওপর পড়ে যান। বন্ধুরা তাকে সাথে সাথে সাভার এনাম মেডিকেলে নিয়ে যায় সৈকতের বন্ধুরা তার বাবাকে ফোন দিয়ে ঘটনা জানান। সৈকতের বাবা হাসপাতালে পৌঁছালে ডাক্তাররা তাকে জানান তার ছেলেকে আর বাঁচানো সম্ভব নয় এবং তাকে তার ছেলের পাশে বসার জন্য বলেন ছেলে শেষ কথা কিছু বলে কিনা তা শোনার জন্য। বাবা ১০ মিনিট বসেছিলেন ছেলের পাশে। ১০ মিনিট পর শহীদ শওকত মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান । শাহাদাতের পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদ সৈকতের বড় বোন বলেন, "আমার ভাই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। সে সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করত। খেলায় একটা ছক্কা মেরে আসলে বলতো আপু আমি আজকে ছক্কা মেরেছি, বাউন্ডারি পার করেছি। বিকাল হলেই বলতো আপু ভালো লাগছে না কিছু বানিয়ে দে। এখন আর আমার কাছে কেউ কিছু চাইবে না। একসাথে বাইরে গেলে বড় ভাইয়ের মতো আমাকে ট্রিট করত আমি সিকিউরড ফিল করতাম। এখন বাইরে গেলে মনে হয় আমার গার্জিয়ান নাই। সে সবসময় আমার সাথে খুনসুটি করত। আমাদের বেডরুমে দুটি বেড ছিল আমি সবসময় তারটা গুছিয়ে রাখতাম আর সে আমার বেড এলোমেলো করতো। ও নিজের খরচ যেন নিজে চালাতে পারে সেই জন্য বিভিন্ন কিছু শিখত। অনেক কিছু শিখেও ফেলেছিল। আর যা শিখে আসতো সেগুলো আমাকেও শিখাতো । গত ১৫/১৬ দিন যাবত আমার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে আমি তা বলতে পারবো না। আমি আমার ভাইকে হারিয়ে শূন্য হয়ে গেছি। মনে হচ্ছে আমার আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ’ শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদের পিতা পূর্বে বায়িং হাউসে চাকরি করলেও ২০১৯ সাল থেকে কর্মহীন। ব্যবসা করতে গিয়েও ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তার একমাত্র বোন নাজমুন নাহার (১৯) অনার্স প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছেন। পূর্বে আর্থিকভাবে সচ্ছল থাকলেও এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। এ কথা কাউকে বলতেও পারছেন না। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : আব্দুল আহাদ সৈকত পিতার নাম : মোঃ নজরুল ইসলাম (৫২) মাতার নাম : আম্বিয়ারা বেগম (৪০) বোন : নাজমুন নাহার (১৯) অনার্স ১ম বর্ষ জন্ম তারিখ : ৩১শে ডিসেম্বর ২০০৭ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: উত্তর দিঘলকান্দি, ইউনিয়ন: হালুয়াঘাট থানা: সোনাতলা, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : শাহিবাগ, ডগরমোড়া, সাভার কলেজের পাশে, সাভার, ঢাকা আহত হওয়ার স্থান : সাভার মডেল থানার সামনে আহত হওয়ার সময়কাল : ৫আগস্ট ২০২৪, সন্ধ্যা ৬টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৫ই আগস্ট, ২০২৪, সন্ধ্যা ৬টা, সাভার মডেল থানার সামনে যাদের আঘাতে শহীদ : সাভার মডেল থানার পুলিশ কবরস্থান : সৈকতকে তাদের ঘরের সামনে দাফন করা হয়েছে শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের বাবার দুই বিঘা বন্ধক জমির মুক্ত করার ব্যবস্থা করা ২. তার বাবার স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করা শহীদ সৈকত এতদিন ছিলেন নজরুল-আম্বিয়ারা দম্পতির সন্তান। শহীদ সৈকত এখন দেশের সন্তান। এদেশের মাটি মানুষের সন্তান। আমাদের পরম স্নেহের পরম শ্রদ্ধার পরম ভালোবাসার জাতীয় বীর।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত
Image of আব্দুল আহাদ সৈকত

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আব্দুল মান্নান

মো. মেহেদী হাসান রবিন

মো: শাকিল হাসান

মো: মিনহাজ হোসেন

মোঃ শিহাব আহমেদ

মো: জুলকারনাইন

 মো: সাব্বির হাসান

মো: হৃদয় আহমেদ

মেহেদী হাসান

মো: রাসেল রানা

 মো: সোহানুর রহমান রঞ্জু খান

মো. শরিফুল ইসলাম মোহন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo