জন্ম তারিখ: ১ আগস্ট, ১৯৯৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: রাজশাহী
পেশা : রিক্সা চালক, শাহাদাতের স্থান : জিকে গার্মেন্টস ও শুকুর আলী মাংসের দোকানের মাঝামাঝি স্থানে।
’’ আমার ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা, আমি এদের নিয়ে কি করব এখন, জানি না ”-শহীদের স্ত্রী শামীমা খানম সাথী ১৯৯৪ সালের ১ আগস্ট বগুড়া জেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের পঞ্চদাস নলখুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ মো: রনি। পিতা মো: দিলবর আলী (মৃত) এবং মা শাহনাজ বেগম (৬০), গৃহিণী। স্ত্রী শাহনাজ খানম সাথী (৩২) এবং দুই সন্তান ইয়াসিন (৪) ও ইভান (২)-কে নিয়ে তার সংসার। রাজধানীর সাভার অঞ্চলে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিস্ফোরনোন্মূখ হয়ে ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকার শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমানোর নির্দেশ দেয় পুলিশকে। সাথে দফায়-দফায় কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু যারা নিম্ন আয়ের মানুষ এই কারফিউ তাদের জীবনে দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে আসে। দুর্বিষহ যন্ত্রণা নেমে আসে দিনমজুর শহীদ মো: রনির ঘরেও। ঘরে চাল নেই ডাল নেই, ছোট ছেলেটাও অসুস্থ। একপ্রকার বাধ্য হয়েই রিক্সা নিয়ে বের হন শহীদ রনি। কিন্তু কিছুদূর যেতে না যেতেই সেনাবাহিনী তার গতিরোধ করে। সেনাবাহিনীর অফিসারকে বাড়ির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরলে তিনি তাকে এক হাজার টাকা দেন। বাসায় চাল ডাল কিনে দিয়ে এবার তিনি ছেলের জন্য ওষুধ নিতে আবারো রিক্সা নিয়ে বের হন। ২০ জুলাইয়ের বিকেল চারটা। সাভারের দিকে গার্মেন্টসের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি করছিল পুলিশ। তখন গুলি এসে লাগে রনির বুকে। রিকশা থেকে পড়ে যান রাস্তায় এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন তিনি। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শাহাদাতের পর শহীদের স্ত্রী বলেন, ঐদিন আমার কাছে সকালে ভাত চাইল। আমরা দুজন একসাথেই ভাত খেলাম। দুপুরে রান্নার জন্য চাল ছিল না এবং ছোট ছেলেটা অসুস্থ ছিল। আমি তাকে বললাম ইয়াসিনের আব্বু ছোট বাবু তো অসুস্থ এখন কি করবো? তখন সে বলল আমি দেখি কিছু ভাড়া মারতে পারি কিনা, তাহলে ওষুধ নিয়ে আসবো। কিন্তু আমি তাকে বাইরে যেতে নিষেধ করলাম। যেহেতু বাসায় চাল নেই বাচ্চার ঔষুধ লাগবে তাই সে রিকশা নিয়ে বের হয়ে গেল। সেই যে গেল আমার স্বামী আর আসলো না। বিকালের দিকে খবর পায় সে রাস্তায় পড়ে আছে। আমি ভেবেছিলাম টিয়ারসেল লেগেছে কিন্তু এরপর শুনি গুলি লেগেছে, তখন ভাবলাম পায়ে লেগেছে। পরে হাসপাতালে গিয়ে আমি তাকে মৃত অবস্থায় পেলাম। হাসপাতালে লোকজন আমাদের সাথে অনেক দুর্ব্যবহার করেছে। আমার স্বামীর লাশ ও আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। আমার ছোট ছোট দুইটা বাচ্চা, আমি এদের নিয়ে এখন কি করবো আমি এখন জানি না। ও একজন খুবই ভালো মানুষ ছিল। আমাদের দায়িত্বের পাশাপাশি তার মায়ের খোঁজ খবর নিত, বোনদের দেখাশোনা করত। তাকে হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য রিকশাচালক শহীদ রনি ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। চার বছর ও দু'বছর বয়সী তার দুটো ছেলে আছে। গৃহিণী স্ত্রী আগে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন কিন্তু এখন বাচ্চারা ছোট ছোট তাই তাদের লালন পালনের জন্য তিনি আর চাকরি করতে পারেন না। বর্তমানে তার স্ত্রী বড় বোনের সাথে তাদের বাসায় থাকছেন। তার মা এলাকায় সরকারি জমিতে কুঁড়ে ঘরে থাকেন। শহীদ রনি তার মাকে প্রতিমাসে চার হাজার করে টাকা পাঠাতেন। শহীদের নিজের ও তার মায়ের উভয় পরিবারেরই অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: রনি পিতার নাম : মো: দিলবর আলী (মৃত) মাতার নাম : শাহনাজ বেগম (৬০) জন্ম তারিখ : ১ আগস্ট ১৯৯৪। স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: পঞ্চদাস নলখুর, ইউনিয়ন : বুড়িগঞ্জ, থানা: শিবগঞ্জ, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : রাজাশান, সাভার পৌরসভা, ঢাকা আহত হওয়ার স্থান : জিকে গার্মেন্টস ও শুকুর আলী মাংসের দোকানের মাঝামাঝি আহত হওয়ার সময় কাল : ২০ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৪:০০টা শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ২০ জুলাই ২০২৪ বিকাল চারটা, জিকে গার্মেন্টস ও শুকুর আলী মাংসের দোকানের মাঝামাঝি যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি কবরস্থান : নলখুর দিঘির পাড়ে কবরস্থ করা হয় শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. খুব দ্রুত শহীদের পরিবারের জন্য নিয়মিত মাসিক অনুদানের ব্যবস্থা করা ২. শহীদের দুই সন্তানের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা ৩. শহীদের মা ও সন্তানদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা। তার মায়ের জন্য নির্দিষ্ট হারে মাসিক অনুদান প্রদান