Image of মো: আব্দুল মান্নান

নাম: মো: আব্দুল মান্নান

জন্ম তারিখ: ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৫২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : রিক্সা চালক, শাহাদাতের স্থান : বড়গলা মোড় বগুড়া সদর

শহীদের জীবনী

” আমি আমার বাবাকে খুব মিস করি, প্রত্যেকদিন সকালবেলা বাবার থেকে দশ টাকা করে নিতাম ” - শহীদ আব্দুল মান্নানের ছোট ছেলে শহীদ মো: আব্দুল মান্নান ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৫২ সালে বগুড়া সদরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মৃত আমির উদ্দিন সরকার এবং মাতা মৃত ছফিজান। শহীদ আব্দুল মান্নান দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত রিক্সা চালাতেন। কয়েকদিন আগে অটোরিক্সা কিনলেও পূর্বে তিনি পা চালিত রিকশা চালাতেন। চার ছেলে ও তিন মেয়ের জনক শহীদ আব্দুল মান্নান প্রায় ৩০ বছর যাবত সবাইকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। বড় দুই ছেলে বিবাহ করে পরিবার নিয়ে আলাদা বসবাস করেন। কাঠমিস্ত্রির পেশায় নিয়োজিত ছোট দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার ছিল। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত চলে আসা খুনী হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ৪ আগস্ট যোগদান করেন। এই মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে শহীদ আব্দুল মান্নান গুলিবিদ্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরুর পর থেকে ক্রমান্বয়ে তা বেগবান হতে থাকে। এ আন্দোলনে বাড়তে থাকে জনগণের সম্পৃক্ততা। এতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে খুনী হাসিনা সরকার। তারাও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ৪ আগস্ট সারাদেশব্যাপী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে। প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনও অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। শহীদ আব্দুল মান্নানদের মত খেটে খাওয়া মানুষেরাও সেইদিন আরো বেশি শাহাদাতের তামান্না নিয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। অবশ্য শহিদ আব্দুল মান্নান পূর্ব হতেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সব কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন। প্রতিদিনের মতো ৪ আগস্টের কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ করেন। ঐদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় একথা বলেন, "আজ কিছু একটা হবে। হয় বাঁচবো না হয় মরবো। দেশ স্বাধীন করে বাড়ি ফিরব। আল্লাহ যদি স্বৈরাচার সরকারকে হটায় তাহলে আমার জীবন গেলেও সমস্যা নেই। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, তিনি মিছিলে তাকবীর দিতে দিতে এগোচ্ছিলেন। তিনি বড় গলা মোড়ে মিছিলে সবার সামনে ছিলেন। পুলিশ যখন গুলি শুরু করে তখন তিনি একেবারে সামনে ছিলেন আবার আরেকবার পেছনে আসছিলেন। তারপর একটা গুলি এসে তার বাম পাজোর ভেদ করে ভিতরে চলে যায়। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান বলে স্থানীয়রা জানান। শাহাদাত পরবর্তী ভিডিওতে দেখা যায়, সেদিন বড়গলা মোড় এক ভয়ঙ্কর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। খইয়ের মত ফুটছিল গুলি। একের পর এক রাস্তায় ঢলে পড়েছিল মানুষ। গুলি খেয়েছিল শহীদ আব্দুল মান্নানও। গুলি খেয়েই তিনি পড়ে যান। পুরো শরীর রক্তে লাল হয়ে আছে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ছিল যেন এক একজন বীরযোদ্ধা। রক্তাক্ত আব্দুল মতিনের লাশ দেখে একজন শিক্ষার্থী কোলে তুলে নিয়ে যায় হাসপাতালে। কিন্তু যাওয়ার সময় পুলিশ আবারো রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বুলেটের আঘাতে হোঁচট খেয়ে লাশ নিয়ে রাস্তায় পড়ে যায় ছাত্রটি। কে এক নির্মম দৃশ্য! মনুষ্যত্বহীন মানসিক বিকারগ্রস্ত এক প্রাণীর নাম যেন পুলিশ। ছাত্রটি অসহ্য যন্ত্রণা সত্ত্বেও আব্দুল মান্নানকে নিয়ে পৌঁছে যায় হাসপাতালে। শহীদের মৃত্যুর পর বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতিক্রিয়া শহীদের ছোট ভাই আব্দুল মতিন বলেন, "শহীদ আব্দুল মান্নান ভাই খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন, এমন কেউ নেই যে তাকে খারাপ বলবে।" শহীদের ছোট ছেলে বলেন, "আমি আমার বাবাকে খুব মিস করি। " শহীদের ছোট ছেলে মিনহাজ বলেন, "বাবার সাথে আমার রাস্তায় দেখা হয়েছিল তখন বাবা ছোট লাঠি হাতে নিয়ে হাঁটছিলেন, আমাকে বলেছিলেন তুই বাড়ি যা। আমি বললাম, "আমি মিছিল দেখে চলে যাব। " শহীদ পরিবারের বিশেষ তথ্য শহীদ আব্দুল মান্নান সংসারের ঘানি টেনে টেনে একেবারে জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছিলেন। একটা মানুষ দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত শুধু রিক্সাই টেনেছেন। ভাবা যায়! অথচ জীবনের কোন পরিবর্তন আসেনি। এই দীর্ঘদিন যাবত তিনি একজন ভাসমান মানুষ হিসেবেই পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন। ৩০ বছর যাবত পরিবারের অপরাপর সদস্য নিয়ে ভাড়া বাড়িতে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। চার ছেলে এবং তিন মেয়েকে বড় করেছেন ভাড়া বাসা থেকে। কি অমানবিকই না পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। বড় দুই ছেলে বিবাহ করলেও ছোট দুই ছেলে তার সাথেই থাকতেন। শেষ দুইটা ছেলের একজন পড়াশোনা ছেড়ে দিলেও অপরজন হাল ছেড়ে দেয়নি। কাঠমিস্ত্রির পাশাপাশি সে এখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: আব্দুল মান্নান পিতার নাম : মৃত আমির উদ্দিন সরকার মাতার নাম : মৃত ছফিজান জন্ম তারিখ : ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৫২ স্ত্রীর নাম : মোছাম্মৎ আসমা বেগম (৫২) স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বামদিঘি পূর্বপাড়া, ইউনিয়ন: এরুলিয়া থানা: বগুড়া সদর, জেলা: বগুড়া বর্তমান ঠিকানা : একই আহত হওয়ার স্থান : বড়গলা মোড়, বগুড়া সদর আহত হওয়ার সময় কাল : ৪ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ১২:৪০ শহীদ হওয়ার সময় ও স্থান : ৪ আগস্ট, দুপুর ১২:৪৫, বড়গলা মোড় বগুড়া সদর যাদের আঘাতে শহীদ : পুলিশের গুলি শহীদ পরিবারের জন্য করণীয় ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন সহায়তা করা প্রয়োজন ২. শহীদের ছোট ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে দীর্ঘকালীন বৃত্তি প্রদান করা ৩. শহীদের পরিবারের বাসস্থান নির্মাণে সহায়তা করা মিছিলে যাবার আগে শহীদ আব্দুল মান্নান বলেছিলেন, "আর যাই হোক না কেন দেশটা স্বাধীন করেই আসবো।" দেশটা আজ স্বাধীন। কিন্তু ঘরে ফিরেনি শহীদ আব্দুল মান্নানেরা। স্বৈরাচারের জুলুম ও নির্যাতন হতে মুক্তি পেয়েছে দেশের মানুষ, এই মুক্তিতে শহীদ আব্দুল মান্নানদের রয়েছে অনেক অবদান। তারা চিরকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আব্দুল মান্নান
Image of মো: আব্দুল মান্নান
Image of মো: আব্দুল মান্নান
Image of মো: আব্দুল মান্নান
Image of মো: আব্দুল মান্নান
Image of মো: আব্দুল মান্নান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আব্দুল আলীম

মো: জিল্লুর সরদার

মোঃ শিহাব আহমেদ

মো: ইয়াহিয়া আলী

মো: জুলকারনাইন

 মো: সাব্বির হাসান

মো: সুমন সেখ

মো: আবু রায়হান

মোঃ আব্দুল লতিফ

মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)

মো: কমর উদ্দিন খাঁ

মো: অন্তর ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo