Image of  ইয়াছিন

নাম: ইয়াছিন

জন্ম তারিখ: ৩ ডিসেম্বর, ২০০৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান :জান্নাতি প্যালেস (অত্যাচারী এমপি শিমুলের বাসভবন), নাটোর সদর।

শহীদের জীবনী

নাটোর সদরের দুর্নীতিবাজ এমপি শিমুলের বিলাসবহুল বাসভবন অভিশপ্ত জান্নাতি প্যালেস। ছাত্রজনতার চূড়ান্ত বিজয়ের দিন ৫ আগস্ট এই জান্নাতি প্যালেসের অগ্নিকাণ্ডে যে পাঁচজন শহীদ হন, তার মধ্যে ইয়াছিন অন্যতম। শহীদ ইয়াছিনের পরিচয় নাটোর জেলার সদর থানার মল্লিক হাটিগ্রাম। বাংলাদেশের আর দশটা গ্রামের মতোই সুন্দর ও ছায়া সুনিবিড়। এই গ্রামের এক দম্পতি ফজের আলী ও রত্না বেগম। এই দম্পতির ঘর আলোকিত করে মহান আল্লাহ তায়ালা দান করেন একটি পুত্র সন্তান। আদর করে তার নাম রাখা হয় ইয়াছিন। সেই দিনটি ছিল ২০০৫ সালের ৩ ডিসেম্বর। সেদিনের সেই ছোট্ট ইয়াছিন হাঁটি হাঁটি পা পা করে বেড়ে উঠছিল হেসেখেলে। স্কুল জীবন পেরিয়ে কলেজ জীবনে পদার্পণের সময়ও এসে যাচ্ছিল তার সামনে। কিন্তু স্বৈরাচারের এক করাল গ্রাসে নিপতিত হয়ে থেমে গেল তার জীবন প্রদীপ! অকালেই হারিয়ে গেল বাবা-মার আদরের সন্তান! শহীদ ইয়াছিন ছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র। তার স্কুলের নাম গ্রীন একাডেমী। মানবিক শাখা নিয়ে এই স্কুলে পড়তেন তিনি। সামনে ছিল তার এসএসসি পরীক্ষা। শহীদ ইয়াছিনের আছে এক আদরের ছোট বোন। নাম ফারজানা। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সে। যেভাবে শহীদ হন ইয়াছিন জুলাই মাসে সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে ইয়াছিন নিয়মিতভাবে সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতো। আন্দোলন সংগ্রাম চলতে চলতে আসে বিশেষ সেইদিন- ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশের মতো নাটোর শহরেও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সেদিন ইয়াছিন তার পিতার সঙ্গে কাজ করছিলেন। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর শুনে তাঁর আর তর সইছিল না! কাজে স্থির থাকতে পারেননি তিনি। বিজয়ের আনন্দে মুক্ত বাতাসে লাফিয়ে পড়েন রাজপথে। দেখেন হাজার হাজার মানুষ ছুটে চলেছে অত্যাচারী ও দুর্নীতিবাজ এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিলাসবহুল বাসভবন জান্নাতি প্যালেসের দিকে। যে বাড়িতে জনসাধারণের প্রবেশ ছিল সম্পূর্ণ নিষেধ, আজ সেই বাড়িটার ভেতরে হাজারো মানুষ! একটিবার ঢোকার লোভ সামলাতে পারেননি ইয়াছিনও। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা পাপের টাকায় তৈরি এই প্রাসাদ ভাঙচুর শুরু করে। কেউ কেউ কৌতুহলবশত উপর তলায় উঠে যায়। ইয়াছিনও উপরে ওঠে। হঠাৎ নিচ তলায় আগুন লেগে যায় এবং দ্রুত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সবাই নিচে নামার চেষ্টা করে। কিন্তু একটি রুমে অটো লক থাকার কারণে কয়েকজন আটকা পড়ে যায়। যার মধ্যে শহীদ শরিফুল ইসলাম মোহন ও ইয়াছিন অন্যতম। অনেক চেষ্টা করেও তারা বের হতে পারেননি। একসময় আগুনের তাপে নিস্তেজ হয়ে পড়েন তারা এবং ইয়াছিন ও মোহনসহ আরো দুজন আগুনে পুড়ে তৎক্ষণাৎ মারা যান। ইয়াছিনের অন্যরকম জীবন দশম শ্রেণির ছাত্র ইয়াছিন পড়ালেখার পাশাপাশি তার পিতা ফজের আলীকে কাজে সহযোগিতা করতেন। তাদের বাড়ি নাটোর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের মল্লিক হাটি এলাকায়। বাড়ির কাছেই ফজের আলীর কাঠের দোকান। যেখানে অধিকাংশ সময় পিতাপুত্র একসঙ্গে কাঠের কাজ করতেন। দোকানের মাসিক ভাড়া ছিল ২৫০০ টাকা। যা পরিশোধের পর সামান্য যা থাকত তাই দিয়ে কোনো রকমে তাদের সংসার চলত। ফজের আলী ও রত্না বেগম দম্পতির এক ছেলে ইয়াছিন ও এক মেয়ে ফারজানা। ফারজানা স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ইয়াছিনদের বাড়ি মাত্র ১ শতক জমির উপর অবস্থিত। যেখানে আছে ছোট্ট দুটি রুম। ইয়াছিনের মা রত্না বেগম গৃহস্থালির কাজের ফাঁকে বাড়ির এক পাশে একটি ছোট মুদি দোকান চালান। এভাবে কষ্ট হলেও চলছিল ইয়াছিনদের ছোট্ট পরিবার। তবে ফজের আলী বিএনপির সমর্থক হওয়ায় স্থানীয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শত্রুতা তাদের প্রতি বাড়তেই থাকে। এ কারণে ইয়াছিনকেও একাধিকবার মারধর করা হয়েছিল। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে ইয়াছিন নিয়মিতভাবে সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করত। ঘটনার দিন মাগরিব উতরে যাওয়ার পরেও ইয়াছিনের বাড়ি না ফেরায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তার পরিবার। তার ফোনও বন্ধ ছিল। ইয়াছিনের পিতা ফজের আলী ইয়াছিনের খোঁজে সারারাত দৌড়াদৌড়ি করেন। একবার থানায়, একবার সেনাবাহিনীর কাছে। কিন্তু কোনো খোঁজ মেলে না। পরদিন সকাল ১০টার দিকে খবর আসে যে, এমপি শিমুলের বাসায় চারটি মরদেহ পাওয়া গেছে। ফজের আলী চঞ্চল হয়ে সেখানে গিয়ে দেখেন তার প্রিয় ছেলে ইয়াছিনের পোড়া মরদেহ পড়ে আছে। মুহূর্তেই ফজের আলীর সব স্বপ্ন চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে যান ফজের আলী ও রত্না বেগম। প্রিয় ভাই হারিয়ে নির্বাক হয়ে যায় ছোট্ট ফারজানা। দেশ থেকে স্বৈরাচার শাসনের বিদায় হয়েছে। কিন্তু পিতা-মাতাকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে এমন অসংখ্য ইয়াছিন চলে গেছে পৃথিবী থেকে। নতুন বাংলাদেশ শহীদ ইয়াছিনদের কখনোই ভুলবে না। শহীদ ইয়াছিনের প্রোফাইল নাম : ইয়াছিন জন্ম তারিখ : ০৩.১২.২০০৫ পিতা : মো: ফজের আলী মাতা : মোছা: রত্না বেগম শহীদ হওয়ার তারিখ ও সময় : ৫ আগস্ট, ২০২৪; বিকাল ৪টা শহীদ হওয়ার স্থান : জান্নাতি প্যালেস (অত্যাচারী এমপি শিমুলের বাসভবন), নাটোর সদর আঘাতের ধরন : আগুনে পোড়া সমাধিস্থল : গ্রামের বাড়ি পেশা : শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : গ্রীন একাডেমি, নাটোর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মল্লিক হাটি, থানা+জেলা: নাটোর ভাইবোন : ১ বোন, ফারজানা, বয়স: ১৩ বছর, শিক্ষার্থী বাড়িঘর ও সম্পদ : মাত্র ১ শতক জায়গায় ছোট্ট একটি বাড়ি। বাবার কাঠের ব্যবসার যৎসামান্য ইনকাম শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. নিয়মিত আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন ২. ছোট বোনের পড়াশোনার দায়িত্ব গ্রহণ

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of  ইয়াছিন
Image of  ইয়াছিন
Image of  ইয়াছিন
Image of  ইয়াছিন
Image of  ইয়াছিন
Image of  ইয়াছিন
Image of  ইয়াছিন
Image of  ইয়াছিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সুমন সেখ

 সিয়াম শুভ

মো. শাখিল আনোয়ার

মো: আব্দুল হান্নান খান

মো: শিমুল

 মো: সেলিম হোসেন

 মো: মাহবুব হাসান নিলয়

মো: সোহেল রানা

মো: রেজাউল হক সরকার

মো: সোহেল রানা

মো: অন্তর ইসলাম

মো: জুলকারনাইন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo