Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)

নাম: মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)

জন্ম তারিখ: ২২ মে, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা :ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :কান্দুভিটুয়া, নাটোর সদর (এমপি শিমুলের বাড়ি জান্নাতী প্যালেস)

শহীদের জীবনী

ফ্যাসিবাদের জুলুমে জ্বলে ওঠা জুলাই ২০২৪ এর আন্দোলন ছিল তরুণদের আন্দোলন। যৌক্তিক অধিকারের লড়াই। তরুণদের একটাই চাওয়া মেধার স্বীকৃতি। কোটা নয় মেধা এটাই ছিল তাদের স্লোগান। কিন্তু ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে হাসিনা সরকার মানুষকে নির্বিচারে পৈশাচিকভাবে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সম্মুখীন করে তোলে। একটি যৌক্তিক চাওয়াকে কেন্দ্র করে শহীদ হয় শতশত তাজা প্রাণ। জীবনের চেয়ে মূল্যবান কি আছে? স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা তরুণ্যের শক্তি সাহসকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছিল। আল্লাহ তাআলা তরুণদের মাধ্যমে দেখিয়েছেন ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। মাত্র একটি কোটা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসকে পাল্টে দিয়েছে। অধিকারের লড়াইয়ে যুক্ত হয় অগণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। এক দফায় জ্বলে ওঠে বাংলাদেশের তরুন সমাজের পাশপাশি সুশীল সমাজও। দেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয়ে মানুষ মাঠে নামে। বাঁচলে গাজী মরলে শহীদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুনদের সাথে একাত্ম হয়ে মাঠে নেমে আসে হাজারো স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা। বাদ ছিলোনা অভিভাবকগণও। দেশকে বাঁচাতে হাজারো মানুষের রক্তে বদলে যায় বাংলাদেশ। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে ফ্যাসিবাদী শাসক শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। তরুণদের ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়েই অর্জিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা ২০২৪। শহীদ মিকদাদ হোসাইন খান। ডাক নাম আকিব। তিনি নাটোর জেলার আলাইপুর গ্রামে ২২ মে ২০০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো.দেলোয়ার হোসেন খান। মাতা মোসা: ডেজী খাতুন। বাবা-মাসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচ। তারা ছিল তিন ভাইবোন। বড় এক বোন ও ছোট এক বোন। সে ছিল বাবা মায়ের একমাত্র পুত্র সন্তান। আকিব নবাব সিরাজ উদ্দৌলা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা নাটোর সিটি কলেজের একজন অধ্যক্ষ। মা ডেজী খাতুন গৃহিণী। মা ছোটবেলা থেকেই একমাত্র পুত্র আকিবকে অনেক আদর যত্নে বড় করেছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার পিতাকে আন্দোলনে সহায়তার মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। আকিব ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়পরায়ণ একজন তরুণ। সেও ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অর্জিত স্বাধীন দেশ আকিবকে চিরতরে পৃথিবী থেকে তুলে নেয়। মৃত্যুর পর তাঁর ঘর থেকে পাওয়া ডায়েরিতে দেখা যায়, তিনি একটি দোকান থেকে ১৫ টাকা বাকিতে নিয়েছিলেন এবং সেটাও সতর্কতার সঙ্গে লিখে রেখেছিলেন। তিনি পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও ছিলেন চৌকষ। বিশেষত দৌড় প্রতিযোগিতা ও ফুটবল খেলায় সবসময় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। একবার কলেজে ৮০০ মিটার দৌড়ে তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে এই তরুণ তার জীবনের সব হিসেব মিটিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে পাড়ি জমান। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাঁর পিতা দেলোয়ার হোসেন খানকে মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগে দেখানো হয় তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় এবং ছাত্রদেরকে উস্কানী দিচ্ছেন। আকিবের পিতাই তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি জেলে থাকায় পরিবারের উপর মানসিক চাপ তৈরি হয়। অন্যদিকে চারিদিকে মানুষের অধিকারের লড়াই। এসব নিয়ে আকিবের ভীষণ মন খারাপ থাকত। তবুও তিনি আন্দোলনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। চারিদিকে টানটান উত্তেজনা। কিছু একটা হবেই। ঢাকার অদূরে আন্দোলনরত মানুষের একটাই দাবী হাসিনা সরকারের পতন। সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি ছিল ৫ আগস্ট। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর জেলে থাকা অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের সঙ্গে দেলোয়ার হোসেন খানও আনন্দের সঙ্গে শুনেন। পরবর্তীতে এমন খুশির সংবাদে সবাইকে মিষ্টি মুখ করান। কিন্তু এরই মধ্যেই খবর আসে আকিবকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর জানা যায় আকিবের পোড়া মরদেহ নাটোর সদরের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়িতে পাওয়া গেছে। এমন বিজয়ের দিকে এমন একটি খবরের জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। পরিবারের একমাত্র পুত্র সন্তানের শোকে গোটা পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। ঘটনার বিস্তারিত জানতে গেলে জানা যায় বিজয়ের দিন (৫ আগস্ট, ২০২৪) যখন খবর প্রকাশিত হয় হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে তখন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় আনন্দ মিছিল বের হয়। তেমনই হাজার হাজার মানুষের মতো আকিবও গিয়েছিল সেদিন বিজয় উদযাপন করতে। নাটোরের বেশিরভাগ মানুষের গন্তব্য ছিল অত্যাচারী এবং দুর্নীতিবাজ এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়ি; যে বাড়িটি ‘জান্নাতী প্যালেস’ নামে পরিচিত। ওই বাড়িতে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হবার খবর পেয়ে এমপি শিমুল পালিয়ে যায় তার বাড়ি থেকে। তখন হাজারো কৌতূহলী জনতার সাথে আকিবও তাঁর বাসায় হাজির হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা প্যালেসে উঠে যখন ভাঙচুর শুরু করে এবং অনেকে উপরে উঠেন দেখতে। আকিবও তাদের সঙ্গে উপরে উঠেছিলেন। হঠাৎ নিচতলায় আগুন ধরে যায়, আর সবাই যে যার মতো পালানোর চেষ্টা করে। একটি অটো লক হওয়া রুমে আটকা পড়েন আকিবসহ কয়েকজন। অনেক চেষ্টা করেও তাঁরা ওই রুম থেকে বের হতে পারেননি। আগুনের তীব্রতা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে আটককৃত সবার মৃত্যু ঘটে। ধারনা করা হয় আনুমানিক বিকাল ৫:৩০ মিনিটের দিকে আগুনের তীব্রতা রুমের ভেতর পৌছে যায়। অন্যসবার সাথ আকিবও আগুনে পুড়ে শহীদ হন। দেলোয়ার হোসেন খান জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পরদিন বিকেল ৩টায় তাঁর ছেলের জানাজা পড়ান। তিনি বলেন, "আমার ছেলে খুবই ভদ্র ছিল। আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে খরচ করলে পরে সেটা ফেরত দিত। সে ছিল অত্যন্ত আমানতদার। ছেলেটা অকালে সবাইকে ছেড়ে চলে গেল। ওদের জীবনের বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন হলো। আল্লাহ আমার ছেলেটাকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। ৬ আগস্ট ২০২৪ সকালে আওয়ামীলীগের এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়িতে শহীদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে গাড়িখানা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিস্তারিত বিবরণ শহীদ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি শহীদ মিকদাদ আকিবের বাবা। তিনি নাটোর সিটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। তিনি ঐ কলেজের অধ্যক্ষ। তিনি গ্রামের জমি বিক্রি করে উপশহর নাটোরে বাড়ি করে সেখানেই থাকেন। শহীদ সম্পর্কে প্রতিবেশীর অনুভূতি শহীদ মিকদাদ আকিব সম্পর্কে জানতে চাইলে তার প্রতিবেশি এক চাচা বলেন, ‘সে ছিল খুব পরিশ্রমী ও সাহসী ছেলে। সবাই তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। এই বয়সে তাকে হারানোর ব্যথা বাবা-মায়ের পক্ষে কাটিয়ে ওঠা খুবই কঠিন। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।’ এক নজরে শহীদ মিকদাদ হোসাইন খান নাম : মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব) পেশা : ছাত্র, একাদশ শ্রেণি (বিজ্ঞান) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম : নবাবা সিরাজ উদ্দৌলা সরকারী কলেজ পিতা : মো: দেলোয়ার হোসেন খান মাতা : মোসা: ডেজী খাতুন জন্ম তারিখ ও বয়স : ২২ মে ২০০৭, বয়স: ১৭ বছর স্থায়ী ঠিকানা : উপশহর, আলাইপুর, নাটোর পৌরসভা, জেলা: নাটোর পিতার পেশা : অধ্যক্ষ, নাটোর সিটি কলেজ, বয়স: ৫৭ বছর আহত হওয়ার সময় : ৫ আগস্ট, ২০২৪, সময়: ৪:০০টা মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ৫ আগস্ট, ২০২৪, সময়: ৫:০০টা কান্দুভিটুয়া, নাটোর সদর (এমপি শিমুলের বাড়ি জান্নাতী প্যালেস) শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : গারিখানা গোরস্থান পরিবারের সদস্য : মা-বাবা, ভাই-বোন পরামর্শ ১। আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন নেই তবে পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং খোঁজখবর রাখা দরকার

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)
Image of মিকদাদ হোসাইন খান (আকিব)

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সুজন মাহমুদ

মো: শাকিল হাসান

মো: শাওন খান

হাফেজ মো: সিয়াম হোসেন

আস সাবুর

মো: সোহেল রানা

মো: শিমুল

মো: খোকন সরদার

 মো: সেলিম হোসেন

মো: জাহাঙ্গীর আলম

মো: রমজান আলী

মো: আব্দুল আলীম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo