Image of মো: রমজান আলী

নাম: মো: রমজান আলী

জন্ম তারিখ: ১৭ এপ্রিল, ১৯৯৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৬ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রাজশাহী

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : গার্মেন্টস কর্মী. শাহাদাতের স্থান :সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: রমজান আলী। তিনি নাটোর জেলার সিংড়া থানার হাজীপুর গ্রামে ১৭.০৪.১৯৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোঃ নজরুল ইসলাম ও মা মোসা: অজুফা বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি পঞ্চম। তিনি এইচ এস সি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে সংসারের হাল ধরতে গাজীপুর চলে যান। গাজীপুরের সফিপুরে নীট এশিয়া গার্মেন্টসে চাকরি করা শুরু করেন। তিনি ২০১১ সালে মুক্তা খানমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তান আছে। ২০১৭ সালে রমজান আলী সৌদি আরব যান কাজের সন্ধানে। সেখানে তিনি দুই বছর কাজ করার পর পুনরায় দেশে ফিরে আসেন। গ্রামে এসে তিনি এক বছর অটো রিকশা চালান। কিন্তু দরিদ্রতা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়ছিল না। তাই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন। আশুলিয়ার বাইপাইলে একটি মাছের আড়তে তিনি কাজ করতে শুরু করেন। সেখানে তিনি রাত ৩:০০টা থেকে সকাল ১০:০০টা পর্যন্ত কাজ করেন। পাশপাশি দিনের বেলায় সাভার ক্যান্টনমেন্টের ক্যান্টিনেও কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে তার স্ত্রী মুক্তা খাতুনও আশুলিয়ার বাইপাইলে স্বামীর কাছে চলে আসেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে স্বামীর শাহাদাতের পর তিনি বুকে পাথর বেঁধে জীবিকার তাগিদে একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে যাচ্ছেন। একমাত্র মেয়ে আসমা খাতুন বাবা-মায়ের সোহাগ থেকে বঞ্চিত হয়ে নানীর সাথে মাদারীপুরে বাস করছে। আন্দোলনের সময়ের বিস্তারিত বিবরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কোটা নয় মেধার অধিকারের আন্দোলন জুলাই ২০২৪ বাংলাদেশে ইতিহাস সৃষ্টি করে। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে আন্দোলনের রূপ রেখা পরিবর্তন হয়ে এক দফায় পরিণত হয়। একটাই দাবী স্বৈরাচার হাসিনার পতন। এ আন্দোলনে অংশ নেয় খেটে খাওয়া মানুষ থেকে সাধারণ জনগন। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আন্দোলন তীব্র রূপ ধারণ করে। এ আন্দোলনে অংশ নেয় মোঃ রমজান আলীও। তিনি আশুলিয়া থানার বাইপাইল এলাকায় আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনে যখন উত্তাল সারাদেশ তখন নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর পুলিশ হামলা চালায়। নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে আন্দোলনকারীদের উপর। এ সময় পুলিশের গুলি এসে তার বুকের বাম পাশ দিয়ে প্রবেশ করে পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। উপস্থিত ছাত্র-জনতা তাকে নিয়ে তাৎক্ষণিক এনাম মেডিকেলের দিকে রওনা হন। কিন্তু হাসপাতালে পৌছার পূর্বে পথেই তিনি ইন্তোকাল করেন। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন রাত ১০:০০ টায় তার মরদেহ নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। পরদিন ০৬ আগস্ট ২০২৪ সকাল ১০:৩০ মিনিটে জানাযা সম্পন্ন হয়। নাটোরের সিংড়া থানার সাঁঐল লাড়ুয়া যৌথ গোরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হন শহীদ মো: রমজান আলী। শহীদ মোঃ রমজান আলীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে পরিবারটিতে। সন্তান হারিয়ে পাগল প্রায় বৃদ্ধ বাবা-মা। স্বামী হারা মুক্তা কিংবা শিশু বয়সেই এতিম হয়ে যাওয়া আসমা খাতুনের জন্য নেই কোনো সান্তনার ভাষা। বাবা মো: নজরুল ইসলাম বলেন, আমার এই সন্তান অনেক কষ্ট করে কামাই রোজগার করে নিজের সংসার চালাচ্ছিল। পাশপাশি আমাদের যখন যা লাগত তা দিয়ে সাহায্য করত। আমাদের অনেক বেশি সম্মান করত। অনেক বেশি আদর-স্নেহ করত। ছুটিতে বাড়ি এলে যখন ঢাকায় ফেরত যেত আমার ও তার মায়ের মাথায় চুমু খেয়ে যেত। মা মোসা: অজুফা বেগম বলেন, আমার তিন সন্তানের মধ্যে ও সবচেয়ে বেশি আমাদের ভালোবাসত। সব সময় ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিত। এই কুরবানির ঈদেও আমাদের সবার জন্য জামাকাপড় কিনে পাঠায়। পরে আমি বলেছিলাম ‘বাবা তুমি বাড়ি আসো; তাহলেই আমি খুশি। এই শেষ ওর সাথে আমার দেখা। তারপর আমার ছেলে বাড়ি আসলো ঠিকই কিন্তু এলো লাশ হয়ে। পরিবারের কথা চিন্তা করে আমার এই ছেলে আজকে ঢাকায় গেল, তারপর আমি আমার ছেলেকে হারিয়ে ফেললাম। তা না হলে তো আমার ছেলে আমার কাছেই থাকতো। আমি তো মা, আমি আমার ছেলেকে তো আর কোনদিন ফেরত পাবো না। পারিবারিক অবস্থা শহীদের বাবা মো: নজরুল ইসলাম বৃদ্ধবয়সে কৃষিকাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। মা অজুফা বেগম একজন গৃহিনী। তাদের ছয় সন্তানের মধ্যে মোঃ রমজান আলীই বাবা-মা এবং ছোট ভাই রোবেলের স্ত্রী ও তার দুই সন্তানের ভরণ-পোষণে সহযোগিতা করতেন। বর্তমানে বাবাই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কৃষিকাজের মাধ্যমে যে আয় হয় তাতে অনেক কষ্টে দিন কাটে। আর ছোট ভাই রুবেল সৌদি আরবে বেকার জীবন কাটাচ্ছে। দেশেও ফিরতে পারছে না। অন্যদিকে তার স্ত্রী ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করছেন। একমাত্র মেয়ে আসমা খাতুন নানীর বাড়িতে থাকে। এক নজরে শহীদ মো: রমজান আলী নাম : মো: রমজান আলী শিক্ষাগত যোগ্যতা : এইচ এস সি পাস পেশা : মাছের আড়তে কাজ করতেন পিতা : মো: নজরুল ইসলাম মাতা : মোসা: অজুফা বেগম মায়ের পেশা ও বয়স : গৃহিণী, বয়স: ৫৮ বছর জন্ম তারিখ ও বয়স : ১৭ এপ্রিল ১৯৯৪, বয়স: ৩০ বছর স্থায়ী ঠিকানা: : গ্রাম: হাজীপুর এলাকা, ইউনিয়ন: হাতিয়ান্দাহ, থানা: সিংড়া, জেলা: নাটোর বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: হাজীপুর এলাকা, ইউনিয়ন: হাতিয়ান্দাহ, থানা: সিংড়া, জেলা: নাটোর শহীদের স্ত্রীর নাম : মুক্তা খানম ঘটনার স্থান : বাইপাইল, আশুলিয়া থানা আক্রমণকারী নাম ও তথ্য : পুলিশের গুলিতে শহীদ হন আহত হওয়ার সময় : ০৬/০৮/২৪, সময়: সকাল ১০:৩০ মিনিট মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ০৬/০৮/২৪, সময়: সকাল ১১:০০ মিনিট মৃত্যুর স্থান : সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : সাঁঐল লাড়ুয়া যৌথ গোরস্থান, নাটোর পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ জন পিতার মাসিক আয় : ১০০০০/- প্রস্তাবনা ১: শহীদের একমাত্র কন্যা এতিম আসমা খাতুনের লেখাপড়া ও ভরণপোষণের দায়িত্বভার গ্রহণ ২: শহীদের বাবা-মাকে এককালীন আর্থিক সাহায্য প্রদানের ব্যবস্থা করা ৩: শহীদের স্ত্রীর জন্য কোনো ভালো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী
Image of মো: রমজান আলী

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মো: সাব্বির হাসান

মো. শরিফুল ইসলাম মোহন

মোঃ শিহাব আহমেদ

মোসা: রিতা আক্তার

মেহেদী হাসান

 সিয়াম শুভ

জুনাইদ ইসলাম রাতুল

মো: জুলকারনাইন

মো. শাখিল আনোয়ার

মো: শিমুল

মো: তারিক হোসেন

মো: শাওন খান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo