Image of ওবায়দুল ইসলাম

নাম: ওবায়দুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ২১ মার্চ, ১৯৭০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : সিএনজি চালক শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ী থানা সংলগ্ন, ঢাকা

শহীদের জীবনী

"নতুন প্রভাত আনতে যারা জীবন দিল দান। রক্ত দিয়ে বাঁচালো তাঁরা স্বাধীন দেশের মান" শহীদের জন্ম ও পরিচয় শহীদ ওবায়দুল ইসলাম ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ কুমিল্লা জেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের মেঘনা থানায় জন্মগ্রহণ করেন। ওবায়দুল ইসলামের পিতার নাম ওমর আলী (মৃত) এবং মাতা আবেদা খাতুন (৭২)। ৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের বছরে জন্ম শহীদ ওবায়দুল ইসলামের। ৫৩ বছর পর দ্বিতীয় স্বাধীনতার বছরেই পৃথিবী ছাড়তে হলো শহীদ ওবায়দুল ইসলামকে। পারিবারিক জীবন ওবায়দুলের শৈশব কেটেছে জন্মস্থান কুমিল্লাতেই। অভাবের সংসার, খুব বেশি পড়ালেখা তাই তার কপালে জোটেনি। কুমিল্লায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করার পর অর্থের অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। অভাবী মানুষের পেটের ভাত জোগানোর চ্যালেঞ্জের কাছে পড়ালেখা গৌণ হয়ে যায়। ওবায়দুলের হয়েছিলও তাই। জীবিকার তাগিদে তিনি কাজ করতে শুরু করেন। বিভিন্ন কাজকর্ম করে সংসার চালাতেন। আরেকটু উন্নত জীবনের আশায় হয়তো রাজধানীতে এসেছিলেন। রাজধানীতে এসে তিনি ভাড়ায় চালিত সিএনজি চালাতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটাই ছিলো তার পেশা। সিএনজির উপার্জনে চলতো স্ত্রী ছেলে-মেয়েসহ চারজনের সংসার। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যাত্রাবাড়ীর গোবিন্দ এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। পরিবারের বট বৃক্ষের মৃত্যু এবং একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অমানিশা শহীদ ওবায়দুল ইসলাম দুই সন্তানের জনক। ছেলে মাজহারুল ইসলাম মাজহার (২৫) এবং মেয়ে মোসাম্মাৎ মায়া খাতুন (১৯)। মেয়ে মায়া বিবাহিত। আর শহীদ ওবায়দুল তার আদরের ছেলে মাজহারকে এতদিন পৃথিবীর কঠিন জীবন বুঝতে দেননি। একাই টেনেছেন সংসারের ঘানি। একরকম চলেই যাচ্ছিল জীবন। কিন্ত বাবা নেই এখন। তাই মাজহারের মাথার ওপর পুরো সংসার। এতদিন যাকে জীবিকার চিন্তা করতে হয়নি বাবার জন্য, সেই মাজহার এখন একটি জুতার দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ নিয়েছেন মাসিক ৬০০০ টাকা বেতনে। শহীদ ওবায়দুলের স্ত্রী মরিয়মের (৫৪) বয়স হয়েছে, তিনি এখন অসুস্থ। স্বামী হারানোর শোক নিয়েই তিনি এখন দিন পার করছেন। শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা স্বাধীনতার বছরে জন্ম নেয়া ওবায়দুলকে চব্বিশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দিতে হলো স্বৈরাচারী হাসিনার ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে। স্বাধীনতার বছরেই জন্ম এবং স্বাধীনতার বছরেই মৃত্যু। আহা জীবন! এমন কত শহীদের বিনিময়ে আমাদের ২৪ এর স্বাধীনতা। সত্যিই তো, এই দেশের জন্য যদি করতে হয় আমার জীবন দান তবু দেব না দেব না লুটাতে ধুলায় আমার দেশের সম্মান। ‘নতুন প্রভাত আনতে যারা জীবন দিল দান। রক্ত দিয়ে গড়ল তাঁরা স্বাধীন দেশের মান’ তাদের এই আত্মত্যাগ কেবল আমাদের জন্য। একদিকে স্বৈরাচারী হাসিনার উল্লাস, অন্যদিকে তার পেটুয়াদের পিশাচ রাজ্য গঠন। এসব দেখে শহীদ ওবায়দুল ইসলামের ঘৃণায় ধিক্কার আসে। মনের মধ্যে জাগ্রত হয় পাষণ্ড বধের তীব্র ক্ষোভ। এদিকে চারিদিকের আন্দোলনও যেন যুদ্ধে রূপ নেয়। নতুন ঊষার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন ২৪ এর শহীদ মরহুম ওবায়দুল। সিএনজি গ্যারেজে রেখে আন্দোলনে শামিল হন তিনি। কবির ভাষায় ‘শাহাদাতে চলে শত ব্যথা ভুলে, তোমার প্রেমের ফুল হৃদয়ে তুলে। আছে সেই আলোময় ফুলের পথে, বিজয়ের পূতঃ উদ্যান!’ সেই শাহাদাতের আলোকে রাঙিয়ে তুলতে আন্দোলনে যোগ দেন সিএনজিচালক শহীদ ওবায়দুল ইসলাম। ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’ ৫ আগস্ট ২০২৪। একইসাথে ভীষণ অনিশ্চিত, ভয়ংকর এবং একটি বিজয়ের দিন। রোডমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি। রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা সারা বাংলার মানুষের। অপেক্ষা খুনী হাসিনার পতনের। অপেক্ষা একটি নতুন ইতিহাসের। এর মধ্যেও থেমে নেই স্বৈরাচারের আগ্রাসন। একটার পর একটা গুলি চলছে। মুহুর্মুহু গুলি চলছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পুরো সময়টাতেই রণাঙ্গন হয়ে থাকা যাত্রাবাড়ী তখন যুদ্ধক্ষেত্র। মাঠে পুলিশ, সরকারের পোষা আওয়ামীলীগের নানান বাহিনী, রক্ত আর লাশের স্তপ। আর সবদিনের মতো জীবিকার তাগিদে ওবায়দুল ঐদিনও সিএনজি চালাতে এসেছেন। এমন রণাঙ্গন দেখে তিনি চলে যাননি, ভয় পাননি বরং মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সিএনজি দিয়ে গুলিবিদ্ধ যোদ্ধাদের আহত দেহকে হাসপাতালে নিতে সাহায্য করেছিলেন তিনি। পুলিশ সেদিন নরপিশাচ হয়ে উঠেছিল। কিছুক্ষণ পর শহীদ ওবায়দুল ঘাতকদের নজরে পড়লেন। তখনও জনতার আহত দেহ ওবায়দুলের দু-হাতের উপর। সিএনজিতে উঠাতে যাবেন, সেই মুহূর্তে কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি চালানো হলো। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন ওবায়দুল। কিছুক্ষণ আগেও যিনি আন্দোলনের মিছিলে স্লোগান দিয়েছিলেন, উদ্ধার করছিলেন অগণিত ছাত্র-জনতাকে। তাকেই উদ্ধার করতে এগিয়ে এলেন কতক ছাত্র-জনতা। তড়িঘড়ি করে ছাত্র-জনতা এই মহাবীরকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে তারা বাঁচাতে পারেনি অকুতোভয় শহীদকে। সেখানেই বিকাল ৪টায় বাংলাদেশকে স্বৈরাচারী হাসিনার হাত থেকে মুক্ত করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন শহীদ ওবায়দুল ইসলাম। পরবর্তীতে লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। আত্মীয়-স্বজনের চোখের জলে সিক্ত হন তিনি। জানাজা শেষে কুমিল্লার চালিভাঙ্গা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় এই মহান বীরকে। বিজয়ের আনন্দ এবং হারানোর বেদনা ৫ আগস্ট আমরা দ্বিতীয়বার মতো স্বাধীনতা অর্জন করলাম কিন্ত শহীদ ওবায়দুলরা এ স্বাধীনতা দেখে যেতে পারলেন না। ৫ আগস্ট যেমন ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন, দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তির দিন তেমনি অনেককে হারানোর বেদনার দিন। ৫ তারিখে পলায়নের আগেও খুনী হাসিনার ভয়ংকর আগ্রাসন চলছিলো। নাম না জানা অনেকেই ৫ তারিখে শহীদ হন। বিজয়ের আনন্দ ঐ পরিবারগুলোতে আসেনি। আমরা শহীদদের এই আত্মত্যাগ যেন কোনোভাবেই কখনও না ভুলে যাই। প্রস্তাবনা ১. শহীদ পুত্রকে কর্মসংস্থান করে দেয়া যেতে পারে। ২. শহীদের স্ত্রীকে মাসিক অথবা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে। ৩. যেহেতু শহীদের গ্রামের বাড়ীতে নিজস্ব জমি আছে। তাই স্থায়ী বাড়ী করে দেয়া যেতে পারে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী নাম : ওবায়দুল ইসলাম পিতার নাম : ওমর আলী মাতার নাম : আবেদা খাতুন পেশা : সিএনজি চালক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চালি ভাঙ্গা, থানা: মেঘনা, জেলা: কুমিল্লা মৃত্যুর তারিখ : ০৫/০৮/২০২৪, দুপুর ৩টা কিভাবে মারা যান : পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে মারা যান ঘটনার স্থান : যাত্রাবাড়ী থানা সংলগ্ন কবরস্থান : গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান, চালিভাঙ্গা, কুমিল্লা জন্মতারিখ ও বয়স : ২১/০৩/১৯৭১ (৫৩) সম্পদের পরিমাণ : পৈতৃক দুই-তিন শতক বসতি জমি রয়েছে স্ত্রী : মরিয়ম বেগম (গৃহিণী) সন্তানদের বিবরণ ১. মাজহারুল ইসলাম মাজহার বয়স : ২৫ পেশা : জুতার দোকানের কর্মচারী সম্পর্ক : ছেলে ২. মোসা: মায়া খাতুন বয়স : ১৯, বিবাহিতা সম্পর্ক : মেয়ে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of ওবায়দুল ইসলাম
Image of ওবায়দুল ইসলাম
Image of ওবায়দুল ইসলাম
Image of ওবায়দুল ইসলাম
Image of ওবায়দুল ইসলাম
Image of ওবায়দুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মমিন ইসলাম

মো: সুমন সিকদার

আব্দুর রহমান জিসান

মো: আসলাম

মো: সাকিল

মো: সেলিম আলী শেখ

মাহামুদুর রহমান সৈকত

মারুফ হোসেন

মো: আসিব মিয়া

শাহ আলম

আবু ইসাহাক

নাসির হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo