জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : ছাত্র, একাদশ শ্রেণীর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ, বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, যশোর, শাহাদাতের স্থান :অগ্নিকাণ্ডে আক্রান্তদের উদ্ধারে নিহত, জাবির হোটেল, চিত্রার মোড়, যশোর
আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ,র্স্পধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি, আঠারো বছর বয়সেই অহরহ বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি। জুলাই বিপ্লবে এদশের বুকে আঠারো এসেছিল নেমে! এমনি এক আঠারো বছরের বিপ্লবী তরুণ হলেন, শহীদ সামিউর রহমান সাদ। শহীদ সামিউর ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে যশোর জেলার সদর থানার পূর্ব বারান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ মতিউর রহমান এবং মাতার নাম মোছা: সাজেদা রহমান। পিতামাতা আর অগ্রজ বোনকে নিয়ে ৪ সদস্যের পরিবার তাঁদের। একমাত্র বোন সানজিদা পারভিন (২৬) যশোর এম এম কলেজে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। পিতা মোটর পার্টসের ব্যবসায় করেন এবং মাতা গৃহিনী। শহীদ সামিউর রহমান সাদ বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, যশোর- এর একাদশ শ্রেণীর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। সর্বশেষ তিনি বাবা-মা ও বড়বোনের সাথে যশোর জেলার সদর উপজেলার পূর্ব বারান্দি মোল্যাপাড়া এলাকায় থাকতেন। ঘটনার বিবরণ তারুণ্যের তেজ নিয়ে বিপ্লবের প্রয়োজনে জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন শহীদ সামিউর রহমান সাদ। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে চাকুরিতে কোটার বৈষম্যমূলক প্রয়োগের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে ছাত্রদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিলে দেশব্যাপী ব্যাপক সংখ্যায় ছাত্র ও সাধারণ জনতা মারা যায়। যার ফলে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলন এক পর্যায়ে রূপ নেয় শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে। ছাত্রদের সাথে যুক্ত হয় আপামর জনসাধারণ। তীব্র আন্দোলনের সামনে টিকতে না পেরে আগস্ট মাসের ৫ তারিখে দেশ ছাড়েন তৎকালীন আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। দেশব্যাপী সাধারণ মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। সবাই যখন বিজয়োল্লাসে ব্যস্ত, ঠিক সেদিন চিত্রার মোড়ে জাবির হোটেলে দুর্বৃত্তরা আগুন লাগালে ঐখানে বেশকিছু ছাত্রজনতা আটকে পড়ে। তাদের উদ্ধার করার কাজে অংশ নিতে গিয়ে শহীদ হয়ে ফেরেন সামিউর রহমান সাদ। ৫ আগস্ট দুপুর বেলা সাদ তার বাবা-মা সহ দুপুরের খাবার খাচ্ছিল। তখন তার সহপাঠীরা তাকে কল দিয়ে বলে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছে। তখন সে তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বাবার কাছ থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়ার সময় তার এক সহপাঠী মোবাইলে জানায়, জাবের হোটেলে আগুন লেগেছে এবং তার কিছু বন্ধু সেখানে আটকা পড়েছে। তখন সে এলাকার বন্ধুদের সাথে নিয়ে জাবের হোটেলে গিয়ে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করে। সে দুই তিন জনকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করার এক পর্যায়ে আগুনে তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় সাদ চতুর্থ তলায় আটকা পড়ে। তার শারীরিক অবস্থা দেখে ধারণা করা হয়, সে অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস নিতে না পেরে মারা যায়। আনুমানিক বিকেল পাঁচটার দিকে তার বন্ধুরা তার বাসায় এসে তার বাবাকে বলে, "আংকেল সা'দের গাড়ি জাবের হোটেলের বাইরে পার্ক করা এবং সাদ ভিতরে আটকা পড়ে আছে"। শুনে তার বাবা দ্রুত ছুটে যান ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখেন সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। তারা একের পর এক আহত এবং নিহতদের বের করছিল। সাদ এর বাবা আশা করেছিলেন হয়তো তার ছেলেকেও বের করা হবে। তিনি বলেন, তিনি যদি জানতেন তার ছেলে চতুর্থ তলায় বা পঞ্চম তলায় আটকে আছে তাহলে তিনি ফায়ার সার্ভিসের জন্য অপেক্ষা করতেন না, নিজেই চলে যেতেন। মাগরিবের কিছু আগে খুলনা থেকে একটা ক্রেন আনা হয় যেটা দিয়ে ১৬ তলা থেকে রেসকিউ করা হচ্ছিল। তিনি অনেকক্ষণ আশা করে ছিলেন তার ছেলে হয়তো আগুনের তীব্রতায় উপর দিকে উঠে গিয়েছে এবং এই রেসকিউ টিমের সহায়তায় তার ছেলেকে ফিরে পাবেন। কিন্তু তাকে আর নামানো হলো না। অপেক্ষা করতে করতে রাত প্রায় সোয়া নয়টার দিকে হাসপাতাল থেকে একজন কল দিয়ে তার বাবাকে বলে সা'দকে হাসপাতালে সনাক্ত করা গেছে আপনি হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের ব্রিজ পার হওয়ার পর তার ভাতিজা তাকে নিশ্চিত করেন যে সা'দ হাসপাতালেই আছে। তখন তিনি জানতে চান যে সে আহত হয়েছে কিনা? বা কতটুকু আহত হয়েছে? এ প্রশ্ন শুনে তার ভাতিজা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন সা'দের বাবা বুঝতে পারেন যে তাঁর ছেলে আর বেঁচে নেই। তারা হাসপাতালে পৌছানোর আগেই সা'দের মৃতদেহ বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং এ খবর পেয়ে তিনি বাসায় চলে আসেন। স্থানীয় পূর্ব বারান্দি মোল্লাপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বিপ্লবের প্রয়োজনে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে একটুও কুন্ঠাবোধ করেননি শহীদ সাদ। ছোট বেলা থেকেই মানুষের পাশে দাড়ানোর অভ্যাস, তাকে জুলাই বিপ্লবের অকুতোভয় বীর বানিয়েছে। শহীদ সামিউর রহমান সাদ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শুরু থেকেই অংশ নিয়েছিলেন এবং সামনের সারি থেকে স্থানীয় এলাকায় নেতৃত্ব ও দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন যশোর জেলা সমন্বয়কদের একজন। পরিবার ও নিকটাত্মীয়ের অভিব্যক্তি সন্তানের স্মৃতিকাতরতায় শহীদ সামিউর রহমানের সাদের বাবা ভেঙে পড়েছেন এবং গর্ববোধ ও করছেন। সাদের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, "সাদ জুলাই শুরু থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, সে আন্দোলনের নেতৃত্বও দিয়েছে। সে যশোর জেলা সমন্বয়কদের একজন ছিল। সাদ বর্ডার গার্ড স্কুল থেকে তৃতীয় শ্রেণি থেকে একাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ছোটবেলায় শিশু সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। নিয়মিত নামাজ পড়ত। তার শখ ছিল ছবি তোলা এবং জিম করা। ৩ আগস্ট আমি ও তার মা তার সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। আমরা চেষ্টা করতাম নিয়মিত তাকে সাপোর্ট করে যেতে।" আমাদের করণীয় এই শহীদেরা আমাদের সম্পদ। যে লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে শহীদেরা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে,আমাদের উচিৎ তাদের লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করা। বৈষম্যেবিরোধী এক নতুন বাংলাদেশ সংস্কার করা। এটাই হবে আমাদের শহীদদের প্রতি প্রতিদান। এক নজরে শহীদের পরিচয় নাম : সামিউর রহমান সাদ জন্ম তারিখ : ০১/০১/২০০৭ খ্রি: স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- পূর্ব বারান্দি, ইউনিয়ন- পৌরসভা ১ নং ওয়ার্ড, থানা- সদর, জেলা- যশোর বর্তমান ঠিকানা : ঐ পেশাগত পরিচয় : ছাত্র, একাদশ শ্রেণীর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ, বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, যশোর পিতার নাম : শেখ মতিউর রহমান পিতার পেশা ও বয়স : মোটর পার্টসের ব্যবসায়, ৫৩ বছর মাসিক আয় : মাত্র ৩০,০০০/- প্রায় মাতার নাম: মোছা : সাজেদা রহমান মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিনী, ৪৯ বছর বোনের নাম : সানজিদা পারভিন(২৬) বোনের পেশা : মাস্টার্স শিক্ষার্থী, সরকারি এম এম কলেজ, যশোর ঘটনার স্থান : জাবির হোটেল, চিত্রার মোড়, যশোর মৃত্যুর কারণ : অগ্নিকাণ্ডে আক্রান্তদের উদ্ধারে নিহত আহত ও নিহত হওয়ার স্থান ও সময় : ০৫/০৮/২০২৪, জাবের হোটেল, ৪ টা থেকে ৯ টার মধ্যবর্তী সময়ে শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : পূর্ব বারান্দী মোল্যাপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থান গুগল লোকেশন : যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/৯গঢঃহষহগযড৭িধ২৮জ৬ পরামর্শ ১। এককালীন আর্থিক সাহায্য। ২। নিয়মিত খোঁজখবর রাখা।