জন্ম তারিখ: ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : ছাত্র, রেলস্টেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যশোর, শাহাদাতের স্থান : জাবের হোটেলের ৪ তলায় পুড়ে মারা যান
ছোট্ট কিশোর বালক আব্দুল আজিজ। বাবা মা আদর করে নাম দিয়েছে চাঁন মিয়া। ২৪ এর মহান বিপ্লবে শহীদের খাতায় নাম লেখানো এক মহাপ্রাণ। শহীদ চাঁনের মতো কিশোরদের দু:সাহসিক প্রাণশক্তি জাতিকে পথ দেখিয়ে নতুন স্বাধীনতার পানে। অন্যথায় হয়তো জাতিকে বরণ করে নিতে হতো পরাধীনতার শেকল। আগস্ট ২০২৪, ছাত্রজনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয় দীর্ঘ ১৬ বছর এই দেশকে লুটেপুটে খাওয়া জালিম হাসিনা সরকার। হাসিনা সরকারের এই পদত্যাগে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে দেশের আপামর জনসাধারণ। দীর্ঘদিন জুলুমের শিকার ও বাক-স্বাধীনতাহীন জনতা সপরিবারে রাস্তায় নেমে আসে এই বিজয় উদযাপনের জন্য। সব বয়সের সকল শ্রেনী পেশার মানুষ এই আনন্দ মিছিলে সম্পৃক্ত ছিল । যশোর শহরের বিজয় মিছিলে ছিল ১৬ বছর বয়সী আব্দুল আজিজ ওরফে চাঁন মিয়া নামের এক ছাত্র। আব্দুল আজীজ পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে আদর করে ডাকেন চাঁন মিয়া। একসময় এটিই তার নাম হয়ে যায়। কাগজে কলমে আব্দুল আজিজ সবার জন্য আদরের চাঁন মিয়া হয়েই ছিল । আব্দুল আজিজ ১১ অক্টোবর ২০০৮ সালে যশোরের সদর উপজেলার রায়পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। তার পিতার নাম সেলিম সরকার, মাতার নাম শিউলী সরকার। বাবা মায়ের বিচ্ছেদের পর বড় মামা জয়নুল সরদারের বাসায় লালিত পালিত হচ্ছিলো চাঁন মিয়া ও তার বড় ভাই আব্দুর রহমান আকাশ (১৭)। আব্দুল আজিজ যশোর রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি বাবা-মা'য়ের বিচ্ছেদের পর চাঁন মিয়া ও তার ভাই আকাশ (১৭) বড় মামার বাড়িতে বড় হয়েছেন। বাবা-মা উভয়েই ২য় বিয়ে করেছেন। বাবা ২য় বিয়ে করে রায়পাড়া কলোনিতে থাকেন। মা ২য় স্বামীর সাথে সংসার করছেন। বাস এর হেল্পারি থেকে বাবার আয় ও বড় মামার পোনা মাছের ব্যবসা থেকে তাদের ভরণপোষণ হয়। নিজেদের কোন পৈতৃক যায়গা-জমি নেই। ঘটনার বিবরণ ঘটিনার দিন ৫ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে বড় ভাই আকাশের সাথে চাঁচড়া মোড় থেকে বিজয় মিছিলে আব্দুল আজিজ অংশগ্রহণ করে। মিছিলের সাথে চলতে গিয়ে আকাশ তাকে জনস্রোতে হারিয়ে ফেলে। দুপুরের দিকে আব্দুল আজিজ ওরফে চাঁন মিয়া কৌতুহলবশত যশোরের চিত্রার মোড় এলাকায় জাবির হোটেলে ঢুকে পড়ে এবং অগ্নিকাণ্ডে আটকে পড়ে। সে বড়ভাই আকাশকে কল করে জানায়, "ভাই, আমি নবম (৯ম) তলায় আটকে পড়ে আছি। আমাকে একটু উদ্ধার করো।" ছোটো ভাইয়ের ফোন পেয়ে আকাশ তার মামাকে নিয়ে জাবের হোটেলের সামনে যায়। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও পরবর্তীতে স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা অনেক আহত ও নিহতদের উদ্ধার করলেও চাঁন মিয়াকে খুঁজে পায়না আকাশ ও তাদের মামা। ৫ তারিখ সারারাত হাসপাতাল ও জাবির হোটেলের সামনে অপেক্ষা করার পর পরদিন ৬ আগস্ট সকালে আবার জাবির হোটেলে প্রবেশ করে নিজেরা খুঁজতে শুরু করে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ৪র্থ তলার একটি রুমে এক কোনায় পড়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। তার মামা তাকে সনাক্ত করে। শারীরিক অবস্থা দেখে ধারণা করা হয় যে, ৪র্থ তলায় ঐ রুমে গ্যাসের সিলিন্ডার বার্স্ট হয়ে সে মারা গেছে। ৬ আগস্ট জানাজার পর তাকে স্থানীয় রাজবাড়ি কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরিবারের অভিব্যক্তি বড় ভাই আকাশের খুব প্রিয় ছিল আব্দুল আজিজ। আকাশ তার সম্পর্কে বলেন, "আমার ভাই আমাকে অনেক বেশী ভালোবাসতো, সবসময় আমার সাথেই থাকতো। এমনকি সেদিন (৫ আগস্ট) মিছিলে আমার সাথেই গিয়েছিল ।" একনজরে শহীদের পরিচয় নাম : আব্দুল আজিজ (চাঁন মিয়া) জন্ম তারিখ : ১১/ ১০/ ২০০৮ পেশাগত পরিচয় : ছাত্র, রেলস্টেশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যশোর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: রায়পাড়া, ইউনিয়ন: পৌরসভা, ওয়ার্ড: ০৬, থানা: সদর, জেলা: যশোর পিতার নাম : সেলিম সরকার পিতার পেশা ও বয়স : গাড়ির সুপারভাইজার, ৪৮ বছর মাসিক আয় : ১০,০০০/- (প্রায়) মাতার নাম : শিউলি বেগম মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৩৬ বছর পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ০৪ (চারজন) বড় ভাইয়ের নাম : আব্দুর রহমান আকাশ (১৭) ঘটনার স্থান : জাবের হোটেল, চিত্রার মোড়, যশোর মৃত্যুর কারণ : জাবের হোটেলের ৪ তলায় পুড়ে মারা যান শাহাদতের সময় : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : রাজবাড়ি কবরস্থান, চাঁচড়া, যশোর কবরের গুগল লোকেশন : যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/রশগঊট৪২ুনসি৫ফঊংজ৮ পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা ২। বড় ভাই আকাশকে স্বল্প পুঁজির ব্যবসার ব্যবস্থা করে দেওয়া