জন্ম তারিখ: ৮ আগস্ট, ১৯৯৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : গার্মেন্টসে কর্মরত, শাহাদাতের স্থান : আশুলিয়া থানার বাইপাইল এলাকায়।
৫ আগস্ট ২০২৪ সাল, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে দেশের জনগণের ওপর চেপে বসা স্বৈরাচারী সরকারের অবসান ঘটে এই দিনে। দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার সরকার বহুদিন ধরে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দমন-পীড়নের মাধ্যমে জনগণকে শাসন করে আসছিল। বিশেষ করে তরুণ সমাজ, ছাত্র-জনতা এবং সাধারণ মানুষ শোষণ এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া গণ-আন্দোলন পরবর্তীতে সরকার পতনের একদফা দাবিতে রূপ নেয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ছিল যেমন আনন্দের, তেমনই বেদনারও। এই দিনে সরকারের মরণ কামড় হিসেবে শত শত মেধাবী কিশোর ও তরুণদের হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে শহীদ এম এম তৌহিদুর রহমান ছিলেন একজন সাহসী তরুণ, যিনি স্বাধীনতার বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। যশোর জেলার কেশবপুর থানার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের শহীদ তৌহিদুর রহমান সাভারের আশুলিয়া এলাকায় একটি গার্মেন্টসে কর্মরত ছিলেন। তৌহিদের জন্ম ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসের ৮ তারিখে যশোর জেলার কেশবপুর অন্তর্গত ভাল্লুলপুর গ্রামে। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল নিম্নমধ্যবিত্ত। তিনি ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, যিনি তার স্ত্রী, মেয়ে এবং বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন করতেন। তৌহিদুর রহমানের পরিবারে তার বাবা-মা, স্ত্রী নাসরিন আক্তার এবং একটি ছোট্ট কন্যা সন্তান রয়েছে। তার ভাই মো: জাহিদ হাসান গার্মেন্টস শ্রমিক। হিসেবে কাজ করেন। তৌহিদুরের মৃত্যুতে পরিবারে ভীষণ শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যেভাবে শহীদ হয় শহীদ এম এম তৌহিদুর রহমান সাভারের আশুলিয়া এলাকায় একটি গার্মেন্টস এ চাকুরীর সুবাদে থাকতো। শাহাদাতের দিন ৫ আগস্ট তার বাবার সাথে কথা হয়, বলে যে সরকারের পতন হয়েছে, দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং সে বিজয় মিছিলে অংশ নিবে। এর আগেও দেশের পরিস্থিতির কথা বাবাকে বলতো প্রায় সময়, বার্ধক্যজনিত বাবা সবকিছু খেয়াল রাখতে পারতোনা বা মনেও থাকতো না। সেদিন বিকেলে তার সাথে বাবা এবং মায়ের শেষ কথা হয়, বিজয় মিছিলের অনেক শব্দ থাকায় সে দ্রুত দোয়া চেয়ে ফোন রেখে দেয়। এর পর আর যোগাযোগ না হওয়ায় ঢাকায় অবস্থানরত তৌহিদুর এর বড়ভাই এর সাথে তার বাবা যোগাযোগ করে তৌহিদূরকে খুঁজতে বলে। আনুমানিক রাত ১২ টার দিকে তার ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। অপর প্রান্ত থেকে এক মহিলা জানান যে সাভার থানার সামনে তিনি এই ফোনটি রাস্তায় খুজে পেয়েছেন। এই শুনে তৌহিদুরের বাবা তার ভাইকে জানালে তারা তৌহিদুর এর সন্ধান করতে বিভিন্ন হাসপাতাল ও সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোজ নিতে থাকেন। ফেসবুকে ঘুরে বেড়ানো সাভার এনাম মেডিকেল এ দুইটি অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশের ছবি দেখে তার কিছু আত্মীয় তাকে সনাক্ত করে এবং হাসপাতাল থেকে সকালে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শী সংশ্লিষ্ট একজনের ভিডিওর একটা অংশে দেখা যায় আনুমানিক ৫টার দিকে বিজয় মিছিল শেষে বাসায় ফিরার পথে আশুলিয়া থানার বাইপাইল এলাকায় বিপথগামী কিছু পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলির শিকার হন তৌহিদুর রহমান। সাথে সাথে তাকে তার সাথীরা হাসপাতালে নিয়ে যান এবং কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। উদ্ধারকৃত তৌহিদুরের ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সেদিনের বিজয় মিছিল, আহত ও নিহত অবস্থায় বেশ কিছু ছবি ভিডিও পাওয়া গেছে। পরদিন বাদ আছর তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং ভালুকঘর উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মো: মাছিহুর রহমান তার জানাজার নামাজ পড়ান। নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে বাবার মন্তব্য তৌহিদুর রহমানের বাবা আব্দুল জব্বার মোল্লা জানান যে, ঘটনার কিছুদিন আগে তৌহিদুর তার স্ত্রী ও মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাবা জানতে চাইলে সে বলেছিল যে, ঢাকার পরিস্থিতি ভালো নয়, তাই তাদের নিরাপত্তার জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তাদের ঢাকায় নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছিল। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : এম এম তৌহিদুর রহমান (২৮) পেশা : গার্মেন্টস কর্মী ঠিকানা : ভালুকঘর, সাতবাড়িয়া, কেশবপুর, যশোর জন্ম তারিখ : ০৮/০৮/১৯৯৬ পিতা : মো: আব্দুল জব্বার মোল্লা (৬১) পিতার পেশা : কৃষি মাতার নাম : মোসা: রাশিদা বেগম (৫০) মাতার পেশা : গৃহিণী শহীদের মেয়ে : আয়েশা আক্তার (০২) পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা। ২। শহীদের একমাত্র কন্যা সন্তানের জীবনধারণের এবং পড়াশোনার সমস্ত ব্যয় বহন করা। ৩। শহীদের স্ত্রীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে রয়েছে, জান্নাত, যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৪৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের জন্য জান্নাতে ৭০ জন আত্মীয়কে সুপারিশ করার অধিকার থাকবে।” (সুনান আবু দাউদ ২৫২০)












