Image of মো: রিয়াদ শেখ

নাম: মো: রিয়াদ শেখ

জন্ম তারিখ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :আগুন নেভাতে গিয়ে মাথায় কাঁচ পড়ে আঘাত ও রক্তক্ষরণ,সদর থানা, যশোর।

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: রিয়াদ শেখ একজন সাহসী ও উজ্জ্বল তরুণ; যার জন্ম ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৬ সালে যশোরের চাঁচড়া গ্রামে। পূর্বপুরুষদের বসত গৌরনদী, বরিশাল হলেও বর্তমানে তারা যশোরেই স্থায়ী। তিনি ছিলেন একজন নিষ্পাপ, উদ্যমী ছাত্র। যশোর সরকারি কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন শহীদ রিয়াদ। নিজের শিক্ষা ও উন্নতির পথে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তার কিন্তু জীবনের এই যাত্রা খুব অল্প সময়ের মধ্যে থেমে গেল। স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করবেন। মাকে বলতেন, সব ঠিক হয়ে যাবে- অভাব থাকবে না। রিয়াদের পরিবার ছিল পাঁচ সদস্যের। বাবা মো: কাবিল শেখ, যিনি বর্তমানে বেকার এবং মা শাহিনুর বেগম, একজন গৃহিণী; যিনি সংসার আগলে রাখেন। রিয়াদের বড় ভাই হৃদয় শেখ, পেশায় একজন ড্রাইভার। রিয়াদ সবসময় মানবসেবায় এগিয়ে আসত, বহুবার সে রক্তদান করেছিলেন। মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকা এই তরুণের জীবন এক বেদনাদায়ক ঘটনার মাধ্যমে চিরতরে থেমে গেল। ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে হোটেল জাবিরে আগুন নেভাতে গিয়ে তার মাথায় কাঁচ ভেঙ্গে পড়ে, যা মারাত্মক রক্তক্ষরণ ঘটায়। নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে অন্যদের রক্ষা করতে গিয়ে তিনি শহীদ হন। তাঁর আত্মত্যাগ ছিল এক সাহসী এবং অনন্য নজির, যা তার পরিবার এবং এলাকাবাসীর হৃদয়ে স্থায়ী চিহ্ন রেখে গেছে। শহীদ রিয়াদকে তার গ্রামের বাড়ি চাঁচড়া,ডালমিল, রাজবাড়ি মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয়। শহীদ রিয়াদ এমন একটি জীবন, যার সমাপ্তি হৃদয়বিদারক হলেও, তার সাহস ও আত্মত্যাগের কাহিনি বেঁচে থাকবে চিরকাল। পরিবারের সাথে তার শেষ কথা ছিল, ‘এতদিন মিছিল করলাম কষ্ট করে- বিজয় মিছিলে যাব না?’ অর্থনৈতিক অবস্থা তাঁর বাবা একসময় স্বপ্নছোঁয়া ফিউচার পার্কে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করতেন। রিয়াদ শহীদ হওয়ার তিনদিন পর পার্কের মালিক জানিয়ে দেন, পার্ক বন্ধ হয়ে যাবে এবং রিয়াদের বাবার চাকরি চলে যায়। সেই থেকে তিনি বেকার। রিয়াদের পরিবার বর্তমানে অর্থকষ্টে দিন পার করছেন। পরিবারের আয়ের একমাত্র অবলম্বন এখন বড় ভাই হৃদয় শেখ; যিনি প্রাইভেট কার চালিয়ে মাত্র ১০০০০টাকায় পরিবারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের বাড়িটি জরাজীর্ণ, একটি ভালো বাড়ি তৈরির রিয়াদের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বাবার পক্ষে সেই ইচ্ছা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া, আওয়ামী বিরোধী মতাদর্শ পোষণ করায় শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে নাশকতার মিথ্যা মামলায় রিয়াদের বাবা ৩-৪ বছর বাড়িতে থাকতে পারেননি, যা তাঁদের অর্থনৈতিক সংকটকে আরও প্রকট করেছে। রিয়াদের জন্য পরিবার ছিল সবকিছু। তাঁর ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ এবং পরিশ্রমের প্রতি তার অঙ্গীকার অনুকরণীয়। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ শহীদ মো: রিয়াদ শেখ ছিলেন এক সাহসী ও আদর্শবান ছাত্র, যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শুরু থেকেই সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। শাসকের রক্তচক্ষুর কোনো ভয় না পেয়ে রিয়াদ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতেন। তাঁর সাহসিকতা ও নেতৃত্বের কারণে সহপাঠীদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক অমূল্য প্রেরণা। ৫ আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:১৮ টায় রিয়াদ তাঁর দুই বন্ধু চয়ন ও শান্তকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পরিবার থেকে তাকে আন্দোলনে না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তারা বলেছিল, এতদিন আন্দোলন করেছ, আজ আর যাওয়ার প্রয়োজন নেই, বিপদ হতে পারে। কিন্তু রিয়াদ পরিবারের অনুরোধ উপেক্ষা করে বন্ধুদের নিয়ে চাঁচড়া মোড়ে ছাত্রদের বিজয় মিছিলে যোগ দেন। সেদিনের মিছিলটি ছিল সরকারের পতনের প্রতীক এবং সাধারণ জনতা আনন্দে ফেটে পড়ে। মিছিলটি হোটেলে জাবের ইন্টারন্যাশনালের কাছে পৌঁছালে জানতে পারে হোটেলটিতে আগুন লেগেছে। রিয়াদ এবং তাঁর বন্ধুরা ছুটে যান এবং উদ্ধারকর্মীদের সঙ্গে মিলে প্রায় ১৭-১৮ জন মানুষকে উদ্ধার করেন। রিয়াদের এই সাহসিকতা তাঁর মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, উপরের তলায় উঠতে গিয়ে কাঁচের গ্লাস ভেঙে তাঁর মাথায় আঘাত লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই খবরে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নামে। পরিবারের সদস্যরা মর্গে রিয়াদের নিথর দেহ খুঁজে পান এবং জানাজার পর তাঁকে যশোর সদর থানার স্থানীয় ডালমিল মুসলিম কবর স্থান, চাঁচড়া রাজবাড়ি কবরস্থানে দাফন করা হয়। রিয়াদের স্বপ্ন ছিল সরকারি চাকরি করার,পরিবারের অভাব অনটনের সমাধানে হাল ধরার। আরও স্বপ্ন ছিল তাঁর পরিবারের জন্য একটি ভালো ঘর তৈরি করার। যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকায় একটি জরাজীর্ণ ঘরে থাকা রিয়াদ প্রায়ই তাঁর বাবার কাছে একটি ভালো ঘরের কথা বলতেন। যশোর সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন এবং এই আন্দোলনটি পরবর্তীতে সরকারের পতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। রিয়াদের বাবা মো: কাবিল শেখ বলেছিলেন, “রিয়াদ ছিল সৎ ও আদর্শবান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সে নেতৃত্ব দিয়েছিল।” একবার পুলিশের উপর হামলার সময়, রিয়াদ তাঁর সহযোদ্ধাদের নিবৃত করেছিল, যার জন্য পুলিশই তাঁকে ফুল দিয়ে সম্মান জানায়। রিয়াদের শাহাদাতের পরপরই তাঁর পরিবার আরও বিপদের সম্মুখীন হয়। রিয়াদের বাবা সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি হারান এবং বর্তমানে বেকার অবস্থায় আছেন। পরিবারটি এখন রিয়াদের বড় ভাই হৃদয়ের আয়ের উপর নির্ভরশীল, যিনি প্রাইভেট কার চালিয়ে সামান্য আয়ে পরিবারের খরচ বহন করছেন। রিয়াদ আশা করেছিল বৈষম্য দূর হলে হয়তো সরকারি পাবে। সেই বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে কিন্তু অর্জিত পথে নেই সেই স্বপ্নবাজ রিয়াদ। এইচএসসি পরীক্ষা চলমান ছিল। বাকী পরীক্ষা ১১তারিখে হওয়ার কথা ছিল তার আগে ৫ তারিখেই বিদায় নিলেন তিনি। শহীদ মো: রিয়াদ শেখের জীবনকাহিনী আমাদেরকে ন্যায়ের পথে চলার গুরুত্বের কথস স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের শেখায় যে, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানবতার জয় আনতে হয়। রিয়াদ ছিলেন একটি জাতির স্বপ্নের প্রতীক এবং একটি ভাল ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। তাঁর স্মৃতি চিরকাল আমাদের প্রেরণা জোগাবে এবং নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর অনুভূতি রিয়াদের বাবা কাবিল শেখ বলেছিলেন, "তাঁর ছেলে ছিল সৎ, আদর্শবান এবং পরোপকারী। ছাত্র আন্দোলনে সে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিল এবং পুলিশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। রিয়াদ সবসময় মানবসেবায় এগিয়ে আসত, বহুবার সে রক্তদান করেছে।" রিয়াদের মৃত্যুর খবর তাঁর বন্ধু এবং পরিবারের কাছে ছিল এক গভীর আঘাত। রিয়াদ শুধু পরিবারের নয়, সমাজের একজন মূল্যবান মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠছিলেন। বড় ভাই বলেন, আমাদের পরিবারের সম্পদ ছিল। ভাই হিসেবে বললে কী হবে- এলাকার মানুষ তাকে ভালো জানে। সব মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছিল আমার ভাই অচেনা লোককেও মুহূর্তের মধ্যে আপন করে নিতো। অল্প সময়েই মানুষের সাথে মিশে যেত ভাইটি আমার। আল্লাহ যা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন। ভাইকে হারিয়ে মনে অনেক কষ্ট। শহীদ হৃদয়ের বন্ধুরা জানায়, রিয়াদ ছিল সাহসী ও দয়ালু, কোনো বিপদে মানুষকে সাহায্য করতে সে সবসময় এগিয়ে আসত। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: রিয়াদ শেখ জন্ম তারিখ : ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৬ জন্মস্থান : যশোর পেশা : ছাত্র শ্রেণি : এইচএসসি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : যশোর সরকারি কলেজ নিজ জেলা : যশোর বর্তমান ঠিকানা : হোল্ডিং ১১২, চাঁচড়া, রায়পাড়া এলাকা, ৬ নং ওয়ার্ড থানা: সদর, জেলা: যশোর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম- চাঁচড়া, রায়পাড়া, যশোর পৌরসভা : ৬ নং ওয়ার্ড, থানা: সদর , জেলা: যশোর। (তবে পূর্বপুরুষদের ভিটা গৌরনদী, বরিশাল) পিতার নাম : মো: কাবিল শেখ পিতার পেশা : বেকার (বয়স: ৫৬) মায়ের নাম : শাহিনুর বেগম মায়ের পেশা : গৃহিণী (বয়স: ৩৯) মাসিক আয় : ১০,০০০/- আয়ের উৎস : বাবা ও বড় ভাই (ড্রাইভার) পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৫ ভাই : হৃদয় শেখ (বয়স ২৭, পেশা: ড্রাইভার) মৃত্যু : ০৫/০৮/২০২৪, ৬টা ৩০মিনিট মৃত্যুর কারণ : আগুন নেভাতে গিয়ে মাথায় কাঁচ পড়ে আঘাত ও রক্তক্ষরণ শহীদের কবরের অবস্থান : ডালমিল মুসলিম কবর স্থান, চাঁচড়া, সদর থানা, যশোর। [শহীদের কবরের অবস্থান (এচঝ লোকেশন)] (যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/রশগঊট৪২ুনসি৫ফঊংজ৮) প্রস্তাবনা রিয়াদের শাহাদাতের পর তাঁর পরিবার গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। পরিবারের আয়ের উৎস এখন শুধু রিয়াদের বড় ভাই হৃদয় শেখ, যিনি প্রাইভেট কার চালিয়ে সামান্য অর্থ উপার্জন করেন। রিয়াদের বাবার চাকরি হারানোর ফলে পরিবারের জীবনযাপন আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রিয়াদের পরিবারের প্রয়োজন যথাযথ সহায়তা। প্রস্তাবিত সমাধানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. রিয়াদের বাবার জন্য পুনরায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। ২. রিয়াদের স্বপ্ন পূরণে একটি নতুন ঘর নির্মাণের জন্য সহায়তা প্রদান করা।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রিয়াদ শেখ
Image of মো: রিয়াদ শেখ
Image of মো: রিয়াদ শেখ
Image of মো: রিয়াদ শেখ
Image of মো: রিয়াদ শেখ
Image of মো: রিয়াদ শেখ
Image of মো: রিয়াদ শেখ
Image of মো: রিয়াদ শেখ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আহাদ আলী

মো: রুহান ইসলাম

মো: হামিদ শেখ

রোকনুজ্জামান রাকিব

মো: জামাল উদ্দীন শেখ

মো: বাবলু ফরাজী

মো: সুমন মিয়া

মো: সোহানুর রহমান (শিহাব)

মো: হাফিজ উদ্দীন

মো: ছাব্বির ইসলাম সাকিব

আলিফ আহমেদ সিয়াম

সোহান শাহ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo