জন্ম তারিখ: ১১ মে, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : জাবের হোটেল, চিত্রা মোড়, যশোর
মো: আলামিন বিশ্বাস ২০০৪ সালের ১১ মে যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় ছিলেন ছাত্র, আব্দুর রাজ্জাক কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী। পৈতৃকভূমি যশোর সদরের আরবপুর ইউনিয়নের সুজলপুর গ্রামে। পিতা মো: আলমগীর হোসেন, পেশায় একজন রিকশাচালক। মাতা মোসা: মমতাজ বেগম, পেশায় গৃহিণী। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন আলামিন। শহীদী মৃত্যুর প্রেক্ষাপট ৫ আগস্ট, ২০২৪। বাংলাদেশিরা পেল দ্বিতীয়বারের মত স্বাধীন হওয়ার সুযোগ। প্রায় ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশটাকে চেটেপুটে খাচ্ছিলো, মানুষের উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালিয়েছিল। এদিন ছাত্র-জনতার ‘রোড মার্চ টু গণভবনে’ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তাড়াহুড়ো করে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন বিগত সরকার প্রধান। এসময় সবাই যখন আনন্দ মিছিলে ব্যস্ত, তখনও দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে জালিম সরকারের দোসরেরা পরাজয় মেনে না নিয়ে আক্রমণ করেই যাচ্ছিলো। ঠিক এমনই এক আক্রমণের শিকার আলামিন বিশ্বাস। ৫ তারিখ বিকালে বাবার কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হয় আলামিন। সে যাদের সাথে আন্দোলনে যেত, তাদের সাথে না গিয়ে অন্য কারো সাথে যায় সেদিন। এরপর পরিবারের সাথে তার আর কোন যোগাযোগ হয়না। আনুমানিক বিকাল ৫টার দিকে তার কিছু বন্ধু এসে জানায় যে আলামিন তাদের সাথে যাওয়ার কথা থাকলেও যায়নি। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আলামিন তাদের একজনকে ফোন করে বলে, “বন্ধু আমাকে বাঁচা।” এরপর আলামিনের পরিবার তাকে হন্যে হয়ে খোঁজা শুরু করে, আশেপাশের বাসা, আলামিন যেখানে যেখানে যেত, আশেপাশের হোটেল, হাসপাতাল সবই দেখা হয়। কিন্তু আলামিনের কোন খোঁজ পাওয়া যায় না। একজনের পরামর্শে মর্গে খোঁজ নিয়ে তাকে খুঁজে পান তার মা। আনুমানিক রাত ১০টায় তাকে সনাক্ত করা যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আলামিন বিশ্বাসকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। শহীদের অর্থনৈতিক অবস্থা আলামিনের বাবা বাসের হেল্পার হিসেবে কাজ করতেন। করোনাকালীন সময় একটি অ্যাক্সিডেন্টে তার ডান পা ভেঙ্গে যায়। পরবর্তীতে চিকিৎসার মাধ্যমে তার পায়ের হাড় জোড়া লাগলেও একটি পা আরেকটি পা থেকে ২ ইঞ্চি ছোট হয়ে যায়। ফলে তার পক্ষে পূর্বের কাজটি আর চলমান রাখা সম্ভব হয় না। বর্তমানে তিনি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। আলামিনের মা আয়েশা ফাউন্ডেশনে স্বল্প বেতনে চাকুরি করেন। তাদের দুইজনের আয় দিয়েও পরিবার চালানো দুরূহ হয়ে যায়। একমাত্র ছেলে আলামিনকে নিয়ে তার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল-ছেলে পড়ালেখা শিখে মানুষের মত মানুষ হবে, ভালো চাকরি করবে, তাদের অভাব ঘুচবে। আলামিনের মৃত্যুতে সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। নিকটাত্মীয়/ প্রতিবেশীর মন্তব্য শহীদ আলামিনের চাচা মো: বেল্লাল হোসাইন বলেন, “আলামিনের মা-বাবার প্রত্যাশা ছিল একমাত্র ছেলেকে পড়ালেখা করিয়ে বড় কিছু বানাবেন। তার পড়ালেখায় যেন কোনরূপ ব্যত্যয় না ঘটে, তাই তাকে পরিবার থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য কোন চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। ছেলে হিসেবে আলামিনকে সবাই পছন্দ করতো, ভালোবাসতো।” স্থানীয় এলাকাবাসীও আলামিনকে অনেক ভালোবাসতেন। তিনি অত্যন্ত সৎ ও নীতি-নিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন এবং তার আচার-ব্যবহার এলাকায় প্রশংসিত ছিল। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : মো: আলামিন বিশ্বাস, জন্ম: ১১ মে ২০০৪ পেশা : ছাত্র স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: সুজলপুর, ইউনিয়ন: আরবপুর, থানা: সদর, জেলা: যশোর বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: সুজলপুর, ইউনিয়ন: আরবপুর, থানা: সদর, জেলা: যশোর পিতার নাম : মো: আলমগীর হোসেন মাতার নাম : মোসা: মমতাজ বেগম পরিবারের সদস্য : ২ জন ঘটনার স্থান : জাবের হোটেল, চিত্রা মোড়, যশোর আক্রমনকারী : অজ্ঞাত মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ০৫/০৮/২০২৪ ইং কবরস্থান : কারবালা কবরস্থান পরামর্শ ১। পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ও নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা ২। শহীদের বাবার স্থায়ী ব্যবসা করার ব্যবস্থা করা