জন্ম তারিখ: ১০ জানুয়ারি, ১৯৯৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : বিকাশের দোকানদার, শাহাদাতের স্থান : জাবির হোটেল অগ্নিকাণ্ডে আগুনে দগ্ধ হন।
“কিসের গ্যাঞ্জাম? গ্যাঞ্জাম হলে আমি চলে আসব?” -এটাই ছিল মায়ের সাথে শেষ কথা তারেক রহমান ১৯৯৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা জনাব মো: ওলিয়ার রহমান সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে বার্ধক্যজনিত কারনে শয্যাশয়ী। তার মাতা মোসা: নুরুন নাহার বেগম, বয়স ৬০ বছর। শহীদ তারেক রহমান পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। অনার্স শেষ করার পর কোনো চাকরির ব্যবস্থা না করতে পেরে স্থানীয় বাজারে একটি বিকাশের দোকান দেন। তার ক্ষুদ্র আয়েই সংসার চলত। তার স্ত্রীর নাম মোসা: আফিমা খাতুন। তার ঘরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার ছেলে আরাফ রহমানের বয়স ৩ বছর এবং মেয়ে তানিজ ফাতেমার বয়স ১০ মাস। ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার হাসিনা দেশ ছেড়ে পালালে সারা দেশে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। সেদিন বিকেলে যশোরের চিত্রার মোড়ে জাবির ইন্টারন্যাশনল পাঁচ তারকা হোটেলে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সেখানে ১৪ তলা হোটেলে শতাধিক মানুষ আটকা পড়ে। আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে যান শহীদ তারেক রহমান। উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই আটকা পড়েন। প্রচণ্ড আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান শহীদ তারেক রহমান। তারেক রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যু ৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক সোনালি দিন। এদিন রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। আর এ ইতিহাসের রুপকার সাধারণ ছাত্র-জনতা। রক্ত দিয়ে তারা এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এদিন দেশ ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এই দেশের মানুষকে সব ধরনের মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখে। সেই ক্ষোভ তিলে তিলে জমা হতে থাকে জনগনের মনে। তারই প্রেক্ষিতে জুলাই মাসজুড়ে চলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একপর্যায়ে রুপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। এই আন্দোলনের সফলতার আসে ৫ আগস্ট ২০২৪। এই সফলতার পিছনে আছে অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগ, অসহায় মানুষের আর্তনাদ, স্বজন হারানোর বেদনা। জীবন দিয়েছেন কতশত মানুষ। হাত পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আরও সহস্রাধিক। তেমনি যশোর বিকাশ ব্যবসায়ী জনাব মোঃ তারেক রহমানও আন্দোলনের শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন। লাগাতার আন্দোলনে রাজপথে থেকে লড়াই করেছেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে। ৫ আগস্ট দুপুরে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তারেকের মা বলেন, অসুস্থ বাবাকে গোসল করিয়ে তারপর বাইরে যাও। জবাবে তারেক বলেন, -একথা আগে বলবা না? আমি তো বের হচ্ছি। -কোথায় যাচ্ছ? -যশোর যাচ্ছি -আজকে যশোর যাচ্ছো? যশোরে তো গ্যাঞ্জাম। -কিসের গ্যাঞ্জাম? গ্যাঞ্জাম হলে আমি চলে আসব না? এই বলে তারেক বের হয় যশোরের উদ্দেশ্যে। বিজয় মিছিল নিয়ে যখন ছাত্র-জনতা চাচড়ার মোড় অতিক্রম করে। মিছিলের পিছন দিক থেকে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল দিয়ে জাবির ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের ১৪ তলা বিল্ডিং এ আগুন দেয়। মুহুর্তই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আটকা পড়ে অনেক মানুষ। সবাই চিল্লাচিল্লি শুরু করে। চিল্লাচিল্লি শুনে ছাত্ররা এগিয়ে যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে। আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যান শহীদ তারেক রহমানও। উদ্ধার করতে গিয়ে নিজেই আটকা পড়েন। একজন বিদেশী নাগরিকসহ মোট ২৪ জন মারা যান সেখানে। আহত হন শতাধিক। ঘটনার দিন রাত ১১ টায় ফায়ার সার্ভিস এসে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মৃত দেহ উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃতদের হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে তার পরিবার সারাদিন তারেকের অপেক্ষায় থাকেন। দিন পার হয়ে যায় কিন্তু ছেলেকে দেখতে না পেয়ে চিন্তায় পড়েন মা। সারারাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য অপেক্ষা করেন মা। বেশ কয়েক জায়গায় ফোন করেও কোনো সন্ধান মেলে না। ফজরের সময় মা ছেলের স্ত্রীকে বলেন, “আমার মনি (তারেক) মনে হয় বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে ঠিকই বাড়ি আসত।” সকাল হয়ে গেলেও ছেলে আর বাড়ি ফেরে না। মায়ের মন কি আর মানে! পরিবারের লোকজনদের নিয়ে খোঁজাখুজ শুরু করে। সাথে এলাকাবাসীও যুক্ত হয়। শহরের অলিতে গলিতে খোঁজাখোজি করে ব্যর্থ হয়। স্থানীয় লোকজন পরামর্শ দেন হাসপাতালে খোঁজ নিতে। অবশেষে হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ছেলেকে খোঁজে পান। আগুনে পুড়ে বিকৃত অবস্থা হয়ে যায় তারেকের লাশ। মরাদেহ উদ্ধার করে নিজ গ্রামে দাফন-কাফন সম্পন্ন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে মায়ের অনুভূতি তারেকের মা জানান তাদের ইচ্ছে ছিল, ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে চাকুরি করাবেন। কিন্তু তারেকের অনার্স পাশ করার পর কোনো ধরনের চাকরী না পেয়ে স্থানীয় বাজারে একটি বিকাশ এর দোকান পরিচালনা করা শুরু করেন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ তারেক রহমানের পিতা জনাব মো: ওলিয়ার রহমান সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে বার্ধক্যজনিত কারনে শয্যাশয়ী। তার মাতা মোহা: নুরুন নাহার বেগম, বয়স ৬০ বছর। শহীদ তারেক রহমান পেশায় একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। অনার্স শেষ করার পর কোনো চাকরির ব্যবস্থা না করতে পেরে স্থানীয় বাজারে একটি বিকাশের দোকান দেন। তার ক্ষুদ্র আয়েই সংসার চলত। তার স্ত্রীর নাম মোছাঃ আফিমা খাতুন। তার ঘরে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার ছেলে আরাফ রহমানের বয়স ৩ বছর এবং মেয়ে তানিজ ফাতেমার বয়স ১০ মাস। তার পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার মতো আর কেউ রইল না। ব্যক্তিগত প্রোফাইল নাম : শহীদ মো: তারেক রহমান পেশা : বিকাশের দোকানদার বয়স : ২৭ বছর জন্ম তারিখ : ১০/০১/১৯৯৬ জন্ম স্থান : গ্রাম: বলরামপুর, ইউনিয়ন: নরেন্দ্রপুর, থানা: সদর থানা, জেলা: যশোর পিতা : জনাব মো: ওলিয়ার রহমান মাতা : মোসা: নুরুন্নাহার আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪, জাবির হোটেল অগ্নিকাণ্ডে আগুনে দগ্ধ হন শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বলরামপুর, ইউনিয়ন: নরেন্দ্রপুর, থানা: সদর থানা, জেলা: যশোর পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা ২। ছোট দুই সন্তানের জীবনধারণের এবং পড়াশোনার সমস্ত ব্যয় বহন করা ৩। শহীদের বৃদ্ধ পিতার চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করা