Image of মো: আরিফ

নাম: মো: আরিফ

জন্ম তারিখ: ২৩ মার্চ, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: ঢাকা_সিটি

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: আরিফ ২০০৭ সালের ২৩ মার্চ ভোলা জেলার লালমোহন থানার অন্তর্ভুক্ত লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের লালচাঁদপুর ৮নং ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোঃ ইউসুফ ও মা ফরিদার কোল আলো করে তার আগে ও পরে জন্ম নেয় আরও ৫ সহোদর বোন। জনাব ইউসুফের নিজস্ব বা পৈত্রিক কোনো ভিটেমাটি নেই। এ কারণে বিয়ের পর তিনি শ্বশুরবাড়িতে অবস্থান গ্রহণ করেন। অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করে স্ত্রী ও ছয় সন্তান নিয়ে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ অবস্থায় চলছিল তাদের পরিবার। বৃদ্ধ বাবাকে সহযোগিতা করতে, বোনদের পড়ালেখার খরচ জোগাতে ছাত্রাবস্থাতেই আরিফ কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান যান্ত্রিক শহর ঢাকাতে। জীবনযুদ্ধেও লড়াকু এক সৈনিক শহীদ আরিফ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে আট সদস্যের পরিবারটি চালাতে বেশ হিমসিম খেতে হতো আরিফের বাবার। একে একে বড় তিন মেয়েকে পাত্রস্থ করার পর বয়সের ভারে তিনি নুয়ে পড়লে পরিবারটির হাল ধরেন শহীদ আরিফ। অসুস্থ বাবার পাশাপাশি ছোট দুই বোনের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন সারথী হন শহীদ নিজেই। গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়, শুরু করেন তার নিজের মামাতো ভাইয়ের ভাতের দোকানে কর্মচারীর কাজ। অন্যদিকে চলছিল জীবনের প্রতিটি ধাপে অধ্যবসায়ের পরিচয় দেওয়া মেধাবী শহীদ মো: আরিফের ব্যক্তিগত পড়াশোনাও। তখনও তিনি ভোলা জেলার লালমোহন থানার একটি স্থানীয় সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বৈষম্যের প্রতিবাদে শহীদ আরিফ প্রবল কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে, স্বৈরাচারী হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে করা এক রিটে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে গত ৫ জুন রায় দেন হাইকোর্ট। আর চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৫ জুন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। এর পরদিন পরিপত্র বাতিলের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে বৈষম্য বিরোধী এই যৌক্তিক আন্দোলন। হোটেলে কাজের বিরতিতে আন্দোলনে যুক্ত হতেন শহীদ মো: আরিফ নিজেও। শেষ বিদায় নিলেন যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিরস্ত্র ছাত্রদের দমাতে প্রথম থেকেই মারমুখী ছিল স্বৈরাচারের গৃহপালিত পশুতে পরিণত হওয়া পুলিশ আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা। ঢাকায় ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচীতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও এর সন্ত্রাসী বাহিনী গুলো। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। ১৬ জুলাই মঙ্গলবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে যারা আন্দোলন করছিলেন, তাদের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তিনি। ১৬ জুলাই আন্দোলনের সময় দুই হাত প্রশস্ত করে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবু সাঈদ। নিরস্ত্র আবু সাঈদের উপর পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, দেশ বিদেশের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয় দু হাত প্রশস্ত করা প্রতিবাদী আবু সাঈদের ছবি। পুরো বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠে আবু সাঈদের মৃত্যুতে। চারিদিকে আন্দোলনের দামামা বেজে উঠলো এবং তা সঞ্চারিত হলো মো: আরিফের মধ্যেও। বাড়িতে বাবাকে ফোন দেন তিনি। পিতার ভাষ্যমতে তার শেষ কথা ছিল, আমার ভাই আবু সাঈদ শহীদ হয়েছে। যদি আমিও শহীদ হয়ে যাই, তবে যেনো হাসি মুখে বিদায় জানাই। এরপর আর সে কথা বলতে পারেনি। সেদিনের হৃদয়বিদারক ঘটনা ছাত্র আন্দোলনের ডাক আসলে প্রতিদিনের মতো সেদিনও আন্দোলনে চলে যায় আরিফ। দিনটি ছিল ১৯ জুলাই, বিকাল আনুমানিক তিনটা। যাত্রাবাড়ি এলাকায় তখন ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। বাঁধা দেয় স্বৈরাচারের পুলিশ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। নিরস্ত্র মানুষ গুলোর ওপর নির্বিচারে লাঠি চার্জ, টিয়ারশেল, ছররা গুলি, রাবার বুলেট, হ্যান্ড গ্রেনেড ও গুলিবৃষ্টি চালানো হয়। উচুঁ ভবন থেকে টার্গেট করে করে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের হত্যা করা হয়। হেলিকপ্টার থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্রের মাধ্যমে ছোড়া গুলিতে নিহত হয় অসংখ্য তাজা প্রাণ। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আরিফ ছাত্র-জনতাকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে উৎসাহিত করেন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করেন। আরিফের তৎপরতা ঘাতক পুলিশ ও স্বৈরাচারী সন্ত্রাসী বাহিনীর নজরে পড়ে। তাদের চারদিক থেকে অতর্কিত হামলায় রাজপথ রক্তাক্ত হতে থাকে। এমনই একটি মুহূতে বুলেটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, মো: আরিফ। নামের সাথে যুক্ত হয় একটি বিশেষণ 'শহীদ'! ধর্মপরায়ণ শহীদ আরিফ নিয়মিত সালাত আদায় করতেন তিনি। মসজিদের মুসল্লীবৃন্দের সাথে বরাবরই সখ্যতা ছিল তার। শহীদ আরিফের সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে, তার দোকান মালিক মামাতো ভাই, শাহাবুদ্দিন বলেন, "নিয়মিত নামাজ আদায় করত আরিফ। আমার অবর্তমানে, আমার দোকান চালাত সে। ওর আমানতদারীতা ছিল বেশ।" পরিবারের সার্বিক অবস্থা ও সহযোগিতা প্রসঙ্গ প্রথম প্রস্তাবনা: তারা ভূমিহীন পরিবার। সেক্ষেত্রে, ভূমি ও একটি আবাসযোগ্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে পরিবারটির সহযোগিতা হতো। দ্বিতীয় প্রস্তাবনা: শহীদের সহোদর দুই বোনের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মাসিক ভিত্তিতে কিছু আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন। একনজরে শহীদ আরিফ সম্পর্কিত তথ্য পূর্ণ নাম : মো: আরিফ জন্মতারিখ : ২৩ মার্চ ২০০৭ জন্মস্থান : ভোলা জেলা পেশাগত পরিচয় : ছাত্র শ্রেণি : আলিম দ্বিতীয় বর্ষ প্রতিষ্ঠান : লাটারি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা, লালমোহন, ভোলা স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: চাঁদপুর, ইউনিয়ন: লর্ড হার্ডিঞ্জ, উপজেলা: লালমোহন, জেলা: ভোলা ঢাকায় থাকাকালীন ঠিকানা : মহল্লা: বিরবাগিচা ৪নং রোড, থানা: যাত্রাবাড়ী, জেলা: ঢাকা পিতার নাম : মো: ইউসুফ পিতার পেশা : কৃষক মাতার নাম : ফরিদা মাতার পেশা : গৃহিণী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৮ পারিবারিক মাসিক আয় : কমবেশি ১০ হাজার টাকা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আরিফ
Image of মো: আরিফ
Image of মো: আরিফ
Image of মো: আরিফ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

নাসিব হাসান রিয়ান

মাসুদুর রহমান জনি

মো: জাহিদ হোসান

মাওলানা খুবাইব আহমাদ

মো: পারবেজ মিয়া

 মোঃ শাফিক উদ্দিন আহমেদ আহনাফ

মো: সুজন

মো: নাদিম

মো: আসিফ ইকবাল

মো: লেবু শেখ

সাজিদ হাওলাদার

মো: ইব্রাহিম খলিল

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo