Image of মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির

নাম: মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির

জন্ম তারিখ: ১৭ অক্টোবর, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২৬ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : শিক্ষার্থী। বিবিএ-৬৫, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা। শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

শহীদের জীবনী

“বেঁধে রেখে লাভ নাই, উড়তে দিয়ে দেখ; দিনশেষে যদি ফিরে আসে, তবে না হয় আটকে রেখো।” শহীদ মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবিরের খাতায় লেখা এই লাইনটি ছিল তার জীবনের শেষ কিছুদিনের উপলব্ধি, যা গুলিবিদ্ধ হওয়ার দুইদিন আগে তিনি লিখেছিলেন। এই লাইন শুধুমাত্র একটি অনুভূতির প্রকাশ নয়, বরং তার স্বাধীনতা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। জাবির ছিলেন একজন সাহসী যুবক, যিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষকে নিজের মতো করে বাঁচতে দেওয়া উচিত। দুর্ভাগ্যবশত, ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য এই স্বাধীনতার পথেই তাকে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হয়। ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল করার নির্দেশ দেয়, যার ফলে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দীর্ঘদিনের আন্দোলন নতুন করে জোরদার হয়। দেশের তরুণ প্রজন্ম আন্দোলনের পথে নামে এবং জুলাইয়ের শুরুতেই বিক্ষোভ আরও তীব্র আকার ধারণ করে। ছাত্রদের এই উত্তাল আন্দোলনের মাঝপথে ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের সদস্যদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে ওঠে। পরবর্তী দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং ক্ষমতাসীন দলের মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা সহিংসভাবে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে। ১৮ জুলাই থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ধারণা করা হয়, এই সময়ের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা এবং গণহত্যা সংঘটিত হয়। জাবির ছিলেন রাজধানীর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির বিবিএ-৬৫তম ব্যাচের একজন মেধাবী ও আদর্শবান ছাত্র, যিনি সবসময় ন্যায়ের পথে চলতেন এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পিছপা হতেন না। সাহসী ও দৃঢ় নীতিতে বিশ্বাসী এই তরুণ তার নেতৃত্বগুণের জন্যও বন্ধুদের মধ্যে পরিচিত ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন এবং নিজের দায়িত্ববোধ থেকে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। জাবিরের পরিবারে বাবা মা এবং একটি বোন রয়েছে। তার বাবা একজন কৃষক এবং পোল্ট্রি ফার্মের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পরিবারের আর্থিক অবস্থা সীমিত হলেও জাবিরের মেধা ও নৈতিকতা তাকে পরিবারের একটি বড় আশা ও সম্ভাবনা হিসেবে গড়ে তুলেছিল। যেভাবে শহীদ হয় ১৯ জুলাই ২০২৪ শুক্রবার, তিনি জুমার নামাজের পর মিছিলে যোগ দেন। কিছুক্ষণ পর তার মামা ইসতিয়াক আহমেদকে অপরিচিত এক লোক ফোন করে বলেন, জাবির অসুস্থ এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, জাবির আসলে পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল ছিল বনশ্রী সি ব্লক, যেখানে পুলিশের ছোড়া গুলিতে জাবির গুরুতরভাবে আহত হয়। একটি গুলি তার অণ্ডকোষ ভেদ করে বাম পায়ের উরুতে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় তাকে বনশ্রী হাসপাতাল থেকে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে দুইদিন আইসিইউতে থাকার পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। পরবর্তী সময়ে তার চিকিৎসার জন্য তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় তার পা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পর চিকিৎসকরা পা কাটার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে কিডনির ক্রিয়েটিনিন মাত্রা বেড়ে গিয়ে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৬ জুলাই ২০২৪ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর দ্রুত দাফনের জন্য প্রশাসনের লোকেরা চাপ সৃষ্টি করে বলেও জানা যায়। শহীদ সম্পর্কে মন্তব্য শহীদ জাবির সম্পর্কে তার বাবা বলেন, “জাবির অনেক মেধাবী ছিল। সে ৫ম শ্রেনীতে বৃত্তি পেয়েছে এবং ঝঝঈ এবং ঐঝঈ তে তার রেজাল্ট অনেক ভাল।” তিনি বলেন জাবির তার কাছে দোয়া চাইতো এবং সে খুব শীঘ্রই বাড়ি আসার কথা ছিল । জাবির এর মামা ইসতিয়াক আহমেদ জানান, জাবির বাড়ি আসার জন্য টিকেট কেটেও বাড়ি আসতে পারেনি। সে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য খুব উদগ্রীব হয়ে থাকতো। এক পর্যায়ে জাবিরের মেসের বড় ভাই তাকে মানা করলে সে বলে, “আমি কি বাসায় চুড়ি পড়ে বসে থাকবো?” জাবিবের মামা আরও জানান, জাবির শেষ মুহুর্তে মামাকে জড়িয়ে ধরে অনেক অকুতি করেছিল বাঁচার জন্য। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। একনজরে শহীদের পরিচয় পূর্ণ নাম : মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির পেশা : শিক্ষার্থী। বিবিএ-৬৫, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ঠিকানা : দেউল, ইউনিয়ন: থানা: ঝিকরগাছা, এলাকা: হাজিরবাগ, জেলা: যশোর জন্ম তারিখ : ১৭/১০/২০০৪ পিতা : নওশের আলী (৫৬) পিতার পেশা : কৃষি মাতার নাম : শিরিনা আক্তার (৪০) মাতার পেশা : গৃহিণী শহীদের বোন : জেরিন (১৯) পেশা : শিক্ষার্থী। এইচএসসি, আখিলউদ্দীন ডিগ্রি কলেজ পারিবারিক আয় : ১৫০০০ টাকা আয়ের উৎস : কৃষি পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির
Image of মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির
Image of মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির
Image of মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির
Image of মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির
Image of মো: ইমতিয়াজ আহম্মেদ জাবির

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: খালিদ হোসেন শান্ত

মো: হাফেজ আনাজ বিল্লাহ

আলম সরদার

মো: নবী নুর মোড়ল

 ফয়সাল হোসেন

মো: আবুল বাশার আদম

 মো: সাওয়ান্ত মেহতাব

রোকনুজ্জামান রাকিব

আব্দুল আজিজ (চাঁন মিয়া)

মো: মাহফুজুর রহমান

মো: মাহিম হোসেন

মো: সাব্বির হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo