জন্ম তারিখ: ১৫ জানুয়ারি, ২০০০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা: দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান: শিমরাইল, সিদ্ধিরগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
শহীদ আব্দুস সালাম, ১৫ জানুয়ারি ২০০০ সালে কুষ্টিয়ার চর জগন্নাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, একজন সাধারণ কিন্তু সংগ্রামী দিনমজুর। তাঁর পিতার নাম সাবের বিশ্বাস, যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, ফলে আব্দুস সালামকে পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাঁর মা মোছাঃ বুলুজান খাতুন, ৬২ বছর বয়সী, গৃহিণী। স্ত্রী মোছাঃ মারিয়া খাতুন সন্তান ও পরিবারের দেখাশোনায় ব্যস্ত থাকেন। আব্দুস সালাম একটি ১৬ মাসের সন্তানের পিতা, যার জন্য তিনি শ্রমের মাধ্যমে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার চেষ্টা করতেন। শহীদ আব্দুস সালাম স্থানীয় একটি ফার্ণিচারের দোকানে দিনমজুরের কাজ করতেন। দিনরাত পরিশ্রম করে তিনি পরিবারকে সহায়তা করতেন এবং ছোট্ট ছেলের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতেন। তার কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা স্থানীয় সমাজে তাঁকে একটি বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। আব্দুস সালামের আত্মত্যাগের স্মৃতি চিরকাল আমাদের মনে রবে, এবং তিনি হয়ে উঠবেন সংগ্রামের একটি প্রতীক। শহীদ আব্দুস সালামের জীবন ও মৃত্যু আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সমাদের জন্য আত্মত্যাগের মহত্ব কিভাবে একজন সাধারণ মানুষের জীবনকে অসাধারণ করে তুলতে পারে। তাঁর আত্মত্যাগ চিরকাল আমাদের অনুপ্রাণিত করবে এবং আমাদের মধ্যে সংহতি ও মানবতার চেতনা জাগ্রত রাখবে। শহীদ আব্দুস সালামের স্মৃতি আমাদের সকলের হৃদয়ে একটি চিরস্থায়ী স্থান দখল করে থাকবে। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে জনগণ নানান অন্যায়, শোষণ, নিপীড়ন ও জুলুমের নির্মম ভুক্তভোগী। এদেশের মুক্তিকামী জনতা সময়ের দাবিতে সাড়া দিয়ে এহেন অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারংবার রুখে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে হুংকার দিয়ে সংগ্রামী জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে ছাত্রবৃন্দ। উপরুন্তু গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সাক্ষী, দেশের ক্রান্তিকালে বরাবরই ছাত্রদের মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতিন, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুষ্ণপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ঘড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয়। আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুথানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরন্ত্র নিপীড়িত মুক্তিকামী জনতা। যেভাবে শহীদ হন ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। গোটা দেশে যখন আন্দোলন ফুঁসে উঠে, একই দাবিতে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা খালি হাতে ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় নারায়ণগেঞ্জর সিদ্ধিরগঞ্জেও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২০ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পুলিশ ও ছাত্র-জনতার মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ এক পর্যায়ে শিমরাইল মোড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হাবিবুল্লাহ কাচপুরী মার্কেটের ১০ তলা ভনের ৭ম তলায় শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আওয়ামী সন্ত্রাস বাহিনীরা ভবনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই ভবনের ৩য় তলায় ডাচ বাংলা ব্যাংকে ফার্ণিচার মিস্ত্রি আবদুস সালাম সহ আরও কিছু শ্রমিক ডেকোরেশনের কাজ করছিলেন। অনেকেই বের হলেও তিনি সহ কয়েকজন বের হতে পারেননি। সেই আগুনে পুড়ে মারা যান তিনি। তিন দিন পর ফায়ার সার্ভিস লাশ উদ্ধার করলে পরিবারের লোকজন কুষ্টিয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে দাফনের ব্যবস্থা করেন। এভাবেই এতিম হয়ে যায় অবুঝ শিশু মাহিম। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর বক্তব্য/অনুভূতি শহীদ মোঃ আব্দুস সালামের প্রতিবেশী জনাব আকবর আলী মৃধা বলেন, ওরা দুই ভাই গ্রামের মধ্যে ভালো মানুষ। যে শহীদ হয়েছেন ঢাকা থেকে আসলেই ওর সাথে আমার অনেক রসিকতা হতো। বাড়ির সাথেই বাড়ি, সব সময় হাসাহাসি তামাশা করতাম, তার কথা খুব মনে পড়ে। শহীদ পরিবার সংক্রান্ত বিশেষ তথ্য শহীদ আব্দুস সালাম ১৬ মাসের ছেলে সন্তানকে রেখে দুনিয়ার সফর শেষ করেন। তার বাড়ি প্রত্যন্ত অঞ্চল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চর জগন্নাথপুর এলাকায়। তিনি রিধিকের সন্ধানে ঢাকায় এসেছিলেন। একটি ফার্ণিচারের দোকানে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। তিনি মারা যাওয়ার আড়াই মাস আগে তার বাবা মারা যান। শহীদ আব্দুস সালাম তার মা, ভাই এর সাথে স্ত্রী ও ছেলে সন্তান সন্তানসহ নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। আর্থিক কোনো আয় না থাকায় বর্তমানে তার সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী বাবার বাড়ি অবস্থান করছেন। স্ত্রী নিম্নস্ব অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। পরিবারটির সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রস্তাবনা-১: বাচ্চার জন্য মাসিক আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। প্রস্তাবনা-২: বিধবা স্ত্রীর জন্য সেলাই মেশিন ক্রয় করে দেয়া। শহীদের পূর্ণনাম : আব্দুস সালাম জন্ম তারিখ ১৫-০১-২০০০ পেশা বা পদবী - ফার্ণিচারের দোকানে দিন মজুরের কাজ করতেন পিতার নাম : মৃত সাবের বিশ্বাস মৃত পিতার পেশা ও বয়স মাতার নাম : মোসা: বুলুজান খাতুন মাতার পেশা ও বয়স : গৃহিণী, ৬২ বছর পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ২ জন সন্তান এক ছেলে: ১৬ মাস বয়সী : মোসা: মাবিয়া খাতুন স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা গ্রাম: চর জগন্নাথপুর, ইউনিয়ন: জগন্নাথপুর, উপজেলা: কুমারখালি, দেলা: কুষ্টিয়া ঘটনার স্থান : শিমরাইল, সিদ্ধিরগঞ্জ, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ১০ তলা ভবন আঘাতকারী - আওয়ামী সন্ত্রাস বাহিনী আহত হওয়ার সময়কাল - ২০ জুলাই, ২০২৪, বিকাল ৪.৩০টা মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ২০ জুলাই, ২০২৪, বিকাল ৪.৩০টা; শিমরাইল, সিদ্ধিরগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ১০ তলা ভবন শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান (জিপিএস লোকেশনসহ) পোস্তাগোলা, ঢাকা চর ভবানীপুর কবরস্থান: 23.89028N 89.299642
তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে রয়েছে, জান্নাত, যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৪৭)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৯)