জন্ম তারিখ: ২৭ নভেম্বর, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৯ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: খুলনা
পেশা : শিক্ষার্থী, শাহাদাতের স্থান : যশোর সদর হাসপাতাল
সাকিবুল হাসান সাকিব ছিল বিদ্রোহী কিশোর। আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছিল তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তাছাড়া বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল তার স্বভাব। কোটা আন্দোলনের প্রথম থেকেই সাকিব ছিল সক্রিয়। একটা প্ল্যাকার্ড হাতে তাকে মিছিলের অগ্রভাগেই দেখা যেত। প্ল্যাকার্ডে লাল ও কালো কালিতে লেখা- লাশের ভেতর জীবন দে নইলে গদি ছাইড়া দে শহীদ সাকিবুল হাসান সাকিব ছিল তার পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। ছেলে বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হবে, চাকরি করবে সংসারের হাল ধরবে এরকমই ভাবনা ছিল তার পিতামাতার। শহীদ সাকিবুল হাসান সাকিব ২০০৬ সালের নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখে যশোরের শংকরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পড়ালেখা করত বি এম এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। পিতা মো: আলাল উদ্দীন (৪৬) একজন শ্রমিক। মাতা মোছা: শিল্পী আকতার (৩৯) একজন গৃহিণী। বোন মোমতাহিনা তিসা (১৪) ইসলামিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী। যেভাবে শহীদ হয় ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে থাকবে। দেশের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যে সংগ্রামে নেমেছিল, এটি ছিল একটি দীর্ঘমেয়াদী ও ন্যায্য লড়াই। ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট “কোটা পদ্ধতি” পুনর্বহালের নির্দেশ দিলে এই আন্দোলন নতুন করে সূচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রসমাজ এবং সাধারণ জনগণ পথে নেমে আসে। তাদের দাবি ছিল ন্যায্য। তারা চেয়েছিল একটি সমতা ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা যেখানে মেধা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরিতে সুযোগ পাওয়া যাবে। আন্দোলন চলাকালীন সরকারীদলের নির্মম অত্যাচার ও গণহত্যা চালালে ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এক পর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়। তীব্র আন্দোলনের মুখে হাসিনা সরকার ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগে বাধ্য হয় এবং সারাদেশ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে। সারাদেশে পাড়ায় পাড়ায় জেলা উপজেলায় বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। যশোরে ছাত্রদের বিজয় মিছিলের চলাকালীন ঘটে যায় মর্মান্তিক এক অগ্নিদুর্ঘটনা। যেখানে শহীদ হন সাকিবুল হাসান সাকিব। বি এম এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাকিব ছিলেন একজন উজ্জ্বল এবং সাহসী ছাত্র। যিনি মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। যশোরের শংকরপুর এলাকায় বসবাসকারী এই তরুণের স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে দেশের সেবা করা। কিন্তু তার স্বপ্ন থেমে যায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায়, যখন তিনি মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করেন। সাকিব ছিল তার পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান এবং তার উপর তার বাবার অনেক আশা-ভরসা ছিল । বাবা মোঃ আলাল উদ্দিন ছিলেন একজন শ্রমিক যার সামান্য আয় দিয়ে ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া বোন সহ পরিবারের চাহিদা পূরণ করা কঠিন ছিল, কিন্তু সাকিব সবসময় চেয়েছিল তার মেধা এবং পরিশ্রম দিয়ে পরিবারকে সহায়তা করতে। ৫ আগস্ট ২০২৪, সকাল ১০টায় সাকিব তার বন্ধুদের সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেয়। দুপুর পর্যন্ত তারা বিজয় মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হলে জানতে পারে যে, যশোরের জাবির হোটেলে আগুন লেগেছে। সাকিব এবং তার বন্ধুরা দ্রুত সেখানে পৌঁছে যায়। হোটেলের উপর থেকে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শোনা মাত্রই সাকিব বাকি বন্ধুদের সাথে উদ্ধার কাজে এগিয়ে যায়। সাকিব ছিল অত্যন্ত সাহসী, তাই সে ভয় না পেয়ে হোটেলের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং কিছু লোককে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হলে এবং সে নিজেও ভিতরে আটকা পড়ে যায়। এক পর্যায়ে সাকিব ১ম তলা থেকে বাইরে লাফ দেয়। কিন্তু ততক্ষণে তার শরীরের ষাট ভাগ পুড়ে যায়। আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। চরম মর্মান্তিক এই অবস্থায় চারদিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৯ আগস্ট বিকেল ৫টা ১৬ মিনিটে সাকিব মৃত্যুবরণ করে। শহীদ সম্পর্কে বন্ধুর বক্তব্য ঘটনার সময় উপস্থিত বন্ধু নাঈম জানান, আমরা সবাই একসাথে ছিলাম। জাবের এর সামনে গেলে ১ জন উপর থেকে বাঁচাও বাঁচাও বললে সে দৌড়ে উপরে চলে যায়। কয়েকজনকে উদ্ধারও করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাকিব তার বন্ধুকে বলে, “আমি ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত উঠলে এক পর্যায়ে একটা গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট হলে আমি ফ্লোরে পড়ে যাই। পরে কোনোমতে নিচে নেমে ১ম তলা থেকে বাইরে লাফ দেই। একনজরে শহীদের পরিচয় পূর্ণ নাম : সাকিবুল হাসান সাকিব, জন্ম: ২৭-১১-২০০৬ পেশা : শিক্ষার্থী ঠিকানা : শংকরপুর, যশোর পৌরসভা, যশোর জন্ম তারিখ : ২৭/১১/২০০৬ পিতা : মো: আলাল উদ্দীন (৪৬) পিতার পেশা : শ্রমিক মাতার নাম : শিল্পী আকতার (৩৯) মাতার পেশা : গৃহিণী শহীদের বোন : মোমতাহিনা তিসা (১৪) পেশা : শিক্ষার্থী পারিবারিক আয় : ৭০০০ টাকা পরামর্শ ১। শহীদ পরিবারের জন্য নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা ২। পিতার ক্ষুদ্র ব্যবসা গড়ে দেয়া ৩। বোনের শিক্ষার দায়িত্ব নেয়া