Image of সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ

নাম: সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ

জন্ম তারিখ: ২১ আগস্ট, ১৯৯৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: খুলনা

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, মাস্টার্স শেষ বর্ষ, এম এম কলেজ, যশোর। শাহাদাতের স্থান : যশোর সদর হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

“দেশ ও মানবতার তরে সবান্ধব জীবন উৎসর্গ করেছেন শহীদ মোর্শেদ” বীরোচিত ২৪ এর বিপ্লবে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক আমাদের বীর যোদ্ধারা। তাঁদের মধ্যে অনেকে উৎসর্গ করে দিয়েছেন একজন মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ 'জীবন'। তেমনি এক প্রদীপ্ত নক্ষত্র শহীদ সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ। তিনি ২১ আগস্ট ১৯৯৯ তারিখে নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ শাহীন ফরহাদ এবং মাতার নাম সৈয়দা নাজমিন নাহার। তাঁর পিতা একজন পুলিশ অফিসার যিনি বর্তমানে যশোর জেলা ডিবি অফিসে কর্মরত আছেন। শহীদ মোর্শেদের মা একজন গৃহিণী। পিতা-মাতা ও ৩ ভাইসহ মোট ৫ জন সদস্য নিয়ে গঠিত মোর্শেদদের পরিবার। মৃত্যুকালে তিনি এম এম কলেজ, যশোরের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। কোটা আন্দোলনের শুরুর দিকেই মোর্শেদ তার দুই বন্ধু শহীদ ফয়সাল এবং সোহানের সাথে সক্রিয় হন। ঘটনার সামগ্রিক বিবরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল এক জ্বলন্ত অধ্যায়। এটি দেশের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইল ফলক। কোটার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রথম থেকেই জনগণের সমর্থন পায় এবং দ্রুত দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসী আক্রমণ এবং সরকারের কঠোর দমননীতি সত্ত্বেও আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৬ জুলাই আবু সাঈদসহ সাতজন শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই যৌক্তিক আন্দোলন দমনের জন্য স্বৈারাচারী সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে ব্যাপক গণহত্যা চালায়। এমনকি হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়েও মানুষ হত্যা করে, যার ফলে সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। অবশেষে ছাত্র জনতার তুমুল আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ছাত্র-জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই মিথুন তার দুই বন্ধু সোহান এভং আরেক বীর শহীদ ফয়সালের সাথে সক্রিয় ছিলেন। ৫ আগস্ট ছাত্রজনতা যশোরের রাজপথ দখলে নিয়ে স্বৈরাচার পতনের এক দফা দাবীর স্লোগানে মুখরিত মুখর হয়ে ওঠে। ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে এম এম কলেজ, যশোরের মাস্টার্সের শেষ বর্ষের ছাত্র সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিজয় মিছিলে অংশ নিতে চাচড়া মোড়ে যান। দুপুর ২:০০ ঘটিকায় রক্তপিপাসু স্বৈরশাসক পতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে বাঁধভাঙা জোয়ারের ন্যায় চতুর্দিক থেকে ছাত্রজনতা মিছিল নিয়ে শহরের দিকে ছুটে আসে। এসময় দুর্বৃত্তরা ছাত্রজনতার উপর হামলাকারী যশোরের ত্রাস আওয়ামিলীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন প্রিন্টিং প্রেস ও জাবির হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী ছাত্ররা হোটেলে আটকে পড়া লোকদেরকে উদ্ধার করার জন্য হোটেলের ভিতর ঢুকে পড়েন। আগুনে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য শহীদ মোর্শেদ মিথুন তার চাচাতো ভাইয়ের সাথে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেন। জাবির হোটেলের আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে তারা হোটেলের ভিতরে আটকা পড়ে যান। অগ্নিকাণ্ডের সময়, মিথুনের চাচাতো ভাই কোনমতে বের হয়ে আসতে সক্ষম হলেও, মোর্শেদ ভিতরে আটকা পড়েন। তার বাবাকে খবর দিলে তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার প্রচেষ্টায় অংশ নেন। কিন্তু জটিল পরিস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত মিথুনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের রেস্কিউ টিম পাঁচ ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আহত-নিহতদের উদ্ধার করে পরবর্তীতে পরিবার যশোর সদর হাসপাতালে তার মরদেহ শনাক্ত করেন। শহীদের নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীর অভিব্যক্তি মিথুন কোটা আন্দোলনের শুরু থেকেই তার দুই বন্ধু, ফয়সাল ও সোহানের সাথে সক্রিয় ছিলেন। আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সাহসিকতা তাকে স্থানীয়দের প্রসংসায় ভাসিয়েছে। মিথুনের বাবা সৈয়দ শাহীন ফরহাদ যশোর ডিবি অফিসে পুলিশ অফিসার হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, “আমার ছেলে মিথুন এম এম কলেজে পড়তো। শুরু থেকেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। ছোট থেকেই ভাল পথে চলেছে আমার ছেলে। আমি শুধু চাইতাম সে ভালো মানুষ হোক। তার সাহসিকতা ও নিষ্ঠা আমাদের পরিবারের জন্য গর্বের বিষয়। আন্দোলনের সময় সে আমাকে বলেছিল, ‘বাবা তুমি সরকারি চাকরি কর, কিন্তু আমাদের ভাইদের ওপর গুলি হচ্ছে, আমরা এটা সহ্য করতে পারছি না।’ তার মৃত্যু আমাদের জন্য গভীর শোকের কারণ, কিন্তু তার সাহসিকতা ও আদর্শ আমাদের প্রেরণা দেবে।” একনজরে শহীদের পরিচয় পূর্ণনাম : সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ জন্ম তারিখ : ২১/০৮/১৯৯৯ পেশাগত পরিচয় ও প্রতিষ্ঠান : ছাত্র, মাস্টার্স শেষ বর্ষ, এম এম কলেজ, যশোর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ধোলাইতলা, ইউনিয়ন: কোটাকোল, থানা: লোহাগড়া, জেলা: নড়াইল বর্তমান ঠিকানা : বাসা/মহল্লা: উপশহর, এলাকা: পৌরসভা, থানা: যশোর সদর, জেলা: যশোর পিতার নাম : সৈয়দ শাহীন ফরহাদ পিতার পেশা ও বয়স : চাকুরী, ৪৯ বছর পিতার পেশা : পুলিশ অফিসার, যশোর ডিবি অফিস মাতার নাম : সৈয়দা নাজমিন নাহার পেশা : গৃহিনী, ৪০ বছর পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ০৫(পাঁচ) জন আয়ের উৎস : বাবার চাকুরী : ভাই-১: সৈয়দ মাইজু মোর্শেদ(২২), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী : ভাই-২: সৈয়দ মাহির মোর্শেদ (১৮), এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিহত হওয়ার স্থান : জাবির হোটেল, যশোর হতাহতের কারণ : জাবির হোটেলে আগুনে পুড়ে মারা যান আহত ও নিহত হওয়ার সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট, ২০২৪, জাবির হোটেল, যশোর শহীদের কবরের অবস্থান : গ্রামের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়ায়

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ
Image of সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ
Image of সৈয়দ মিথুন মোর্শেদ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: খালিদ হোসেন শান্ত

আব্দুল্লাহ আল মুস্তাকিন

মো: ফজল মাহাদী

সোহান শাহ

মো: রিয়াদ শেখ

আব্দুল আজিজ (চাঁন মিয়া)

মো: সিফাত ফেরদৌস

সামিউর রহমান সাদ

মো: বাবলু ফরাজী

আব্দুস সালাম

মো: উসামা

মুত্তাকিন বিল্লাহ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo